www.fb.com/asholfatakesto611
ফাহিম ঘুম থেকে উঠেই কোনরকম ফ্রেশ হয়ে বের বাসা থেকে বের হয়ে যায়। পেটে খুব ক্ষিদে। কিন্তু এখন ক্ষিদে মিটানোর তেমন প্রয়োজন মনে করছে না ফাহিম। কারন সে আজ ঘুম থেকে দেরী করে উঠেছে। এখন ক্ষিদে মিটানোর পিছনে সময় নষ্ট করলে তার সাদিয়া চলে যাবে।
দেখতে পারবে না পুরো একটা দিন। আর একটা দিন দেখতে না পারা মানে পুরোটা দিন অস্থিরতায় কাটানো।
ফাহিম দাড়িয়ে আছে সেই আগের জায়গায়। সাদিয়া তার সামনে দিয়ে চলে গেলো। কিন্তু একটা বার ও পিছনে ফিরে তাকালো না ফাহিমের দিকে।
তার সাদিয়া কোন দিন ই তার দিকে তাকায় না। হ্যা ফাহিমের সাদিয়া ঠিকি কিন্তু সাদিয়ার ফাহিম না। গত ১টা বছর ধরে প্রতিদিন ই তো এমনটা চলছে। ফাহিম সাদিয়াকে পাগলের মতো ভালোবাসে। সাদিয়া তার সব জানে।
কিন্তু কোন দিন ফাহিমের দিকে ফিরেও তাকায় নি সাদিয়া। আজ ও তাকাবে না সেটাই স্বাভাবিক। ফাহিম অনেকবার সাদিয়ার কাছে নিজের মনের ভাষা প্রকাশ করেছে। কিন্তু বারবারই সাদিয়া ফাহিমকে ফিরিয়ে দিয়েছে। বিরক্তির সাথে ফিরিয়ে দিয়েছে।
তার কারন একটাই। ফাহিম দেখতে রাজ কুমার নয়। গায়ের রং একটু কালো। সাদিয়া সব সময় ফাহিমের বাহিরের রুপটাই দেখে গেছে। কোন দিন ভিতরের মনটাকে বুঝার চেষ্টা না করে উল্টো ফাহিমকে ভয় দেখিয়েছে আবার ডিস্টার্ব করলে ইভটিজিং এর মামলা করে দিবে।
তাই ফাহিম কিছু বলার সাহস পায় না। শুধু দুর থেকে তার সাদিয়াকে।
আজ দুই বছর হলো সাদিয়ার পিছনে পরে আছে ফাহিম। কিন্তু সাদিয়া কোন প্রকার দাম দেয় নি ফাহিম কে। কিন্তু ফাহিম হাল ছেড়ে দেয় না।
প্রতিদিন সাদিয়ার জন্য দাড়িয়ে থাকে। শুধু একটা নজর দেখার জন্য দাড়িয়ে থাকে। ফাহিমের ভালোবাসা এতোদিনে যোগ্য সঙ্গ না পেয়ে জেদে পরিনত হয়েছে। সাদিয়াকে যেকোন মূল্যে পাবার জেদ। যে মেয়ে তাকে এতো দিন ঘুরিয়েছে তাকে অন্য কারো না হতে দেবার জেদ।
আজ ফাহিম দীর্ঘ একবছর পরে সাদিয়াকে ডেকে তার রাস্তা আটকায়। "সাদিয়া তোমার সাথে কিছু কথা আছে আমার"
সাদিয়া তড়িঘড়ির একটা ভাব নিয়ে বলে "কি বলবেন বলেন"
ফাহিম সাদিয়ার এমন ভাব দেখে প্রচন্ড রেগে যায়। কিন্তু সে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রন করে বলে "এমন ভাব নিয়ো না। আমি যে তোমাকে পাগলের মতো ভালোবাসি তা জানো"
-হ্যা জানি। কিন্তু আমি আপনাকে ভালোবাসি না।
-কবে ভালোবাসবে??
-জানিনা। মনে হয় কোনদিন পারবো না।
-তুমি বোঝ আমার প্রচন্ড কষ্ট হয়।
-কিছু করার নেই। যা পাবার যোগ্যতা নেই তার দিকে হাত বাড়ালে কষ্ট ছাড়া আর কিছু পেতে হয় না।
সাদিয়ার এমন অপমানে বুকটা ফেটে যায় ফাহিমের। ভিতরে প্রচন্ড জেদ কাজ করতে থাকে। করবেই না বা কেন যে মেয়েটাকে জীবনের চেয়ে বেশী চেয়েছে সে দুই বছরে একটু ও তার ভালোবাসা বুঝে নি। বরং সবার সামনে তাকে অপমান করেছে বারবার। আজ ও করলো তার বান্ধবীদের সামনে।
বান্ধবীদের মুখে বিদ্রুপের হাসি দেখে ফাহিম কিছু বলার ভাষা পায় না আর।
সাদিয়া বলে "আপনি আর কিছু বলবেন? "
- না
-আচ্ছা আমি গেলাম
-যাও
-ও হ্যা একটা কথা আমার বাবা মা যাকে বলবে আমি তাকেই বিয়ে করবো। গেলাম কেমন।
ফাহিমের মনটা খুশিতে নেচে উঠেছে। ফাহিম দেখতে খারাপ হতে পারে কিন্তু টাকা পয়সার অভাব নেই।
কালই সে যাবে সাদিয়ার বাসায়। বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। সাদিয়ার বাবা মা নিশ্চই ফাহিমের ভালোবাসার দাম দিবে। ফাহিমের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। তবে সেটা কি ভালোবাসার মানুষকে কাছে পাবার হাসি নাকি অন্য কিছু কে জানে?
২
ফাহিমের জীবনের একমাত্র আশা পূরণ হয়েছে।
আজ সাদিয়া তার হয়েছে। সাদিয়ার বাবা মা ফাহিমকে ফিরিয়ে দেয় নি। ওইতো সাদিয়া লাল টুকটুকে শাড়ি পরে বসে আছে ফাহিমের জন্য। ফাহিম ঘরের দড়জাটা আটকিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় সাদিয়ার দিকে। সাদিয়া ফাহিমকে কি বলবে বুঝতে পারছেনা।
ফাহিম এসে সাদিয়ার সামনে বসে। নিজে থেকেই বলে "দেখেছো তোমার কপালে আমি ই ছিলাম। "
সাদিয়া মৃদু হাসে। কিছু বলে না। ফাহিম বলে "আমি একটা জিনিস চিন্তা করেছি।
"
-কি??
- আমি তো তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তোমাকে অন্য কারো হতে দেখতে পারবো না আমি। তাই তোমাকে আমার বানিয়েছি।
-হুম।
-কিন্তু আমি তোমার যোগ্য না।
আমার সাথে থাকতে তোমার অপমানবোধ হবে। তোমার অনেক কষ্ট হবে সারাজীবন। আমি আমার ভালোবাসার মানুষের এতো কষ্ট সহ্য করতে পারবো না।
সাদিয়া অবাক হয়ে বলে "কি বলতে চাচ্ছো? "
ফাহিম হাসছে। ক্রুর হাসি।
চোখমুখ লাল হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। "বুঝতে পারছো না?
সাদিয়া ফাহিমের হাসি চোখ মুখ দেখে ভয় পেয়ে যায়। "না বুঝি না। কি খুলে বলো"
ফাহিমের চোখ দিয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে পানি ঝড়ছে। চোখ দিয়ে আগুন বের হচ্ছে।
চেহারা অনেকটা মানুষ থেকে পশুর মতো হয়ে গেছে। ফাহিম ঘামতে শুরু করেছে। হাপাতে হাপাতে বলে "এই তিন বছর তুমি আমাকে কম কষ্ট দাও নি। রোদে পুড়েছি। বৃষ্টি তে ভিজেছি।
তুমি আমার ভালোবাসার দাম দাও নি কোন দিন। একের পর এক অপমান করেছো। তাই আমার জেদ ছিলো তোমাকে বিয়ে করবো। আমি জানি তুমি কোন দিন আমাকে ভালোবাসতে পারবে না। আমি তোমাকে জোর ও করবো না।
জোর করে ভালোবাসা হয় না। তাই আমি তোমাকে সারাজীবন এর জন্য শান্তির দেশে পাঠিয়ে দিবো। "
সাদিয়া বুঝতে পারে অবস্থা ভালো নয়। সে ভয় পেয়ে যায়। তারপরে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে বলে "দেখো এখন তো আমি তোমাকে বিয়ে করেছি।
"
ফাহিম বিদ্রুপের হাসি হাসে। বলে "ওটা তো তোর বাবা মা দিয়েছে। আমার টাকার লোভে পরে। " এটা বলে ফাহিম সাদিয়ার গালে একটা চড় বসিয়ে দেয়।
সাদিয়া ভয় পেয়ে কাঁদতে শুরু করে।
বলে "আমি কিন্তু চিৎকার করবো। "
ফাহিম আবার উচ্চস্বরে হেসে উঠে। বলে "করো চিৎকার জোরে জোরে চেঁচাও। কেউ আসবে না শুনতে। সবাই জামাই বউ কে রোমান্স করতে দিয়ে চলে গেছে।
"
সাদিয়া কাঁদতে কাঁদতে বলে "তোমার পায়ে ধরি আমাকে মেরো না"
ফাহিম বলে "তুমি আমাকে তিনটা বছর যে কষ্ট দিয়েছো তা তো আমি ভুলিনি। প্রতিদিন তোমার পায়ে ধরেছি। দাম দাও নি। ফিরেও তাকাও নি। শুধু একটু কালো বলে।
কেন কালোরা কি মানুষনা। তাদের কি মন নেই? ভালোবাসা নেই? তবে চিন্তা করো না তুমি আমাকে যে কষ্ট দিয়েছো তার হাজার ভাগের এক ভাগ ও দিবো না। বরং আমি তোমাকে কষ্ট থেকে মুক্তি দিবো। কিন্তু আমার কষ্ট বোঝার জন্য তোমাকে তো একটু কষ্ট পেতেই হবে। তবে সেটা সাময়িক।
কিন্তু আমার কষ্ট যে চিরন্তন। " এটা বলে ফাহিম তার পিছনে থাকা ছুরিটা বের করে।
সাদিয়া এটা দেখে ভয়ে চিৎকার করে উঠে।
ফাহিম সাথে সাথে সাদিয়ার মুখে চেপে ধরে। ছুরিটা দিয়ে হাতে পোঁচ দেয় একটা
সাদিয়া ব্যাথায় আর্তনাদ করে উঠে।
ফাহিম বলে "একটু সহ্য করো আমি তোমাকে ব্যাথা দিবো না আর। এখুনি সব ব্যাথা থেকে মুক্তি পাবা তুমি। আই লাভ ইউ জান অনেক ভালোবাসি তোমাকে। বলে কেঁদে উঠে ফাহিম। সাদিয়া প্রাণ ভয়ে ছটফট করতে থাকে।
কিন্তু ফাহিমের পাশবিক শক্তির সাথে পেরে উঠেনা সাদিয়া।
থামো এখন। চোখ খুলো তুমি বলে ডাঃ নাহিদা চোখ খুলতে বলে ফাহিমকে। তার আর বেশি দেখার সাহস হয় না। ফাহিমকে মনোবিজ্ঞানী ডাঃ নাহিদা বেগম হিপনোটাইজ করে তার মাইন্ড রিড করেছে এতোক্ষন।
ডাঃ নাহিদা অবাক হয়ে ফাহিমের দিকে তাকিয়ে আছে। ছেলেটাকে দেখলে বোঝা যায় না ছেলেটা মানসিক ভাবে এতো অসুস্থ। এই ছেলে থেকে দূরে থাকাই উত্তম। একটা মানুষের মস্তিষ্ক এতো পরিমানে বিকৃত হতে পারে কিভাবে ভেবেই পায় না ডাঃ নাহিদা। কি নৃশংস তার চিন্তা ভাবনা ধিক্কার এমন ভালোবাসা কে।
ডঃ নাহিদা ফাহিমকে তার বাবা মায়ের কাছে দেয়। জিজ্ঞেস করে ফাহিমের এমন অবস্থা হবার কারন।
ফাহিমের বাবা বলে "ও একটা মেয়েকে প্রচন্ড ভালোবাসতো। ওই মেয়ে ওকে পাত্তা দিতো না। পরে আমরা ওর বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে ওই বাবা মায়ের কাছে যাই।
ওর বাবা মা আমাদের ফিরিয়ে দেয়। এবং অন্য ছেলের সাথে ওই মেয়ের বিয়ে ঠিক করে। তারপর থেকেই ফাহিমের অবস্থা এমন। পাগলের মতো করে। তাই আপনার কাছে নিয়ে আসা।
ডাঃ নাহিদা চিন্তিত ভাবে বলে হুম ছেলের অবস্থা তো খুব ক্রিটিকাল। এভাবে চলতে থাকলে অনেক কিছুই হতে পারে। ও যে কাউ কে খুন করতে পারে সাদিয়া ভেবে।
ফাহিমের বাবা বলে "কিছু কি করার
নেই?"
ডাঃ নাহিদা বলে ভাবতে হবে। খুব ক্রিটিকাল কেইস।
সময় লাগবে। ওকে দেখে রাখবেন। আপাতত ঘর থেকে বের হতে দিবেন না।
৩
ফাহিম নিজের রুমে বসে আছে। মুখে ক্রুর হাসি।
ফাহিমের বাবা বাহির থেকে জানালা দিয়ে ছেলেকে দেখছেন। ছেলের মুখের হাসি দেখছেন। এ হাসি কোন মানুষের হাসি হতে পারে না। হাসিতে দানব দানব ভাব আছে। পৈশাচিক হাসি।
দেখলেই গায়ের পশম কাটা দেয়। অথচ ছেলেটার মাথা একদম ঠান্ডা। কেউ দেখলে বুঝতেই পারবে না এই মাথায় ঘুরছে কাউ কে হত্যা করার সূক্ষ্ম পরিকল্পনা।
ফাহিমের বাবা নিজের চোখের পানি ফেলেদেন। তার ছেলে তো এমন ছিলো না।
কি চটপটে দুরন্ত ছেলে ছিলো ফাহিম। হাসি আনন্দ কোন কিছুর অভাব ছিলোনা তার মাঝে। কিন্তু দেখতে দেখতেই সব কিছু চেঞ্জ হয়ে গেলো। চটপটে ছেলেটা হটাৎ করেই ঠান্ডা হয়ে গেলো। এখন সারাদিন ই ফাহিম কেমন যেনো একটা বিভ্রমের মাঝে থাকে।
কি যেনো ভাবে। হয়তো সাদিয়াকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে নিজের অজান্তেই।
ফাহিমের বাবার এখনো মনে আছে সেই দিনের কথা যেদিন সে এসে বলেছিলো "সাদিয়ার বাবা মা এই বিয়েতে রাজি না। তারা তাদের মেয়ের কথা শুনবে। সাদিয়া ফাহিমকে পছন্দ করে না।
ফাহিম কালো। সাদিয়ার যোগ্য না"
সেটা শুনার পর ফাহিম আর একটা কথাও বলে নি। হয়ে গেছে একদম চুপ। নিজের রুমে চলে যায় চুপ করে। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে আর বের ও হয়ে যায় না।
নিজের রুমেই বসে থাকে। মাঝে মাঝে দেখা যায় ছুরিটা দিয়ে কি যেনো করে আর বিড়বিড় করে কি যেনো বলে।
নিজের ছেলের জন্য খুব দুঃখ হতে থাকে ফাহিমের বাবার। ছেলের সাথে এমনটা হয়ে যাবে কোনদিন কল্পনাও করেনি ফাহিমের বাবা। তার ছেলে কি সারাজীবনের জন্য তাদের থেকে হারিয়ে যাবে সেই শঙ্কা বারবার ই উকি দিয়ে যায় ফাহিমের বাবা মায়ের মনে।
সকালে ডাঃ নাহিদার ফোন এসেছে। তিনি ফাহিমকে নিয়ে যেতে বলেছেন। ফাহিমের বাবার মনটা আজ খুশি খুশি লাগছে। ডঃ নাহিদা মনে হয়ে কোন একটা উপায় খুঁজে বের করেছেন।
ডাঃ নাহিদা ফাহিমের বাবার সাথে আছেন।
ফাহিমকে তার মায়ের সাথে অন্য রুমে পাঠিয়ে দিয়েছেন। ডাঃ নাহিদা বললেন
-এমন সমস্যার একটা উপায় আছে তবে ব্যাপারটা অনেক কমপ্লিকেটেড। একটু গড়মিল হলে ঝামেলা হতে পারে।
-কি ঝামেলা খুলে বলেন তো?
-আমি চেষ্টা করবো ফাহিমকে হিপনোটাইজ করে ওর মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রন নিতে। তারপর সাদিয়ার ব্যাপারে ওর মস্তিষ্কে যতো সৃতি আছে সব ভুলিয়ে দিবো।
-এটা কি সম্ভব?
-হ্যা এমনটা করা সম্ভব। তবে ফাহিম এটাকে ভুলে যাবে না। অথবা সৃতিকে মুছে ফেলাও হবে। শুধু এটাকে লক করে রাখবো চিরজীবনের জন্য। তবে হ্যা ও যদি মস্তিষ্কে আঘাত পায় অথবা আবার কোন কষ্ট পায় এমন মেয়েলী ব্যাপারে তাহলে সৃতির সেই লকটা খুলে যেতে পারে এবং আবার সাদিয়ার সব কিছু মনে পরে যাবে।
তখন অবস্থা আরো খারাপ হতে পারে।
-আচ্ছা তা বুঝলাম। কিন্তু ঝামেলাটা কোথায়?
-দেখেন এটা এক প্রকার মস্তিষ্ক কে নিয়ে খেলা করা। আমি ওর পুরো মস্তিষ্কে বিচরণ করবো খুঁজে খুঁজে সাদিয়ার সৃতি গুলো বের করে তা লক করবো। এতে ওর পুরো সৃতি লক হয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে।
তখন ও কিছুই মনে করতে পারবে না। তাছাড়া লক করতে ব্যর্থ হলে অবস্থা আরো খারাপ হতে পারে। কারন তখন ওর মনে ধারনা জন্মাবে ওকে চিট করার চেষ্টা করা হয়েছে। ওর ভালোবাসাকে ভুলিয়ে দেবার চেষ্টা করা হয়েছে। তখন ও আপনাদের উপর ও বিশ্বাস হারিয়ে ফেলবে।
এবং আপনাদের মেরে ফেলার কথাও চিন্তা করতে পারে।
ফাহিমের বাবা বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। বলে যা হবার হোক। আমি রিস্ক নিতে চাই। আমি আমার আগের ছেলে ফেরত চাই।
পরেরটা পরে দেখা যাবে।
ডাঃ নাহিদা ফাহিমের বাবা কে আশ্বাস দিয়ে বলে চিন্তা করবেন না। আমি সম্ভব্য বিপদের কথা বলে নিলাম। কিন্তু এমনটা হবার সম্ভাবনা খুবই কম।
ডাঃ নাহিদা বেগম ফাহিমকে নিয়ে এসেছে তার চেম্বারে।
ফাহিমের দিকে তাকিয়ে বলে বসো ফাহিম। ফাহিম কিছু না বলে চুপ করে বসে। ডাঃ নাহিদা তার চেয়ার টেনে এনে ফাহিমের মুখ বরাবর আসে। "কেমন আছো ফাহিম?"
ফাহিম কোন প্রশ্নের উত্তর দেয় না। তাকে কেমন যেনো বিভ্রান্ত দেখা যায়।
ডাঃ নাহিদা বলেন আমি যা করতে বলবো তুমি তা করবে ফাহিম?
ফাহিম মাথা নাড়ায়।
তুমি তোমার চোখ বন্ধ করে চেয়ারটায় হেলান দিয়ে বসো।
ফাহিম তাই করে।
ডাঃ নাহিদা বলে "তুমি চিন্তা করো বিশাল বড় একটা মাঠ। সেখানে তুমি খেলা করছো।
সাদিয়া বসে বসে তোমার খেলা দেখছে। কল্পনা করো ফাহিম কল্পনা করো। "
ফাহিম তাই কল্পনা করতে থাকে। তার মুখে হাসি ফুটে উঠেছে।
ডাঃ নাহিদা আবার বলা শুরু করে "ফাহিম তুমি কল্পনা করো অনেক সুন্দর একটা জায়গায় তুমি সাদিয়াকে নিয়ে ঘুরতে গেছো।
সেখানে তুমি আর সাদিয়া ছাড়া কেউ নেই। সাদিয়া তোমার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে। "
ফাহিম চেয়ারে বসে মাথা নাড়াতে থাকে। এপাশ ও পাশ করতে থাকে। চেহারায় তার হাসি স্পষ্ট।
ডাঃ নাহিদা বুঝতে পারেন ফাহিমের মস্তিষ্ক এখন তার নিয়ন্ত্রনে। সে দ্রুত বলতে থাকে "ফাহিম তুমি তোমার সাদিয়ার সব কথা মনে করো। সাদিয়া তোমাকে কিভাবে অপমান করেছে, কিভাবে ফিরিয়ে দিয়েছে, কিভাবে তার জন্য তুমি দিনের পর দিন দাড়িয়ে ছিলে রাস্তায়, সে তোমার দিকে ফিরেও তাকায় নি তুমি কালো দেখে। "
ফাহিম ছটফট শুরু করেছে। তার মুখের হাসি চলে গেছে।
শরীর ঘামতে শুরু করেছে।
ডাঃ নাহিদা সময় নষ্ট না করে দ্রুত বলেন "ফাহিম সব মনে করো। কিভবে তার সাথে তোমার পরিচয়, সে তোমার বাবা মাকে ফিরিয়ে দিয়েছে, তুমি তাকে হত্যা করার প্লান করেছো বিয়ের পর সব মনে করো ফাহিম সব"
ফাহিমের চেহারা আস্তে আস্তে ভয়ংকর হয়ে উঠছে। সে বসে বসে চেয়ারের সাথে এক প্রকার যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে। ফাহিমের প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে তা স্পষ্ট বুঝতে পারেন ডাঃ নাহিদা।
ছেলেটার কষ্ট সহ্য হচ্ছে না আর। সে বলতে থাকে "ফাহিম তুমি সব ভুলে যাচ্ছো এখন সব ভুলে যাচ্ছো তুমি। সাদিয়াকে খুন করার কথা, তার অপমানের কথা, সাদিয়া আর তোমার কথা, সাদিয়ার কথা। তোমার কষ্টের কথা, সাদিয়া নামের কাউ কে তুমি ভালোবাসতে সে কথা, সাদিয়া নামের কাউ কে চিনতে সে কথা তুমি ভুলে যাচ্ছো। সব ভুলে যাও আস্তে আস্তে।
তোমার মাথা কে একটু শান্তি দাও। তুমি সব ভুলে যাচ্ছো ফাহিম। তোমার সাদিয়ার কথা ভুলে যাচ্ছো।
ডাঃ নাহিদা দেখতে পায় ফাহিম আস্তে আস্তে ঠান্ডা হচ্ছে। শান'ত হয়ে যাচ্ছে ফাহিম।
তার গা থেকে ঘাম ঝড়ছে।
ডাঃ নাহিদা বলেন ফাহিম তুমি চিন্তা করো সুন্দর খেলার মাঠ। ফুলের বাগান। সেখানে তুমি একা একা হাটছো। তুমি চিন্তা করো তোমার প্রচন্ড ঘুম পেয়েছে।
তুমি ঘুমিয়ে যাচ্ছো। হারিয়ে যাচ্ছো অতলে। প্রচন্ড ঘুমে সব অবশ হয়ে যাচ্ছে। তুমি ঘুমিয়ে যাচ্ছো।
ডাঃ নাহিদা ফাহিমের দিকে তাকিয়ে আছে।
ছেলেটা কি সুন্দর করে ঘুমুচ্ছে। কি নিষ্পাপ তার চেহারা। তার মধ্য দিয়ে এতো কিছু হয়ে গেছে কে বুঝবে তাকে দেখলে। ছেলেটা অনেক দিন ভালো ঘুমোয় নি। আজ ঘুমাক শান্তিতে ঘুমাক।
শেষকথাঃ
আজ সাদিয়ার বিয়ে। ফাহিম তার বাবার সাথে এসেছে সাদিয়ার বিয়েতে। ফাহিম মেয়েটার দিকে তাকিয়ে ভাবছে বাহ কি সুন্দর মেয়েটা। কি নিষ্পাপ চেহারা। যে তাকে পাবে অসম্ভব লাকি হবে মনে হয়।
ফাহিম ভাবছে মেয়েটা তার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে কেন। সে কি মেয়েটাকে চিনে? না তো মনে হয়। আগে তো কোন দিন দেখেনি এই মেয়েকে। তাহলে মেয়েটা এমন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কেন। ফাহিম ভাবতে থাকে।
তার মাথা ব্যাথা শুরু করেছে। ইদানীং মাথাটার কি যে হয়েছে অযথাই ব্যাথা করে। ফাহিম মেয়েটার সামনে বসে তার হাতে বিয়ের উপহার দিয়ে একটা হাসি দিয়ে চলে আসছে। মেয়েটা এখনো অপলক দৃষ্টিতে ফাহিমের দিকে তাকিয়ে আছে। ফাহিম হেটে হেটে চলে আসছে।
পিছনে তাকাবার সাহস পায় না। এতো সুন্দর। মেয়ে এভাবে তাকিয়ে থাকলে তার চেহারার দিকে তাকানো মুশকিল। হোক সে বিয়ের কণে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।