আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে আগ্রহী সরকা

উৎপাদনের চেয়ে ভর্তুকি দিয়ে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনতে আগ্রহী সরকার। ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ যে দামে কিনছে তা দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচের প্রায় অর্ধেক। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) হিসাব অনুযায়ী মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ২০ শতাংশ আসছে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে। আর এ কেন্দ্রগুলো থেকে গত চার বছরে বিদ্যুৎ কিনতে সরকারকে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়েছে। কিন্তু এ পরিসংখ্যানের তোয়াক্কা না করেই সরকার সম্প্রতি ২০২০ সাল পর্যন্ত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে গঠিত সরকারি কমিটি সম্প্রতি তাদের প্রতিবেদনে ২০২০ সাল পর্যন্ত এসব কেন্দ্র চালিয়ে যাওয়ার সুপারিশ করেছে। এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ২০২০ সাল পর্যন্ত ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানো ছাড়া কোনো উপায় নেই। কারণ সরকারের গৃহীত বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়ে উৎপাদনে যেতে আরও সময় লাগবে। এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো জ্বালানি খাতে 'কোরামিন'-এর কাজ করছে। কিন্তু বিদ্যুতের ঘাটতি মেটাতে ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর মেয়াদ বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই। এক্ষেত্রে সরকার স্পষ্টভাবেই ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করছে। কেন্দ্রগুলোর মেয়াদ বৃদ্ধির মাধ্যমে সাধারণ মানুষকেও ধোঁকা দেওয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে বিদ্যুতের নিরাপত্তার বিষয়টিও নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। সম্প্রতি সরকার ১০টি ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুক্তির মেয়াদ আরও তিন থেকে পাঁচ বছর বাড়িয়েছে। ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ার পর গত চার বছরে বিদ্যুৎ খাতে লোকসান দাঁড়ায় প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা। আর এ উচ্চমূল্য সমন্বয় করতে গত পাঁচ বছর খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম সাতবার বাড়ানো হয়। মার্চে আবারও বাড়ছে বিদ্যুতের দাম। তবে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য সরকারকে অতিরিক্ত দাম দিতে হচ্ছে এটি অস্বীকার করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, আমরা যেহেতু কেন্দ্রগুলো ভাড়া নিয়েছি সেক্ষেত্রে মেয়াদ বৃদ্ধি করতেই পারি। এটাই স্বাভাবিক। আমরা দেশকে অন্ধকারে রাখতে পারি না। দেশে বিদ্যুতের প্রয়োজনেই কেন্দ্রগুলোর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০টি ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্র অনুমতি পায়। এর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ভাড়াভিত্তিক ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক ১৩টি কেন্দ্র অনুমতি পায়। এসব কেন্দ্রে জ্বালানি হিসেবে ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল ব্যবহারের কারণে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। পিডিবির তথ্যে, গত চার বছরের ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্র থেকে পিডিবি কিনেছে মোট ২০ শতাংশ বিদ্যুৎ। এ জন্য খরচ হয়েছে বিদ্যুৎ ক্রয়ের মোট ব্যয়ের ৪২ শতাংশ। এ সময় প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুতের গড় মূল্য পড়েছে ৪ টাকা ৫২ পয়সা। সেখানে ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্রগুলো থেকে কিনতে হয়েছে ৯ টাকা ৫০ পয়সা দরে।

এ ব্যাপারে তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ধরন অনুযায়ী ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো অস্থায়ী, স্বল্পমেয়াদি ও অনির্ভরযোগ্য। জরুরি অবস্থার ভিত্তিতে দেশে এগুলো স্থাপিত হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু সরকার সে সময় বলেনি যে এগুলো দীর্ঘমেয়াদে স্থাপন করা হচ্ছে। মেয়াদ বৃদ্ধির মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দেওয়া হচ্ছে। সরকার ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর মালিককে মেয়াদ বৃদ্ধির সুযোগ করে দিয়ে নিজেও লাভবান হচ্ছে। কিন্তু সার্বিকভাবে এর প্রভাব পড়ছে জাতীয় অর্থনীতির ওপর। একই সঙ্গে বিদ্যুতের নিরাপত্তার বিষয়টিও নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। এ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে কিছু আছে যারা এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎও উৎপাদন করছে না কিন্তু কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সূত্র মতে, ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মোট ১৪টি দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুক্তির অবসান হওয়ার কথা। এ বছরই ভেড়ামারা ও সিদ্ধিরগঞ্জ কেন্দ্র দুটির অবসান হওয়ার কথা। ঘোড়াশালের দুটি ২০১৫ নাগাদ এবং এর পরের বছর এমন আরও ৬টি কেন্দ্রের মধ্যে নওয়াপাড়ার দুটি, মেঘনাঘাট, খুলনা, মদনগঞ্জ এবং সিদ্ধিরগঞ্জে একটি কেন্দ্রের সঙ্গে চুক্তির অবসান হবে। তবে মেয়াদ শেষের আগেই এ কেন্দ্রগুলোর মালিকরা মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য সংশ্লিষ্ট মহলে তোড়জোড় শুরু করেন। এ ব্যাপারে ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা শামসুল আলম বলেন, ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো জ্বালানি খাতে 'কোরামিন'-এর কাজ করছে। আর সরকার কেন্দ্রগুলোর মেয়াদ বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রমাণ করেছে যে, তারা বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম নয়। ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর প্রধান সমস্যা এর জ্বালানি খরচ। অথচ এ জ্বালানি মূল্য সরকারি খাতে ব্যবহার করা হলে সাশ্রয়ী মূল্যে আরও বেশি পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হতো। তিনি বলেন, বিদ্যুতের ঘাটতি মেটাতে হলে যে ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর মেয়াদ বাড়াতে হবে তার কোনো যুক্তি নেই। এক্ষেত্রে সরকার স্পষ্টভাবেই ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.