উপজেলা নির্বাচনে প্রথম ধাপের ফলাফল থেকেই শিক্ষা নিতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সামনের ৪ পর্বে অনুষ্ঠেয় উপজেলা নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ জয় নিশ্চিত করতে দলের হাইকমান্ড নিচ্ছে সতর্ক পদক্ষেপ। সামনের নির্বাচনগুলোতে বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের চিন্তাভাবনা করছে আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি বিদ্রোহী প্রার্থীদের ম্যানেজ করতেও কেন্দ্র থেকে নেওয়া হচ্ছে নানান উদ্যোগ। দলীয় সূত্রমতে, এ বিষয়ে দলের সিনিয়র নেতাদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল থেকেই দলের বেশ কয়েকজন দায়িত্বশীল নেতা নির্বাচনী ইস্যুতে ধানমন্ডির দলীয় কার্যালয়ে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছেন। বৈঠকে উপজেলা নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের 'ম্যানেজ' করার কৌশল নিয়ে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হয়েছে। দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি উপজেলা নির্বাচন ইস্যুতে কেন্দ্র থেকে সমন্বয়ের বিশেষ দায়িত্ব পালন করছেন। সূত্র মতে, গতকাল বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে টেলিফোনে কথা বলেছেন নানক। বিদ্রোহী প্রার্থীদের যে কোনো মূল্যে ম্যানেজসহ নির্বাচনী প্রচারণায় জোর দেওয়া, সরকারের সফলতা এবং বিএনপি জামায়াতের ধ্বংসাত্দক কর্মকাণ্ড সাধারণ ভোটারদের মাঝে তুলে ধরতে চায় দলটি। প্রথমদফা নির্বাচনে এত কম সংখ্যক চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার কারণ খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে দলটির হাইকমান্ড।
বিদ্রোহী প্রার্র্থীদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে হাইকমান্ড থেকে। নির্বাচনী ফল দলের পক্ষে আনতে দলীয় নেতা-কর্মীদের আটঘাট বেঁধে মাঠে নামারও নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে কেন্দ্র থেকে। উপজেলা ভিত্তিক তালিকা ধরে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা যাচ্ছে কেন্দ্র থেকে। আগামী নির্বাচনগুলোতে কোনো ভাবেই অপ্রত্যাশিত ভরাডুবি মানতে চায় না আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে জামায়াত অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে প্রচারণার কাজ বেশি করা হবে। নির্বাচনের ফলাফল বের হওয়ার আগ পর্যন্ত নেতা-কর্মীদের মাঠে থাকার ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা আসছে। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, দলীয় কোন্দল, একাধিক প্রার্থী এবং জোটের সঙ্গে সমন্বয় না হওয়ায় এই পরাজয়ের কারণ বলে প্রাথমিক ভাবে ধারণা করছে দলটির নেতারা। যে কারণে সামনে যতগুলো নির্বাচন রয়েছে সেগুলোতে এই ধরনের ভুল আর হতে দেবে না। আগামীর ৪ ধাপে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের নিরঙ্কুশ জয় চায় শাসক দল। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিভিন্ন জেলায় দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে কোন্দল রয়েছে। অনেক এলাকায় নেতা-কর্মীদের ক্ষোভ থাকায় বিরোধী পক্ষের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছে দলীয় নেতা-কর্মীরা। তাছাড়া দল ক্ষমতায় থাকায় অনেকেই মনে করেন প্রার্থী হতে পারলেই হয়তো জয়ী হওয়া যাবে। কিন্তু তারা মানুষের মনের ভাষা বুঝতে পারছেন না।
আওয়ামী লীগের এক প্রেসিডিয়াম সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে না পারার ক্ষোভে মানুষ বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীদের ভোট দিয়েছে। আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা বিষয়টি বুঝতে পারছেন না। তাছাড়া ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে সমন্বয় না করে নির্বাচন করা হয়েছে। যেটি ছিল বড় ধরনের ভুল। কিছু কিছু জায়গায় দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী একজন আবার ১৪ দলের শরিক দলের প্রার্থী একজন। এসব উপজেলাগুলোতে বিএনপি জামায়াতের প্রার্থী অনায়াসে জিতে যাচ্ছেন। আগামীতে যাতে এই ধরনের ভুল না হয় সেদিকে আমরা খেয়াল রেখেই কাজ করব বলে জানান তিনি।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, প্রথম দফা নির্বাচনের ফলাফলে আমরা সন্তুষ্ট নই। যেমন ফলাফল আশা করেছিলাম তেমন হয়নি। সামনের নির্বাচনগুলোতে দলীয় কোন্দল ও সাংগঠনিক অবস্থা মজবুত করে এবং অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।