রাজনীতিতে নতুন হিসাব-নিকাশ মিলাচ্ছে ধর্মভিত্তিক ইসলামী দলগুলো। সরকারের কঠোর মনোভাবে হেফাজতে ইসলাম আপাতত কোণঠাসা থাকলেও নিজেদের মতো করে সংগঠন চালিয়ে যাচ্ছে। ঢাকায় হেফাজতের কার্যক্রম নেই বললেই চলে। তবে সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছে চরমোনাইয়ের পীর। একইভাবে সংগঠনটি নিজেদের মতো করে সংগঠন গোছাচ্ছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৯ দলীয় জোটভুক্ত ইসলামী দলগুলোও নানামুখী চাপে বিপর্যস্ত। অন্যদিকে জামায়াতবিরোধী ইসলামী দলগুলোর তৎপরতাও চলছে। জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ১২টিই ইসলাম ধর্মভিত্তিক। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের বাইরে দেশে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ইসলামী দল ও সংগঠন কতগুলো তার কোনো পরিসংখ্যান নেই। এ সংগঠনগুলোর মধ্যে বর্তমানে সবচেয়ে শক্তিশালী হেফাজতে ইসলাম। ১২টি নিবন্ধিত ধর্মীয় দলের মধ্যে একমাত্র তরীকত ফেডারেশন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। তাও আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে। নির্বাচনে অংশ না নিলেও বসে নেই ধর্মীয় অন্য দলগুলো। তারা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি। অবস্থা বুঝেই নেবে সিদ্ধান্ত। দলগুলোর বর্তমান অবস্থা কী? সামগ্রিক বিষয়ে কথা হলে অধিকাংশ ধর্মীয় নেতার অভিযোগ, বর্তমান সরকারের গত মেয়াদে সংবিধানের মূলনীতি থেকে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। জাতীয় শিক্ষানীতিতে ধর্মীয় শিক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। আদালত নির্দেশ দিয়েছেন বোরকা পরা বাধ্যতামূলক করা যাবে না। নারীনীতিতে কোরআনবিরোধী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাই এ সরকারের সঙ্গে নেই তারা। সরকার পতনে সময়মতো তারাও মাঠে নামবে।
হেফাজতে ইসলাম : ধর্মভিত্তিক সংগঠনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী হচ্ছে হেফাজতে ইসলাম। গেল বছরের ৫ মে রাজধানীর শাপলা চত্বরে সমাবেশে অভিযানের পর থেকেই বিপর্যস্ত সংগঠনটি। সংগঠনটির প্রধান আল্লামা শাহ আহমদ শফীর কার্যক্রমও এখন চট্টগ্রামের হাটহাজারী এলাকায় মাদ্রাসাকে ঘিরে। রাজধানীতে এখন আর নতুন করে কোনো সভা সমাবেশ করতে পারছে না তারা। লালবাগ মাদ্রাসায় মাঝে মধ্যে তাদের কিছুটা তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়। তবে তারা সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার চেষ্টা করছে।
সভা-সমাবেশে চরমোনাই পীর : প্রধান দুই জোটের বাইরে ধর্মীয় অন্যতম শক্তিশালী দল মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি তারা। বর্তমানে চরমোনাই পীর ও তার দলের নেতা-কর্মীরা বর্তমান সংসদ ভেঙে প্রতিনিয়ত নতুন নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার দাবি জানাচ্ছেন। পাশাপাশি সংগঠনকে শক্তিশালী করতে কাজ করে যাচ্ছেন। এ জন্য সারা দেশে তৃণমূলের ভিত মজবুত, জানবাজ কর্মী তৈরি করতে কর্মশালা ও সাংগঠনিক তালিম চালিয়ে যাচ্ছেন।
জামায়াত নিষিদ্ধ চায় তরীকত : জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের জন্য আইনি এবং রাজপথে লড়াই করে যাচ্ছে নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীর নেতৃত্বাধীন তরীকত ফেডারেশন। জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে তরীকতের দায়ের করা মামলায়। ইতোমধ্যে জাতীয় সংসদের এমপি হয়ে সংসদেও জামায়াত নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী। সংগঠনের মহাসচিব এম এ আউয়াল এমপি বলেন, জামায়াত-শিবির সন্ত্রাসী-জঙ্গিবাদী দল। দলটি নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
তৎপরতা খেলাফত আন্দোলনের নেই : মাওলানা শাহ আহমাদুল্লাহ আশরাফের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন হেফাজত নিয়েই ব্যস্ত। শাহ আহমাদুল্লাহ আশরাফ হেফাজতে ইসলামের উপদেষ্টা। সংগঠনটির মহাসচিব মাওলানা জাফরুল্লাহ খান হেফাজতের ঢাকা মহানগরীর যুগ্ম আহ্বায়ক।
ব্যস্ত খেলাফত মজলিস : দুই জোটের বাইরে আরেকটি অন্যতম শক্তিশালী ধর্মীয় দল মরহুম শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকের প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। নির্বাচনে অংশ না নিলেও বর্তমানে সংগঠনকে শক্তিশালী এবং বিস্তৃতি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দিতে চাচ্ছে দলটি।
অন্যান্য : এ ছাড়াও সৈয়দ বাহাদুর শাহ মুজাদ্দেদীর নেতৃত্বাধীন জাকের পার্টি, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টও সংগঠন গোছানোর কাজে ব্যস্ত।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।