দেশের স্বাস্থ্যসেবার বেহাল দশা কিছুতেই কাটছে না। গত চার দশকে স্বাস্থ্য খাতে সরকারি বরাদ্দ ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। গড়ে উঠেছে একের পর এক হাসপাতাল ও ক্লিনিক। দেশে এখন সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মেডিকেল কলেজের সংখ্যা কত তার হিসাব বের করাও দায়। চার দশকে চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা, যন্ত্রপাতি ও লোকবল ক্রমান্বয়ে বাড়লেও সেবার মান কমছে তো কমছে। চিকিৎসাব্যবস্থার সঙ্গে যারাই জড়িত তারা যেভাবেই হোক রোগী ও তার অভিভাবকদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ে ব্যস্ত। বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর অবস্থাও ভয়াবহ। এগুলোর সেবার মান দৃশ্যত ভালো হলেও চিকিৎসার নামে রোগী বা রোগীর অভিভাবকদের দেউলিয়া বানিয়ে দেওয়া যেন তাদের উদ্দেশ্য। চিকিৎসার অধিকারকে প্রতিটি সরকার সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার হিসেবে মেনে নিলেও সে অধিকার বাস্তবায়নের পরিবেশ আমাদের দেশে অনুপস্থিত। হারবাল চিকিৎসার নামে দেশজুড়ে চলছে জালিয়াতির ঘটনা। এ অপচিকিৎসকরা হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। চিকিৎসা মানুষের মৌলিক অধিকার হলেও সে অধিকার থেকে বঞ্চিত দেশের সিংহভাগ মানুষ। প্রতিবছর জাতীয় বাজেটের এক বড় অংশ ব্যয় হয় স্বাস্থ্য খাতে। এ ব্যয় বরাদ্দ কিছু লোকের ভাগ্য ফিরানো এবং পকেট স্ফীতিসহ কার্যত তেমন কোনো উপকারে আসছে না। চিকিৎসা পেশার জন্য প্রয়োজন নিবেদিতপ্রাণ মনোভাব। সে ক্ষেত্রে ঘাটতি থাকায় গত চার দশকে বিপুল অর্থ ব্যয় সত্ত্বেও চিকিৎসার অধিকার সাধারণ মানুষের জন্য নিশ্চিত করা যায়নি। রাজনীতির সঙ্গে চিকিৎসকদের জড়িত হওয়ার প্রবণতা চিকিৎসা পেশা ও রাজনীতি দুটির জন্যই বিড়ম্বনা সৃষ্টি করছে। চিকিৎসকরা দলবাজিতে এতটাই ব্যস্ত যে, তাদের অনেকেই রোগীদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দলীয় সমাবেশ বা কর্মসূচিতে ব্যস্ত থাকেন। সরকারি চিকিৎসকদের পদোন্নতি-বদলি সব কিছুতেই রাজনৈতিক পরিচয় নিরামক ভূমিকা পালন করে। যে কারণে চিকিৎসকদের একাংশ চিকিৎসার বদলে দলবাজিতেই বেশি ব্যস্ত থাকেন। গ্রামাঞ্চলে ডাক্তারদের বদলি করা সম্ভব হয় না সংগঠনগত চাপের কারণে। দেশবাসীর চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে বেহাল অবস্থার অবসান ঘটাতে হবে। স্বাস্থ্য খাতে দ্রুত শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিতে হবে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।