নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালসহ জেলার নয় উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্গুলোতে ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্যসেবা। জেলায় ২৫২ জন ডাক্তার পদের মধ্যে শূন্যই রয়েছে ১২৯টি। আরএমও নেই অনেক উপজেলায়। ১৬/১৭ জন ডাক্তারের কাজ করছেন মাত্র দুই থেকে তিনজন। জেলার ২৫ লাখ মানুষের সরকারি স্বাস্থ্যসেবার আশ্রয়স্থল নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতাল। ১৯৯২ সালে নির্মিত ৫০ শয্যার এই হাসপাতাল থেকে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না জেলাবাসী। প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০০ শয্যায় উন্নীত করার কাজটি ২০০৫ সালে আরম্ভ হলেও এক-এগার সরকারের সময় ঠিকাদার দেউলিয়া হয়ে যাওয়ায় সেটি অদ্যাবধি ঝুলে আছে।
হাসপাতালে জুনিয়র কনসালটেন্ট, এনেসথেসিয়া, চক্ষু, কার্ডিও, ইএনটি, অর্থো/চর্ম/যৌন এবং ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসারসহ নার্স, টেকনিশিয়ান, দারোয়ানসহ নানা পদের সিংহভাগই খালি রয়েছে। যারা আছেন তারাও সেবা দেন না ঠিকমতো। ওষুধ সংকটসহ পরীক্ষার জন্য বাড়তি টাকা রাখা, রোগীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রোগীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। হাসপাতালের সিভিল সার্জন ডা. সাহিদ উদ্দিন আহমেদ স্বপন জানান, বার বার এসব ব্যাপারে ঊর্ধ্বতনের কাছে পত্র দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। এদিকে জেলার কেন্দুয়া, আটপাড়া, মদন, মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরী, দুর্গাপুর, কলমাকান্দা, পূর্বধলা, বারহাট্টা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্ওে বিরাজ করছে করুণ দশা।
কেন্দুয়া উপজেলার ৫০ শয্যা এবং আটপাড়া উপজেলার ৩১ শয্যাবিশিষ্ট দুটি স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্রে অবকাঠামোগত অবস্থার বেশ উন্নতি হয়েছে। কেন্দুয়া উপজেলায় এ সরকারের আমলে নতুন ভবন নির্মাণ হলেও তাতে বড় বড় ফাটল ধরেছে। এখানে ডাক্তারের ১৭টি পদ থাকলেও শূন্য রয়েছে ১৩টি। ১৪ নার্সের মধ্যে আছেন তিনজন। দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট হাসপাতালের এঙ্-রে, ইসিজি মেশিন, অ্যাম্বুলেন্স, জেনারেটর। অত্যাধুনিক ওটি থাকলেও বন্ধ থেকেই নষ্ট হচ্ছে। ১৯৬৮ সালে আটপাড়া উপজেলায় ৩১ শয্যার হাসপাতাল নির্মিত হয়। নয়জন ডাক্তারের মধ্যে আছেন চারজন। এর মধ্যে দুজন প্রেষণে ঢাকায়। ৯ নার্সের মধ্যে কর্মরত চারজন। টেকনোলজিস্ট এক বছর ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। সেবার মান বাড়াতে কোটি টাকা ব্যয়ে আটপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্ সম্প্রসারণ করা হয়। সরবরাহ করা হয় অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি, জেনারেটর। কিন্তু এখনো নতুন ভবনে কার্যক্রম চালু হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে কক্ষগুলো বন্ধ করে রাখায় দামি যন্ত্রপাতিগুলো ধুলোবালি পড়ে নষ্ট হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এঙ্- রে মেশিন এবং অ্যাম্বুলেন্স অচল। নেই সিজারের কোনো ব্যবস্থা। কেন্দুয়া হাসপাতালের আউটডোরে কর্মরত ডাক্তার নূরুল হুদা খান জানান, কেন্দুয়াসহ মদন, তারাইল থেকেও রোগী আসে। প্রতিদিন গড়ে ১০০-১৫০ রোগী দেখতে হয়। ৫০ শয্যার হাসপাতাল হলেও অপারেশন থিয়েটার চালু করা হয়নি। হয়নি প্রসূতি মায়েদের সিজারের ব্যবস্থা। সিভিল সার্জন ডা. সাহিদ উদ্দিন আহমেদ স্বপন বলেন, ডাক্তার সংকটের কথা ঊধর্্বতন কর্তৃপক্ষকে বার বার জানানো হচ্ছে। উপজেলাগুলোতে ডাক্তার পোস্টিং দিলেও তারা তদবির করে ভালো জায়গায় চলে যায়। ওষুধ না পাওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রতিটি হাসপাতালে পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।