তুরস্ক বিশ্ব মুসলমানদের ইতিহাসে অত্যন্ত পরিচিত, সমৃদ্ধ এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি জনপদের নাম। তুরস্ক পূর্ব ইউরোপের একটি রাষ্ট্র। তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারা। তুরস্কের বৃহত্তম শহর ইস্তানবুল। তুরস্ক বর্তমানে একটি আধুনিক, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র।
এখানকার অধিকাংশ লোকের ধর্ম ইসলাম এবং মুখের ভাষা তুর্কি ভাষা। এছাড়াও এখানে আরও প্রায় ৩০টি ভাষা প্রচলিত। তুরস্কের ভূমিরূপ বিচিত্র। দক্ষিণ-পূর্ব ও উত্তর-পশ্চিমে আছে উর্বর সমভূমি। পশ্চিমে আছে উঁচু, অনুর্বর মালভূমি।
পূর্বে আছে সুউচ্চ পর্বতমালা। মানবসভ্যতার ইতিহাস জুড়েই তুরস্ক এশিয়া ও ইউরোপের মানুষদের চলাচলের সেতু হিসেবে কাজ করেছে। তুরস্ক মূলত কৃষিপ্রধান একটি দেশ। বর্তমানে কৃষিখামার তুরস্কের অর্থনীতির একটি বড় অংশ এবং দেশের শ্রমশক্তির ৩৪% এই কাজে নিয়োজিত। টেক্সটাইল ও বস্ত্র শিল্প দেশের রপ্তানির প্রধান উৎস।
বর্তমানে তুরস্কের ৭৫% জনগণ শহরে বাস করে। ১৯৫০ সালেও মাত্র ২১% শহরে বাস করত।
তুরস্কের গেজি পার্কের নাম এখন অনেকেই জানেন। একদল তরুণের বিক্ষোভ সারা বিশ্বে গেজি পার্কের নাম ছড়িয়ে দিয়েছিল। এ পার্কের ইতিহাসের সঙ্গেই যেন তুরস্কের পরিবর্তন জড়িয়ে আছে।
তুরস্ক এশিয়া ও ইউরোপের সীমান্তে দাঁড়িয়ে থাকা হাজার বছরের ইতিহাসসমৃদ্ধ দেশ। প্যালিওলিথিক যুগ থেকে মানুষ বাস করে আসছে। পৃথিবীর প্রাচীন শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম তুর্কিস্তানের ইস্তানবুল। পর্যটনের জন্যও ইস্তানবুল বিখ্যাত জায়গা। বাইজেনটাইন স্থাপত্য, বাজার, মসজিদ, জাদুঘর সব মিলিয়ে চমত্কার দেখতে ইস্তানবুলের পথঘাট।
এখন সেখানে পশ্চিমা ফ্যাশন আর পণ্যের যাতায়াতে বাধা নেই। মুখরোচক সব খাবার আর তারুণ্যের দীপ্তি ইস্তানবুলকে রাখে প্রাণবন্ত। ১৯৩৬ সালে কামাল আতাতুর্ক ফ্রান্স থেকে একজন শহর নকশাবিদকে নিয়ে আসেন তুরস্কে। তাকে দায়িত্ব দেয়া হয় ইস্তানবুল শহর সাজিয়ে দেয়ার। সেই ফরাসি নকশাবিদ গেজি পার্কের প্রাচীন মিলিটারি ব্যারাক উঠিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন।
তবে এর আগেই গেজি পার্কের একটি অংশে গড়ে ওঠে স্টেডিয়াম। ১৯২১ সালে নির্মিত স্টেডিয়াম তুরস্কের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। কামাল আতাতুর্কের শাসনামলে এ পার্ক আবারো সবুজ ও নাগরিক আড্ডার স্থান হিসেবে গড়ে ওঠে।
বহু ইতিহাসের স্বাক্ষী এই ভূখন্ডটি সময়ের ব্যবধানে ধর্মনিরপেক্ষ দেশে রূপ লাভ করে। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের পর তুরস্কের ঐতিহ্য ভূলন্ঠিত হয় সব চাইতে বেশি।
ওসমানীয় খেলাফত বা অটোমান সাম্রাজ্য একেবারে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে পৃথিবীর ৪টি পরাশক্তি অংশগ্রহন করে। তুরস্ক জার্মানীর সঙ্গে ফ্রান্স এবং ব্রিটেনের বিপক্ষে যুদ্ধে অংশ নেয়। ৫ বছর যুদ্ধ স্থায়ী ছিল। এই যুদ্ধে তুরস্ক এবং জার্মানী পরাজিত হয়।
১৯৬০ সালের ২৭ মে তুরস্কে সামরিক উত্থান ঘটে। প্রেসিডেন্ট জামাল বায়ার, প্রধানমন্ত্রী আদনান মেন্দারেসসহ অনেক মন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন দলের লোকদের জেলে নেয়া হয়। সারা বিশ্বে এখন তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী রজব তাইয়েব এরদুগান আলোচিত ব্যক্তিত্ব। ৩ জুলাই ২০১৩ মিসরের সেনা বাহিনী সে দেশের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডঃ মোহাম্মদ মুরসীকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে।
২০০২ সালে তুরস্কের সাধারন নির্বাচনে জাষ্টিস এন্ড ডেভোলপমেন্ট পার্টি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে।
২০১১ সালে জুন মাসে নির্বাচিত হয়ে রজব তাইয়েব এরদুগান ৩য় বারের মতো সরকার গঠন করেছেন। তিনি সেনা বাহিনীর নিরংকুশ ক্ষমতা কমিয়ে আনার কার্যকর ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুলে এরদুগান সরকার পাতাল রেল চালু করে। এই রেল পথটি এশিয়া এবং ইউরোপ মহাদেশকে যুক্ত করবে। আরটিএনএন এর খবর অনুযায়ী এটি বিশ্বের প্রথম পাতাল রেল পথ।
উল্লেখ্য ১৮৯১ সালে অটোমান সুলতান আব্দুল হামিদ এই পাতাল রেল চালুর পরিকল্পনা করেন এবং এই জন্য তিনি ফরাসী প্রকৌশলী নিয়োগ করেছিলেন। ১৮৫৩ সালের অক্টোবর মাসে তুরস্কের নিয়ন্ত্রিত দারদানেলিস প্রণালী দিয়ে যুদ্ধ জাহাজ চলাচলের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং তুরস্কের খ্রিষ্টানদের রক্ষার অজুহাতে অটোমান সাম্রাজ্যের তুর্কি এলাকায় রাশিয়া আক্রমণ চালালে ক্রিমিয়ার যুদ্ধের সূচনা হয়। রাশিয়ার সঙ্গে এই যুদ্ধ চলে তুরস্ক তথা উসমানিয় বা অটোমান সাম্রাজ্যের মিত্রশক্তি ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং সারডিনিয়ার। ১৮৫৬ সাল পর্যন্ত এই ক্রিমিয়ার যুদ্ধ চলে।
ক্ষমতায় আসার পর থেকেই আইনি, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সংস্কারের মাধ্যমে উদারপন্থী জীবন-দর্শন তুরস্কে আমদানি করতে শুরু করেন মুস্তাফা কামাল আতার্তুক।
যেমন ধর্মনিরপেক্ষতা। তুরস্কের বেশিরভাগ মানুষ মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত। তবু সংবিধানে তুরস্ককে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ দেশ হিসেবে বর্ণনা করা হয়। সরকারি দফতরের কর্মীরা যাতে ধর্মীয় পরিচিতির চিহ্ন বয়ে না বেড়ান, সে জন্য একটি ‘ডিক্রি’ জারি করেন আতার্তুক। আর তার পর থেকেই সরকারি ক্ষেত্রে যে সব মহিলা চাকরি করতে চান, তাঁদের হিজাব পরা মানা।
নব্বই বছর ধরে এই নিয়মই মেনে আসছিল ধর্মনিরপেক্ষ তুরস্ক।
তুর্কি সামরিক বাহিনী প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২০ সালের ৩ মে। তুরস্কের নিয়মিত সেনাসদস্য ৬,৬৪,০৬০ জন, রিজার্ভ আর্মি ৩,৭৮,৭০০ জন এবং আধা-সামরিক বাহিনীতে রয়েছে ১,৫২,২০০ জন সদস্য। সেনা, নৌ, বিমান, ফৌজি-পুলিশ এবং কোস্টগার্ড নিয়ে তুর্কি সশস্ত্রবাহিনী গঠিত। তুরস্কের রয়েছে ৫,২০০টি সাঁজোয়া ট্যাংক, ৩৪টি উভচর যুদ্ধজাহাজ, ২৫টি ফ্রিগেট, ৯টি করভিট যুদ্ধজাহাজ, ৩৩টি পেট্রল বোট, ১৩টি সাবমেরিন, ৪৬৫টি যুদ্ধবিমান, ৩৬টি সাঁজোয়া হেলিকপ্টার এবং ন্যাটোর পরমাণু অস্ত্র।
সারা বিশ্বের সামরিক বাজেটে তুরস্কের অবস্থান শীর্ষ ১৫-তে। তারা বিশ্বের মোট সামরিক ব্যয়ের এক শতাংশ ব্যয় করে থাকে। দেশটির সামরিক বাজেট ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা দেশটির জিডিপির দুই দশমিক তিন শতাংশ। ১৯৫২-তে তুরস্ক ন্যাটোতে যোগ দেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিরপেক্ষ অবস্থান বিশ্বকে চমকে দেয়।
যদিও তুর্কি সেনা কোরিয়ান যুদ্ধের সঙ্গে জড়িত ছিল। সীমান্তযুদ্ধে রাশিয়া, ব্রিটেন, গ্রিস, ফ্রান্স ও ইতালি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। তুরস্কের মোট আয়তন ৭৮৩,৫৬২ বর্গকিলোমিটার।
প্রতি বছর প্রায় ৭. ৫ মিলিয়ন পর্যটক তুরস্ক ভ্রমন করে। আধুনিক তুরস্কের সৃষ্টি হয় ১৯১৮ সালে।
বিখ্যাত ওসমানিয়া সাম্রাজ্যকে কেটে টুকরো টুকরো করে কয়েকটি নতুন দেশের সৃষ্টি হয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।