আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কর্ণফুলী নদী তীরবর্তী ২৪০০ কোটি টাকার ভূম

ভরাট ও বেদখলের প্রতিযোগিতা চলছে কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী ভূমি। ইতোমধ্যেই নদীর তীরবর্তী প্রায় ২৪০০ কোটি টাকার ভূমি বেদখলে চলে গেছে। ফলে চরম হুমকি ও বিপর্যয়ে মুখে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে দেশের অর্থনীতির প্রাণ চট্টগ্রাম বন্দরের। কারণ কর্ণফুলী নদী ভরাট ও বেদখলের চরম নেতিবাচক প্রভাব সরাসরি পড়বে দেশের বৃহত্তম চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের রাজস্ব বিভাগ কর্ণফুলীর উত্তর পাড়ে মোট ১৫৮ দশমিক ৪৪৫৫ একর ভূমিতে অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠে বলে চিহ্নিত করে। এর মধ্যে ৫০ দশমিক ৬৪০০ একর ভূমি নিয়ে মামলা আছে। স্থানীয়ভাবে ১৫৮ একর ভূমির মূল্য দুই হাজার ৩৭০ কোটি টাকা বলে জানা যায়।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষে অবৈধভাবে গড়ে উঠা বসত ও স্থাপনা উচ্ছেদ করতে গত ১১ ফেব্রুয়ারি একটি অভিযানের সামগ্রিক প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু অবৈধভাবে স্থাপন করা মেসার্স প্যাসিফিক মেরিন সার্ভিস অটো গ্রিন ব্রিকস্ নামের একটি ইট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের মামলা দায়েরের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত অভিযানে স্থগিতাদেশ দেন। তবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেওয়া হয় বলে জানা যায়।

ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ বলেন, ভূমি দখল বেদখল বিষয়ে যেহেতু আদালতে একটি মামলা দায়ের আছে, তাই আমাদের প্রথম উদ্যোগ হলো আইনগত প্রক্রিয়াটি থেকে বের হওয়া। এর পর উচ্ছেদের উদ্যোগ নেওয়া হবে। তিনি বলেন, বিষয়টি কেবল চট্টগ্রামের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়, বরং সারা দেশের সঙ্গে। কারণ এই কর্ণফুলীর তীর ঘেঁষেই স্থাপিত দেশের বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর। তাই যে করেই হোক এই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবেই। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, তৃতীয় কর্ণফুলী নদীর উত্তর পাড়ের শাহ্ আমানত সেতুর পূর্ব পাশে ২২ দশমিক ১৪ একর জায়গায় স্থাপন করা হয়েছে মেসার্স প্যাসিফিক মেরিন সার্ভিস অটো গ্রিন ব্রিকস্ নামের একটি ইট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। সেতুর পূর্ব-পশ্চিম দিকে বেড়িবাঁধকে কেন্দ্র করে প্রায় দুই-তিন কিলোমিটার জায়গায় গড়ে উঠেছে পাঁচ-সাত হাজার বস্তিঘর। এর মধ্যে প্রায় দুই হাজার বস্তি নির্মাণ করা হয়েছে ব্যক্তি মালিকানাধীন, পাঁচ হাজার বস্তি গড়ে উঠেছে সরকারি খাস জায়গায়। স্থাপনার মধ্যে আছে কাঁচাঘর, দোকান, ভবন, বালির স্তূপ, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির, মৎস্য প্রকল্প, জসিম উদ্দিন প্রাথমিক বিদ্যালয়, সৎসঙ্গ বিহার, দাতব্য চিকিৎসালয়, প্লাস্টিক ও বোতল কারখানা, পোলট্রি ফার্ম, ২২ একর জায়গায় জিরাত ফ্যাশন গার্মেন্টস। স্থানীয়রা বলেন, গত তিন-চার বছর আগেও তৃতীয় কর্ণফুলী সেতুর পূর্বদিকে কোনো বাড়িঘর ছিল না। গত দু-তিন বছরের ব্যবধানে পুরো এলাকায় এখন বস্তি। এসব বস্তিকে কেন্দ্র করে পুরো বাকলিয়া থানায় বেড়ে গেছে নানা ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড। জমি দখল-বেদখল নিয়ে বিভিন্ন সময় সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। অভিযোগ আছে, রাতের অাঁধারে একটি খালি বা খাস জমিকে টার্গেট করে খুঁটি পুঁতে দেয়। পরে রাতের অাঁধারে জায়গা ভরাট করে বানানো হয় প্লট। এরপর দু'শতক (এক গণ্ডা) করে এসব প্লট ২ থেকে ৩ লাখ টাকা দরে দখলস্বত্ব বিভিন্নজনের কাছে বিক্রি করা হয়। ক্রেতারা এসব প্লটে রাতের অাঁধারে গড়ে তোলে বস্তিঘর। দু'শতকের একটি প্লটে পাঁচ-ছয়টি ঘর বানিয়ে ভাড়া দেয় নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে। প্রতি ঘরের ভাড়া মানভেদে (কাঁচা ও সেমিপাকা) এক হাজার থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এস এম আবদুল কাদের বলেন, কর্ণফুলী নদীর কোলেই গড়ে উঠেছে দেশের অর্থনীতির স্বর্ণদ্বার চট্টগ্রাম বন্দর। কিন্তু নানাভাবে এই কর্ণফুলীর তীর এখন বেদখলের কবলে। জেলা প্রশাসন এই বেদখল থেকে ভূমি উদ্ধারে উদ্যোগ গ্রহণ করে। ইতোমধ্যে একবার অভিযানের জন্য তিনজন সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়। তা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারি সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিও রাখা হয়। কিন্তু আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে ওই অভিযান আর হয়নি। এখন বৃহত্তর স্বার্থ বিবেচনায় এ স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের জন্য আইনগত প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে কর্ণফুলী নদীর বেহাত হওয়া ভূমি উদ্ধার করা হবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.