এশিয়া কাপের হারটা ছিল নিছক দুর্ঘটনা! টি-২০ বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুর্দান্ত জয়ের পর এখন এমনটি বলাই যায়। এশিয়া কাপে হারের পর মানসিক চাপের যে অদৃশ্য চোরাবালিতে ডুবেছিলেন মুশফিকুর রহিমরা, কাল এনামুল হক বিজয়ের উইনিং ছক্কার সঙ্গে সেই আকাশছোঁয়া চাপ মুহূর্তে মিলিয়ে যায় বসন্তের বিকালের সুনীল আকাশে।
টি-২০ বিশ্বকাপ নিয়ে যে উন্মাদনা, যে আবেদন দেশজুড়ে; তার পুরোটাই চাপা পড়েছিল বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচের জন্য। দুই অসম শক্তির ম্যাচ নিয়ে গত কয়েকদিন আড্ডার টেবিলে যে ঝড় উঠেছিল, কাল সেই অশান্ত ঝড়কে শান্ত করে দেন মুশফিকরা ৯ উইকেটের বড় ব্যবধানে জিতে। এই জয় যেমন টাইগারদের নতুন প্রাণশক্তি দিয়েছে, তেমনি পরিষ্কার করে দিয়েছে আফগানিস্তানের সঙ্গে শক্তির ব্যবধানটাও। এ জয়ে টি-২০ বিশ্বকাপে টানা ১০ হারের ধাক্কাটাও সামলে নিয়েছে টাইগাররা। আফগানদের বিপক্ষে কালকের জয়টি টাইগারদের টি-২০ ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জয়। আগেরটি ছিল ২০১২ সালে দ্য হেগে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৮ উইকেটের ব্যবধানে। টি-২০ বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে ভারত, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলতে আফগানদের হারানোটা জরুরি ছিল মুশফিকদের। কাল সেই কাজটা সহজভাবে করে নেন টাইগাররা। বাছাইপর্বে এখনো দুই ম্যাচ বাকি। প্রতিপক্ষ প্রথমবারের মতো টি-২০ বিশ্বকাপ খেলতে আসা নেপাল ও হংকং। কাল যে ক্রিকেট খেলেছেন মুশফিকরা, তাতে চূড়ান্ত পর্বে খেলার ক্ষণ গণনা করতে পারেন এখন থেকেই। এশিয়া কাপের হারটা ছিল ৩২ রানে। ওই হারে খোলনলচে পাল্টে গিয়েছিল টাইগারদের। লজ্জায় নুইয়ে পড়েছিল মুশফিকদের মাথা। হিমালয়সম চাপ নিয়ে কাল খেলতে নেমেছিলেন মুশফিকরা। চাপকে পাথর চাপা দিয়ে কাল ম্যাচের প্রথম বল থেকেই দুর্বার গতিতে হানা দিয়ে সব প্রতিরোধ গুঁড়িয়ে দেন প্রতিপক্ষ শিবিরের। প্রথম বলে মাশরাফি যে আঘাত হানেন, ১৮ নম্বর ওভারের প্রথম বলে তার ইতি টানেন সাকিব আল হাসান। ওয়াইড (৩), নো বলসহ (২) মোট ১০৮ বলের খরচে মাত্র ৭২ রানে গুঁড়িয়ে দেয় আফগানিস্তানকে। যা যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটির টি-২০ ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বনিম্ন স্কোর। আগের সর্বনিম্ন স্কোর ছিল ৮০। যা ছিল ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। এ ছাড়া বাংলাদেশের বিপক্ষেও এই স্কোরটি যে কোনো দেশের সর্বনিম্ন স্কোর। কাল আফগানিস্তান বধে প্রথম আঘাত হেনেছিলেন মাশরাফি। সেই ধারাবাহিকতা ধরে রেখে কাজগুলো সুচারুরূপে শেষ করেন সাকিব, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, আব্দুর রাজ্জাক রাজরা। প্রতিপক্ষের স্পিন খেলার দুর্বলতা ভালোভাবে জেনেই কাল চার স্পিনার ব্যবহার করেন স্বাগতিক অধিনায়ক। সফলও হন। চার স্পিনার মোট বোলিং করেন ১২.১ ওভার। ৩৭ রানের খরচে স্পিনাররা উইকেট নেন ৬টি। টার্গেট মাত্র ৭৩ রান। ওভার প্রতি স্ট্রাইক রেট ৩.৬৫। চার-ছক্কার মারাকাটারি ক্রিকেটে যা বড্ড বেমানান। কাল তাই করে দেখালেন এনামুল, তামিম ইকবাল ও সাকিবরা। দুই ওপেনার এনামুল ও তামিম ৭.৪ ওভারে ৪৫ রান যোগ করে স্কোরবোর্ডকে শক্ত ভিত দেন। ইনজুরির জন্য শ্রীলঙ্কা সিরিজ এবং এশিয়া কাপ মিস করা তামিম কাল খেলেন ২৭ বলে ২ চারে ২১ রানের সংযমী ইনিংস। তবে দুরন্ত ছিলেন দুটি প্রস্তুতি ম্যাচে রান খরা ভোগা এনামুল। ৪৬ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন মাত্র ৩৩ বলে। যাতে ছিল ৪টি চার ও ৩টি ছক্কা। যার একটি আবার ইউনিং ছক্কা। দুই দলের স্কোর সমান ৭২, তখনই শেষ বলে লেগ স্পিনার সামিউল্লাহ শেনওয়ারীকে উইনিং ছক্কাটি মারেন এনামুল। তখনও ম্যাচের বাকি ৮ ওভার। আর ম্যাচ সেরা সাকিব অপরাজিত থাকেন ১০ রানে। দুরন্ত, দুর্বার গতির ক্রিকেট খেলে যেমন প্রাণশক্তি ফিরে পেয়েছে বাংলাদেশ। তেমনি লম্বা বাজির ঘোড়া হিসেবেও ক্রিকেটপ্রেমীদের স্বপ্ন দেখার রসদ যুগিয়েছেন মুশফিকরা। এখন শুধু অপেক্ষা।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।