১ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে প্রযুক্তিবিদ সজীব ওয়াজেদ জয়ের বক্তব্যের সঙ্গে আমি একমত। আমরা বরাবর বলে আসছি স্থানীয় সরকার নির্বাচন যেখানে শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয়ভাবে প্রার্থী ঘোষণার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিকভাবে এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের সরব প্রচারণায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে সেখানে অবশ্যই তা দলীয়ভাবে হওয়া উচিত। সোমবার রংপুরের পীরগঞ্জের ফতেপুরের পৈতৃক বাড়ি জয়সদনে এক কর্মী সম্মেলনে সজীব ওয়াজেদ জয় এ কথা বলেছেন। পশ্চিমা শিক্ষায় উচ্চশিক্ষিত সজীব ওয়াজেদ জয় রাজনীতিতে আসছেন নাকি রাজনীতিতে এসেছেন সেই প্রশ্নের আনুষ্ঠানিক নিষ্পত্তি না হলেও তিনি এ দেশের আইটি সেক্টরে তার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একজন পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন। এমনকি নানা আয়োজনে তরুণ সমাজসহ নানা স্তরের মানুষের মুখোমুখিও হচ্ছেন। রাজনৈতিক সমাবেশেও তাকে দেখা যাচ্ছে। আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে কবে কখন কীভাবে তার অভিষেক ঘটবে তা হয়তো সময়ের ব্যাপার। সজীব ওয়াজেদ জয় বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে যখন প্রথম সস্ত্রীক দেশে এসেছিলেন তখন জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে যুবলীগের এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, বেসরকারি খাতে সব ছেড়ে দিতে হবে। সরকারের হাতে সব কিছু রাখার প্রয়োজন নেই। সরকার নীতি প্রণয়ন আর মনিটর করবে। তার সেই বক্তব্যের সঙ্গেও আমি একমত। অনেকেই একমত। আজকের লেখার প্রসঙ্গ সজীব ওয়াজেদ জয়ের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ঘিরে নয়। ছেলেবেলায় যে ছেলেটি বলেছিল বড় হয়ে পাইলট হবে সে এখন প্রযুক্তিবিদ হয়েছে। রাজনীতির পথপরিক্রমা তাকে কোথায় নিয়ে যাবে তা ভবিষ্যৎই বলতে পারে। তবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে করার যে মতামত দিয়েছেন তা রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও সরকারকে ইতিবাচকভাবে এখনই গ্রহণ করার সময় এসেছে। না হয় নির্বাচন কমিশন বা আইন, বিধিবিধানের দৃষ্টিতে সিটি করপোরেশন থেকে উপজেলা, পৌরসভা হয়ে ইউপি নির্বাচন পর্যন্ত যেসব স্থানীয় নির্বাচন হচ্ছে তা শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিকভাবেই ভোটের যুদ্ধে পরিণত হচ্ছে। কিন্তু এর সঙ্গে রাজনৈতিক শক্তির ও নির্বাচন কমিশনের নৈতিক বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
২. জয় যথার্থই বলেছেন, নির্বাচনের পর দলীয়ভাবে ফলাফল বিবেচনা করা হয়। রাজনৈতিক দলগুলো নির্দলীয় নির্বাচনে রাজনৈতিকভাবে দলীয় অবস্থান থেকে প্রার্থী ঘোষণার মাধ্যমে ভোটের লড়াইয়ে মাঠে নামায় গণমাধ্যমসহ দেশের মানুষ ফলাফলকে দলীয়ভাবেই গুনছে। পশ্চিমা দুনিয়াসহ বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতেও দলীয় প্রতীক বরাদ্দ দিয়ে প্রার্থী ঘোষণার মাধ্যমে স্থানীয় নির্বাচন রাজনৈতিক দলগুলো করছে। আমাদের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় নেতারা প্রার্থীদের পক্ষে দুয়ারে দুয়ারে যান। মরণ লড়াই হয় রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে। পৌর নির্বাচনেও হয়। উপজেলা নির্বাচনে হচ্ছে। সামনে ইউপি নির্বাচনেও হবে। পৌর ও ইউপি নির্বাচনের আগেই দলীয়ভাবে প্রতীক বরাদ্দের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিধিবিধান ও আইন প্রণয়ন করার সময় কর্তৃপক্ষের দরজায় কড়া নাড়ছে। সেই সঙ্গে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে জনগণের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে সম্পন্ন করার বিষয়টি আরও গুরুত্বসহ সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে ভাবতে হবে এবং সেই পদক্ষেপ নিতে হবে। স্থানীয় সরকারের কর্মকাণ্ডে মন্ত্রী-এমপিদের খবরদারি ও ক্ষমতা খর্ব করে দিতে হবে। গণতন্ত্রকে তৃণমূল পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে গেলে এর বিকল্প নেই। সংসদ সদস্যরা জাতীয় স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে প্রাণবন্ত বিতর্ক, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নীতিমালা প্রণয়ন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও আইন প্রণয়নের সীমানায় থাকবেন এটাই সংসদীয় গণতন্ত্রের ধারা। সেই ধারা থেকে বিচ্যুত হওয়ার কারণে যখন যারা ক্ষমতায় এসেছেন সংসদ সদস্যদের ক্ষমতা বাড়িয়েছেন, অন্যদিকে স্থানীয় সরকারকে দুর্বল থেকে দুর্বল করেছেন। বিশেষ করে উপজেলা পরিষদের ক্ষমতা বাড়ানো বিগত শাসনামলেও মানুষের দাবি ছিল। এবার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে। এমনকি জেলা পরিষদে সরকারি দলের মাঠ নেতাদের দিনের পর দিন প্রশাসক হিসেবে বসিয়ে রাখা গণতান্ত্রিক চিন্তা-চেতনা, রীতি-নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এটিকেও নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে শক্তিশালী করা এখন সময়ের দাবি। ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন না হওয়ার কারণে জনগণের কাছে জবাবদিহিতার দায় থেকে দুই সিটির প্রশাসক মুক্ত। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নেই। ঢাকা নগরবাসী কার্যত অসহায় এতিমের অবস্থায় আছেন। দীর্ঘ দিন ধরে অনির্বাচিতদের হাতে যেমন দেশের রাজধানী ঢাকা সিটি করপোরেশন নিরাপদ নয় তেমনি নির্বাচনবহিভর্ূতভাবে গণতন্ত্রের জমানায় ঢাকা সিটি চলতে পারে না। জয়-পরাজয় বড় কথা নয়, ঢাকার বাইরের সিটি করপোরেশনগুলোয় সরকার যদি পরাজয় মেনে নিতে পারে তাহলে প্রায় দেড় কোটি মানুষের ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে আপত্তি কোথায়? ঢাকা নগরীর রাস্তাঘাট, ফুটপাতসহ সব নাগরিক সেবা খাতে দৈন্যদশা চলছে। নগরবাসী চরম অসন্তুষ্ট। নগরবাসী এখন তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি চায়। নাগরিক সেবা চায়। সুন্দর রাস্তাঘাট, পরিচ্ছন্ন নগরজীবন ও হকারমুক্ত ফুটপাত চায়।
৩. দেশের একটি বড় রাজনৈতিক শক্তির বর্জনের মুখে অনুষ্ঠিত ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংবিধান ও গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখলেও তা যে প্রশ্নবিদ্ধ সেটি সবাই জানেন। বাংলাদেশ প্রতিদিনের পঞ্চম বর্ষে পদার্পণের উৎসবে সব মহলের প্রতিনিধিই এসেছিলেন। আনন্দ আয়োজনের এক ফাঁকে অনেকের সামনে বিএনপির কারাবন্দি ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জমে ওঠা আড্ডায় এই বলে সবাইকে আমোদে হাসিয়েছেন যে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি-মুনের প্রতিনিধি তারানকো যখন নির্বাচনের আগে দুই দলের নেতাদের নিয়ে সমঝোতা বৈঠকে বসেছিলেন তখন, মির্জা ফখরুল নাকি আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা তোফায়েল আহমেদকে বলেছিলেন 'আপনার ঊনসত্তরের বর্ণাঢ্য জীবন, আপনারা যদি উদ্যোগ না নেন, কিছু না বলেন তাহলে কীভাবে হবে?' উত্তরে রসিকতার ছলে তোফায়েল আহমেদ নাকি বলেছিলেন, 'এরশাদ সাহেব একটি নির্বাচন করেছেন, আপনারা একটি করেছেন, এবার আমাদের একটি করতে দিন।' তোফায়েল আহমেদের কথা শুনে সবাই শুধু হেসেছিলেন। নির্বাচনের মাধ্যমে আর যাই হোক দীর্ঘ সহিংস রক্তপাতের এক মহাপ্রলয় থেকে দেশের জনগণ, অর্থনীতি ও জানমাল রক্ষা পেয়েছে। গণতন্ত্রের যাত্রাপথ নির্বিঘ্ন থেকেছে। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় ৫ জানুয়ারির নির্বাচন আশীর্বাদ না অভিশাপ তা সময়ই বলে দেবে। কিন্তু নির্বাচন-উত্তর সরকার গঠন মানুষের মাঝে ক্ষীণ আশার আলো জাগিয়েছে। অনেকেই প্রত্যাশা করেন আগামীতে সবার অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য মধ্যবর্তী জাতীয় নির্বাচনের। নির্বাচন বর্জনকারীরা ও তাদের বিদেশি মিত্ররা ওই সময় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিল ও নতুন নির্বাচনের যে দাবি করেছিলেন তা থেকে বেশ আগেই সরে গেছেন। রাজনীতিতে নাটকীয়ভাবে সরকার বা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বধীন জোট নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। সরকারের মন্ত্রিসভায় একদিকে অভিজ্ঞ, প্রাজ্ঞ অন্যদিকে মাঠের দীর্ঘ পোড় খাওয়া নেতা আর নবীনের সমন্বয় ঘটায় পরিস্থিতি মোকাবিলা আরেকটু সহজ হয়েছে। মানুষের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। কিন্তু একই সঙ্গে সংসদ কতটা প্রাণবন্ত হবে, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ভাষায় 'মাথা সরকারের লেজ বিরোধী দলের' জাতীয় পার্টিকে সংসদে কতটা বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে দেবে, কতটাই বা সংসদে প্রাণবন্ত বিতর্ক হবে সেই প্রশ্ন রয়ে গেছে। বিএনপি নিঃসন্দেহে শক্তিশালী বিরোধী দল। কিন্তু বিগত দিনগুলোয় সংসদে জাতীয় ইস্যু নিয়ে বিতর্কের মুখোমুখি না হয়ে এবং অব্যাহত সংসদ বর্জনের কারণে জাতীয় পার্টিকে এ কথা বলার সুযোগ দিয়েছে যে তারা সংসদ বর্জন করবে না, ভালোকে ভালো, খারাপকে খারাপ বলতে দ্বিধা করবে না। বিএনপি নেতারা আরেকদফা জেলে গেছেন। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ও তার পুত্রদের ব্যাপারে সরকার কী পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে তা নিয়ে নানা কথাবার্তা হচ্ছে। বিএনপি এখনো কঠিন চাপের মুখেই আছে। এমনি অবস্থায় দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রাণহীন অবস্থা বিরাজ করছে। আন্দোলনও নেই, সুশাসনও নেই। সংসদীয় গণতন্ত্রের উজ্জ্বল মহিমাও নেই। সব মিলিয়ে মানুষের মাঝে আগে যে প্রশ্ন হতো জোরেশোরে, এখন সে প্রশ্ন হচ্ছে ধীরলয়ে। এবার প্রশ্ন হচ্ছে এ সংসদ কত দিন থাকবে? পাঁচ বছর নাকি সামনে আরেকটি নির্বাচন? কী হচ্ছে?
৪. তিন দফা উপজেলা নির্বাচনে সরকারি দলের বিরুদ্ধে অনেক জায়গায় কেন্দ্র দখলের অভিযোগ উঠেছে। কোথাও কোথাও যে একেবারে নিছক অভিযোগ তাও সত্য নয়। কিন্তু নির্বাচনটি হয়েছে মূলত আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের তৃণমূলের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের লড়াই হিসেবে। সেখানে ফলাফল দলীয়ভাবে বিশ্লেষণে যে চিত্র ফুটে উঠেছে তাতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বিজয়ী হয়নি, বিজয়ী হয়েছে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন বাতিল হওয়া যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামী। তিন দফা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১২০, বিএনপি ১২৪ ও জামায়াত ২৮টিতে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছে। সাধারণ ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ ৮৮, বিএনপি ১০০ ও জামায়াত ৭৯টিতে জয়লাভ করেছে। নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ ১০১, বিএনপি ১০২ ও জামায়াত ২৩টিতে বিজয়ী হয়েছে। তৃণমূলবিস্তৃত এ ভোটযুদ্ধে আওয়ামী লীগ-বিএনপি লড়াই করেছে আওয়াজ দিয়ে। জোরেশোরে। বিএনপি বিদ্রোহী প্রার্থী দমনে যতটা সফল হয়েছে আওয়ামী লীগ ততটা পারেনি। আওয়ামী লীগের তৃণমূলবিস্তৃত রাজনৈতিক শক্তি বহু বছরের। এ উপমহাদেশের এক ঐতিহ্যবাহী তৃণমূলবিস্তৃত প্রাচীন রাজনৈতিক দলের নাম আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সেনাশাসক জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠা করলেও রাজনীতিতে নানা ভাঙা-গড়া, উত্থান-পতনের পথে এ দলটি আওয়ামী লীগবিরোধী রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবিভর্ূত হয়ে বহাল রয়েছে। নব্বই-উত্তর গণতন্ত্রের জমানায় ভোটের লড়াইয়ে বার বার দুই দল ক্ষমতায় এসেছে। তিন দফা অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে দুই দল সমানে সমান লড়েছে। কিন্তু দুটি রাজনৈতিক দল ও দেশের সিভিল সোসাইটি বা বোদ্ধারা কিংবা মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান দিয়ে পথহাঁটা বুদ্ধিজীবীরা যে দলটিকে ভোটের ময়দানে আমলই দেননি সেই যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামী নীরবে নিভৃতে আলাদা নির্বাচন করে কিস্তিমাত করেছে। যে দলটি সুমহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সক্রিয় সহযোগী হিসেবে নিন্দিত, অভিযুক্ত, যে দলের নেতারা কেউ যুদ্ধাপরাধের বিচারে ফাঁসিতে ঝুলছেন, কেউ বা কারা-অন্ধকারে পড়ে আছেন, কেউ বা রয়েছেন পলাতক, একদিকে তাদের সহিংস সন্ত্রাস, অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অ্যাকশনের মুখে বিপর্যস্ত তারা বিশাল বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে। আলাদা ভোটের মাধ্যমে বিএনপিকে জানিয়ে দিয়েছে তাদের ছাড়া বিএনপির দিন চলবে না। অন্যদিকে সরকার বা আওয়ামী লীগকে জানিয়ে দিয়েছে তাদের গণভিত্তি একেবারে দুর্বল নয়। দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের শরিক দলের বড় বড় নেতাদের সংগঠন যেখানে উপজেলা নির্বাচনে দাঁড়াতেই পারেনি সেখানে তারা এত বিপর্যয়ের মুখে বিশাল সাফল্য অর্জন করেছে। আওয়ামী লীগ সরকার জাতীয় ঐক্যের সরকার হলেও মাঠের রাজনীতিতে শরিকদের নিয়ে সুসংগঠিত অবস্থান যে নিতে পারেনি উপজেলা নির্বাচনের ফলাফল তা আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। এমনকি আওয়ামী লীগ নামের দলটি সাংগঠনিকভাবে নেতা-কর্মীদের সুসংগঠিত করে অতীতের অনেক কঠিন সময়ের মতো একক প্রার্থী নিয়ে মাঠে নামতে পারেনি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে উপলব্ধি করতে হবে সুমহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশের জনগণের হৃদয় জয় করে সৎ, গণমুখী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড দিয়েই অগ্রসর হতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের কথা বলে জুলুম-নির্যাতন, প্রতিহিংসার রাজনীতি, দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট দিয়ে দেশজুড়ে গণবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে '৭১-এ পরাজিত শক্তিকে রুখে দাঁড়ানো যাবে না। লড়াইটা রাজনৈতিকভাবে আদর্শিক করতে হলে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য সৎ, আদর্শবান, গণমুখী চরিত্রের রাজনৈতিক নেতা-কর্মী নিয়েই সংগঠন পরিচালনা করতে হবে। জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীরা সুসংগঠিতভাবে ইবাদতের মতো তাদের প্রার্থীকে জয়লাভ করাতে গোপনীয়তার সঙ্গে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে গেছেন। বোরকা পরিহিত জামায়াতের মহিলা কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মহিলাদের কোথাও ধর্মের দোহাই, কোথাও বা আর্থিক সহযোগিতা সুনিপুণভাবে দিয়েছেন। তারা ভোটকে কোথাও কোথাও ধর্মযুদ্ধের মতো বা কোথাও কোথাও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার লড়াই হিসেবে মানুষকে পক্ষে টানতে চেষ্টা করেছেন। এবং বড় ধরনের সাফল্য দেখিয়েছেন। বিএনপি শাসনামলে অনেক দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, ক্ষমতার দাপট মানুষ ভুলতে পারেনি। সেই সঙ্গে ছিল দলীয় কোন্দল। আওয়ামী লীগেরও তৃণমূলবিস্তৃত দুর্নীতিবাজ, টেন্ডারবাজ সিন্ডিকেটনির্ভর অপশাসন মানুষ মানতে পারেনি। সেই সঙ্গে দল কোন্দলমুক্ত হয়ে নামতে পারেনি মাঠে। মানুষের অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি। মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান নিয়ে যারা সারা দেশে গণজাগরণ মঞ্চ তৈরি করেছিলেন তারাও মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক শক্তির প্রার্থীর পক্ষে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যেমন ভূমিকা রাখেননি, তেমনি উপজেলায়ও যাননি। কিন্তু গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন, যুদ্ধাপরাধের বিচার ঘিরে রাজনীতিতে সরকারের দমননীতির মুখে পতিত জামায়াতে ইসলামীর মতো দলের সাংগঠনিক শক্তি ভোটের ময়দানে ছিল অনেক সুসংহত। তৃণমূল ভোটযুদ্ধে আদর্শের লড়াই জামায়াতের কাছে যতটা গুরুত্বপূর্ণ ও অস্তিত্বের সঙ্গে জড়া&
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।