আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজও বাস্তবায়ন হয়নি তদন্ত রিপোর্টের সুপারù

২০০১ সালের নির্বাচন পর সারা দেশে সংঘটিত সহিংস ঘটনা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও বিভিন্ন এলাকায় সংখ্যালঘুদের সম্পদ জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিশনের রিপোর্টের সুপারিশ আজও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়নি সরকার। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে সংঘটিত সেই বর্বর ও রোমহর্ষক ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট বাস্তবায়নে সরকারের অগ্রগতি না দেখে হাইকোর্ট বিভাগ সম্প্রতি রিপোর্টটি জনসম্মুখে তুলে ধরতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্ত কমিশনের রিপোর্টের দ্রুত বাস্তবায়ন দেখতে চেয়ে হাইকোর্ট বিভাগ নিজ উদ্যোগে (সুয়োমোটো) সম্প্রতি রুলনিশি জারি করেন। হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট গেজেট আকারে ৩ এপ্রিলের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে হবে। আদালতের রেকর্ড অনুযায়ী কোনো তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট গেজেট আকারে প্রকাশের রেকর্ড নেই। এবারই প্রথম এই স্পর্শকাতর ইস্যুতে গঠিত তদন্ত কমিশনের রিপোর্টটি গেজেট হতে যাচ্ছে।

জানা গেছে, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংস ঘটনা তদন্তে বিশিষ্ট আইনজীবী সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে সভাপতি করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনের অন্য দুই সদস্য ছিলেন তৎকালীন পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (সিআইডি) মীর শহুদুল ইসলাম ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন উপ-সচিব মনোয়ার হোসেন। ২০১১ সালের ২৪ এপ্রিল কমিশন তদন্ত রিপোর্টটি সরকারের কাছে পেশ করেন। রিপোর্টে বলা হয়- নির্বাচনের পর সারা দেশে ৫ হাজার ২২৫টি অভিযোগের মধ্যে ৩ হাজার ৩২৫টি আমলে আনা হয়। কমিশন কর্মকর্তারা এক বছর তিন মাস তদন্ত শেষে এ রিপোর্ট পেশ করেন।

কমিশন কর্মকর্তারা সংঘটিত ঘটনাবলিকে চিহ্নিত করেছেন পাশবিক ও হিংস হিসেবে। এ ঘটনাকে বলা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী শক্তির বাংলাদেশজুড়ে নারকীয় তাণ্ডব হিসেবে। তদন্তে বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের হত্যা, ধর্ষণ, সম্পত্তি থেকে উচ্ছেদ, সম্পদ লুণ্ঠন, জোরপূর্বক চাঁদা আদায়, শারীরিক নির্যাতন ও অগি্নসংযোগের মতো অসংখ্য ঘটনার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। তদন্ত কমিটির রিপোর্টে অভিযোগের সত্যতা নিরূপণ করে তৎকালীন জোট সরকারের প্রায় ২৬ হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক ক্ষতিপূরণসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে পরবর্তীতে এ ধরনের সহিংসতা এড়ানোর বিষয়েও সুপারিশ করা হয়। তদন্তে কমিশনের কাছে প্রমাণিত হয়েছে এ ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল এবং একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বানাতে অন্তরায় সৃষ্টির জন্যই এসব সহিংসতা ঘটানো হয়। এখানে ধর্মীয় মৌলবাদের উত্থান, সংখ্যালঘুদের দেশ থেকে বিতাড়ন, ভোটব্যাংকে ভারসাম্য সৃষ্টি করা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভূলুণ্ঠিত করে ধর্মীয় মৌলবাদ ও পাকিস্তানের ভাবধারায় বাংলাদেশকে রূপান্তরের অপচেষ্টাই ছিল এ সহিংসতার মূল নিয়ামক শক্তি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কমিশনের তৎকালীন সভাপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেন, এটি একটি অসম্ভব কাজ ছিল। আমরা বিবেকের তাড়নায় এ অসম্ভবকে সম্ভব করতে পেরেছি। আমাদের এ সুপারিশ যথাসময়ে কার্যকর হওয়া উচিত ছিল। এটি কার্যকর না হওয়ার নেপথ্যে কতিপয় আমলা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব ছিল।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.