বাংলাদেশ সরকার নেপালের কাছ থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ক্রয়ে আগ্রহী। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নেপালের কার্নালি ও মারসাংদি-২ এ দুটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে মোট ১৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপানের সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে সম্প্রতি নেপাল সরকার বাংলাদেশকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ক্রয়ের প্রস্তাব দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ৮৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সম্ভাবনাময় দেশ নেপাল থেকে বাংলাদেশ সরকার সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ ক্রয়ে আগ্রহী। এক্ষেত্রে নেপালের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রাথমিক পর্যায়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ-ভারত-নেপালের সেক্রেটারিয়েট পর্যায়ের আলোচনাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ার ইসলাম। খুব শ্রীঘই বাংলাদেশ তাদের দেশ থেকে বিদ্যুৎ সুবিধা পাবে না। এ জন্য ২০২০ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। জানা যায়, এ প্রকল্প একত্রে বাস্তবায়ন করছে নেপাল পারচেস এনার্জি করপোরেশন লি. (আইএফসি), ইন্ডিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার মেজর (জিএমআর) গ্রুপ এবং ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি)।
ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি প্রক্রিয়া শুরুর পর আন্তঃদেশীয় বিদ্যুৎ বাণিজ্যের মাধ্যমে নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ের পরিকল্পনা করে সরকার। এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা জানান, দেশে বর্তমানে বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়াতে এবং ভারসাম্যপূর্ণ জ্বালানি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বিভিন্ন ধরনের বিদ্যুৎ আমদানির ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন। তবে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে যাওয়ার আগে আমদানিকৃত বিদ্যুতের মূল্য উৎপাদিত বিদ্যুতের ব্যয়ের সঙ্গে যেন সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সচিব ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, আগামী ৫ থেকে ১০ বছরে বাংলাদেশ নেপাল থেকে সাশ্রয়ী মূল্যে ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেতে পারে। ভারতও নীতিগতভাবে ক্রস বর্ডার ট্রেডের মাধ্যমে বাংলাদেশের নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে আইনগত সিদ্ধান্ত হয়নি। বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ার ইসলামের নেতৃত্বে বিদ্যুৎ বিভাগের চার সদস্যবিশিষ্ট একটি দল চলতি মার্চের ৪ থেকে ৬ তারিখ নেপাল সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে এক বৈঠকে অংশ নেন। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে চাইলে বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ার ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, 'যেহেতু নেপালের ৮৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে, ভবিষ্যতে দেশটিতে আরও বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে। সে সময় নেপাল থেকে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ কিনতে পারবে বাংলাদেশ। নেপালের দুটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে মোট ১৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। এর মধ্যে নেপাল আমাদেরকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ক্রয়ের প্রস্তাব দিয়েছে। আমরা তাদের প্রস্তাবে আগ্রহী। তবে আপাতত এ বিষয়ে প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনা হলেও এ প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ-ভারত-নেপালের সেক্রেটারিয়েট পর্যায়ের আলোচনাই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, নেপাল সরকারের কথা অনুযায়ী আমরা আশা করছি, ২০২০ সালের মধ্যে নেপাল থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আনা সম্ভব হবে। কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে জিএমআরের কাছে বাংলাদেশ ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ক্রয়ের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে। জিএমআর এ প্রস্তাব গ্রহণ করে। সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশের জ্বালানি সম্পদ সীমিত হয়ে আসার কারণে সরকার এ ধরনের একটি মুক্ত জ্বালানি বাজার ব্যবস্থার সুযোগ নিচ্ছে। এ থেকে বাংলাদেশ কম দামে বিদ্যুৎ ক্রয়ের সুযোগ পাবে। পাওয়ার সেল সূত্রে জানা যায়, এ জন্য প্রকল্প ব্যয় হবে এক বিলিয়ন ইউএসডি। আইএফসি বাংলাদেশকে এ জন্য অর্থ সাহায্য দেবে। অন্যদিকে নেপাল সরকার মারসাংদি-২ প্রকল্পটিকে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হিসেবে চিহ্নিত করেছে। নেপালের ৮৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে জলবিদ্যুৎ থেকেই ভবিষ্যতে ৪৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ তৈরির সম্ভাবনা আছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।