জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল, উপজেলা পদ্ধতির প্রবর্তক এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিকে পেছনে ফেলে সদ্য সমাপ্ত উপজেলা নির্বাচনে তৃতীয় শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিতর্কিত দল জামায়াতে ইসলামী। উপজেলা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বিপর্যস্ত এ দলটি। আর প্রধান বিরোধী দল হয়েও চরম বিপর্যয় ঘটেছে জাতীয় পার্টির। অরাজনৈতিক এ নির্বাচনে প্রথম অবস্থানে রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সংসদের বাইরে থাকা বিএনপি।
তৃতীয় অবস্থান পেয়েছে জামায়াত। আর বর্তমান সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির অবস্থান কোথাও নেই।
রাজনীতিতে তৃতীয় শক্তি জামায়াত : উপজেলা নির্বাচনের ফল অনুযায়ী রাজনীতিতে তৃতীয় শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে জামায়াতে ইসলামী। আর পাঁচ দফায় ৪৫৫টি উপজেলা নির্বাচনে ৩৬টিতে চেয়ারম্যান, ১১৮টিতে ভাইস চেয়ারম্যান এবং ৩৪টিতে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করেছেন জামায়াত-সমর্থিত প্রার্থীরা। পাঁচ দফায় চেয়ারম্যান পদে ১২৪, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৮৩ এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫১টিতে প্রার্থী দিয়েছিল দলটি।
গত পাঁচ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের সাঁড়াশি আক্রমণের শিকার জামায়াত আর মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারবে কি না এ নিয়ে সন্দিহান ছিলেন অনেকে। যারা জামায়াতকে ইতিবাচকভাবে মূল্যায়ন করেন তাদেরও আশঙ্কা ছিল দলটি অন্তত ১০ বছর পিছিয়ে গেছে। তবে চলমান উপজেলা নির্বাচনে সে ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। নির্বাচনে অকল্পনীয়ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে জামায়াত। কোন জাদুর কাঠিতে জামায়াত এ সাফল্য পেয়েছে তা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে।
তবে বাস্তবতা হলো প্রবল প্রতিকূল পরিস্থিতি পেরিয়েই দেশের তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের উত্থান ঘটেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা জামায়াতের এ সাফল্য নিয়ে বিশ্লেষণে রাজি নন। তবে দলটির ভালো ফলাফলের কারণ সম্পর্কে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মে. জে. (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, জামায়াত বিজয়ী হয়েছে তাদের একটা নির্দিষ্ট এলাকায়। পাকিস্তান আমল থেকেই ওই অংশটা তাদের নিয়ন্ত্রণে। আর দেশের অন্যান্য জায়গায় বিজয়ী হওয়ার কারণ তৃণমূলে আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব, বিএনপির সমর্থন এবং নিজ দলের প্রার্থীদের বিভিন্ন সূত্র থেকে গোপনে অর্থ জোগান।
তিনি বলেন, '১৯৯১ সালে জামায়াতের যে-পরিমাণ ভোট ছিল, আজ তা-ই আছে। বেশ কয়েকটি উপজেলায় জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ী হওয়ায় তারা ক্রমে শক্তিশালী হয়ে যাচ্ছে, এটি মনে করি না। '
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সামগ্রিকভাবে দিনকাল ভালো যাচ্ছে না জামায়াতের। তাদের ভাষ্য অনুয়ায়ী, ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সরকার জামায়াতের ওপর অবর্ণনীয় জুলুম-নির্যাতন চালিয়েছে। এখনো তা অব্যাহত আছে।
কেন্দ্রীয়, মহানগর, জেলা নেতৃবৃন্দসহ প্রায় ৫০ হাজার নেতা-কর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। বর্তমানে তাদের অনেকে জামিনে আছেন। তাদের ভাষ্য, জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে প্রায় ৩০ হাজার মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামি করা হয়েছে আট লাখের বেশি নেতা-কর্মীকে। কেন্দ্রীয় ও মহানগরসহ জেলা ও থানা পর্যায়ের অধিকাংশ কার্যালয় বন্ধ করেছে পুলিশ।
তবে সবকিছু মোকাবিলা করে উপজেলা নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দলটি। জামায়াতের ফল ভালো করার কারণ হিসেবে দলটির মূল্যায়ন, সাংগঠনিক ঐক্যই দলটিকে বিজয়ের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিতে সহায়তা করেছে। বিএনপির সঙ্গে জোটগত অবস্থান, তৃণমূল পর্যায়ে বড় দুই দলের নেতাদের অনৈক্য, সাধারণ মানুষের সরকারবিরোধী মনোভাব, জামায়াত-শিবিরের সাংগঠনিক ঐক্যের সুফল মিলেছে উপজেলা নির্বাচনে।
যে জন্য জাতীয় পার্টির বিপর্যয় : অরাজনৈতিক উপজেলা নির্বাচনের পাঁচ ধাপে জাতীয় পার্টির দুজন চেয়ারম্যান আর চারজন ভাইস চেয়ারম্যান বিজয়ী হয়েছেন। প্রথম দফায় জাতীয় পার্টি মাত্র ১১ জনকে সমর্থন দিতে পারলেও পরবর্তী সময়ে দলের পক্ষ থেকে কাউকে সমর্থন দেওয়া সম্ভব হয়নি।
জানা গেছে, নেতৃত্বের বিরোধ, সংশয়, প্রার্থী দিতে না পারাসহ নানা কারণে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভয়াবহ বিপর্যয়ে পড়েছে জাতীয় পার্টি। জাতীয় সংসদে রওশন এরশাদ ও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মধ্যে নেতৃত্বের বিরোধ জিইয়ে রেখেছেন পার্টির কয়েকজন নেতা। তারা চান, পার্টিতে রওশনের কর্তৃত্ব। তবে সারা দেশে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা চান এরশাদকে। নেতৃত্বের এ দ্বন্দ্ব নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি করছে।
এর প্রভাব পড়েছে দলে। ভোটের রাজনীতিতে তাই পিছিয়ে পড়েছে জাতীয় পার্টি। এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান, দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা জানান, এরশাদ ও রওশনের টানাপড়েনের কারণেই মূলত দলটির তৃণমূল পর্যায়ে এ অবস্থা। এরশাদ বা রওশন কেউই তাকে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কোনো নির্দেশনা দেননি। তাই তিনি দলটির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান হয়েও উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কিছুই করতে পারেননি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।