আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জামায়াতের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে

চলমান উপজেলা নির্বাচন ঘিরে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে ১৯-দলীয় জোটের প্রধান শরিক বিএনপির। বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, সরকারদলীয় সমর্থক ও প্রশাসনের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের পাশাপাশি বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর পরাজয়ের বড় কারণ শরিক দল জামায়াত। অন্তত ৪০টি উপজেলার ফলাফল বেহাত হয় জামায়াতের প্রার্থী থাকায়। অন্যদিকে জামায়াতের অভিযোগ, বিএনপির সঙ্গে সমঝোতার শর্ত অনুযায়ী তারা প্রার্থী কম দিলেও বিএনপি তাদের নিজস্ব কিংবা বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড় করিয়েছে। যে জন্য জামায়াত প্রার্থীরা সাফল্য পাননি। ফলে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতেরও দূরত্বের সৃষ্টি হচ্ছে। এ নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের তৃণমূলে ক্ষোভ রয়েছে।

জানা যায়, উপজেলা নির্বাচনে জোটের শরিক জামায়াতকে নিয়ে দারুণ অস্বস্তিতে পড়েছে বিএনপি। জামায়াতের ভূমিকায় নির্বাচনী ফলাফল ও রাজনৈতিকভাবে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে দলটি। কিন্তু কৌশলে ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয়ের পাল্লা ভারী করেছে জামায়াত। অথচ তাদের ছাড় দিতে গিয়ে অনেক জায়গায় তৃণমূল নেতৃত্বে তৈরি হয়েছে ভুল বোঝাবুঝি। সরকারি দলের নৈরাজ্য ও জামায়াতের হঠকারী আচরণে রীতিমতো উল্টো হাওয়া বইছে নির্বাচনী ফলাফলে। ধাপে ধাপে নিম্নমুখী হয়েছে উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির জয়ের সূচক। এ নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় বিএনপির তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম ক্ষোভ। তৃণমূল পর্যায়ে দুই দলের মধ্যে বেড়েছে দূরত্ব। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, বিএনপিকে হারাতে আওয়ামী লীগের সহযোগী হয়ে কাজ করেছে জামায়াত। তৃণমূল নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করছেন, জামায়াতের কারণে বিএনপি দিন দিন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যাচ্ছে। বিশেষ করে নির্বাচন চলাকালে আওয়ামী লীগ-জামায়াতের সখ্যে জন্ম দিয়েছে নানা প্রশ্নের। ১৯-দলীয় জোটের ভবিষ্যৎ নিয়েও দেখা দিয়েছে শঙ্কা। জামায়াত ইস্যুতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ওপর দারুণ চাপ সৃষ্টি করেছে তৃণমূল। নির্বাচনী ঐক্য ভঙ্গের অভিযোগ তুলে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার দাবি তুলেছেন তারা। বিএনপির বিভিন্ন জেলা নেতা জানান, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর বিএনপির পাশাপাশি জোটের শরিক জামায়াত প্রতিটি পদেই তাদের প্রার্থী দেয়। এ নিয়ে জেলা পর্যায়ে জোটের আলোচনায় কিছু সিদ্ধান্ত হয়। যেসব এলাকায় জামায়াতের ভালো অবস্থান রয়েছে সেখানে চেয়ারম্যান পদে ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। সে অনুযায়ী বেশকিছু উপজেলায় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা সরে দাঁড়ান। কিন্তু যেখানে বিএনপির অবস্থান ভালো সেখানে শেষ পর্যন্ত চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে দাঁড়াননি জামায়াত প্রার্থীরা। অন্যদিকে আলোচনায় সমঝোতার ভিত্তিতে ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়াইয়ের দিকে জোর দিয়েছিল জামায়াত। পাঁচ ধাপের নির্বাচনে ১১৮ জন বিজয়ী হয়েছেন। বেশির ভাগ উপজেলায় ভালো অবস্থান থাকার পরও ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি বিএনপি। ফলে ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াত প্রার্থীরা সুবিধা ভোগ করে বিজয়ী হলেও চেয়ারম্যান পদে হেরেছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী। তৃণমূল নেতাদের অভিযোগ, রাজনৈতিক আদর্শ নয়, শুধু নির্বাচনী ঐক্যের জন্য জামায়াতের সঙ্গে জোট করেছে বিএনপি। কিন্তু উপজেলা নির্বাচনের হিসাবে গরমিল ঘটেছে। জামায়াত নির্বাচনী ঐক্যের শর্ত পালন করলে ১৯-দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থীর জয়ের সংখ্যা বাড়ত। অথচ প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশি-বিদেশি চাপের মুখেও জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেনি বিএনপি। কোথাও জামায়াত নেতাকে সমর্থন দিতে গিয়ে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীকে বহিষ্কার হতে হয়েছে। এমনকি রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী জেলা বগুড়ায় ১২টির মধ্যে পাঁচটি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ছাড় দিয়েছে বিএনপি। ২০০৯ সালে বিএনপি প্রার্থী বিজয়ী হয়েছে এমন বেশকিছু উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে জামায়াতকে ছাড় দিয়েছে বিএনপি। তৃণমূল নেতারা জানান, উপজেলা নির্বাচনে জামায়াতের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয়ে তাদের জনপ্রিয়তার চেয়ে বিএনপির সমর্থনই প্রধান ভূমিকা রেখেছে। এ নিয়ে অনেক জেলা নেতাই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে অভিযোগ করেছেন। নির্বাচন-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে ফরিদপুর সদর উপজেলায় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মাহাবুবুল হাসান পিংকু সরাসরি অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেন, জামায়াতকে কোনোভাবেই জোটে রাখা যায় না। জামায়াতের কারণে বিএনপি আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। জামায়াত জোটে থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করছে। তবে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয়ভাবে প্রার্থী দেওয়ার সুযোগ নেই। তাই এ নির্বাচনে একাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এ ছাড়া বিএনপি-জামায়াত স্বতন্ত্র রাজনৈতিক দল। ফলে উপজেলা নির্বাচনে নিজেদের শক্তি যাচাই করেছে বিএনপি। পঞ্চম দফা উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান বলেন, পঞ্চম দফা উপজেলা নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের সহায়তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং আওয়ামী লীগের ক্যাডারদের কেন্দ্র দখল, জাল ভোট প্রদান, ব্যালট ডাকাতি, ভোট ছিনতাই এবং সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের মহোৎসব হয়েছে। এটাকে কোনোভাবেই নির্বাচন বলা যায় না।

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.