এ লেখা যখন তৈরি করছি তখন ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার সেমিফাইনাল চলছিল। নির্ধারিত ওভার, না বৃষ্টিতে ডার্ক লুইস পদ্ধতিতে ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ হবে- তা বলা যাচ্ছে না। আগের দিন বৃষ্টি নামায় তাই এত শঙ্কা। যাক, আমার ভেতরে বাংলাদেশের বিষয়টিই বেশি নাড়া দিচ্ছে। অনেকে হয়তো বলবেন, মুশফিকদের নিয়ে লেখার আর কী আছে? লজ্জাকরভাবেই তো তারা টি-২০ বিশ্বকাপের মিশন শেষ করেছে।
আমি লক্ষ্য করছি, মুশফিক ও সাকিবের ব্যাপারে দেশবাসী হতাশ ও পুরোপুরি বিরক্ত। আসলে ক্রিকেট ঘিরে সবার প্রত্যাশা এত বেড়ে গেছে যে ম্যাচ হারলেই হতাশা নেমে আসে। পরাজয়টা বাংলাদেশের নতুন কিছু নয়। কিন্তু সাম্প্রতিককালে মুশফিকদের পারফরম্যান্স একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে। অনেকে ক্ষুব্ধ হয়ে বলছেন, এদের দিয়ে চলবে না।
এখন নতুনভাবে জাতীয় দল গড়া উচিত। সত্যি বলতে কী, ক্রিকেটার হিসাবে আমিও এমন পারফরম্যান্সে হতবাক হয়ে গেছি। যেখানেই যাচ্ছি শুধু হতাশা আর হতাশা। একটি বিষয় না বললে নয়। সুপার টেনে গ্রুপে বাংলাদেশ যে চার ম্যাচ হেরেছে তারা কিন্তু বাংলাদেশের তুলনায় শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ছিল।
তার পরও ওয়ানডে ম্যাচে এদের বিরুদ্ধে জেতার কৃতিত্ব রয়েছে। এরা কেন, ক্রিকেট খেলে এমন দেশ নেই যারা বাংলাদেশের কাছে হারেনি। দেশবাসীর প্রত্যাশা তাই আকাশছোঁয়ার মতো ছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তান, ভারত বা অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারায় আমি বিস্মিত হইনি। কিন্তু কোনো ম্যাচে দাঁড়াতেই ক্রিকেটাররা আত্দবিশ্বাসই হারিয়ে ফেলেছে।
যাক, তার পরও সবকিছু মেনে নিলাম। কিন্তু বাছাই পর্বে হংকংয়ের কাছে হারায় আমারও মাথা নিচু হয়ে গেছে। ম্যাচ শুরুর আগে ভেবেছিলাম বাংলাদেশ রেকর্ডের মাধ্যমে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়বে। তাদের নিয়ে তো ছেলেখেলার কথা। অথচ চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে ক্রিকেট ইতিহাসে বাংলাদেশ সবচেয়ে বড় লজ্জার মুখ দেখল।
মুশফিকদের ঘিরে এখন সমালোচনার শেষ নেই। তবে এটা এত তীব্র হতো না যদি হংকংয়ের কাছে বাংলাদেশ ম্যাচ না হারত। এ হারে ক্রিকেটপ্রেমীরা শঙ্কিত বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কি না। আমার ওপর অনেকে বিরক্ত হতে পারেন। তার পরও বলব, এতটা ভেঙে পড়ার কারণ দেখছি না।
একটু তাহলে পেছনের কথা বলি। ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ যখন আইসিসি ট্রফি খেলতে গেল তখন দেশবাসী নিশ্চিত ছিলেন চ্যাম্পিয়ন হয়েই আমরা ১৯৯৬ সালে বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পাব। করণ প্রতিপক্ষ ছিল আমাদের চেয়ে অনেক দুর্বল। এতটা নিশ্চিত থাকার পরও আইসিসি ট্রফিতে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ছিল সুপার ফ্লপ। কেনিয়া তো ছিলই, ভাড়াটিয়া খেলোয়াড় নিয়ে গড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতও আমাদের আগে স্বপ্নের বিশ্বকাপে অভিষেক ঘটায়।
ক্রিকেটাররা যেন জাতীয় শত্রু বনে যায়। পুরো দেশে একটাই কথা, বাংলাদেশে ক্রিকেট খেলা বন্ধ করে দেওয়া উচিত। এদের পেছনে অযথা অর্থ খরচ করে লাভ নেই। দেখেন এতটা বিপর্যয়ের পরও আমরা ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফিতে ঘুরে দাঁড়িয়েছিলাম। চ্যাম্পিয়ন হয়েই ১৯৯৯ সালে বিশ্বকাপে ৩০ লাখ শহীদের বিনিময়ে গর্বের লাল-সবুজের পতাকা ওড়াতে সক্ষম হই।
শুধু কি তাই, অভিষেকেই আমরা পাকিস্তানের মতো দলকে পরাজিত করেছিলাম। সুতরাং টি-২০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ খারাপ খেলেছে ঠিক তবে এতে ভেঙে পড়ার কারণ দেখছি না। ঢাকায় অনুষ্ঠিত ২০১১ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশ মাত্র ৫৮ রানে অল আউট হয়েছিল। তখনো ক্রিকেটারদের নিয়ে তিরস্কারের ঝড় বয়ে যায়। এই বাংলাদেশ একই বিশ্বকাপে আবার ইংল্যান্ডকে বিধ্বস্ত করেছিল।
সুতরাং একটি দলের খারাপ সময় যেতেই পারে। তার মানে এই নয় যে সব শেষ হয়ে গেছে। আমাদের উচিত হবে পেছনের দিকে না তাকিয়ে সামনের কথা চিন্তা করা। এটা ঠিক, এশিয়া কাপ বা টি-২০ বিশ্বকাপে অনেক ভুল হয়েছে, যার খেসারত মাঠে দিতে হয়েছে। এগুলো সংশোধন করে এখন এগোনোর পালা।
অনেকে বলছেন মুশফিকদের দিয়ে কিছুই হবে না। আসলে এটা তাদের মনের কথা নয়, সাময়িক ক্ষোভ থেকে অভিমান। বাংলাদেশে এখন যারা খেলছে তারা সবাই উঁচুমানের ক্রিকেটার। এরা জাতির গর্ব। এদের দিয়েই ক্রিকেটে জয়ধ্বনি করা সম্ভব।
তবে এটাও ঠিক, যারা পারছেন না তাদের জায়গায় বিকল্প চিন্তা করা উচিত। আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি ক্রিকেটে এ বিপর্যয় সাময়িক। খুব শীঘ্রই আবারও পুরো জাতি ক্রিকেট সাফল্যে উল্লাসে মেতে উঠবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।