আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কৌশলী অবস্থানে খালেদা জিয়া

মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি আদায়ে কৌশলী অবস্থানে থাকবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। দল ও দেশের বর্তমান বাস্তবতার আঙ্গিকে আন্দোলনের পাশাপাশি সংলাপ সমঝোতার পথও খোলা রাখবেন তিনি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অনিয়ম তুলে ধরার পাশাপাশি নতুন নির্বাচনের দাবির সপক্ষে কূটনৈতিক তৎপরতা আরও জোরদার করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তবে চলতি মাসে নতুন সরকারের কর্মকাণ্ড নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে আন্দোলনের গতি-প্রকৃতিও নির্ধারণ করা হবে। ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে আজ ও আগামীকাল বিরতি দিয়ে বুধবার সকাল ৬টা থেকে আবারও টানা অবরোধে যাওয়ার চিন্তাভাবনাও চলছে। অবশ্য সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে এ সপ্তাহের শেষের দিকে বেগম জিয়া একটি সংবাদ সম্মেলন করতে পারেন। দলীয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল এক বিবৃতিতে নতুন সরকারকে পদত্যাগ করে আবারও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করেছেন। তিনি বলেন, এই সরকার সাংবিধানিক ও নৈতিক বৈধতা পাবে না। সূত্রমতে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। তবে এ নিয়ে সরকারকে সর্বোচ্চ আগামী জুন মাস পর্যন্ত সময় দিতে চায় তারা। এর মধ্যেই আলোচনার মাধ্যমে নতুন নির্বাচনের উদ্যোগ না নিলে হরতাল-অবরোধের পাশাপাশি আরও সহিংস কর্মসূচির দিকে যাবে বিএনপি জোট। তবে মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়ে সহসাই নতুন সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চায় বিএনপি। দলের নেতারা জানান, নতুন সরকার বৈধ কিংবা অবৈধ যাই হোক, তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান বেগম জিয়া। ইতোমধ্যেই তিনি এ নিয়ে গণমাধ্যমে নিজের মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। তবে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের নিশ্চয়তা চান বেগম জিয়া। এক্ষেত্রে আটক বিএনপি নেতা-কর্মীদের মুক্তি, অবরুদ্ধ দলীয় কার্যালয়গুলো খুলে দেওয়ার পাশাপাশি সভা-সমাবেশ করার অনুমতি দিলেই কেবল বেগম জিয়া আলোচনায় বসবেন। সরকার এ নিয়ে সদিচ্ছার মনোভাব দেখালেই বিএনপির পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। আলোচনা ফলপ্রসূ হলে আন্দোলন কর্মসূচিতেও পরিবর্তন আসবে। এদিকে নবগঠিত সরকারের স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম গতকাল তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী এই নবগঠিত সরকার পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকবে। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই পরিকল্পনা নিয়েই এগোচ্ছেন- এটা সৈয়দ আশরাফের এ বক্তব্যে স্পষ্ট হলো। এখন আন্দোলন ছাড়া কোনোভাবেই দাবি আদায় করা সম্ভব হবে না। বাধ্য না হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন নির্বাচন দেবেন না। নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বহির্বিশ্ব প্রশ্ন তুললেও দাবির স্বপক্ষে তাদের অবস্থান ধীরগতি। তাই দলমত, নির্বিশেষে সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে নিয়ে রাজপথে সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে পারলে সরকারই মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে। এ সময় হয়তো আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে সমর্থন পাওয়া যেতে পারে। বিএনপির কূটনৈতিক সংশ্লিষ্ট নেতারা জানিয়েছেন, দশম জাতীয় সংসদের বৈধতা না দিতে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যোগাযোগ করা হচ্ছে। প্রধান বিরোধী দলবিহীন নির্বাচনের অনিয়ম, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৪ জন এমপি নির্বাচন, কারচুপি, ভোটার অনুপস্থিতিসহ গণমাধ্যমে আসা নানা তথ্যচিত্রগুলো কূটনৈতিক পর্যায়ে তুলে ধরা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করতে আসা প্রভাবশালী কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতের কাছে এসব অনিয়মগুলো তুলে ধরা হয়। এ ছাড়া বিএনপির কূটনৈতিক নেতারা ঢাকার বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে দেখা করে নির্বাচনের ভ্রান্ত দিকগুলো তুলে ধরছেন। সার্বিক বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপি সব সময় সংলাপ সমঝোতায় বিশ্বাসী। কিন্তু সরকারের এক্ষেত্রে সদিচ্ছা আছে বলে মনে হয় না। সরকার সংলাপ-সমঝোতার কোনো পরিবেশও তৈরি করেনি। ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে তিন দফা বৈঠক হলেও বিএনপির দাবিগুলোর ব্যাপারে সরকার কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়নি। উপরোন্তু বৈঠক চলাবস্থায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার ও নতুন নতুন মামলায় জড়ানো হয়েছে। এখন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে দেশের জনগণের পাশাপাশি সারা বিশ্বই প্রশ্ন তুলেছে। তাই নতুন নির্বাচন নিয়ে সংলাপ করতে সরকারকেই খোলামনে এগিয়ে আসতে হবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.