কান্না, আক্ষেপ, হতাশা—এ তিনটি শব্দ কাল একাকার করে রেখেছিল বার্সেলোনা-সমর্থকদের। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের কাছে হেরে চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বিদায় নেওয়ার মুহূর্তে আক্ষেপ আর হতাশার বাইরে কাল বার্সা-সমর্থকদের মন খুঁজে ফিরল একটি প্রশ্নের উত্তর, ‘আজ কী করলেন লিওনেল মেসি?’ পরাজয়ের দুঃখ ছাপিয়েও অনেক বার্সা-সমর্থকদের হতাশার মূল জায়গাটা কাল ছিল ওটাই। মেসির নিষ্প্রভতা কাল সত্যিই রক্তক্ষরণ ঘটিয়েছে বার্সা-সমর্থকদের।
কাল আসলে কী হয়েছিল মেসির? এতটা ম্রিয়মাণ যে তাঁকে অনেক দিনই দেখা যায়নি। তবে কী জেরার্ডো মার্টিনোর ট্যাকটিকসই প্রভাব রাখল এই আর্জেন্টাইন মহাতারকার খেলায়? মার্টিনোর তিন সদস্যের আক্রমণভাগে মেসি কাল খেলেছেন ডান দিকে, অথচ তিনি সব সময়ই খেলেন মাঝে।
মাঝের জায়গাটা কাল মেসিকে ছেড়ে দিতে হয়েছিল ফ্যাব্রিগাসকে। ব্রাজিলীয় তারকা নেইমার আক্রমণে উঠেছেন বাম দিক দিয়ে। মেসির জন্য এটা কী কোনো অজুহাত হতে পারে?
কোনো অজুহাতই যে মেসির নিষ্প্রভতাকে কাটান দিতে পারছে না। ইউরোপীয় ফুটবলের বড় পরিসরে মেসি সব সময়ই নিজের সেরা খেলাটাই খেলেছেন। মঞ্চ প্রস্তুত ছিল কালও।
কিন্তু মেসির ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে অ্যাটলেটিকোর কৃতিত্বকে যেন খাটো করে না দেখা হয়। কাল পুরো ম্যাচেই আরেক আর্জেন্টাইন ডিয়েগো সিমিওনের ট্যাকটিকসের সামনে অসহায় থাকলেন মেসি। সর্বশেষ ছয়টি ম্যাচে মাদ্রিদের ক্লাবটির বিপক্ষে গোল পাননি মেসি—ব্যাপারটিকে মেসির ব্যর্থতা না বলে অ্যাটলেটিকোর খেলোয়াড়দের মুনশিয়ানা বলাটাই বোধ হয় সবচেয়ে শ্রেয়।
কাল পুরো ম্যাচে মেসিকে বলার মতো অবস্থায় পাওয়া গেছে মাত্র তিনবার। খেলার তিন মিনিটে তাঁর একটি শট পোস্টের অনেক বাইরে দিয়ে চলে যায়।
১৩ মিনিটে তাঁর হেড সমস্যায় ফেলতে পারেনি অ্যাটলেটিকো রক্ষণকে। ২৪ মিনিটে নেইমারের ক্রস থেকে আরও একটি শট পোস্টের বাইরে দিয়ে মারেন—ব্যস, এই তিনবারই। বাকি খেলায় আর একটি বারের জন্য মেসি আতঙ্কের কারণ হতে পারেননি অ্যাটলেটিকোর রক্ষণে। একটি বারের জন্যও আশার আলো সঞ্চারিত করতে পারেননি ন্যু ক্যাম্প ভক্তদের।
স্প্যানিশ গণমাধ্যম অ্যাটলেটিকোর বিপক্ষে মেসির ম্রিয়মাণ পারফরম্যান্স নিয়ে এক মজার তথ্য দিয়েছে।
কালকের ম্যাচে তিনি দৌড়েছেন মাত্র ৬.৫ কিলোমিটার। তাঁর এই দৌড় নাকি বার্সা গোলরক্ষক হোসে ম্যানুয়েল পিন্টোর চেয়ে মাত্র ১.৫ কিলোমিটার বেশি। মেসির নিষ্প্রভতার মাত্রা বোঝাতে এই পরিসংখ্যানটিই কী যথেষ্ট নয়!
মেসির ব্যর্থতা নিয়ে হতাশ কোচ মার্টিনোও, ‘অমরা মেসিকে ডান দিকটা ছেড়ে দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম সে তার স্কিল কাজে লাগিয়ে ওই দিক দিয়ে অ্যাটলেটিকো রক্ষণকে উন্মুক্ত করে ফেলতে পারবে। ’
মার্টিনোর হতাশা আছে ত্রয়োদশ ও ২৪তম মিনিটে মেসি যে দুটো সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি, তা নিয়েও, ‘পুরো খেলায় মেসিকে নিয়ে বলার মতো কিছু নেই।
কিন্তু ১৩ ও ২৪ মিনিটে সে যে দুটো সুযোগ নষ্ট করেছে, তা ছিল সত্যিই হতাশার। ’
কাল অ্যাটলেটিকোর কাছে হেরে একটা বড় রেকর্ডের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে এল কাতালানরা। কাল সিমিওনের দলকে টপকে যেতে পারলে বার্সা টানা সপ্তমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালের খেলার অনন্য গৌরবের অংশীদার হতে পারত। কিন্তু বিধি বাম!
বার্সা কোচ মার্টিনো অবশ্য মেসির ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনার চেয়ে অ্যাটলেটিকোকে কৃতিত্ব দিতেই ছিলেন বেশি উত্সাহী, ‘যোগ্যতর দল হিসেবেই অ্যাটলেটিকো জয় পেয়েছে। তাদের জয়ের আকাঙ্ক্ষা, রক্ষণভাগের ক্যারিশমা সবই তাদের জয়ে অবদান রেখেছে।
আসলে যখন আপনি আপনার নিজের পরিকল্পনা মাঠে ঠিকমতো বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হবেন, সেই সুযোগ তো প্রতিপক্ষ নেবেই। কাল ছিল আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যর্থতার দিন, সেই ব্যর্থতার সুযোগটিই অ্যাটলেটিকো নিয়েছে দারুণভাবে। ’ সূত্র: রয়টার্স।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।