বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার আকুতি, ‘আরেকবার সুযোগ দিন, দেশের চেহারা পাল্টে দেব’ যদি না পারি তাহলে যে শাস্তি দেয়া হবে তা মাথা পেতে নেব। তিনি আরও বলেছেন, দেশ থেকে দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও জঙ্গী দূর করব। ধর্মের ভেদাভেদ করব না। শুধু ঢাকা নয়, পুরো দেশের চেহারা পাল্টে দেব। মুসলমানদের ওপর প্রতিনিয়ত হামলা হচ্ছে।
দাড়ি-টুপিওয়ালা লোক দেখলে হয় জামায়াত শিবির, নয় হরকত-উল-জিহাদ, তালেবান ইত্যাদি বলে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ওপর আঘাত করা হচ্ছে। বিএনপি সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদে বিশ্বাস করে না। বিএনপির চেয়ারপার্সন গত ১৯ নবেম্বর বরিশালে অনুষ্ঠিত জনসভায় বেগম জিয়া এ আকুতি জানিয়েছেন।
বিগত দু’দুবারের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে এহেন আকুতি দেখে রাজনৈতিক অঙ্গনে সৃষ্টি হয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা এবং জল্পনা- কল্পনা। বলা হচ্ছে, নানাভাবে নানা অপচেষ্টা চালিয়েও বর্তমান সরকারকে টলানো যায়নি।
শেষ পর্যন্ত মুখে ভারতবিরোধী বিএনপি নেত্রী ভারত সফর করেছেন। কি তালিম নিয়েছেন তিনিই জানেন। দেশে ফিরে তিনি সহিংস হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত রামুতে জনসভায় নতুন কথা বললেন। জানালেন আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য তলে তলে জামায়াতকে কাছে টানার চেষ্টা করছে। চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী হিসেবে যে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের জেলে নিয়ে এ সরকার বিচারের মুখোমুখি করেছে সেই সরকারী দলের বিরুদ্ধে এহেন অভিযোগ ধোপে টেকেনি।
শেষ পর্যন্ত তিনি এখন আরেকবার নির্বাচিত করে ক্ষমতায় যাবার সুযোগ দেয়ার জন্য জনগণের প্রতি আকুতি জানিয়েছেন।
তাঁর এই বক্তব্যের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত হচ্ছে, অতীতে দু’বার ক্ষমতায় গিয়ে বেগম জিয়া ও তাঁর দল দেশ ও জাতিকে যা দিয়েছেন তা এখনও কেউ ভুলে যায়নি। ন্যাড়া বেল তলায় দ্বিতীয়বার যায় না। বাংলাদেশের মানুষ দুবার বিএনপিকে ক্ষমতা দিয়েছে। তারা একবার দেখিয়েছে ‘ভোট চুরির তাজ্জব ব্যাপার-স্যাপার ও প্রহসনের এক নির্বাচন (৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি)।
২০০১ সালে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে দেখিয়েছে, দেশকে জঙ্গী রাষ্ট্রে পরিণত করার নানা অপতৎপরতা এবং চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানিয়ে পবিত্র জাতীয় পতাকাকে অবমাননা করার চাল”িত্র। শুধু তাই নয় বাংলা ভাই, শায়খ আবদুর রহমান গংয়ের উত্থান এবং সারাদেশে একযোগে সিরিজ বোমা হামলা, বিচারক হত্যা, আওয়ামী লীগ নেত্রীর জনসভায় গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যা, আহসান উল্লাহ মাস্টার, শাহ এএসএম কিবরিয়া হত্যাসহ বর্বর আরও কত ঘটনা উপহার পেয়েছে জনগণ বিএনপি সরকার আমলে তার কোন ইয়ত্তা নেই।
প্রশ্ন উঠেছে, রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতায় যাওয়ার আগে চেহারা ও ক্ষমতা পাওয়ার পরের চেহারা নিয়ে। নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার পর সাধারণ একটি বক্তব্য তাদের পক্ষ থেকে এই বলে আসে যে, আগের সরকারের যে দুর্নীতিবাজরা সব লুটেপুটে খেয়ে গেছে। অর্থনীতি ভঙ্গুর, রাষ্ট্রীয় কোষাগার শূন্য।
চোরদের ধরতে হবে, করতে হবে এদের বিচার। আর পাশাপাশি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমানোর তৎপরতা দিয়েই তাদের ক্ষমতার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এভাবেই চলছে এদেশের সরকারের পালাবদল। তবে অতীতে বিএনপি মৌলবাদী যুদ্ধাপরাধী জামায়াত শিবির এবং ইসলামী ব্যানারের জঙ্গীবাদী দলগুলোর সঙ্গে একজোট হয়ে যে রাজনীতি শুরু করেছে তা তারা এখনও অব্যাহত রেখেছে। এ বিষয়টি নতুন প্রজন্মের ভোটাররা নিশ্চিত হওয়ার পর বিগত নির্বাচনে ধস নামানো পরাজয় ঘটে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের।
পক্ষান্তরে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে সরকার গঠন করেছে। সরকার গঠনের পর থেকেই বিএনপি ও এর শরীক দলগুলোর মাঠে নেমে বিরোধিতা যে শুরু হয়েছে তা অব্যাহতভাবে চলছে। বর্তমানে জামায়াত শিবির রাজপথে যে তাণ্ডব চালাচ্ছে তা অতীতের সকল রেকর্ডকে হার মানিয়েছে। প্রধান শরিক দল বিএনপি ও এর নেতৃবৃন্দ তা ভালই উপভোগ করছেন। জামায়াত শিবির একাধারে পুলিশকে টার্গেট করে বেধড়ক হামলা করে যাচ্ছে।
তারা বড় ধরনের যে কোন অঘটন ঘটাতে পারে বলেও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে ইতোমধ্যে সরকারের কাছে জানিয়ে দিয়েছে। এর পরও জামায়াত শিবির চোরাগোপ্তা মাঠে নেমে হামলা অব্যাহত রেখেছে। এর মূল কারণ পুলিশের মনোবল ভেঙ্গে দেয়া। আগামীতে মাঠ পর্যায়ে পুলিশ দায়িত্ব পালন করতে যাতে সাহসী না হয় মূলত সে কারণেই জামায়াত শিবির তাদের গোপন নীলনক্সা বাস্তবায়ন করে চলেছে। পাশাপাশি জামায়াত শিবির তাদের এ ধরনের শক্তি দেখিয়ে যাচ্ছে বিএনপিকে, যাতে তারা কখনও তাদের (জামায়াত শিবির) অবহেলার চোখে না দেখে।
সর্বশেষ গত মঙ্গলবার জিয়া তনয় তারেক জিয়ার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে বেগম জিয়া ঘোষণা করলেন ‘তারেক কোন দুর্নীতি করেনি, তার বিরুদ্ধে চক্রান্তকারীরা মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়েছে। তারেক রহমান সৎভাবে জীবনযাপন করেছে। চলেছে সততার সঙ্গে। তার তেমন কোন সম্পদ নেই, সম্পদের প্রয়োজন ছিলও না। তাকে ফখরুদ্দীন-মঈনুদ্দিন মেরে ফেলতে চেয়েছিল ...।
’ যা রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে হাসির খোরাক সৃষ্টি করেছে। বেগম জিয়ার এ বক্তব্যের পর বলা হচ্ছে, মা-বাবার চোখে কোন সন্তানই কখনও খারাপ নয়। সন্তানের মারাত্মক খারাপ দিক থাকলেও মা-বাবার চোখে তা খারাপ হিসেবে ধরা পড়ে না। ক্ষমতায় থাকাকালে তারেক জিয়ার নেতৃত্বে সরকারে যে বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছিল ‘হাওয়া ভবন’ তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলেও মা হিসেবে বেগম জিয়া তা স্বীকার করছেন না। শুধু তাই নয়, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে তারেক জিয়া ‘যুবরাজ’ হিসেবেই পরিচিতি পেয়েছিলেন।
এমন কোন সেক্টর ছিল না যেখানে তার অঙ্গুলি হেলনে নির্দেশ বাস্তবায়ন হয়নি। শুধু তাই নয়, সুশৃঙ্খল সেনাবাহিনীতেও নানা বিষয়ে তারেক জিয়ার গোপন নির্দেশনার তৎপরতা চলত। এসব ছাড়া হাওয়া ভবন হয়ে উঠেছিল দুর্নীতির এক মহীরুহু। ক্ষমতা হারানোর পর যা পরতে পরতে বেরিয়ে এসেছে। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অনেক মামলা হয়েছে, চার্জশীট হয়েছে, অনেক মামলার বিচার চলছে, কিছু মামলার তদন্ত এখনও অব্যাহত আছে।
বিদেশে অর্থ পাচার থেকে শুরু করে বড় বড় দুর্নীতির এমন কোন ঘটনা নেই যেখানে তারেক জিয়ার সম্পৃক্ততা ছিল না। বিএনপি সরকার যেখানে জঙ্গী লালন থেকে শুরু করে, গ্রেনেড হামলা এবং নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছিল তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তারেক জিয়া গড়ে তুলেছিলেন আলাদা তার নিজস্ব সাম্রাজ্য। এমন পুত্রকে তিনি তার জন্ম দিনে সার্টিফিকেট দিলেন ‘সততা’র। ভবিষ্যত বলে দেবে তারেক জিয়া ক্ষমতা পেয়ে কি করেছিলেন, আর কি করেননি।
বর্তমান সরকারের ক্ষমতার মেয়াদ যতই শেষ হয়ে আসছে ততই যেন ফুঁসছেন বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম জিয়া।
তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসার জন্য জনগণের প্রতি তাঁর যে আকুতি তা যদি বাস্তবে প্রতিফলিত হয় তাহলে তিনি এবার কি করবেন তা নিয়ে নানা প্রশ্নের উদ্রেক করেছে উৎস্যুক মহলগুলোকে। অতীতে এদেশ থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসমূহে উৎপাটনের অপচেষ্টায় ইতিহাসসহ সবক্ষেত্রে যেমন বিকৃতি ঘটানো হয়েছে তার রেশ এখনও টানতে হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের মহাজোট সরকারকে। এর সমাপ্তি এখনও করা যায়নি। এ অবস্থায় আগামী নির্বাচন উঁকি দিচ্ছে। ফলে তৎপর হয়েছে স্বাধীনতার বিপক্ষের সব শক্তি।
নেতৃত্বে রয়েছে বিএনপি। যেভাবেই হোক ক্ষমতা তাদের চাই। আর এ ক্ষমতা আরেকবার যদি পাওয়া যায় তাহলে এদেশের, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির এবং আপামর সাধারণ মানুষের কি হবে তা নিয়ে উদ্বেগ- উৎকণ্ঠা শুরু হয়েছে এখন থেকেই। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।