মেহরাব হাসান
নগরীর পাহারাদার ফোন টাওয়ার গুলোর লাল লাল বাতি টিপ টিপ করে জ্বলছে । নীরবে বিল্ডিংয়ের উপরে দাঁড়িয়ে থাকা টাওয়ার গুলোর লাল বাতি সিগন্যাল দিচ্ছে- নেটওয়ার্কের জ্যাম নেই,লোডশেডিং নেই,ছ’নম্বর বাসের চাপ নেই,রাস্তা গুলো ফাঁকা ।
রাত ১২ টা ২৭ মিনিট ।
সামনে, কিছু দূরেই বাস টার্মিনাল,আলো ছায়ায় ঘেরা বাস টার্মিনালটার অনেকটা অংশই ফাঁকা আর জনশূন্যহীন । ভুতুরে ভুতুরে ভাব ।
টার্মিনালের পাশেই একটি ছ’তলা বিল্ডিং । বিল্ডিংয়ের কয়েকটা জানালার পর্দার ফাক দিয়ে টিউব লাইটের আলো বেরিয়ে আসছে । নিচের গলিতে হাসি ঠাট্রায় মত্ত আনন্দে আত্নহার কিছু তরুন । আতশ বাতির ঝলকানিতে রাতের আকাশ, নানান রঙের আলোতে আলোকিত হচ্ছে । টার্মিনালের সামনেই একটা খাল, খালের উপরে ঝুপরি ঘড় ।
ঘরের মধ্য কুপি বাতি জ্বলছে,মাঝে মধ্যে ভেসে আসছে কান্নার শব্দ । বেলকুনিতে দাঁড়িয়ে সব খেয়াল করছে মাহফুজ । হয়তো সকাল হলেই রিকসা হাকিয়ে আত্নীয়র বাড়ি ছোটা-ছুটি আর ক্ষ্যাপাটে হোন্ডার অত্যাচারে রাস্তা গুলোকে অস্থির করে তুলবে এই শহরের মানুষ গুলো । কিন্তু, মাহফুজের এখন, এখানে থাকবার কথা নয় । এখন হয়তো বিছানায় শুয়ে ছট ফটাতো,এপাশ-ওপাশ ঘুরে বসে পরতো ভোর হবার অপেক্ষায় ।
হয়তো ভোর না হতেই ছোট ছোট ছেলেদের হাড্ডি খাবো,মাংশ খাবো মিছিলে সামিল হতো ।
নামাজের পর কোলাকুলির পর্ব সেরে মায়ের পায়ে সালাম করে বেরিয়ে পরতো । পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে ঘুরে, বড়ো গরু আর খাশি খুঁজে বের করে গ্রামময় প্রচার করতো-এবারের ঈদে সেরা কুরবানী, তছলিম চাচার ছাগলখানি । গরু খাশি কাটা কুটি শেষ মায়ের তৈরি স্পেশাল কলিজ্বা ভুনার জন্য অপেক্ষা । হয়তো আদরের ভাতিজিটা বলতো- চাচ্চুকে দিবো না,আমিই খাবো ।
বিকেল হতেই আদরের ভাতিজি বিভোরটাকে নিয়ে বেরিয়ে পরা । ফুফুর বাড়ি,রেবেকাদের আম বাগান আর কাজলদের সুপারি বাগান মাড়িয়ে সব শেষে নদীর পাড়ে গিয়ে সূর্য ডোবা দেখা । বিভোরটা হয়তো বলতো- চাচ্চু ওটা কি পাখি ?
- ওটা মাছরাঙ্গা।
- চাচ্চু ঐ গুলো কি ?
- ও গুলো কাঁশফুল,বাবা ।
- আমি নিবো ।
হয়তো একটি কাঁশফুল এনে দিতো ।
আনন্দে আত্নহারা হয়ে বিভোর বাতাসে কাঁশফুল উড়াতো । হয়তো বিভোরটা বলতো- চাচ্চু, সূর্যটা ডুবছে কেনো ?
কিন্তু হায়,এখন সবই কল্পনা । দুই ঈদে একবার ছুটি । রমজানের ঈদে ছুটি কাটানোর জন্য এবারের ঈদে যেতে পারবে না মাহফুজ ।
বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল গুলোর এই নিয়ম একেবারেই অপছন্দ মাহফুজের । দূরের ফোন টাওয়ার গুলোর বাতি টিপ টিপ করে জ্বলছে । ভোর হতে মাত্র কয়েক ঘন্টা বাকি । বেলকুনি থেকে ঘরে যায় মাহফুজ,এখনি না ঘুমালে সকাল আট টার অফিস ধরতে পারবে না ।
মেহরাব হাসান জাহিদ
মহাখালী
১৪।
১০। ১২ ইং
হয়তো, একটি গোলাপ পেলে নষ্টদের তালিকা থেকে নাম উঠে যেতো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।