এ জগতে হায়, সে ই বেশী চায় আছে যার ভূরি ভূরি। রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি। । সকাল ১১.৩০ টার দিকের দাবী, আমরা কেওক্রাডং যামু। পুরা দল নানা দলে, উপদলে, শাখাদলে বিভক্ত হয়া গেল।
এইডা কেমুন কথা, আতকা কয় কওেক্রাডং যামু-খালি কইলেই হয়!!?কিন্তু নানামুখী চক্রান্ত, উস্কানীমূলক কথাবার্তা আর পুরুষত্বে আঘাত সইতে না পাইরা শেষ পর্যন্ত সবাই রাজী হইয়া গেলাম এবং পাহাড়ী সুন্দরীর সহস্তে সার্ভ করা আন্ডা ভাজা, মিষ্টি কুমড়া আর ডাইল দিয়া ভাত খাইয়া আমরা যাত্রা স্টার্ট করলাম। ইতোমধ্যেই অবশ্য আমরা রাইত এর আশ্রয় ঠিক কইরা ফালাইসি-ঐ সুন্দরীর বাড়ীর দুই তলায়।
দুপুর ১.০০ টা। বগা লেক থেকে যাত্রা শুরু।
প্রত্যেককে একটা কইরা লাঠি ধরাইয়া দেওয়া হইল এবং যথারীতি সার্জন ডাইনে বায় না তাকাইয়া পাও চালানো শুরু করল।
এই অবস্থায় তারে দেইখা শুধু একটা কথাই মনে হইছে, বাই ডিফল্ট আন্ধা। ওদিকে আমি আবার যা মনে আসে তা বইলা ফালাই (ডোন্ট মাইন্ড ছেলেপেলে তো)। আবার সার্জনের নারীসুলভ আচরণ শুরু হইল, কিন্তু এইবার আর খুব বেশী আঘাত দেওয়ার সাহস হয় নাই কারণ আঙ্গুল ফুইলা কলাগাছ হওয়া ভালো, মুনমুন এর রান হইয়া গেলে বিপদ এইটা সে অনুধাবন করতে পারছে। গাইডের বদান্যতায় আমরা জানতে পারলাম এই টাইমে নাকি একমাত্র আমরাই কেওক্রাডং এর উদ্দেশ্যে যাইতাছি, আর কোন বেকুব ঐ বেচারার চোখে পড়ে নাই। আর যারা ঐখানে থাকতে চায় তারা যাইতে পারে কারণ এই টাইমে গেলে আসতে নাকি রাইত হইয়া যায় এবং বিপদ আপদ ইয়ার দোস্তের মত সঙ্গী সাথী হইয়া যায়।
এই ধরনের কথা শুইনা প্রথমে নিজেগো হিরো মনে হইসিলো (খবরদার!!!অনন্ত জইল্যা কইয়া গাইল দিবেন না), কিন্তু মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যেই আমাগো সমস্ত হিরোগিরি আর স্বাধ বডি বাইয়া ঝরণার মত প্রবাহিত হইতে শুরু করল। ঠ্যাং টাইটানিকের খাম্বা আর পিঠ কাউট্টার খোলের মত বেকাইয়া যাইতে আরম্ভ করল। প্রতি ১০ মিনিট অন্তর অন্তর ব্রেক নেওয়া, কলা খাওয়া, পানি খাওয়া আর এই ধরনের ট্র্যাকিং এর মহা শত্রু বিড়ি ফুকা চলতে থাকল। শুরুতে রাস্তার চওড়া ৫/৫.৫ ফিট এর মত থাকলেও অতি দ্রুত তা ৩/৩.৫ কোথাও কোথাও ২ ফিটের মধ্যে নাইমা আসল। মনে মনে কইলাম ভোটকা লগে থাকলে, নিশ্চিত এতক্ষনে মাইনাস হইয়া যাইত।
চলার পথে হঠাৎ কইরা গাইড কইল একটু রেস্ট লন, আমরা কইলাম মাত্র তো লইলাম। পরে জানতে পারলাম কম পক্ষে ১০/১১ ফিটি এক কোবরা নাকি সামনে দিয়া যাইতে ছিল. আমাগো দেখা হইলে মনে হয় এক সাথে বেশ কয়েকটা লেস হইয়া যাইত!!
প্রায় ১.৫ ঘন্টা হাটার পর জিগাইলাম আর কতক্ষন, উত্তর আইলো, যা হাটছেন তার দ্বিগুন বাকী আছে। এককেটার চেহারা যা হইছে, ডারউইন দেখলে কইত ইউরেকা! ইউরেকা!! .... আবার হাটা শুরু করলাম, আর দেখলাম সার্জন কেমন নির্বিকার ভাবে আগের মত অন্ধ হাটা জারি রাখিয়াছে। হাটতে হাটতে হঠাৎ একটায় চিক্কার লাগাইলো, ও বাবারে ও মা রে, আমার পাও গেল গা রে। মনে হইল মাইনাস কর্মসূচী মনে হয় শুরু হয়া গেছে, নিশ্চিত সাপে কামড়াইছে।
কিন্তু কিছুক্ষনের মধ্যেই জানতে পারলাম, সাপ না --ছোট ছোট গাছের কাটা। ভয়ংকর বিষাক্ত আর চুলকানি সমৃদ্ধ। কিন্তু এত কাটা তো হাত দিয়া তোলা সম্ভব না, কিন্তু এইখানে আইসা নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি শিখলাম। পাকা কলা ছিল্যা, যেখানে কাটা লাগসে ঐখানে আস্তে আস্তে রাবিং করা হইল, আর কলার গায়ে কাটা লাইগা আসতে থাকল। মানসিক আর শারীরিক দুই ধরনের শক্তিই পুনরায় সঞ্চার কইরা আবার যাত্রা শুরু করলাম।
ভাবতাসেন কি ব্যপার দুই চারটা ফান টান তো কিসু হয়না ??কি কমু , শরীর থিকা বাইর হওয়া সল্টি ওয়াটার এর সাথে ইউরিয়া সমৃদ্ধ ওয়াটার ও যে বাইর হইতাছে না এইটাই যথেষ্ট, এইরকম ভয়ংকর জার্নি তো আর করি নাই।
কিছুক্ষন এর মধ্যেই আবার হৈ হৈ, কি ব্যাপার?!সবাই ছিট্টা ছিট্টা এদিক ওদিক দৌড়ান শুরু করল, দেহি বিশাল এক গয়াল। এইটারে এলাকার লোকজন জঙ্গল থিকা ধরছে। তিন দিন পর্যন্ত না খাওয়াইয়া রাখছে আর এহন বেচতে নিতাছে, কিন্তু সবাইরে চুপ থাকতে কইছে কারণ এইটা যদি হঠাৎ পাগল হয় তাইলে, কয়জন মাইনাস হইসে তা গোনার আর কেউ থাকবো না। সুতরাং সৃষ্টিকির্তার তৈরী ২৪ আওয়ারস বিটিং হৃদযন্ত্রকে বন্ধ কইরা সব দাড়াইয়া রইলাম।
এই গয়ালটা আমাগে মাত্র ৫ মিনিটেই পাস কইরা গেছে, কিন্তু আমাগো কাছে সময়টা কেয়ামত পর্যন্ত মনে হইল।
যাত্রা আবার শুরু। কখনো চড়াই, কখনো উৎরাই, কখনো পিচ্ছিল পাথুরে রাস্তা, কখনো বা ভয়ংকর বাঁক। আমরা থাইমা থাইমা আগাইয়া যাইতাছি। কিন্তু বিধি আমাগো সামনো আরো পরিক্ষা আনতেই থাকলো।
এইবার একটা সাঁকো পারাইতো হইবো। বিশ পঁচিশটা বাঁশ দেওয়া আছে বটে কিন্ত না পঁচা বাঁশ মাত্র তিনটা। আর পার হওয়ার সময় কোন ধরার কিছু নাই, তার উপরে আবার যন্ত্রনা সাঁকোর শেষ মাথায় একজন দাড়াইতে পারে, কারন জায়গাটা চিপা। অর্থাৎ শেষেরটুকু যে একটু তাড়াতাড়ি দৌড়ানি দিয়া পার হমু তারও কোন সুযোগ নাই। ধীরে সুস্থে এক এক কইরা মিনিট ত্রিশেক সময় লাগাইয়া চৌদ্দ জন পিতামাতার সন্তান কোন মতে বাইচা পার হইলাম।
ইহা মাত্র অর্ধেক রাস্তা। এইবার আমরা আবার দ্বিধা বিভক্ত হইলাম, কেউ চায় যাইতে আর কেউ চায় ফিরতে। নানা ক্যচাল শেষে আবার কিভাবে যেনো আমাগো ম্যাডনেস একীভূত হইয়া গেল আর যাত্রা টু বি কন্টিনিউড। মাঝখানে একবার সার্জনরে জিগাইলাম, কিরে যাবি?! ...চেহারা সুরত পাল্টাইয়া আজীব একখান চেহারা বানাইয়া, সামনের দুই দাত বাইর কইরা দিয়া একটা ডায়লগ দিল,"সার্জনরা কখনো মাঝপথে থেমে যায় না"।
এইভাবে কখনো চিৎকার, কখনো ক্যচাল আর কখনো ভেজাল করতে করতে আমরা একটা জায়গায় আইলাম, দার্জিলিং পাড়া, ততক্ষনে বাজে সোয়া চারটা।
এইখানে আইসা মনে হইল, আত্মারাম পানি পাইছে। আর ওইখানে এত আনন্দ করলাম তা বলা সম্ভব না। সুতরাং ছবি গুলান দেহেন।
দার্জিলিং পাড়ায় আমাগো বাঁশ দান কীর্তি।
বাঁশ দেয়া হচ্ছে আমাদের জনদরদী খাটাশ চিতা কে।
আবার যাত্রা শুরুর আগে বাঁশ যাচাই কর্মশালা।
এইখানের যাত্রাবিরতী সাইরা আবার উপরে উঠা শুরু করলাম। ৫টার কাছাকাছি সময়ে আমরা একদম চূড়ার সামনে। কিন্তু সমস্ত আনন্দর খিচুড়ী তহনই হয় যহন দেখি এইখানে শেষ মাথায় আবার সিড়ি আছে।
কেওক্রাডং এর চূড়ায় উঠার সিড়িতে রুমী আর বাতেন
পাহাড়ের চূড়াটা এমন যেটা কোন ক্যামেরা তুলতে পারবে না, আমার কোন কথা কিছু বলতে পারবে না, আর এই বেটাইমের ম্যাডভেঞ্চারে আমরা যা কিছু দেখলাম তা একমাত্র আমাগে মতন ক্ল্যাসিক ম্যাডরাই দেখতে পারবো।
কেওক্রাডং এর চূড়ায় সূর্যাস্ত
একসাথে কেওক্রাডং এর চূড়ায় ছাউনির নীচে।
কেওক্রাডং এর চূড়ায় সূর্যাস্ত
কিন্তু উপরে উইঠা অসাধারন দৃশ্য দেখতে না দেখতেই সন্ধ্যা। সুতরাং সূর্যাস্ত টা পুরাপুরি না দেইখাই ব্যাক করার তাড়া, কিন্তু ততক্ষনে শুরু হইল আরেক চিন্তা। দ্রুত হাটা তো সম্ভব না, কথায় আছে না এক মছ্ছর আদমী কো হিজরা বানা দেতা হ্যায়, ঠিক ওইরকমই একটা পাথরের টুকরায় পারা পড়লেই চাটনী। টর্চ ও জ্বালায়া রাখা যাইবো না, কারণ এই জঙ্গলে নাকি হাতি, জঙলী কুকুর আর গন্ডার ছাড়াও সবচেয়ে বড় হ্রিংস্র পাণী বাস করে।
জংলী। ঝা চকচকে ভোজালী বাবুরে সামনে লইয়া খাড়ইতে পারে যে কোন সময়ে। জিগাইলাম ওরা কি নিব? আমাগো লগে তো তেমন কিছু নাই। সুফল গাইড কুফলের উত্তর দিল--ওরা কিছু নেয় না, খালি কাইটা ফালায়া থুইয়া যায়, বাঙ্গালী দেখতে পারে না। চরম শেতের মধ্যেও ঘাম ছুটা শুরু হইল আর আমাগোও ছোটা শুরু হইল।
এই ছুটতে ছুটতেই খালি একটা আওয়াজ ....আ-- আমাগো মাঙ্গু ভাই, যে কিনা পৃথিবীর যে কোন প্রান্তেই মূত্র বিসর্জন কইরা নিশানা লাগানোর মহান গৌরব অর্জন করতে পারছে, সেই সাথে কোথাও কোথাও হলুদ প্রবাল ও ছাড়সে বটে। একটা কইরা মাত্র পা ফালানো যায় এইরকম একটা বাঁক আছে, ঐখানে মাইনাস হইতে নিসিল আমাগো গ্রেট মাঙ্গু (মনে রাখবেন, চীনের আছে গ্রেট ওয়াল, আমাগো আছে গ্রেট মাঙ্গু)।
ভাগ্য ভালো জনদরদী খাটাশ চিতার হাত ধইরা কোন রকমে টাল সামলাইছে। ওর পিছেই আছিলাম আমি, সাবধান হইলাম, সাবধান করলাম আর আস্তে আস্তে ঐ জায়গাটা পার করলাম এবং মনে করলাম সামনে আমাগো ডিনার করার লইগা ওয়েট করতাছে সেই পুলসিরাত।
আবার পার হইলাম আর বেচারা পুলসিরাত কে এইবারে হতাশ করলাম (মনে হয় না খাইয়াই শুইয়া রইছে পরে)।
আবারো সেই হাটা, পায়ের গোড়ালী মনে হয় টাসকী খাইয়া যাইতাসে, আর কোমর!?এনসিয়েন্ট আমলের থার্ড গ্রেডের জং খাইয়া যাওয়া কোন বিকল মেশিনের মত কঁচ কঁচ আওয়াজ করতাছিল আর এনি টাইম খুইলি যাওয়ার পায়তারা করতাছিল। ডানে বামে ঘন জঙ্গল, আন্ধার রাইতে একখান বিড়ি ধরাইয়া টেনশন কিছুটা কমাইতে চাইলাম আর বাধ সাধল বেটা বেরসিক সুফইল্যা। কয় আগুন ধরায়েন না। পায়ের মধ্যে একটা কইরা পাতা ঠুয়া খায়, আর মনে হয় আউট হয়া গেলাম বুঝি।
একটু দূর থাইকাই হঠাৎ দেখলাম বাতি------
ম্যাডনেস উইনিং এর উচ্ছাস চাইপা রাইখা একদম ঘরের কাছাকাছি আইসা পরলাম।
অদ্ভুত একটা চাঁদ আছে আকাশে, সামনের বগা লেকটা মুক্তার মতন মনে হইতাছে। রাত ৮.২০ এর দিকে পাগলামী শেষ কইরা খোড়া সম্রাট হইয়া ফিরলাম, প্রচন্ড ঠান্ডা এতক্ষনে গায়ে লাগা শুরু করছে, ৭.০০ ঘন্টর জন্য কাট্টি লওয়া শয়তানটা আবার জায়গা দখল করা শুরু করছে। কোন রকমে দুইটা মুখে দিয়া ঘুমাইতে যাওয়ার আগে সার্জনরে একবার জিগাইলাম, কলা গাছটার কি অবস্থা রে...?!??!
খুব সকালের বগা লেক
বগা লেকে পাহাড়ী ছোট ঘর
বগা লেক ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।