ইচ্ছেমতো লেখার স্বাধীন খাতা....
2002 সালের ডিসেম্বর মাস। আমার কয়েকজন ঘনিষ্ট বন্ধু বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কেওক্রাডং এবং তাজিংডং-এ চড়বে। আমিও আগে কয়েকটা পাহাড়ে চড়েছি। অভিজ্ঞতা এবং আগ্রহ দুটোই আছে, তাই আমিও তাদের দলে ভিড়লাম। দিন যতো এগিয়ে আসছে পাহাড় যেন আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে।
কিন্তু সমস্যা শুরু হলো, আমার ইউনিভার্সিটিতে। নির্ধারিত আট দিন সময়ে আমার মোট তিনটি টিউটোরিয়াল পরীক্ষা, তিনটি প্রাকটিক্যাল এবং অগনিত ক্লাশ আছে। ইউনিভার্সিটি জীবনে কোনো পরীক্ষা এবং প্রাকটিক্যাল বাদ দেই নাই। তাই এগুলো বাদ দিয়ে কোনোভাবেই আমার যাওয়ার উপায় নাই। দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে বন্ধুদের বললাম, তোরা যা, আমি যেতে পারছি না।
দিন যতোই এগিয়ে আসতে থাকে ততোই শুনতে পাই, ওরা তাবু কিনছে, ট্রাকিংয়ের বিভিন্ন সরঞ্জাম সংগ্রহ করছে ইত্যাদি।
ওদের যাত্রার দিন ইউনিভার্সিটি থেকে জানতে পারলাম, একটি পরীক্ষা পিছিয়ে গেছে। কিন্তু অন্যগুলো অপরিবর্তিত আছে। তাজিংডং যাত্রার কয়েক ঘন্টা আগে তাজিংডং যাত্রার মূল পরিকল্পনাকারী আনোয়ারের বাসায় গিয়ে জানতে পারলাম, আমার এক ক্লাসমেট গোপনে ওদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। তখনই আমার মনে চিন্তা ঢুকে গেল, ও যদি সবকিছু বাদ দিয়ে ওদের সঙ্গে যেতে পারে তাহলে আমি কেন পারব না?
বন্ধুকে বললাম, আমি যাব।
আনোয়ার খুবই অবাক হলে, তুই এখন কিভাবে যাবি? আর মাত্র কয়েক ঘন্টা পরে রওনা দিব। আমরা বাসের টিকিট কেটেছি, তাবু কিনেছি, শুকনো খাবার, ট্র্যাকিংয়ের সরঞ্জাম, ওষুধ, হাত মোজা, কান টুপি, নাক টুপি কতো কি!
আমি বললাম, তবুও আমি যাব।
বাসার ভেতর থেকে আনোয়ারের আম্মাও বলে উঠলেন, ওকে নিয়ে যা।
অগত্যা সে তাদের লিস্ট দেখিয়ে বলল, পারবি 2 ঘন্টার মধ্যে এসব জোগাড় করতে। লিস্টে ছিল 1500 টাকা, শুকনো খাবার, ওষুধ, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, পিঠে ঝোলানোর মজবুত ব্যাগ, কেডস, গরম পোশাক ইত্যাদি।
আমি রাজি হয়ে গেলাম। আমার বাসাতেই কিছু সরঞ্জাম ছিল। কিছু কিনলাম। কিছু পাওয়া গেল না। সেগুলোর কথা কাউকে বললাম না।
ব্যাগটা কাধে নিয়ে বাসায় জানালাম, আমি 8 দিনের জন্য বান্দরবান যাচ্ছি।
ডলফিন বাস কাউন্টারে গিয়ে ইনজিন কভারে একজনের বসার সিট খুজছিলাম। এ সময় দলের অন্য সদস্যদের সঙ্গে দেখা। তারা আমাকে দেখে অবাক। জিজ্ঞাসা করলো আরে তুই, কোথায় যাচ্ছিস?
বললাম, কেন তাজিংডং!
(ছবিটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ লেক বলে পরিচিত বগা লেকের।
এটি বান্দরবানের রুমা থানার দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।