আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অনির্বাচিত

ধূর!!কী সব আমি আমি করছি!আমার সাথে যে জলজ্যান্ত দুটো মানুষ বসে আছে তা কি ভুলেই গেলাম নাকি!আসলে কি ভুলে গেছি তা নিয়ে ভাবার কোনো সুযোগই না দিয়ে নদী চিৎকার করে উঠল,"বাবা!বাবা!ঐ যে সমুদ্র দেখা যাচ্ছে!Ya HoO!!"সোন্দর্যের একটা ধর্ম আছে । আর সেটি হচ্ছে সে তার সব দর্শককে শিশুদের মতো অবুঝ করে তোলে । সাগরের পাশ কেটে যাওয়া এই বাসে বসে মেয়ে যে সমুদ্রের এতটুকু দর্শনে উৎফুল্ল হয়ে পড়ছে প্রতিনিয়ত,তার সাথী যেন আজ আমিও আছি... শেষ সমুদ্র দেখা ক্যাডেট কলেজে থেকে,সাতদিনের শিক্ষাসফরে । তারপর...কত সহস্র সময় পেরিয়েছে এই জীবনের রঙ্গমঞ্চে অভিনয় করতে গিয়ে। কখনও হাঁফ ছেড়ে বাঁচার সুযোগই হয়নি ।

আর এই নীলসায়রের তীরে দাঁড়িয়ে কোনো দীর্ঘশ্বাস!সেতো কালের স্রোতে হারানো কোনো ছুড়ি সময়কে খুঁজে পাওয়ার মতই ব্যর্থ প্রয়াস ছিল রীতিমত । তাই এতবছর পর সমুদ্রের জলরাশির নির্মল হাতছানি যেন আমার মাঝেও ছেলেভুলানো এক অদ্ভূত অনুভূতির জন্ম দিয়েছে,ঠিক আমার মেয়েটির মতই । এতক্ষণ বসে বসে বাবা-মেয়ের ছেলেমানুষি উপভোগ করছিল সে । কিন্তু আমাদের বাসটা যখন সত্যি সত্যি সমুদ্রের কাছাকাছি চলে আসছিল,কিছু সময়ের জন্য, তখন সেও উত্তেজিত হয়ে পড়ছে আমাদের সাথে । সমুদ্রমাতার এই মানুষভুলানো ক্ষমতাটি চিরদিনের ।

মেয়ে যখন উত্তেজনার রশি ধরে একটু বেশিই ঝুলে পড়ছে তখন সে তাকে বারবার শাসাচ্ছে । আমি বললাম,"থাক না!একটু মজা করতে দাও । "ও বলল,"দেখ,এটা পাবলিক বাস । মজা করার তো সময় আছে । "নদী একবার আমার দিকে তাকায় আরেকবার তার মায়ের দিকে ।

তারপর...একটা মুহূর্তে অত্যন্ত শান্ত মেয়ের মতো চুপটি করে বসে থাকে । আমি একটু হাসি । ব্যাপারটা দেখে হয়ত ওর মুচকি হাসিটাও বাধা মানেনি । অনেক সুন্দর হাসি তার । সেই হাসি যেন অমাবস্যার পর খাঁচা ছেড়ে পালানো নতুন বাঁকা চাদের মতই কালজয়ী আনন্দেঘেরা,আর শীতের সকালের শুভ্র কুয়াশার চাদরের আড়ালে অরুনআলোর স্পর্শে জেগে উঠা কোনো পুলকিত শিশিরের মতই সুন্দর ।

সেই হাসির জালে আটকা পড়েই তো জীবনঘরি পার করেছে কতই না বৃত্তাকার পথ । ফেলে এসেছি কত অধ্যায় এই খাতার পূর্বের পৃষ্ঠাগুলোতে । থাক সে কথা। সময়ের কাছে হার মেনে কেনই বা এই স্মৃতি রোমন্থন? তবুও বলি......। তার সাথে আমার প্রথম দেখা হয় আন্তঃক্যাডেট কলেজ সাহিত্য ও সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় ।

একদিন ডাইনিং হলে আমাদের টেবিলগুলো পরিবর্তনের কবলে পড়ে । আর সেই মুহুর্তের দোহাই দিয়েই হয়ত বিধাতা আমার সামনের টেবিলটাতে তাকে বসিয়ে দিলেন । হঠাৎ চোখ পড়তেই আমার কেমন যেন অনুভূত হল!!কাকে দেখলাম?চোখ ঘুরিয়ে আরেকবার তাকাতেই দেখি সে আমার দিকে তাকিয়ে...এবার আর চোখ ফেরাতে পারলাম না । আমাকে রীতিমত রাস্তার বখাটে কোনো ছেলের সারিতে ফেলে সে তার মুখখানি ঢেকে নিল । তার পরদিন ছিল আমার ইভেন্ট ।

সারাদিন রাত কেবল হেমায়েতপুরের পাগলদের মতো পায়চারি করেছি । রাতে চোখে নেই ঘুম । শুধু সেই প্রিয় মুখখানি আমার সামনে ভাস্যমান । কী আছে তাতে?রাতের জ়োনাকীরা বারবার জানালার পাশে এসে আমাকে দেখে যাচ্ছে ,আর হাউসের পাশের ঝোপঝাড়ে ঢাকা ঝিঁঝিঁর দল কেবল সেই তিক্ত অনুভূতিটিকে আরও ভয়ানক করে তুলতে কোনো এক প্রভাবকের কাজটি করছিল মাত্র । তাই সেই নিষ্পাপ মুখটির মায়া আমার হৃদয়ের কোঠরে আবদ্ধ সেই জীবনপ্রদীপখানি জ্বালানোর কাজে ব্যস্ত ছিল রীতিমত ।

আর এই অধম শরীরের প্রত্যেক অণু-পরমাণুতে তন্ত্র-মন্ত্রের যন্ত্রণাই সেই মায়া যে কোনো বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার আসক্তিতে সিক্ত তা বুঝি নি তখন । তো মঞ্চে উঠলাম পরদিন । সারা শরীর কাঁপছিল সত্যি!তবে ভয় না অন্য কিছু তা নিয়ে চিন্তা করার সময় ছিল না । আগেরদিন কিছু প্র্যাকটিস করতে পারিনি । তবু বিতর্ক বলে কথা ।

প্রতিপক্ষ কি বলল না বলল তা নিয়ে ছিল না চিন্তা এতটুকুও । শুধু দর্শকসারির পেছনে তাকিয়ে ছিলাম অসহায়ভাবে । 'অসহায়' বললাম এই কারণে যে আমি যেখানে বসেছিলাম সেখান থেকে কাউকে দেখা যায়নি ভাল করে । তবু পরীক্ষার হলে দেখাদেখি করা তীক্ষ্ণ চোখের কাছে সে মায়াবী মুখখানি কি আড়াল হতে পারে?দেখলাম,মৃগছানার মতোই নিস্পলক সেই নিষ্পাপ দুটো চোখ,জোনাকীর মতোই দীপ্তিময়তায় ঘেরা সেই সুহাসিনীর চিত্তে আমন্ত্রিত মমতার ডানপিটে ছোটোছোটি,কবির কবিতায় লেখা কোনো ইন্দ্রের অপ্সরীর ছেলেভুলানো সেই হাসিটি যেন আজ চুরি করেছে মেয়েটির রাঙ্গা দুটো ঠোঁট । আমি কেবল সেই হাসির নীরব দর্শক,অপলক চোখে চেয়ে থাকা,শান্ত ছেলেটির মতোই ।

বক্তৃতা শেষ করলাম কোনোরকমে । প্রতিযোগিতা শেষে সবার একই প্রশ্ন..."স্বর এমন শুনাচ্ছিল কেন?"কেন এমন শুনাচ্ছিল তা কাউকে বলতে পারিনি,বলার চেষ্টাও করিনি । তবে মনের গভীরে দেখা লুকানো সেই স্বপ্নগুলোকে ভেঙ্গে দিতে বাস্তবতা তেমন জ্যামে পড়েনি । দুটো দিন কেটে গেল । তখন সময়ের জননী আমার প্রশ্নের পৌনঃপুনিকতাই বিরক্ত হয়ে পড়ছিল বারবার।

"কখন আসবে তার ইভেন্ট?" শেষ দিন,শেষ ইভেন্ট । আধুনিক গান । এতদিন যেহেতু কিছুতে দেখিনি তবে আজই মঞ্চে উঠছে সে,মোটামোটি নিশ্চিত ছিলাম । গান চলছে । একজন একজন প্রতিযোগী আসছে আর গান করে চলে যাচ্ছে ।

কোনো গানই যেন আমাকে ঘুম পাড়ানো ছাড়া অন্য কিছু করতে পারল না । ওহ!নাদিয়ার গানটাও শুনতে হবে । বেচারা বাঁধনতো এখনি অক্কা পাবে মনে হচ্ছে । কতটা যে ভালোবাসে মেয়েটাকে তা মাপার একটা যন্ত্র আবিষ্কার করতে পারলে ভালো হতো । বাঁধন যত দামই হোক ওটা কিনে নিতো জ়ানি।

হ্যাঁ,আমার খুব কাছের বন্ধু বাঁধনের কথাই বলছি । ইতোমধ্যে অডিটোরিয়ামে ঢোকার আগে একবার খোঁচা মেরে এসেছি,"বাঁধু রে!!আজ কিন্তু ভাবীর ইভেন্ট!প্রস্তুত তো?"শুনে সে আমাকে মারতে আসছিল । আমি দৌড়ে সরে যায়। তো যাই হোক । এত কিছুর পরও কিন্তু আমি এই গল্পের নায়িকার সময়টির জন্য অপেক্ষা করছিলাম আকুল হয়ে ।

এরই মধ্যে নাদিয়ার নাম ঘোষণা করে দিল ভারপ্রাপ্ত সাংস্কৃতিক অধিনায়ক । আমরা তো সবাই বাঁধনের দিকে তাকিয়ে আছি । বেচারা মাথা নিছু করে আছে । সবাই "বাঁধন বাঁধন" বলে চেঁচাচ্ছি । আর তখনই আমার স্বপ্নের রাজকন্যা মঞ্চে উপস্থিত হলো 'নাদিয়া' হয়ে...!!!কত সহজেই না হয়ে গেল বলা।

তবে তখন আমি কি এতটাই সহজ়ভাবে ব্যাপারটা নিতে পেরেছিলাম?সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে আমি এখন রীতিমতো হেসেই ফেলছি । তখন আর কী কী করেছিলাম মনে পড়ে না......তবে অপরাধীর মত তাকাতে হয় বলেই তাকিয়েছি বাঁধনের দিকে,শুধু একটিবারের জন্য!হৃদয়ের আন্দোলন কেবল এক অসহ্য বেদনাবিধুর অনুভূতির নির্মম তিক্ততায় অশ্রুসজল করেছিল চোখগুলো । আর ক্ষণিকের হীনম্নন্যতা দেহের প্রত্যেকটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে উচ্চারিত করেছে ,"আমি Sorry দোস্ত!!"হয়তবা......আমাদের গল্পের শুরু এখানেই । তারপর......কেটে গেছে অনেক নির্ঘুম রাত......অনেক নিদ্রাহীন প্রহর। তোমাদের এই সভ্যতার নানা যুদ্ধে আবর্তিত হতে হল এ বেলায় আরও একবার ।

সময়চলছিল । কখনও আর ঐ মেয়ের কথা মাথায় রাখিনি । কথা কি সত্যি বললাম?থাক না!...হ্যাঁ, সত্যিই বলেছি । এভাবেই দিনগুলি কাটতে পারতো......মা বাবা যখন জোর করেও আমাকে বিয়েতে রাজি করাতে না পেরে হাঁফ ছেড়ে দিতে যাবে তখনও ছাড়েনি । না না...ঘটানাটা তেমন জটিল নয় ।

আমার বোন,যে আমার সম্পর্কে সব কিছু জানতো,কি করে যেন হঠাৎ একদিন একটা ছবি এনে আমার হাতে তুলে দিয়ে বলল,"তোর বঊ হতে চলেছে । "আমি তো অবাক!!চিনতে ভুল হল না,এত বছর পরও!!নাদিয়া!!আরে!...আপনাদের কাছে তেমনটা লাগা তো স্বাভাবিকই !আমার কাছেই পুরো বাংলা সিনেমার কাহিনী মনে হয়েছে । বারবার নিজের শরীরে চিমটি কাটছি। আপুকে বললাম,"আপু,এটা কি করে সম্ভব?মেয়ে কি রাজি?"আপু বলল,"মেয়ে রাজি,কোনো সমস্যা নেই । আর এই নিয়ে এখন থেকে আর কোনো প্রশ্ন নয় ।

"এই বলে আপু যে একজন মহান ব্যাক্তিত্বের মতো ভাব নিয়ে চলে গেল আর আমার সামনে আসেনি বিয়ের আগে । বিয়ের পরও তাকে কখনোই সেই প্রশ্ন করতে পারতাম না । একটা সময় হাল ছেড়ে দেই। অনেকদিন বাঁধনের কোনো খোঁজ নেই । নিতে চাইলে আবার নেওয়া যায় না!হয়ত কিছুটা স্বার্থপরতাই কাজ করেছিল তখন ।

আর শিশুদের মতো কোনো বিষয় নিয়ে মাথা ঘামানোর মতো ছেলে আমি কখনোই ছিলাম না । তাই এই ব্যাপারে নাদিয়াকেও কিছু জিজ্ঞেস করিনি কখনও । তবে যতটুকু জানতে পারলাম তাতে এটাই পরিষ্কার,বাঁধনকে মেনে নেয়নি সে । এরপর আর কোনো সময় তাকে এ ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করতে যাই নি । তবে এই দীর্ঘ সময়ে নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে শুধু ত্যাগই যে সে করে এসেছে,তার মধ্যে যে ভালবাসার এতটুকুও কমতি ছিল না আমার প্রতি তা শুধু এই সুন্দর সংসারটার দিকে তাকালেই '১'এর নামতার মতো সহজ করে বলে দেয়া যায়।

রোজ সকালে সে রেওয়াজ করে,সেই সঙ্গীতের মূর্ছনাই আমার ঘুম ভাঙ্গে,আর গর্বে মনটা ভরে যায় । মনে হয়,এই জীবনে কত কিছুই না পেয়েছি!রাতে যখন ছাদের রেলিং ধরে আমরা চাঁদ দেখি দুজনে,অজুত সমুদ্র পাড়ি দিয়ে আসা ঐ খাপছাড়া বুনো বাতাসটা ওর ঘন কালোচুলগুলোকে এলোমেলো করে দিয়ে যায় । তখন কালো পাতলা ফ্রেমে বন্দী গ্লাসের ওপাশে কালো ভ্রমরের আয়নাই আমি দেখি দুটো চাঁদের প্রতিচ্ছবি । তাই উপরে তাকানো কেবলই অর্থহীন হয়ে পড়ে । আমার জীবনটা পুরোপুরি বদলে দেয় নাদিয়া ।

বুক ভাঙ্গা কষ্টে একটা সময় গিটার শেখা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলাম । ও বলল,"জাহিদ,তুমি গিটার শিখ,আমি আর তুমি মিলে একটা ব্যান্ড টিম করব । আমি ভোকাল,তোমার হাতে গিটার,শুধু তুমি আর আমি । "তারপর সেই মুচকি হাসি......যে হাসি দেখলে হয়ত আইনস্টাইনও চিন্তিত হয়ে পড়তো,কারন......তার হাসিতে সত্যিই চতুর্থমাত্রা সময়...তখন স্থির হয়ে যায়। অনেক কম কথা বলতো নাদিয়া এ কথা সত্যি তবে সংসারের কোনো অসংগতি নিয়ে সে রীতিমত আমার সাথে বোঝাপড়া করতো।

আর স্বর্গের সুখ তখন বিরক্ত হয়ে পড়তো;বারবার আমার বাড়িতে দাওয়াত খেতে খেতে । তো এভাবেই কাটছিল দিনগুলি। এরই মাঝে সময় করে একবার ঘুরতে এলাম কক্সবাজারে । ******************************************* সৈকতে বসে ছিলাম আমি। নাদিয়া তার মেয়েকে নিয়ে সাগরের ঊচ্ছল ঢেউয়ের সাথে লুকোচুরি খেলছে ।

দূর থেকে আমি কাউকে দেখতে পেলাম । হাতের কাগজ কলম নিয়েই তার দিকে এগিয়ে গেলাম । সে আমাকে চিনতে ভুল করেনি । "জাহিদ,তুই না?"...কন্ঠস্বরটা বদলে গেছে বাঁধনের । আমি খুব অসহায়ভাবেই জিজ্ঞেস করলাম,"বিয়ে করেছিস?"হাত থেকে বেনসনের প্যাকেটটা বের করে একটা ধরিয়ে দিতে দিতে না বোধক কিছু বোঝাল।

আমি বললাম, "দোস্ত,ছেড়ে দিয়েছি । " ও অবাক হয়ে বলল,"তুই??ওহ,বুঝতে পেরেছি!নাদিয়ার জন্য বুঝি?হাহা!" কিছু বলার আগেই জিজ্ঞেস করে বসল,"তোর মেয়ের নাম কি রেখেছিস?...বললাম,"নদী...কিন্তু আমার মেয়ে আছে তুই কি করে জানলি?"... "ওহ!নাদিয়ার প্রথম অক্ষর 'ন'...আর জাহিদের শেষ অক্ষর 'দ'...দুটো মিলে 'নদ'...যেহেতু মেয়ে,তাই নদী!!তারপর একটু মুচকি হাসলো সে । আমি পরের প্রশ্নের উত্তরটা আশা করেছিলাম......কিন্তু হূমায়ূন আহমেদের হিমুর মতো মানুষকে রহস্যের মধ্যে ফেলে কেটে পড়ার অভ্যাসটা ওর আজও যায়নি । আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিজের মত করে বিদায় নিয়ে উলটো করে হাঁটা শুরু করল বাঁধন । তার পথপানে হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি কিছুক্ষণ ।

তার হাতে নাদিয়ার পছন্দের গিটার,পরনে ঢিলেঢালা কালো একটা মোবাইল প্যান্ট,গায়েও কালো একটা ফুলশার্ট,এমনকি মাথায়ও একটা হ্যাট পড়েছে কালো। কালো রঙ খুব প্রিয় ছিল নাদিয়ার,সে জানতো । আর প্রতিবারের মতোই তার কাঁধে সেই ব্যাগ । জানি এর ভেতরে কত পাতায় একাকার হয়ে আছে নাদিয়ার জন্য লেখা গল্প,কবিতাগুলো । সবই নাদিয়ার পছন্দের ।

কিছুক্ষনের জন্য আমি কোথায় ছিলাম জানিনা । আজ কেবল নিজেকে এই বিশাল বালুতীরের অজস্র বালুকণার মধ্যে থেকে উড়ে এসে চোখে পড়া ঐ ক্ষুদ্র বালুকণাটির মতোই তুচ্ছ মনে হচ্ছে । মনে হচ্ছে,স্বার্থপরতার রশি ধরে কি অবশেষে আমিই ঝুললাম?ক্লাসের অত্যন্ত সুদর্শন আর স্মার্ট ছেলেটার মুখে বিষাদের দেবতা যে ঐ খুঁচখুঁচে দাড়ির তেপান্তর উদ্ধার করেছে তার জন্য কি আমিই দায়ী?ভালবাসার বনে আগুন জ্বালিয়ে কি রাতের আঁধার,দিনের আলো-সব আমিই তার কাছে অর্থহীন করে তুলেছি? হাত থেকে হঠাৎ করে ফসকে গেল লেখা গল্পের পাতাগুলো, উড়ে যেতে লাগলো ঐ দিগন্ত থেকে আসা স্বচ্ছ প্রবল বাতাসে ভাসা কালের ধূলোর মতোই । নাদিয়া এসে একটা একটা করে তুলে দিচ্ছিল আমার হাতে । আরেক হাত টেনে ধরেছে নদী ।

"বাবা চল তো,তোমাকে আজ ভিজিয়েই ছাড়বো......" । -Zahidul Haque- ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.