আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অনির্বাচিত সরকার আর নয়

অনির্বাচিত কিংবা অসাংবিধানিক সরকারের অধীনে সাধারণ নির্বাচনের বিষয়টি আবারও নাকচ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে বিরোধী দলের আজকের সমাবেশ এবং হেফাজতে ইসলামের রোববারের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনির্বাচিত সরকার আর চাই না। যা হবে নিজেদের (রাজনীতিকদের) মধ্যে হবে। কারণ, যেকোনো পরিস্থিতির শিকার হতে হয় আমাদেরই।


প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা কি আবার ২০০৭ সালে ফিরে যেতে চান? আমি চাই না। ’ বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ২০০৭ সালে তো সবাই উনার পছন্দের লোক ছিলেন। তার পরও উনার ভাগ্যে কী জুটল! আবারও যদি তিনি সে রকম কিছু আনতে চান, তাহলে উনার ভাগ্যে কী জুটতে পারে, তা তো বোঝা উচিত।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার হারানোর কিছু নেই। রাজনীতি যখন করি, জেল খাটতে হতেই পারে।

আমার পিতা-মাতা, ভাইবোনসহ গোটা পরিবারকে হত্যা করা হয়েছে। আমাকেও ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাসহ অনেকবার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। আল্লাহর ইচ্ছায় বেঁচে আছি। আল্লাহই আমার ভরসা। ’
বিরোধীদলীয় নেতার প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উনার একটাই ধারণা, উত্তরপাড়া থেকে পোশাকধারীরা এসে উনাকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবেন।

এই স্বপ্নেই উনি বিভোর। কিন্তু আমরা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিশ্বাস করি। সংসদীয় গণতন্ত্রে অন্যান্য দেশে যেভাবে নির্বাচন হয়, আমরা চাই আমাদের দেশেও সেভাবেই হবে। ’
সংলাপ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যথাসময়ে সংলাপের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাঠানো হবে। বিরোধী দল সংলাপের কথা শুনেই যে শর্ত জুড়ে দিয়েছে, তা অযৌক্তিক।

আলোচনা করতে চাইলে তো নিজের অবস্থানে অনড় (রিজিট) থাকা ঠিক না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আলোচনার মাধ্যমেই ফয়সালা চাই। কিন্তু উনারা তো “মাইনাস ওয়ান” ফর্মুলায় চলে গেছেন। এটা তো আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টির পথে বাধা। ’
সংবাদ সম্মেলন শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দু-এক দিনের মধ্যে সংলাপের বিষয়ে বিরোধী দলের কাছে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠানো হবে।


প্রশ্নোত্তর পর্বের আগে লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী সাভারে ভবনধস ও তার পরবর্তী পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে বিরোধী দলের ডাকা আজকের সমাবেশ এবং হেফাজতে ইসলামের ডাকা কাল রোববারের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত করার আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা বলেন, সাভারে হতাহত ব্যক্তিদের প্রতিনিয়ত এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে বা মর্গে আনা-নেওয়া করতে হচ্ছে। তাঁদের আত্মীয়স্বজন এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যাতায়াত করছেন। বিরোধী দল ও হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচির কারণে এই জরুরি কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি হতে পারে।
হেফাজতে ইসলামের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আসুন, শান্তির ধর্ম ইসলামকে হূদয়ে ধারণ করে সবাই দেশের উন্নয়নের জন্য, জনগণের স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করি।

রানা প্লাজা ধসের ফলে নিহতদের দাফন ও আহতদের চিকিৎসায় যাতে কোনো বাধা সৃষ্টি না হয়, সবার প্রতি সেই আবেদন জানাই। অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করি। ’
ওলামা-মাশায়েখদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তির ধর্ম ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে কেউ যাতে এই পবিত্র ধর্মের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করতে না পারে, সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখুন ও যথাযথ ব্যবস্থা নিন। তিনি বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে যেকোনো ধরনের হঠকারিতা ও দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ড বা বক্তব্যের কারণে দেশ, জাতি ও গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এটি আমাদের কারোরই কাম্য হতে পারে না।


লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা সম্পর্কে বলেন, ‘আমরা আপনাদের দাবিগুলো ইতিমধ্যেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছি। এর অনেকগুলো দাবিই বাস্তবায়িত হয়েছে। কয়েকটি দাবি বাস্তবায়নের পথে রয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে নিশ্চয়ই দাবিগুলোর সুরাহা করা যাবে। ’
এরপর প্রধানমন্ত্রী দেশের সংবিধান ও আইনের ভিত্তিতে ১৩ দফা পর্যালোচনা করে আইন মন্ত্রণালয় সরকারের যে অবস্থান নির্ধারণ করেছে, তা উল্লেখ করেন।

তবে হেফাজতে ইসলামের একটি দাবি সম্পর্কে তিনি একমত পোষণ করেন। হেফাজতের ওই দাবিতে বলা হয়েছে, ‘রেডিও-টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে দাড়ি-টুপি ও ইসলামি কৃষ্টি-কালচার নিয়ে হাসি-ঠাট্টা এবং নাটক-সিনেমায় খল ও নেতিবাচক চরিত্রে ধর্মীয় পোশাক পরিয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মনে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব সৃষ্টির অপপ্রয়াস বন্ধ করতে হবে। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমিও একমত। যদিও রাজাকার-আলবদর দেখাতে গিয়ে এমনটি করা হয়। কিন্তু মনে রাখতে হবে, দাড়ি-টুপি থাকলেই তাঁরা রাজাকার নন।

আমাদের পূর্বপুরুষ, আত্মীয়স্বজন এমনকি আওয়ামী লীগের অধিকাংশ লোকের দাড়ি আছে। তাঁরা টুপিও পরেন। তাই বলে তাঁরা কিন্তু রাজাকার নন। ’
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, মতিয়া চৌধুরী, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, মাহবুব উল আলম হানিফ ও হাছান মাহমুদ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। ।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.