সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এম সি কলেজ ছাত্রাবাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় বহিরাগত ছাত্রলীগ ক্যাডার সদস্যরা দায়ী বলে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
বুধবার দুপুরে কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক ধীরেশ চন্দ্র সরকারের কাছে ২শ’ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন তদন্ত কমিটির আহবায়ক ও কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক আল হেলাল ভুঁইয়া।
ছাত্রবাস পোড়ানোর পর বন্ধ হয়ে যাওয়া এমসি কলেজ ৫২ দিন পর খুলেছে বুধবার। কলেজ খোলার প্রথম দিন ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম ছিলো। কলেজের নিরাপত্তার স্বার্থে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন রয়েছে।
বুধবার দুপুরে কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক ধীরেশ চন্দ্র সরকারের কাছে ২শ’ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পরে উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট তুলে ধরে বক্তব্য দেন তদন্ত কমিটির আহবায়ক ও কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক আল হেলাল ভুঁইয়া।
এ সময় তিনি ২শ পৃষ্টার তদন্ত রিপোর্টের মূল অংশ পড়ে শোনান। তিনি বলেন, ৮ জুলাই ছাত্রলীগ-শিবির সংঘর্ষে একজন ছাত্রলীগ কর্মী গুরুতর আহত হওয়ার এর জের ধরে বহিরাগত ছাত্রলীগ ক্যাডাররা এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে প্রবেশ করে।
প্রবেশের সময় পুলিশ ছাত্রাবাস গেইটে অবস্থান করলেও বহিরাগতদের বাঁধা না দেয়ায় তারাই অগ্নিসংযোগ করে। পুলিশকে দায়ী করে তিনি বলেন, গেইটে পুলিশ বহিরাগতদের বাঁধা দিলে এ অগ্নিকান্ডের মতো এতো বড় ঘটনা ঘটতো না।
এছাড়া হোস্টেল সুপার সঠিক দায়িত্বপালন না করায় এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে বলেও যোগ করেন তিনি।
তিনি জানান, দু’শ পৃষ্টার এ তদন্ত রিপোর্টে কলেজ অধ্যক্ষ, হোস্টেল সুপার, ক্ষতিগ্রস্থ ২৩ জন শিক্ষার্থীর বক্তব্য, পত্রিকার রিপোর্ট ও টিভির ফুটেজ এবং স্থিরচিত্র সন্নিবেশ করা হয়েছে। এতে অগ্নিকান্ডের পর বহিরাগতদের উল্লাস প্রকাশ করে মিছিলের চিত্র দেখা গেছে।
তদন্ত কার্যক্রম সম্পর্কে বলতে গিয়ে উপাধ্যক্ষ জানান, প্রথম ১৫ দিনে কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় আরো ১০ কার্যদিবস বৃদ্ধি করা হয়। ইতোমধ্যে কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়ে যায়।
কিন্তু রমজান ও ঈদুল ফিতরের ছুটি অন্যান্য সদস্যদের কর্মব্যস্ততার কারণে আজ ২৯ আগস্ট অধ্যক্ষের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে সেটি আজই প্রকাশ করা হলো বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ২ শ পৃষ্টার তদন্ত প্রতিবেদনে আগুন লাগার কারণ উদঘাটন ও দমকাল বাহিনীর ভূমিকা কি ছিল তাও উল্লেখ করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্থ শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা অত্যন্ত দরিদ্র তাদের আপাতত বিকল্প আবাসনের ব্যবস্থা করতে কলেজ কর্তৃপক্ষে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। এছাড়া যেসব ছাত্রদের সার্টিফিকেট নষ্ট হয়ে গেছে তাদের সার্টিফিকেট সহজে উত্তোলনের ব্যাপারে কলেজ প্রশাসনের উদ্যোগ নেয়া।
অগ্নিকান্ডে হোস্টেলের দুর্বল তত্বাবধানের কথা জানিয়ে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, তত্বাবধায়কদের বাসাগুলো মেরামত ও বাড়িভাড়া ফ্রি করে দেয়া যেতে পারে। এতে তত্ত্বাবধায়করা ছাত্রাবাসে থাকতে আগ্রহী হবে। পুরাতন কাঠামোতে অনুরপ ছাত্রাবাস নির্মাণের বিষয়টি উল্লেখ করে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, সিলেটবাসীর দাবী অনুযায়ী পূর্বের স্থাপত্যশৈলী অক্ষুন্ন রেখে ছাত্রাবাস পুননির্মাণ করা যেতে পারে।
এছাড়া তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ছাত্রাবাসের চারপাশে সীমানা প্রাচীর গড়ে তোলা প্রয়োজন যাতে সহজে বহিরাগতরা প্রবেশ না করতে পারে এবং দাওয়ান ও নাইটগার্ড যথাযথ দায়িত্বপালনের বিষয়টিও গুরুত্বারোপ করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশে আরও বলা হয়, ছাত্রাবাসের নিরাপত্তার স্বার্থে সীমানার ভেতরে গড়ে ওঠা বসতি উচ্ছেদে ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।
তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন তদন্ত কমিটির সদস্য অধ্যাপক নেছাওয়ার মিয়া, পরাগ কান্তি দে, আতাউর রহমান, সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, হুমায়ুন কবীর চৌধুরী।
তদন্ত প্রতিবেদন সম্পকে জানতে চাইলের্ কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক ধীরেশ চন্দ্র সরকার বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। হোস্টেলের সমস্যা সমাধানে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের দায়িত্বশীলদের সাথে কথা হয়েছে। তিনি কলেজের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
এদিকে কলেজ খোলার প্রথমদিন ক্লাস হলেও উপস্থিতি ছিলো কম।
ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন ছিল।
sylhetnews24.com
sylhetexpress.com ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।