আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তদন্ত কমিটির জন্য আরেকটি তদন্ত কমিটি

লিখে খাই, সবার ভাল চাই ১১২৭ হত্যার শাস্তি যাবজ্জীবন! রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় তদন্ত কমিটি এ শাস্তির সুপারিশ করেছে। প্রশ্ন হলো, এ তদন্ত কমিটি কেন করা হয়েছিল? ভবন ধসের কারণ উদঘাটন নাকি শাস্তি নির্ধারণ? যদি ধসের কারণই হয়, তাহলে এ কমিটি কেন শাস্তির সুপারিশ করবে? তাদের কে বলেছে শাস্তির সুপারিশ করতে? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি আরও অনেক সুপারিশের সঙ্গে শাস্তির বিষয়টিও তুলে ধরেছে। এ সুপারিশ নিয়ে সর্বত্র চলছে আলোচনা সমালোচনা। এমন মর্মান্তিক, এমন হৃদয়বিদারক, এত লাশÑ যার বা যাদের জন্য, তাদের শাস্তি কি শুধুই যাবজ্জীবন? স্বজনহারাদের মন কি এতে শান্তি পাবে? তদন্ত কমিটি হয়তো বলবে আইনেই সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া আছে যাবজ্জীবন, আমরা কি করবো? তাহলে তদন্ত কমিটি তো প্রস্তাব করতে পারতেন আইন সংশোধনের। বলতে পারতেন, আইন সংশোধন করে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করা হোক।

এটা করলে তারা সমালোচনার ঊর্ধ্বে উঠতে পারতেন। তদন্ত কমিটি ভাল কিছু সুপারিশ করেছেÑ গার্মেন্ট কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার দেয়া, সন্তোষজনক মজুরি প্রদান, শ্রমিকদের পূর্ণ নিরাপত্তা বিধানে আইন, আইএলও’র বিধিবিধান কঠোরভাবে প্রতিপালনে মালিকদের বাধ্য করা এবং পোশাক শিল্পপল্লী গড়ে তোলা। প্রত্যেকটি সুপারিশই গার্মেন্ট শিল্পের জন্য মঙ্গলজনক। এছাড়া তারা এ ঘটনাকে হত্যাকাণ্ড বলেও চিহ্নিত করেছেন। তাদের সব প্রস্তাবই ঢাকা পড়েছে একটি সুপারিশে, যেটি হলো শাস্তি যাবজ্জীবন।

গতকাল বাসে এ নিয়ে তুমুল হইচই। কেউ বলছেন, এত মানুষ হত্যার শাস্তি যদি যাবজ্জীবন হয়, তাহলে তো এমন ঘটনা আরও ঘটতে থাকবে। কেউ কর্ণপাত করবে না। কারণ, যাবজ্জীবন শাস্তি হলেও এক সময় আইনের ফাঁকফোকরে তারা জামিনে বেরিয়ে বুক ফুলিয়ে হাঁটবেন। আর রানা প্লাজার বিভীষিকাময় এ ঘটনার শিকার আহত শ্রমিকরা দগ্ধ হবেন তাদের দেখে।

অন্য একজন বলছেন, রানাদের শুধু ফাঁসি দিলেই হবে না। ফাঁসি দেয়ার পর ওদের লাশকেও ১১২৭ বার ফাঁসি দিতে হবে। রানা প্লাজা বিশ্বের ইতিহাসে ভয়াবহ এক শিল্প দুর্ঘটনা। এমন দুর্ঘটনায় বিশ্ববিবেক নাড়া দিয়েছে। ভবন ঝুঁকিপূর্ণ জেনে শুনে এসব শ্রমিককে ওই ভবনে ওঠানো হয়েছিল।

না, অনেকেই জেনে শুনে এই ভবনে উঠতে চাননি। তাদের ভয় দেখানো হয়েছে বেতন কাটা হবে। তাদের চাকরিচ্যুত করা হবে। তারপরও যখন যেতে চাননি শ্রমিকরা তখন তাদের ওপর লাঠিচার্জ করা হয়। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে তারা রানা প্লাজার গার্মেন্ট কারখানায় ওঠেন।

কর্মস্থলে যান। তাদের মনে আতঙ্ক ছিল। ভয় ছিল। কখন ভবনটি ভেঙে যায়। এ ভয়কে মনে রেখেই উঠেছিলেন।

বেশি সময় তাদের লাগেনি। বিকট শব্দে ভবন ভেঙে পড়ে। আর এর ভেতর থেকে সর্বশেষ ১১২৭টি লাশ উদ্ধার করা হয়। স্বজনদের দাবি অনুযায়ী এখনও পাঁচ শতাধিক নিখোঁজ রয়েছে। দুই শতাধিক লাশ শনাক্ত করা যায়নি।

আহতদের কারও দু’পা-ই নেই। কারও হাত কাটা পড়েছে। ওরা এখন বলছে, এর চেয়ে মরে যাওয়াই ভাল ছিল। এখন অন্যের বোঝা হয়ে সারা জীবন কাটাতে হবে। এরচেয়ে কষ্টের আর কি আছে জীবনে? ঘটনার পরদিনই আবার প্রচার করা হয়, রানার মা হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন।

এখন শোনা যাচ্ছে রানার মা মারা যাননি। দিব্যি বেঁচে আছেন। রানার পিতা স্বীকারোক্তি দিয়েছেন সিমপ্যাথি আদায় ও গ্রেপ্তার এড়ানোর জন্য রানার মা মারা গেছে এমন প্রচারণা চালানো হয়। ছিঃ কি ভয়ানক তথ্য। গ্রেপ্তার এড়াতে যারা জীবন্ত মানুষকে মৃত বলে প্রচার চালাতে পারে ওরা কি মানুষ? না! ওরা মানুষ হতে পারে না।

আর যেহেতু মানুষ নয়, সেহেতু তাদের প্রতি আবার সিমপ্যাথি কিসের? ওদের ফাঁসি হওয়া উচিত। সবাই এটা বুঝলেও তদন্ত কমিটি তা বোঝেনি। নাকি বুঝেও তারা ইচ্ছা করে এমনটা করেছে। এজন্য আরেকটি তদন্ত কমিটি করা দরকার। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.