আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তদন্ত কমিটি

হাসন রাজায় কয়, আমি কিছু নয় রে আমি কিছু নয় !

মার্চমাসে ঘুমধুম সীমান্তের কাঁটাতারে আর একটি ফেলানি বিদ্ধ হলে এপারে ঢাকার কাঁচবন্দী যান্ত্রিক হু-হু ঠান্ডা ঘরে তদন্ত কমিটির বৈঠক চলে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি । খুব গরম ঢাকায়, জানেন তো ? হু-হু ঠান্ডা এসিঘর ছাড়া তদন্তের সমীকরণ মেলানো দায় ! তবু এই ঘরে এসে মন্ত্রীকে কফির পেয়ালা দিতে গিয়ে বেয়ারা ঘাবড়ে যায়; পাছে কফি ঠান্ডা হয়ে আসে ... মন্ত্রীসাহেব ঠান্ডা-কফি একদমই খেতে পারেন না... ওদিকে কাঁচপুরে তীব্র রোদ- তীব্র যানজট গরম আর গরম ! ঘাম আর ঘাম ! ডিভাইডার করে যানজট কমানো যেত বটে; সে টাকা মেরে খেয়েছে সরকারী লালপিঁপড়ার দল । তবু খিদে যায়নি মেটানো ... ঐখান থেকে মাসিক খোরাকি আসে অর্ধকোটি টাকা ‘ছি ছি ! ‘অবৈধ চাঁদা’ কি বলছেন ? এগুলি তো সরকার দলের হক । খাক্‌ না ! কত আর খাবে ?’- এসব বলতে গিয়ে ভয় হয়, বড় ভয় হয়, কবে যেন এই দেশে ছাদে গিয়ে চাঁদ দেখতেও ‘ট্যাক্স’ দিতে হয় ! ‘কাঁচপুরের যানজট ? তাইতে কি বেশি ক্ষতি ?’ এই নিয়ে সংসদে বিশাল ভাষন দেয় চিন্তিত রাজনৈতিক নেতা, কোথায় কাঁচপুর ? কোথায় পোস্তগোলা ? ভাষনের তিন-চতুর্থাংশ জুড়েই বিরোধী দলের কুকর্মের বিশাল ফর্দ ! লক্ষ ফিরিস্তির উপন্যাসের ঝোলা ! যাই হোক ! সিদ্ধান্ত এলো, এই বিষয়ে অবশ্যই সুনিশ্চিতভাবে অবশ্যই অবশ্যই সুনিশ্চিতভাবে তিন সদস্যে গড়া জোড়ালো কোন তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে,... ঠিক তখন কাঁচপুরে- বাসের ভেতর থেকে ওয়াক শব্দে বমি করে জনৈকা দরিদ্র কিশোরী প্রেসার কুকার বাসে নিত্যবন্দী মানুষগুলোর বমি-ঘাম শুকিয়ে জমে মেঘ উত্তর আকাশে; তারপর উড়ে উড়ে সেইসব মেঘদল ছুটে আসে দ্রুত কালো হয়ে ছুটে আসে বনানী-গুলশানের আকাশ ছেয়ে দিতে মন্ত্রীর মেয়ে দৌড়ে ছাদে চলে যায়- তার মাথায় আজ চিলেকোঠার ঘরে ইলিশ খিচুড়ী খাওয়ার প্ল্যান সঙ্গে রবীন্দ্রসঙ্গীত, ‘এসো নীপবনে...’ অসময়ে তার ইলিশ খিচুড়ী খাওয়ার সিদ্ধান্তের কারনে দ্রুত বিক্রী হয়ে যায় পদ্মা-মেঘনা সহ পাঁচটি অভয়াশ্রম থেকে ধরা বেআইনী জাটকা ইলিশ এভাবেই নিষিদ্ধ ‘মার্চ-এপ্রিল’-এ ইলিশ নিধন বন্ধ থাকে না আর ! তারপর কালো মেঘে ঝড় হয় । হুটহাট জমে যায় মন্ত্রীর চিলেকোঠার ফ্যামিলি-আসর হাসির হৈ-হৈ শব্দ শোনা যায় ভেজা-ছাদ ঘিরে যদিও অন্যনীড়ে ধীরে ধীরে তেঁজগাও, কারওয়ান বাজার থেকেও শব্দ ভেসে আসে ভেসে যাওয়া বস্তির ধার থেকে – হুহু করে কাঁদে দরিদ্র বস্তিবাসীর দল ! হু কেয়ারস ? এসো নীপবনে... শুধু বস্তি নয় ... তিনদিনের টানা বৃষ্টি ভাসিয়ে নিলে সমস্ত বাংলাদেশ মন্ত্রীর দল ত্রান হাতে ছুটে যায় গৃহহীন মানুষের কাছে মন্ত্রীরাও তো মানুষ, তাঁদেরও তো মন আছে, নাকি ? দুইদিন পরের ঘটনা । মিডিয়ায় ত্রানের টাকা মেরে খাওয়ার সংবাদ দেখানোর প্রতিক্রিয়া হিসেবে মন্ত্রী গাল চুলকে বলেন, ‘রাবিশ ! সব রিউমার, সব ষড়যন্ত্র...’ ‘স-ব রিউমার, স-ব ষড়যন্ত্র...’ কিন্তু সরকারী ব্যাংক থেকে ঋণখেলাপীদের কোটি কোটি টাকা ঋণ দেয়া বন্ধ হয় না সরকারের আদমীরা উর্ণনাভের মত অষ্টচক্রে শেয়ার বাজার লুটেপুটে খায় অথচ পদ্মা সেতু সচক্ষে দেখবার সাধ পূর্ণ হয় না জনতার কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হয়, ‘স-ব রিউমার, স-ব ষড়যন্ত্র...’ যেমন ষড়যন্ত্র হয়েছিল একটি কালো বিড়ালকে নিয়ে ! চিন্তিত হওয়ার কোন কারন নেই, ভাইলোক ! আসছে ! আসছে তিন সদস্য-বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি !! কেউ কেউ মহামূর্খ এই কমিটির উপর বিশ্বাস রাখতে পারে না এই তো, গত বছর ! কে যেন অবিশ্বাসী দুরন্ত দুর্নীতিগুলো ফ্রেমবন্দী করতে গিয়ে আজ নিজেই ফ্রেমবন্দী ফটোগ্রাফ ... আমরা নতুন আরেক সাংবাদিকের ফ্রেমে দুর্নীতির নব্য খসড়া দেখতে পেয়ে তার পুরোনো কথাগুলি ভুলে যাই । আমাদের দায়িত্ব নেই কি বলছেন ? আমরা অবশ্যই আমাদের দায়িত্ব পালন করছি ! তাকিয়ে আছি তদন্ত কমিটির দিকে ... তদন্ত কমিটি বেশ চিন্তিত ! তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি... আমরা জনতারা তাদের কারনেই তো নিশ্চিন্তে ভোরবেলার কাগজে খুনের খবর দেখে ভয় পাই না; উঁহু ! একদম না ! জয় জনতা ! জয় জনতা !!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.