. মানুষকে ভালবাসতে জানা ও মানুষের মানবিক গুণগুলো অর্জন করা নিঃসন্দেহে একজন মানুষের মনুষ্যত্ব গুণকেই বিকশিত করে। জীবনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করার গুণ আর ভুলগুলোকে স্বীকার করে নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন এটি আমার কাছে মহৎগুণ বলেই মনে হয়। কারণ মানুষের মনে মহৎ চিন্তাগুলো, জান্নাতে যাওয়ার চিন্তায় কাজ করেনা, কেননা মানুষ ঐ বিষয়টি সেসময়ে ভাবনায় আনার সময় পায়না। আমার মত কম শিক্ষকই আছেন, যারা অনেক সময় অযথা বকাঝকা করে ছাত্রদের মন বিগড়ে দেন, তাদের অনুভূতি কেমন আমি জানিনা, তবে এ পথ অবলম্বন করে আমি বুঝতে চেষ্টা করি। জীবনের বিচিত্র অনুভূতি মানুষ অভিজ্ঞতা দিয়ে অর্জন করে, যেখানে তথ্য প্রযুক্তির অবাধ চলাফেরা সেখানে এ পথের প্রয়োজন কী? আসলে প্রয়োজনের থেকে প্রাপ্তি অনেক বড়।
যারা শুধু লাভ খুজে বেড়ান তারা গাণিতিক হিসাবের খাতায় মেপে মেপে চলেন, কখনও কখনও উপকার অপকার চিন্তা করেন, তবে স্বার্থবাদী মানুষের মত জান্নাতে যাওয়ার চিন্তা করলেও তারা আত্নস্বার্থবাদী হতে পারেননা। স্বার্থবাদী আর আত্নস্বার্থবাদীর মধ্যে যে পার্থক্য আছে তা নিশ্চয় আপনারা জানেন। আর যদি না জানেন, তবে এক লাইনে বলি- যারা শুধু নিজের লাভ চিন্তা করে কিন্তু ঐ লাভে অপরের কল্যাণ চিন্তা করেনা তারা স্বার্থবাদী আর যারা নিজের লাভের চিন্তা করেও অপরের মঙ্গল কামনা করে কাজ করে তারা আত্নস্বার্থবাদী। তাই স্বার্থবাদীরা জান্নাতে যাওয়ার ইচ্ছাকে ক্ষণিকের জন্য মহৎ মনের প্রসারতা সাজিয়ে টিকিট বিলি করে ভাবেন তিনি জান্নাতে যাবেন আর তার শরিকদেরও জান্নাতে নিবেন। আসলে যে পাপ করে সে বুঝেই পাপ করে কিন্তু যে ভাল কাজ করে, সে ভালমন্দ যাচাই করে সে কাজটি করেনা।
যাচাই করার প্রয়োজনও পরেনা। কারণ ভাল-ভালোই। শিক্ষার ব্রত নিয়ে কতজন শিক্ষকতা করেন, আমি বলতে পারবনা, তবে মর্যাদা নিয়ে এপেশায় সফল মানুষের অভাব নেই। যারা জ্ঞানী মনে ভাবে, তাদের জ্ঞান প্রশ্নবিদ্ধ কিন্তু আচারে জ্ঞান-জ্ঞানলব্ধ। শুধু সুবিধার কথা ভেবে যেমন মনুষ্যত্বকে লালন করা যায়না, তেমনি ক্লাসে ভাল পড়িয়েও কর্তৃপক্ষের কদর পাওয়া যায়না।
জ্ঞান দানের জিনিস। যা শিক্ষকরা দান গ্রহণে অর্জন করেছে, অপরের নিকট প্রকাশেও তা দানের মহিমায় বিজয় ধ্বনিত হবে-এটি অস্বীকার করা যায়না। শিক্ষকতা আদর্শ পেশা, তবে আদর্শিক মানুষ গড়ায় এ বিশ শতকের শিক্ষকরা কতটা সফল হবেন তা বলা মুসকিল। যন্ত্র সভ্যতার ছোঁয়ায় মানুষ যেমন যান্ত্রিক হয়ে উঠছে, তেমনি মানুষের কাজের গতিও বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই আমি মনেকরি, মানবিক গুণ সম্পন্ন মানুষ খুঁজে পাওয়া এক সময় হয়তো দুস্কর হয়ে উঠবে।
কেননা মানুষ শিল্পীসুলভ ভাবনা ভাবতে সময় পাবেনা। এ সংখ্যা গুণগত মানে কমে যাবে তবে পরিমাণে যে বাড়বে এটা বলতে পারি। শিল্পী নিজেই সৃষ্টিকর্তা। যিনি সৃষ্টি করেন-সৃষ্টির উল্লাসে আনন্দ পাবার জন্য। তাকে সৃষ্টির যুগে কদর করা হয়না, পরে ফল ভোগের প্রাপ্তিতে তাঁর উপলব্ধি হয়।
। কাজেই শিক্ষক সৃষ্টি করেন আর যা সৃষ্টি করেন তা হচ্ছে মানবিক গুণসম্পন্ন মানুষ। শিক্ষক নিজেই বিষয়টি যথাযথ উপলব্ধি করেনা কেননা শিক্ষকরা শিক্ষাদানের পূর্বে দানের অর্জিত ফল কতটা অর্জন করেছে তা যদি সার্টিফিকেট সর্বস্ব না হয়ে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বিচার্য হত, তবে এপেশার মানদণ্ড বৃদ্ধি পেত। প্রাইমারী থেকে এ বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় অধিক সমস্যা সৃষ্টি করছে। পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়া যেমন একটি গৃহ নির্মিত হয়না তেমনি পাঠদানের কৌশলপত্র ছাড়া শিক্ষাদান সুসম্পন্ন হয়না।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কিছু ব্যক্তি আসেন ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটানোর জন্য আর কিছু আসেন তাদের অনুকরণে সুবিধা গ্রহণের জন্য। তবে বিনয়ীরা এ দু’য়ের কোনটাকেই প্রাধান্য না দিয়ে আদর্শকে প্রাধান্য দেন- হয়তো এ কারণে অনেককেই চলে যেতে হয় বিদায়ী প্রতিবাদে। কারণ তিনি জানেন ব্যক্তিত্ব শুধু প্রকাশেই মর্যাদা পায়না, অর্জন ও ব্যবস্থাপনায়ও মর্যাদা স্থায়ী হয়। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।