...............................................................................................................................................................। হরতাল অনেক আগে থেকেই আমাদের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে হরতালের রূপের যে পরিবর্তনটি হয়েছে তা হলো ককটেলের আবির্ভাব। ককটেল এর সরব উপস্থিতি আমাদের হরতালগুলোতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। হরতাল মানেই মূহুর্তে মূহুর্তে পথে ঘাটে,বাস স্টেশনে,রেল স্টেশনে,অলিতে গলিতে ককটেলের অবাধ বিস্ফোরন।
হরতালের মাত্রা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় ককটেল এরও প্রয়োজন পড়ছে অধিক। বেকারত্ব আমাদের প্রধান সমস্যাগুলোর একটি। ককটেল এর চাহিদার কথা বিবেচনা করে কেউ কেউ সানন্দে তা গ্রহণ করতে পারেন। আমাদের টোকাইদলের অনেকে খুব দারুনভাবে,সুনিপুন হাতে ককটেল তৈরীতে পারদর্শী। এদের দু’একজনকে বেতনভুক্ত করে সাথে আরো কিছু কর্মচারী রেখে নিজেই উদ্যোক্তা হয়ে যেতে পারেন।
গড়ে তুলতে পারেন দেশে ককটেল এর একটি সমৃদ্ধ বাজার। তৈরী হবে প্রতিযোগিতার;সবাই চেষ্টায় মগ্ন থাকবে কত বিধ্বংসী করে নিজেদের ককটেলকে উপস্থাপন করা যায়!যাতে রাজনৈতিক কর্মীরা তাদের পন্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়। র্যা ব পুলিশ নিয়ে বিন্দু মাত্র মাথা ঘামাবার প্রয়োজন নেই। । যেহেতু ককটেলের বাজারটা আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর উপর নির্ভর করবে;সুতরাং এর নিরাপত্তার বিষয়টিও তাদের উপর ছেড়ে দিন।
আপনার ককটেলকে পথে প্রান্তরে বিস্ফোরিত করে তারা জাতিকে ভয় দেখাবে,বিরোধী দল সরকারকে ভয় দেখাবে,সরকার বিরোধী দলের উপর দায় চাপাতে পারবে। আপনার ককটেল বিস্ফোরনে তারা বাসে,ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দিবে,আপনার ককটেল দিয়ে তারা রাজপথ দখল করবে;আপনি গর্ববোধ করবেন। গভীর আনন্দে টিভির পর্দার সামনে বসে উপভোগ করবেন। চারপাশের সবাইকে দেখাবেন,গর্ব করে বলবেন যে,আপনার ককটেল দিয়েই এসব হচ্ছে। হতাশ হবেন না বা মন খারাপ করবেন না যখন শুনবেন বা দেখবেন আপনার ককটেলের আঘাতে স্কুলের কোন ছাত্র-ছাত্রী আহত কিংবা নিহত হয়েছে।
আপনার ককটেল বিস্ফোরনে বাসে আগুন লেগে কারো বৃদ্ধ পিতা কিংবা পাচ বছরের সন্তানসহ মা আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা গেছে,পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম বাবাহীন বিশ বছরের যুবক মারা গেছে। আপনাদের দোষ আছে মনে করবেন না। কোটি টাকার গাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গেলে আফসোস করবেন না;আপনারা তো ককটেল বাণিজ্যের মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে চেয়েছেন।
আমাদের প্রতিভা আমাকে ক্রমাগত বিস্মিত-ই করে চলেছে। অনেকে দোষ দিয়ে থাকেন আমাদের বিজ্ঞানীরা পরমানু গবেষনায় অনেক পিছিয়ে।
কিন্তু বিদেশে গিয়ে তারা ভালো ফলাফল করছেন। এখন আমাদের দেশেই পরমানু চর্চা হচ্ছে;আমাদের বিজ্ঞানীরা সে চর্চায় সফলতা না পেলেও আমাদের অভিজ্ঞ টোকাই সমাজ আপাতত ‘ককটেল’ বানানোর মধ্য দিয়ে গবেষনা চর্চাকে গতিশীল করে তুলেছেন। তাদের মধ্যে বিজ্ঞানী হবার প্রতিভা দেখা যাচ্ছে। আমি অভিভূত!আমি বিস্মিত!যে ছেলেগুলো কলেজ,ইউনিভার্সিটির দরজায় উকি মারেনি কোনদিন;স্কুলে তাদের কয়দিন সময় কেটেছে মনে নেই;তারা কি নির্ভয়ে সুনিপুনভাবে ককটেল তৈরী করছে। হোক তা কম বিধ্বংসী!ধীরে ধীরে তারা একদিন পারমানবিক বোমা বানাতে সক্ষম হবে।
ককটেলের যত্রতত্র অবাধ ব্যবহারের ফলে প্রতিটি জায়গাই এখন হয়ে উঠেছে অনিরাপদ। রাস্তায় পড়ে থাকা বোমাকে বল মনে করে খেলতে গিয়ে সাত-আট বছরের শিশু মারা গেলে তাদের কিছু আসে যাবে না। তাদের নিরাপত্তা প্রদানকারী রাজনৈতিক দলগুলোরও কিছু আসে যাবে না। সন্তান হারাবার বেদনায় ঐ শিশুগুলোর মা-বাবাকেই আর্তনাদ করতে দেখা যাবে;কোন রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীকে সহমর্মিতা প্রকাশ করতে দেখা যাবে না।
হরতালের এই নতুন মাত্রা কতখানি ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আর কী নতুন মাত্রা যোগ অপেক্ষায় আছে তা জানতে আমিও বড্ড আগ্রহে অপেক্ষা করছি। কেননা তার ভয়াবহতার উপরই নির্ভর করবে আমাদের পরমাণু চর্চার ভবিষ্যত-আমাদের উদীয়মান বিজ্ঞানীরা কী উন্নতি করছেন না অবনতি। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো হয়ত তাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিমালায় ভবিষ্যতে উত্তর কোরিয়া,রাশিয়া বা ইরানের সাথে যুদ্ধ করার পরিকল্পনা করছেন। না হলে তারা কেন এতটা পরমানু নির্ভর হতে চাইছেন???
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।