‘হায়েনা, ওই হায়েনা তুই দেশকে খেয়েছিস, এখন বুয়েটকে খাবি... পারবি না।
আমরা বুয়েটের শিক্ষক ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা হলাম শিকারি।
প্রথমে তোর মাথায় মারব, পরে পেটে। তারপর মাথা কেটে বুয়েটের সামনে টানিয়ে রাখব।
যাতে বুয়েট ধ্বংস করতে না পারিস।
’
ঘটনা:
উপরোক্ত মন্তব্য ফেসবুকে দেবার কারণে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে একজন প্রচন্ড দেশপ্রেমিক ব্যক্তি “ প্রধানমন্ত্রীর” নিরাপত্তা চেয়ে শাহবাগ থানায় মামলা করেছেন । এখন আসুন বিশ্লেষণে ....
বিশ্লেষণ:
উপরের যে উক্তিটি করা হয়েছে কোথাও কিন্তু, “শেখ হাসিনা” অথবা “প্রধানমন্ত্রী” জাতীয় কোন শব্দ নেই । তার পরেও কিভাবে কিছু প্রচন্ড মেধাবী লোক “ হায়েনা” শব্দের অর্থ “শেখ হাসিনা” অথবা “প্রধানমন্ত্রী” ধরে নিয়েছেন ! প্রসঙ্গত, ফেসবুকের মন্তব্যটি বুয়েটের একজন শিক্ষকের । বুয়েটের বর্তমান চলা অচলাবস্থার প্রেক্ষিতে তিনি ফেসবুক এই স্টেটাস দিয়েছিলেন । চলমান ভয়াল থমথমে পরিবেশের বিপরীতে, তার এই স্টেটাসে অসামান্য সাহস লক্ষ্য করা যাচ্ছে ।
কিন্তু তার সাহসী স্টেটাস তার জীবনে ইতমধ্যেই অনেক দুর্ভোগ বয়ে নিয়ে এনেছে । দুর্ভোগের মধ্যে অন্যতম হল তাকে হুমকি দিয়েছেন “দেশ রক্ষার নিমিত্তে সদা জাগ্রত” প্রধানমন্ত্রীর কলিজার (assuming she has কলিজা) টুকরা বুয়েটের কুলাংগার “ ছাত্রলীগ” । তাকে হুমকি দেওয়ার পর, তার নামে হলে হলে পোস্টারিং করে । তাকে বানানো হয়েছে হিজবুত তাহরীর ।
জেনে রাখা ভালো, অনেক স্যারকেই হিজবুত তাহরীর বানানো হয়েছে ।
তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন, যন্ত্রকেীশল বিভাগের সাবেগ বিভাগীয় প্রধান এবং মুক্তিযোদ্ধা মাকসুদ হেলালী স্যার এবং নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শাকিল আখতার স্যার । তবে পেছনের খবর হলো, তাদের সবার বিরুদ্ধে অভিযোগ একই। .....বর্তমান ভিসি এবং প্রোভিসির কিছু কাজের বিরোধিতা করা.......।
এখন আগের আলোচনায় ফিরে যাই ।
কিভাবে বুয়েটের ছাত্রলীগের ছেলেরা বুঝল হায়েনা মানে “প্রধানমন্ত্রী”? তার প্রথম ব্যাখ্যাটি দেওয়া যায় একটা জোক্সের মাধ্যমে ।
(জোক্সটি সংগৃহিত....)
প্রথম ব্যাখ্যা:
একবার এক লোক ফেসবুকে স্টেটাস দিয়েছেন “ প্রধানমন্ত্রী হচ্ছে একটা পাগল”। কিছুদিন পরে তার বাসায় পুলিশ গেল । তাকে বলল “ আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে পাগল বলার অপরাধে তোমাকে গ্রেফতার করা হল”। লোকটি জবাব দিল “ আমিত বলিনি এটা আমাদের প্রধানমন্ত্রী । আমি মিন করেছি জাপানী প্রধানমন্ত্রী ।
বিশ্বাস করুন । আমাকে ছেড়ে দিন । ”
পুলিশ জবাবে বলল “ আমাদের সাথে মশকারি কর ...মিয়া?? ..... আমরা জানিনা কোন প্রধানমন্ত্রী পাগল?”।
২য় ব্যাখ্যা :
আসলে, উপরের ব্যাখ্যাটা আমার পছন্দ হয়নি। হয়তো, আপনাদেরও হয়নি।
তাহলে আসুন ভাবি, তারা কিভাবে ডিসাইফার করল যে,
হায়েনা = “প্রধানমন্ত্রী” অথবা “শেখ হাসিনা”?
ধরি ,
হায়েনা = “প্রধানমন্ত্রী”
তাহলে স্টেটাসটা দাড়ায়,
‘প্রধানমন্ত্রী, ওই প্রধানমন্ত্রী তুই দেশকে খেয়েছিস, এখন বুয়েটকে খাবি... পারবি না।
আমরা বুয়েটের শিক্ষক ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা হলাম শিকারি।
প্রথমে তোর মাথায় মারব, পরে পেটে। তারপর মাথা কেটে বুয়েটের সামনে টানিয়ে রাখব।
যাতে বুয়েট ধ্বংস করতে না পারিস।
’
এই বাক্যটা কোথায় যেন ঠিক মিলছেনা । কারণ, প্রধানমন্ত্রী কিভাবে নিজ দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খাবেন? কারণ, আমি যত দূর জানি, প্রধানমন্ত্রীর
পুত্রধন একজন ”কম্পিউটার বিজ্ঞানী” । তার মানে, উনি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্ব খুব ভালই বুঝেন ।
(যদিও বাংলাদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা খুব নাজুক। তার ওপর, আমার সন্দেহ হয় বাংলাদেশে যারা প্রধান মন্ত্রী হন তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে কি হয় তা জানেন কিনা।
শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়া তারা কি জানেন বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে কি হয় ? ”ডিজিটাল” শব্দের অর্থ কি শেখ হাসিনা বলতে পারবেন ? মনে হয় না। )
তার মানে ইনডিরেক্টলি প্রমাণিত হল, 'হায়েনা' শব্দের অর্থ কোনভাবেই প্রধানমন্ত্রী বা শেখ হাসিনা নয় । কারন বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ে তিনি 'ক অক্ষর গোমাংস '। তার কোন ক্ষমতাই নাই তাহা ভক্ষণ করার । কারণ, তার মাথা থাকলেও বুয়েটের কোন উপকারে আসবেনা, মাথা না থাকলেও বুয়েটের কোন ক্ষতি হবেনা ।
এক কথায়, 'হায়েনা' শব্দটা প্রতিকী অর্থেও প্রধানমন্ত্রী হবেনা ।
৩য় ব্যাখ্য
আসেন ধরি,
হায়েনা = অপরাজনীতি ....
তাহলে স্টেটসটা দাড়ায়,
‘অপরাজনীতি, ওই অপরাজনীতি তুই দেশকে খেয়েছিস, এখন বুয়েটকে খাবি... পারবি না।
আমরা বুয়েটের শিক্ষক ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা হলাম শিকারি।
প্রথমে তোর মাথায় মারব, পরে পেটে। তারপর মাথা কেটে বুয়েটের সামনে টানিয়ে রাখব।
যাতে বুয়েট ধ্বংস করতে না পারিস। ’
এখন বোঝা যাচ্ছে, আমরা একটু লাইনে এসেছি ।
কিন্তু তার পরেও একটি জায়গায় খটকা আছে । তা হল অপরাজনীতির মাথা কেটে
বুয়েটের সামনে টানিয়ে রাখার কি দরকার? অপরাজনীতির মাথা কেটে দিলেই তো হয় ? (হয়তবা উনি প্রতিকী অর্থে ব্যবহার করেছেন)
******************************************
আর কোন ব্যাখ্যা নয়। এইবার সরাসরী আলোচনায় যাব ।
ছাত্রলীগ বুয়েটের স্যারদের হুমকি দিচ্ছেন । ফেসবুক এর মত জায়গায় আমরা
মনের মত করে কিছু লিখতে পারছিনা । আমাদের স্বাধীনতার জায়গা আর থাকল কোথায় ? যারা হলে থাকে, তারা জানে বুয়েটে ছাত্রলীগ কি
করছে ? সাথে সাথে প্রশাসন???? ..
বিশ্ববিদ্যালয় হল সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান । এখানে সব কিছুই উঁচু দরের । এখানে যে মানুষ গুলো পড়তে আসে তারা দেশের সেরা ।
সে যে বিশ্ববিদ্যালয়ই হোকনা কেন। এখানে যারা পড়তে আসে তারা সবচেয়ে জ্ঞানী । তা না হলে তারা গবেষণা করবে কিভাবে? গবেষণা করতে অনেক উদার হতে হয়, তাই আমি জানতাম । কিন্তু উদারতার নিদর্শন কোথায় ? সামান্য ফেসবুক স্টেটাসকে কেন্দ্র করে থানায় মামলা হচ্ছে । বুয়েট হচ্ছে বাংলাদেশের প্রকেীশলীদের প্রানের একটা জায়গা ।
যদিও, বুয়েটের পরিধি অনেক সামান্য । বুয়েটের ছাত্রসংখ্যাও যে অনেক, তা কিন্তু নয় । এখানে যে ছেলেগুলো ভর্তি হয় তারা অন্যদের থেকে খুব যে আলাদা তা বলবনা । তবে স্বীকার করতেই হবে, বুয়েটেই তাদেরকে আলাদা করে দেয়। অন্তত পক্ষে, আমরা যখন ছাত্র ছিলাম আমরা দেখেছি।
যুগ যুগ চলে আসা এই সুন্দর সংস্কৃতিকে অবাক করে দিয়ে, অপরাজনীতি এবং নোংরা ছাত্রনেতা গুলোর বিষাক্ত হাত যখন বুয়েটের মত একটি নিষ্পাপ জায়গায় পড়ে, তখন আর সবার মত আমারও বলতে ইচ্ছা করে
‘হায়েনা, ওই হায়েনা তুই দেশকে খেয়েছিস, এখন বুয়েটকে খাবি... পারবি না।
আমরা বুয়েটের শিক্ষক ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা হলাম শিকারি। প্রথমে তোর মাথায় মারব, পরে পেটে। তারপর মাথা কেটে বুয়েটের সামনে টানিয়ে রাখব।
যাতে বুয়েট ধ্বংস করতে না পারিস।
’
[যুগটা ফ্রিডম অব স্পিচের। কিন্তু, সামুতে নিজ নামে ব্লগিং করা বুয়েটের ০৬এর ছোটভাই যখন খুব লজ্জিত মন নিয়ে আমাকে এই লেখা ব্লগে দিতে বলে, তখন, ফুসফুসে অক্সিজেন পাই না। আমিও বুঝি, সে যদি ছাত্রলীগের হাতে ধরা পড়ে, তাকে আরেকজন ঈশান হয়ে যেতে হবে। আমি বুয়েটের বুকে আর কোন ঈশান চাই না। ] ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।