আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোলাপান মরে, মরুক.........

"জেগে উঠুক তারুন্য,জেগে উঠুক স্বপ্ন,জেগে উঠুক মনুষ্যত্ব.........." ঘটনা প্রবাহ-১: ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থী সড়ক দূর্ঘটনায় মারা গেল কিছুদিন আগে। সম্ভবত একই দিনে কিংবা তার আগের দিন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ( এ আই ইউ বি ) এর স্থাপত্য অনুষদের এক শিক্ষার্থী (মুহাম্মদ জাভেদ হোসেন )চেয়ারম্যান বাড়ির সামনে সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হলে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয় এবং হাসপাতালের বারান্দায় মুমূর্ষ অবস্থায় পড়ে থাকে, হাসপাতাল থেকে বলা হয় টাকা দিয়ে ভর্তি না হলে চিকিতসা হবে না। তিনদিন ধরে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে মারা যায়। তিনদিন ধরে এ আই ইউ বি এর দেয়ালে দেয়ালে এরকম একটা নিউজ কাটিং ঝুলে ছিল। তার আহত হওয়া থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত খুব নিভৃতেই ছিল এ খবর।

তার মৃত্যুর পর অবশ্য সহপাঠীরা দুবার মানব-বন্ধন করেছে। আর ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীটি মারা গেল সেদিন গোটা ঢাকা শহরের মানুষ এই খবরটি জেনে গেল কিংবা জানতে বাধ্য হল, গাড়ি-ঘোড়া ভাংচুর আর অবোরোধের কারনে গোটা ঢাকা শহরে তীব্র ট্রাফিক জ্যামই ছিল এর কারন। আর গতানুগতিকভাবে মিডিয়ার ছিল উচ্ছ্বসিত ইস্যুর "রিপোর্টিং"। ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থী এক মানুষ হিসেবে মারা গেল, তার আশেপাশের সব মানুষ জানতে পারলে একটা মানুষ মারা গেছে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের গন্ডি পার না করে আহত হয়ে তিনদিন বিনা চিকিতসায় মারা যাবার পরেও সে মানুষের মর্যাদা পেল না, তার খবর কোন মিডিয়াতে বড় করে এল না।

বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী মারা গেল, তাকে এইদেশের মিডিয়া একটা সাধারন মানুষের স্বীকৃতিও দিতে পারল না। অনেকটা হয়ত তাচ্ছিল্যভরা অসতর্ক ভাবনা অনেকের মাঝে - প্রাইভেট ইউনির পোলাপান মরছে আর কি, মরুক ..... ঘটনা প্রবাহ-২ সহপাঠীকে ইভটিজ করার প্রতিবাদের কারনে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে নির্মম্ভাবে পিটিয়ে জখম করে স্থানীয় বখাটে যুবকেরা। সেই যুবক হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে আজ বেশ ক'টা দিন। সম্ভবত কোন সরকারি ইউনির শিক্ষার্থী নয় বলেই বিষয়টা কেউ জানে না, তার খোঁজ নিতে কেউ যাবে এইটা তো আকাশ কুসুম কল্পনা। আর ভন্ড মিডিয়ার দল হয়ত গরম টপিক না বলে পাশ কাটিয়েছে।

ঢাকার এক স্বনামধন্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এরকম এক শিক্ষার্থীও ইভটিজিং এর প্রতিবাদ করে জখম হয় সন্ত্রাসীদের হাতে, সেটা দেশবাসীর সামনে খুব বেদনার্ত ভঙ্গিমায় উপস্থাপন করেছিল দেশের সব প্রথম সারির মিডিয়া। দেশের মানুষ তাই সরকারি ইউনির শিক্ষার্থীদের নিয়ে গর্ব করে, তারা শুধু মেধাবীও নয়, নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষার্থীও বটে। মহাখালীর সন্ত্রাসীরা কোন একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে ইভটিজিং এর প্রতিবাদের কারনে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠালে সম্ভবত সেটাকে একটা মানুষের নৈতিকতাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে কোথাও বড় গলা করে বলার কিছু নাই, এইটা কেউ না জানুক, জানার দরকারও নাই...... ঘটনাপ্রবাহ-৩ কিছুদিন আগে বুয়েটের টার্ম ফাইনালের আগে আকাশের চিকিতসার জন্য বিপুল পরিমান টাকার অতি অল্প সময়ে জোগাড়ের দৃশ্য দেখে খুবই অবাক হয়েছিলাম। শুধু মিরপুরেই নিজের চোখের সামনে সাধারন মানুষের অংশগ্রহন দেখে বেশ ভালই লাগছিল। আজকে এ আই ইউ বি এর পাপ্পুরো প্রায় একইরকম বিরল ক্যান্সারের জন্য পোলাপানকে বনানী এলাকায় টাকা তুলতে দেখলাম।

যারা টাকা তুলছিল তারা খুব শুকনা মুখ করে এরে ওরে ধরে বলার চেস্টা করছিল ৫০-৬০ লক্ষ টাকার মত লাগবে, কাউকে ওভাবে আগ্রহ দেখাতে দেখলাম না। হয়ত জানে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালইয়ের শিক্ষার্থী, প্রতি ক্রেডিটে যে ছেলের পরিবার ৪০০০ টাকা দিতে পারে সে ছেলের পরিবার ৫০ লক্ষ টাকাও দিতে পারবে। মানুষ হয়ত জানে না, এখন মধ্যবিত্ত পরিবারের পিতা-মাতাও তাদের সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে সন্তানদেরকে এরকম ইউনিগুলোতে ভর্তি করায়, তাদের হয়ত সামর্থও হয় না তাদের সন্তানটিকে ইউনির সেমেস্টার ফী এর পাশাপাশি কিছু হাতখরচের টাকা দেয়ার। এই পাপ্পু ছেলেটা খুবই দুর্ভাগা, কারন হয়ত সে বুয়েটের মত কোন সরকারি ইউনির শিক্ষার্থী না কিংবা এরকম কোন কমিউনিটির অংশ না। তারো হয়ত চিকিতসা হবে না, তার সহপাঠীগুলো হয়ত আরো কয়েকটা দিন এরকম শুকনো মুখ নিয়ে ডাবলে পেপার এর বক্সগুলো নিয়ে ১০ টাকা, ৫ টাকা আর ২ টাকা সংগ্রহ করবে।

তারপর একদিন সবাই ভুলে যাবে, আর পাপ্পু হয়ত একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে তার গন্তব্যের দিকে এগুবে... [ একজন এইআইইউবিয়ান হিসেবে আমি খুবই লজ্জিত, পাপ্পুর জন্য কিংবা একজন সাধারন মানুষের জন্য আমি তার এই অসুখের জন্য দেশের কোনধরনের কমিউনিটির কাছে খোলা মনে কথা বলার মত আবহ খুঁজে পাইনি, আমি কোথাও একজন মানুষের জন্য আর একজন মানুষের উদাত্ত সাড়া পাইনি, হয়ত কেউ কেউ নিভৃতে ঐ ডাবল এ পেপার বক্সে টাকা দিয়ে গেছেন কিন্তু তারা সংখ্যায় এত বেশি নগন্য যে সেটা হয়ত পাপ্পুর প্রয়োজনকে উপহাস করার জন্য যথেষ্ঠ। হয়ত পাপ্পু প্রাইভেট ইউনির একজন শিক্ষার্থী, সে হয়ত একদিন অন্য অনেকের মতই দূরারোগ্য ব্যধির সাথে পাঞ্জা লড়ে একসময় রণে ভঙ্গ দিয়ে মারা যাবে... আনমনে একটা উচ্চারন আপনাই বের হয় "মরুক"... ] ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.