আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বেসরকারি সম্প্রচার নীতিমালা - ত্রুটির শেষ নেই

মন কি যে চায়...... বর্তমান বিশ্বে রেডিও ও টেলিভিশন গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালি গণপমাধ্যম । বাংলাদেশে সরকারি রেডিও ও টেলিভশন ছাড়াও বেসরকারি রেডিও ও টেলিভিশন রয়েছে এবং প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে আরও নতুন নতুন চ্যানেল আসছে । এসব বেসরকারি রেডিও টেলিভিশন চ্যানেলের লাইসেন্স প্রদান, অনুস্ঠান সম্প্রচার, বিজ্ঞাপন প্রচার প্রভৃতির বিভিন্ন নিয়ম নিয়ে রচিত হয়েছে বেসরকারি সম্প্রচার নীতিমালা-২০১১। যদিও এসব নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে বেসরকারি সম্প্রচার এর ক্ষেত্রে সুস্থ প্রতিযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য । কিন্তু এসব নীতির মধ্যে অনেক ত্রুটি রয়েছে ।

বেসরকারী সম্প্রচার নীতিমালা-২০১১ : বেসরকারী সম্প্রচার নীতিমালা-২০১১ ৫ টি ধারায় বিভক্ত।  ১ নং ধারা : প্রস্তাবনা  ২ নং ধারা : বেসরকারী রেডিও ও টেলিভিশন লাইসেন্স  ৩ নং ধারা : বেসরকারী অনুষ্ঠান ও বিজ্ঞাপন প্রচারোপযোগিতা এবং লাইসেন্স সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কমিটি  ৪ নং ধারা : বেসরকারী সম্প্রচারের উদ্দেশ্যে পরিবেশিত অনুষ্ঠান প্রচারের শর্তাবলী  ৫ নং ধারা : সম্প্রচারের উদ্দেশ্যে বিজ্ঞাপন প্রচারের শর্তাবলী নীতিমালা প্রনয়নের উদ্দেশ্য : বেসরকারি সম্প্রচার নীতিমালা প্রণয়নের উদ্দেশ্য নীতিমালার প্রস্তাবণায় বলা হয়েছে । যা বলা হয়েছে তা হল – বাংলাদেশের দর্শকদের মধ্যে বয়সের তারতম্য আছে। দর্শকদের মধ্যে শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী আছে যাদের ওপর রেডিও এবং টেলিভিশন গভীর রেখাপাত করে । যেহেতু পরিবারের বিভিন্ন বয়োগোস্ঠীর সদস্যবৃন্দ যুগপৎভাবে অনুস্ঠান দেখেন, সেহেতু তাদের ওপর রেখাপাতের মাত্রারও হেরফের ঘটে ।

রেডিও এবং টেলিভিশন অনুস্ঠানসমূহ বাংলাদেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ভৌগলিক ও রাজনৈ্তিক ঐতিহ্য ও মূল্যবোধের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কি না সেগুলিও বিচার করতে হবে। এছাড়াও সম্প্রচারকৃত অনুষ্ঠান ও বিজ্ঞাপন সমূহের সামাজিক দায়বদ্ধতা নিশ্চিতকরণে সরকারের দায়িত্ব রয়েছে । শিশু বান্ধব সমাজ তৈরিতে সম্প্রচার মাধ্যমের দায়িত্ব অপরিসীম । সামাজিক-নৈ্তিকতার স্খলন রোধে তাই সম্প্রচার মাধ্যমগুলোতে বিশেষ জোর দেয়া প্রয়োজন। এসব বিবেচনার কথা মনে রেখেই প্রতিটি বেসরকারি রেডিও এবং টেলিভিশনের কার্যক্রম তদারকি, নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার জন্য নীতিমালা করা সমীচিন ও প্রয়োজনীয়।

বেসরকারী সম্প্রচার নীতিমালার সমালোচনা : বেসরকারী সম্প্রচার নীতিমালা-২০১১ এর বিভিন্ন নীতির সমালোচনা ও সম্ভাব্য সমাধান নিচে তুলে ধরা হল ২ নং ধারার ১(৪) নং অনুচ্ছেদ : সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা এবং সম্প্রচারের বাজারের পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে বিভিন্ন টেলিভিশন ও রেডিও চ্যানেলের বাৎসরিক আর্থিক রিপোর্ট পর্যালোচনা করে লাইসেন্স ফি নির্ধারণ করবে। এভাবে ফি নির্ধারণ করলে বিভিন্ন চ্যানেলের জন্য নির্ধারিত ফি এর মধ্যে বৈষম্য দেখা যাবে । এখন কোন রেডিও বা টেলিভিশন চ্যানেল কি পরিমান আয় করে তা নির্ভর করে তারা কি সপ্রচার করে আর তাদের কেমন দর্শকপ্রিয়তা তার ওপর। কোন চ্যানেল যদি ভাল অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে তাহলে তাদের দর্শকপ্রিয়তা বেশি হবে এবং তাদের আয় ও বেশি হবে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে তারা অতিরিক্ত লাইসেন্স ফি দিবে।

তাই সকল টেলিভিশনের জন্য একটি ও সকল রেডিও চ্যানেলগুলোর জন্য একটি নির্দিষ্ট লাইসেন্স ফি নির্ধারণ করা উচিত। ২ নং ধারার ১(৫) নং অনুচ্ছেদ : লাইসেন্স আবেদনের জন্য প্রার্থিত প্রতিষ্ঠানকে পূর্ণ আর্থিক, কারিগরী এবং প্রস্তাবিত ও বিস্তারিত অনুষ্ঠানসুচি জমা দিতে হবে। এখানে প্রস্তাবিত গ্রাহকের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু একটি চ্যানেলের গ্রাহক কেমন হবে তা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। তাই এখানে প্রস্তাবিত গ্রাহকের পরিবর্তে সম্ভাব্য গ্রাহকবৃন্দ দেয়া উচিত ছিল।

২ নং ধারার ১(৬) নং অনুচ্ছেদ : লাইসেন্সের আবেদন সকল বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান সমূহের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। লাইসেন্স শুধুমাত্র বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠানকে না দিয়ে বিদেশি প্রতিষ্ঠানকেও দেয়া উচিত। এতে বাংলাদেশের টেলিকমিউনিকেশিন বিভাগের আয়ের একটি উৎস হবে। আবার যেহেতু সম্প্রচার নিয়ন্ত্রন কমিটি রয়েছে সেহেতু সম্প্রচারিত অনুষ্ঠান নিয়ে সমস্যা হবে না। ২ নং ধারার ২(১) নং অনুচ্ছেদ : লাইসেন্স প্রক্রিয়া স্বচ্ছ, অবৈষম্যমূলক এবং জবাবদিহিমূলক হবে।

এক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে লাইসেন্সের সংখ্যা নির্ধারণ করা হবে। কিন্তু প্রতিযোগিতার মাধ্যমে লাইসেন্সের সংখ্যা নির্ধারণ করা হলে বৈষম্য হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এর চেয়ে বরং অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে লাইসেন্সের সংখ্যা নির্ধারণ করা উচিত। ২ নং ধারার ২(৪) নং অনুচ্ছেদ : বাংলাদেশের ভৌগলিক সীমার মধ্যে আঞ্চলিক পর্যায়ে রেডিও ও টেলিভিশন চ্যানেল বা কেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনার জন্য আগ্রহী প্রতিষ্ঠান সমূহকে বিশেষ উৎসাহ প্রদান করা হবে। এক্ষেত্রে কোন এলাকায় বা জায়গায় সম্প্রচার কেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি প্রদান করা হবে সেক্ষেত্রে সরকারের সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।

২(৬) নং অনুচ্ছেদ : লাইসেন্স স্বত্ব হস্তান্তর করা যাবে না। ২(৭) নং অনুচ্ছেদ : নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লাইসেন্স গ্রহীতা সম্প্রচার কার্যক্রম শুরু করতে ব্যর্থ হলে সরকার অনুমতি/লাইসেন্স বাতিল করতে পারবে। সবকিছুই যদি সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়, তাহলে আর বেসরকারি কী থাকল। সবকিছুই তো সরকারি হয়ে গেল। কোন প্রতিষ্ঠান কোন জায়গায় কেন্দ্র স্থাপন করবে তা তার নিজস্ব ব্যাপার।

প্রতি্ষ্ঠানের যে জায়গায় সুবিধা হবে, সেখানটাই সে বেছে নেবে। তাছাড়া কবে থেকে সম্প্রচার করবে সেটাও তার একান্ত ব্যাপার। ২ নং ধারার ২(১০) নং অনুচ্ছেদ : লাইসেন্স প্রাপ্ত রেডিও কে পাঁচ বছরের জন্য এবং টেলিভিশন কে দশ বছরের জন্য মেয়াদ প্রদান করা হবে এবং মেয়াদ শেষে পূনঃনবায়নের জন্য আবেদন করতে পারবে। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, রেডিও ও টেলিভিশন চ্যানেলটিকে স্বতঃক্রিয়ভাবে পাঁচ বছর শেষে আবেদনের অধিকার দেয়া যেতে পারে। আরও উল্লেখ্য যে, মেয়াদ শেষ পরও যদি লাইসেন্স সংক্রান্ত কোন সিদ্ধান্ত না দেয়া হয় তবে পুনরায় সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত রেডিও ও টেলিভিশন চ্যানেল্টি কার্যক্রম চালাতে পারবে।

লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষে্র অধীনে দাখিলকৃত আবেদনপত্র অগ্রাহ্য বা প্রত্যাখ্যাত না হওয়া পর্যন্ত আবেদনকারী তাহার কার্যক্রম পরিচালনা অব্যাহত রাখতে পারবে। কমিটি এত কিছু করতে পারবে অথচ পুনরায় সিদ্ধান্ত দিতে দেরী হবে এটা এমন কেমন কথা। তাহলে তো কমিটি অন্যান্য কাজও সঠিক ভাবে পরিচালনা করতে পারবে না। ২ নং ধারার ৩(১) নং অনুচ্ছেদ : কোন রাজনৈতিক দল বা ট্রেড ইঊনিয়ন অথবা কোন প্রতিষ্ঠান যার মালিকানা কোন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পর্যায়ে পদ অধিকার করেন লাইসেন্সের অযোগ্য। অনুষ্ঠান সম্প্রচার কমিটি নিয়ন্ত্রন করছে, রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন দেয়া যাব না, তাহলে রাজনৈ্তিক ব্যাক্তি ব সংগঠন লাইসেন্সের জন্য অযোগ্য বিবেচিত হবেন কেন? যদি রাজনৈ্তিক শক্তি (Political Power) এর ভয় থাকে তবে যদি রাজনৈ্তিক ব্যাক্তিদের আত্মীয়-স্বজনরা লাইসেন্সের আবেদন করে তাহলেও তো রাজনৈ্তিক পাওয়ার সক্রিয় থাকার সম্ভাবনা থাকে।

২ নং ধারার ৩(২) নং অনুচ্ছেদ : কোন একক ব্যাক্তি লাইসেন্স প্রাপ্যের অযোগ্য। একজন ব্যাক্তির পর্যাপ্ত অর্থ থাকতে পারে, ভাল অনুষ্ঠান প্রচারের সামর্থত থাকতে পারে, তাহলে তার লাইসেন্স পেতে অসুবিধা কোথায়? এখন কী তার আবার সংঠন করতে হবে, সেগুলির ফরমালিটিস মানতে হবে। তারপর সংগঠনের নামে লাইসেন্স নিতে হবে, এত প্রক্রিয়া সম্পাদন করতে করতে হয়ত তার আগ্রহই থাকবে না। ২ নং ধারার ৩(৩) নং অনুচ্ছেদ : কোন বিদেশী প্রতিষ্ঠান, যা বিদেশি আইনে নিবন্ধিত ও পরিচালিত বা কোন প্রতিষ্ঠান যা বিদেশি নাগরিকের মালিকানা দ্বারা পরিচালিত হয় তা লাইসেন্সের অযোগ্য। বিদেশী প্রতিষ্ঠান যদি বাংলাদেশের সকল নীতি মেনে চলে তাহলে তো লাইসেন্স প্রদানে কোন সমস্যা থাকার কথা নয়।

বরং বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স প্রদান করে উচিত। ২ নং ধারার ৩(৪) নং অনুচ্ছেদ : কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বা কোন ধর্মভিত্তিক দল লাইসেন্সের অযোগ্য। ধর্মভিত্তিক দল যদি সম্প্রচার কমিটি অনুমোদিত অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে তবে তাকে লাইসেন্স দেয়া উচিত। ২ নং ধারার ৩(৫) নং অনুচ্ছেদ : যে কোন ধরণের দল বা প্রতিষ্ঠান বা জোটবদ্ধ সংগঠন যার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বা সম্পৃক্ততা আছে সেসব দল লাইসেন্স পাওয়ার অযোগ্য। দলটি যদি অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে জাতির উন্নতির উদ্দেশ্য, রাজনৈ্তিক উদ্দেশ্যে নয় তাহলে দলটিকে লাইসেন্স দিতে বাধা কোথায়? সুতরাং তাকে লাইসেন্স দেয়া উচিত।

২ নং ধারার (৪) নং অনুচ্ছেদ : সরকার কিংবা সরকার অনুমোদিত প্রতিনিধি যে কোন রেডিও বা টেলিভিশনের স্থাপনা পরিদর্শন এবং উদিষ্ট জনগোষ্ঠীর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে। যেখানে সম্প্রচার কমিটি রয়েছে সেখানে সরকারের নাক গলানোর প্রয়োজোন কী? তার চেয়ে সকল তথ্য সংগ্রহের দায়িত্ব কমিটির হাতে তুলে দেয়া উচিত। ৩ নং ধারার ৩(২) নং অনুচ্ছেদ : সরকারের অনুমোদনক্রমে লাইসেন্স ফি নির্ধারন। লাইসেন্স ফি যেহেতু কমিটি নির্ধারন করবে, সেহেতু সরকারের অনুমোদনের কোন প্রয়োজন ন থাকার কথা। কারন সবকিছু বিশ্লেষণ করেই কমিটি ফি নির্ধারন করবে।

আর তা যদি নাই পারে তাহলে কমিটিরই বা দরকার কি? ৩ নং ধারার ৩(৪) নং অনুচ্ছেদ : রেডিও ও টেলিভিশনে নিয়োজিত জনবলের (সংবাদ পাঠক/পাঠিকা, সংবাদ রিপর্টার/ বেসরকারী অনুস্ঠান নির্মানে জড়িত শিল্পী অ কলাকুশলী) ও অনুষ্ঠানের মান উন্নয়ন ও শৈল্পিক উৎকর্ষ সাধনের স্বার্থে প্রশিক্ষণ নীতিমাল গ্রহণ করা। শিল্পী ও অনুষ্ঠানের মান উন্নয়নের দায়িত্ব আসলে রেডিও ও টেলিভিশনের কর্মকর্তাদের। এখানে সম্প্রচার কমিটির হাতে এ দায়ীত্ব দেয়ার কোন প্রয়োজন নেই। ৪ নং ধারার ২ অনুচ্ছেদ : সরকার কর্তৃক অনুমোদিত নিম্নবর্নিত জাতীয় গুরত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান বাধ্যতামূলকভাবে প্রচার করা • রাষ্ট্র্পতি ও সরকার প্রধানের ভাষন • গুরুত্বপুর্ণ ঘোষণা বা প্রেস নোট • জরুরি আবহাওয়া ও স্বাস্হ্য বার্তা • সরকার কর্তৃক সময়, সময় অনুমোদিত জাতীয় গুরুত্বপুর্ণ অনুষ্ঠান রাষ্ট্র্পতি ও সরকার প্রধানের ভাষণ যে সব সময় জাতীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ তা নয়। তাই সকল ভাষন প্রচারের কোন প্রয়োজন নেই।

বরং যে সকল ভাষণ জাতীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ তা যে কারও ভাষণ হোক না কেন সেগুলোই শুধুমাত্র বাধ্যতামূলক প্রচার করা উচিত। তাছারা সকল প্রেস নোট ও প্রচারের প্রয়োজন নেই। ৪ নং ধারার ৪ অনুচ্ছেদ : সকল ধর্মীয় অনূভুতির প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা প্রদর্শন। কোন জাতি, ধর্ম, সম্প্রদায় বা ব্যাক্তি বিশেষের প্রতি কোন্রূপ অবমাননা, শ্লেষ, কটাক্ষ বা সমালোচনা করা যাবে না এবং সাম্প্রদায়িকতা পরিহার করতে হবে। এখন কোন ব্যাক্তি যদি ভুল কাজ করে তবে তার সমালোচনা করা অবশ্যই উচিত।

তাই এ অনুচ্ছেদ থেকে ব্যাক্তি কথাটা উঠিয়ে দেয়া উচিত। ৪ নং ধারার ৭ অনুচ্ছেদ : বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার যোগ্য মর্যাদায় সুপ্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের এবং এই উদ্দেশ্যে সঠিক বাংলা উচ্চারণের একটি আদর্শ মান স্থাপনের চেষ্ট করতে হবে। সংবাদ পাঠ ও সকল অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে কোনক্রমেই উচ্চারনের মান শিথিল করা যাবে না। এখানে বাংলা ভাষার সঠিক উচ্চারণের কথা বলা হচ্ছে, অথচ নীতিমালার খসড়ায় বাংলা বানানের ভুল প্রয়ওগ করা হয়েছে। যেমন : সরকারী, বেসরকারী, দেশী, বিদেশী, ইংরেজী, আরো।

কিন্তু এ বানানগুলোর সঠিক হচ্ছে সরকারি, বেসরকারি, দেশি, বিদেশি, ইংরেজি, আরও। যদি বিসমিল্লায় গলদ থাকে, তাহলে এর পরিণাম আর কি হবে! ৪ নং ধারার ৯ অনুচ্ছেদ : কোন আলোচনামূলক অনষ্ঠানে কোন প্রকার অসঙ্গতিপূর্ন বিভ্রান্তিমূলক তথ্য বা উপাত্ত দেয়া যাবেনা। প্রয়োজনে এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে টেলিভিশন বা রেডিও বা অনুষ্ঠান পরিচালক জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে। বাংলাদেশের টক শো গুলতে যে হারে ভুল তথ্য দেয়া হয় তাতে তো টক শো গুলোই বন্ধ করে দেয়া উচিত। কিন্তু যখন এসব অনুষ্ঠানগুলোই সরকারী গুণগান করা হয় তখন তা সঠিক তথ্য হয় আর ভুল ধরলে তা ভুল তথ্য হিসেবে বিবেচিত হয়।

তা হলে দেখা যবে সব চ্যানেলই বিটিভিতে পরিণত হয়েছে। ৪ নং ধারার ১৯ অনুচ্ছেদ : অনুষ্ঠানে কোন প্রকার অশোভন উক্তি উচ্চারণ করা যাবে না। এখন কোন ধরণেরে কথাগুলো অশোভনের পর্যায়ে পড়ে সেগুলোও উল্লেখ করে দেয়া উচিত ছিল। ৪ নং ধারার ২১ অনুচ্ছেদ : সংবাদ বা সংবাদ সংক্রান্ত অনুষ্ঠানে সত্যিকার হত্যাকান্ড, নৃশংস হত্যাকান্ড, দুর্ঘটনায় নিহত ও আত্মহত্যায় মৃতদেহ এবং নির্যাতিত ধর্ষিত এবন ব্যাভিচার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত কোন নারী বা শিশুর স্থির চিত্র বা সম্প্রচারিত চিত্র প্রদর্শন করা যাবে না এসব প্রচার না করে কি সংবাদে শুধুমাত্র বিনোদন ও সরকারের প্রতি চামচামিমূলক অনুষ্ঠান দেখানো হবে। মূলত এ অনুচ্ছেদটি অত্যন্ত হাস্যকর হয়েছে।

এর চেয়ে বরং অনুচ্ছেদটি উঠিয়ে দিয়ে এগুলো সম্প্রচারের অনুমতি দেয়া উচিত। ৪ নং ধারার ২১ অনুচ্ছেদ : অনুষ্ঠানে সরাসরি বা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলের বক্তব্য বা মতামত প্রচার করা যাবে না। আমাদের দেশের সরকার প্রধানরা তাদের নিজের বক্তব্যে সবসময় বিরোধী দলের দোষ এবং নিজ দলের কৃতিত্ব প্রচার করেন। তার মানে এসব ভাষণ প্রচার করা যাবে না। অথচ এই ধারারই ২ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়ছে সরকার প্রধাবের ভাষন বাধ্যতামূলকভাবে প্রচার করতে হবে।

তাহলে তো ২টি ধারা পরষ্পর বিরোধী হয়ে পড়ল। ৪ নং ধারার ২৪ অনুচ্ছেদ : কোন মানুষ বা প্রাণী নির্যাতনের দৃশ্য অনুষ্ঠানে প্রচার করা যাবে না। নাটকের প্রয়োজনে বিশেষ ক্ষেত্রে এই নীতি শিথিল করা যেতে পারে। কোন নির্যাতনের শিকার ব্যাক্তির তথ্য যদি প্রচার করতে হয় তখ তার ওপর নির্যাতনের দৃশ্য যদি দেখানো হয় তবে দর্শকরা বিষয়টা ভালভাবে বুঝতে পারবে। কারন ভাষা দিয়ে সব সময় সব কিছু বোঝা যায় না।

৪ নং ধারার ২২ অনুচ্ছেদ : অনুষ্ঠানে স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রকৃত ও সর্বজন স্বীকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের ভুমিকা গৌ্রাবান্বি্ত করতে হবে। আমাদের দেশে সরকার বদল হলেই মুক্তযিদ্ধের ইতিহাস বদলে যাই। এখন এমনই অবস্থা যে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস যে কি সেটাই নিয়ে সন্দেহ। তাহলে কোন তথ্য প্রচার করা হবে? ৪ নং ধারার ২৮ অনুচ্ছেদ : কোন নির্মাতা যদি বিদেশি কোন সংস্থার সাথে যৌথ প্রযোজনা অনুষ্ঠা্ন নির্মান অথবা বিদেশে স্যুটিং করার জন্য আগ্রহী হন, তবে তথ্য মন্ত্রনালয় থেকে লিখিত অনুমতি নিতে হবে। অনুমিতি দানের অধিকারটি তথ্য মন্ত্রনালয়ের কাছে না দিয়ে সম্প্রচার কমিটির হাতে দেয়া উচিত।

তাহলে প্রক্রিয়াটি দ্রুত ও সহজ হবে। ৪ নং ধারার ৩০ অনুচ্ছেদ : কোন ব্যাক্তির ব্যাক্তিগত বা গোপনীয় বা মর্যাদা হানিকর তথ্য প্রকাশ করার বিষয়ে বিশেষ সতর্ক্তা গ্রহণ করতে হবে। কোন ব্যাক্তি যদি এওমন কাজ করে যা তার সম্মান হানি করে তাহলে তা রেডিও বা টেলিভিশনে প্রকাশ করতে অসুবিধ কোথায়? বরং তার বিরদ্ধে যেন সঠিক ব্যাবস্থা নেয়া হয় সে জন্য তথ্যটা প্রকাশ করা খুবই জরুরি। ৫ নং ধারার ৫ অনুচ্ছেদ : টেলিভিশন বিজ্ঞাপন শোভনীয় , সুন্দর সুরুচিপুর্ণ ও পরিমার্জিত হতে হবে। পরিবারের সকল সদস্যসহ একসাথে বসে উপোভোগ করতে বিব্রতবোধ কতে হয়, এমন বিজ্ঞাপন পরিহার করতে হবে।

তাহলে তো এইডস এর বিজ্ঞাপন দেয়া যাবে না। কারন যখন বলা হয় নিরাপদ যৌন মিলন আর দেখানো হয় বন্ধুদের একসাথে তখন পরিবার নিয়ে দেখতে অনেকেই বিব্রত হয়। এছাড়া সরাসরি যৌন মিলন উল্লেখ করাও আমাদের সংস্কৃতিতে নাই। তাহলে জনগণকে এ বিশয়ে সচেতন করা যাবে না? ৫ নং ধারার ৫ অনুচ্ছেদ : বিজ্ঞাপনে প্রতি্যোগী পণ্যের তুলনা বা নিন্দা করে শ্রেষ্ঠত্ব দাবী করা যাবে না। বাজারে একই জাতীয় পণ্যের বিভিন্ন বিজ্ঞাপনদাতা রয়েছে।

তাদের পণ্য সম্পর্কে বিজ্ঞাপনে অমর্যাদাকর বা তাচ্ছিল্য খাটো করে কোন উক্তি করা যাবে না। অথচ বাংলাদেশের অধিকাংশ পণ্যের বিজ্ঞাপনে তাদের পণ্যকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ৫ নং ধারার ১৬ অনুচ্ছেদ : বিজ্ঞাপনে এমন কোন বর্ণনা বা দাবী প্রচার করা যাবে না যাতে জনগন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রতারিত হতে পারে। সৌন্দর্য বৃ্দ্ধির সকল বিজ্ঞাপন তাহলে বাদ দিতে হবে। কারন আজ পর্যন্ত কেউ ক্রিম নিয়ে সুন্দর হতে পারে নি বা হরলিক্স খেয়ে কেউ অতিরিক্ত লম্বা অ বুদ্ধিমান হতে পারেনি।

৫ নং ধারার ১৭ অনুচ্ছেদ : কোন দেশী-বিদেশী গান বা গানের অংশ বা গানের সুরকার ও স্ব্ত্বাধিকারীর অনাপত্তি নিয়ে বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করা যেতে পারে। মূল গানের সুরকার ও স্বত্বাধিকারী না পাওয়া গেলে গান বা সুর ব্যবহারের কারণে ভবিষ্যতে সৃষ্ট জতিলতার দায়-দায়িত্ব বহনের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞাপনদাতাকে অঙ্গীকারপত্র প্রদান করিতে হবে। এখানে সঠিক স্বত্বাধিকারী না পেলে কোন দায় দায়িত্ব নয় ওই গান ব্যভারের অনুমতি না দিলেই এখানে ভাল হত। ৫ নং ধারার ২২ অনুচ্ছেদ : বিজ্ঞাপন বাংলা অথবা ইংরেজী ভাষায় হতে হবে। কোন আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করতে হলে তা দেশের সাধারন জনগণের বোধগম্য হতে হবে।

তবে অন্যান্য বিদেশী ভাষায় নির্মিত বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে বাংলা বা ইংরেজী ভাষায় সাব-টাইটেল থাকতে হবে। আমাদের সাধারণ জঙ্গণের অধিকাংশই ইংরেজি ভাষা বোঝে না। তাই বিজ্ঞাপন শুধুমাত্র বাংলা ভাষায় করা এবং ইংরেজি সহ অন্য সকল ভাষার ক্ষেত্রে বাংলা সাব-টাইটেল ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা উচিত। ৫ নং ধারার ৩০ অনুচ্ছেদ : যে কোন খাদ্য বা পানীয় এর বিজ্ঞাপনে উক্ত খাদ্য বা পানীয়ের পুষ্টি ও খাদ্য গুণ এবং স্বাস্হ্যগত প্রভাব সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। এক্ষেত্রে আরো উল্লেখ্য যে একটি খাদ্য বা পানীয়ের সাথে অন্য কোন খাদ্য বা পানীয়ের তুলনা করা যাবে না কিছুদিন আগে একটি পরীক্ষায় দেখা যায় যে বাংলাদেশে প্রচলিত অধিকাংশ পানীয়ে মাত্রারিক্ত এ্যালকোহল রয়ছে, যা শরীরের জনয় মারাত্মক ক্ষতিকর।

শুটিং এ এসব বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ হওয়া উচিত ছিল। অথচ এসব বিজ্ঞাপন এখনও নিয়মিত প্রচার করা হচ্ছে,। ৫ নং ধারার ৪১ অনুচ্ছেদ : রাষ্ট্রীয়ভাবে সংরক্ষিত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, কার্যালয় যেমন- জাতীয় সংসদ ভবন, প্রধান্মন্ত্রীর কার্যালয়, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়, কোর্ত বা আদালত ও আদালতের কার্যক্রম, সেনানিবাস এলাকা, শহিদ মিনার, জাতীয় স্মৃতিসৌধ ইত্যাদি কোন বিজ্ঞাপনচিত্রে প্রদর্শন করা যাবে না। এসব স্থানে বিজ্ঞাপন করলে কোন হউয়ার সম্ভাবনা নেই। তাই এসব স্থান কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে বিজ্ঞাপনে প্রদর্শনের অনুমতি দেয়া উচিত।

৫ নং ধারার ৪২ অনুচ্ছেদ : মহান স্বাধীনতা দিবস, মুক্তিযুদ্ধ, গণঅভ্যুত্থান, ভাষা আন্দোলন ইত্যাদি জাতীয় পর্যায়ের বিষয়গুলোর মর্যাদা ও সম্মান সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে এ বিষয়গুলো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বিজ্ঞাপনচিত্রে প্রদর্শন করা যাবে না। এসব বিষয় বিজ্ঞাপনে দেখালেই যে এগুলোর অবমাননা হবে এমন কোন কথা নেই। যে ক্ষেত্রে এসব বিষয়ের অসম্মান হতে পারে সেখানে বাদ দিয়ে অন্যান্য ক্ষেত্রে অনুমতি দেয়া উচিত। বেসরকারি সম্পচার নীতিমালার চার্ট : বেসরকারী সম্প্রচার নীতিমালা-২০১১ সুপারিশ :  সরকারি ও বেসরকারি সম্প্রচারের জন্য একই নীতিমালা প্রণয়ন করা।  সরকারি নিয়ন্ত্রণ হ্রাস।

 কমিটির ক্ষমতা কিছুটা শিথিল।  কিছু কিছু বিষয় প্রকাশের অনুমোদন।  কতকগুলো বিষয়ের সম্প্রচারে নিষেধাজ্ঞা প্রদান।  জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপুর্ণ বিষয় সম্প্রচারের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেয়া। শেষকথা : সম্প্রচারের ক্ষেত্রে বেসরকারি সম্প্রচার নীতিমালা অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ হলেও বাংলাদেশে প্রণীত বেসরকারি সম্প্রচার নীতিমালা- ২০১১ এর অনেক ত্রুটি রয়েছে।

অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে পালন করা অসম্ভব। তাই বেসরকারি সম্প্রচার সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা কুরার জন্য আমদের দেশের প্রেক্ষিতে সম্প্রচার নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে এবং তা কার্যকর করা জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৮ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.