অলসদের দিয়ে কী আর হয়। আলসেমি ছাড়া!
আজ অফিস থেকে বের হওয়ার পর একটি টেলিফোন পেলাম। কোন একজন আইটি উদ্যোক্তা জানালেন তার ফার্মে প্রায় ৭ হাজার বর্গফুট জায়গা, কম্পিউটর সহ সাজানো অবস্থায় আছে। পুরো সেটআপটি এখন আর তার প্রয়োজন হয় না। আমি যেহেতু আইটি ইনকিউবেশন সেন্টারের জন্য জায়গা খুঁজছি, সেটি তিনি দিতে পারেন।
ভাবলাম সময় নষ্ট করার দরকার কি? ঠিকানা জেনে হাজির হলাম নগরীর প্রাণকেন্দ্রে তাঁর প্রতিষ্ঠানে। দুই ভবনে, দুইটি ফ্লোরে প্রায় ৭ হাজার বর্গফুট জায়গা। সেট আপ রয়েছে এমনভাবে যে, সেখানে আইটি প্রশিক্ষণ, সফটওয়্যার হাউস, আউটসোর্সিং সুবিধা ইত্যাদি অনায়াসে চালু করা যায়। তাদের নিজেদের জন্য যে জায়গা দরকার, সেটি রেখে একটি ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করা যেতে পারে।
দেখে আসার পর আমি যা ভাবছি তা হলো সেখানে একটি ইনকিউবেটর স্থাপন করা যায় কী না।
যেহেতু এটি একটি কমার্শিয়াল ভবনে, কাজে কোন চ্যারিটি কাজ এখানে করা যাবে না।
আমার হিসাবে এখানে মোট ১০-১২টি নতুন স্টার্টআপ কোম্পানিকে জায়গা দেওয়া যেতে পারে। কোম্পানিগুলো পরস্পরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবে না, বরং পরস্পরকে সহযোগিতা করবে। প্রতিটি কোম্পানি মোটামুটি শুরু করে ১০ জনের কোম্পানি পর্যন্ত বিকশিত হতে পারবে। তারপর হয়তো নিজেদের কোন জায়গায় বা সফটওয়্যার পার্কে চলে যেতে পারবে।
কী কী ধরণের কোম্পানি সেখানে জায়গা পেতে পারে-
ক. আইটি প্রশিক্ষণ : আমার একটি ধারণা আমাদের দেশে আইটি প্রশিক্ষনের সেক্টরটির বারোটা বাজিয়েছে কিছু দেশী ও কিছু বিদেশী কোম্পানি। এই খাতকে আবার সংঘবদ্ধ করা যেতে পারে। এবং একটি দুইটি ছোট কোম্পানি এই কাজ শুরু করতে পারে। নতুন কোম্পানি গুলো অবশ্য তথাকথিত আইটি ট্রেণিং দিলে হবে না। নতুন এবং দরকারী, কাস্টম মেইড কোর্স অফার করতে হবে।
এই ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের সবচেয়ে বেশি সুবিধা হবে এই জন্য যে, তাদের পক্ষে যে কোন সময় নতুন কোর্স করা সম্ভব হবে কেননা একই ছাদের নিচের অন্য প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞরা এখানে প্রশিক্ষক হতে পারবে।
খ. আউটসোর্সিং কোম্পানির গ্রুপ : এখন যাঁরা ফ্রিল্যান্সিং করে তাদের অনেককেই প্রায় সব কাজই করতে হয়। ফলে স্পেশালাইজেশনের সুযোগ কম। কিন্তু যদি এক ছাদের নিচে কাজ করতে শুরু করে তাহলে তাদের পক্ষে কাজ শেয়ার করা সম্ভব হবে।
গ. আউটসোর্সিং বায়িং হাউস : এটি আমাদের দেশের জন্য নতুন ধারণা।
এই প্রতিষ্ঠানগুলোর বাহাদুরি হবে এদের কমিউনিকেশন স্কিল ভাল, প্রেজেন্টেশন স্কিলও। ফলে, এদের পক্ষে কাজ যোগাড় করাও সুবিধা বেশি। এরা কাজ যোগাড় করবে, বাকীরা সেটি করে দেবে।
ঘ. আইটি এনাবল সার্ভিসেস : এটি স্বব্যাখ্যাত।
ইনকিউবেশন উদ্যোক্তারা কী করবে? বেশ।
কয়েকটি কাজ করার চেষ্টা করতে হবে-
১. প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রত্যেকটিরই কিছু আইনী এবং কাঠামোগত সুবিধার দরকার হবে। যেমন বিদেশ থেকে টাকা আনা, টিআইএন বানানো, কাজের সার্টিফিকেট যোগাড় করা যা ব্যাংকে দিতে হয় ইত্যাদি। এগুলোর জন্য সাপোর্ট দেওয়া,
২. কীভাবে আইটি শিল্প তৈরি করতে হয়, কীভাবে নিজের ফার্মকে বিকশিত করা যায়, কীভাবে আউটপিট বাড়ানো যায় ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণসহ সফল উদ্যোক্তাদের সঙ্গে সময় কাটানোর ব্যবস্থা করা,
৩. পটেনশিয়াল বিনিয়োগকারীদের মাজে মধ্যে ডেকে আনা যাতে তারা নতুন বিনিয়োগে উৎসাহিত হয়
৪. কম্বাইন্ড মার্কেটিং গড়ার সুযোগ করে দেওয়া
৫. মিডিয়া ও ব্যক্তিগতভাবে দেশের বাইরে কাজের সুযোগ সৃষ্টি করা,
৬. দেশের বাইরে ইনকিউবেশন সেন্টারের কোম্পানিগুলোকে তুলে ধরার জন্য নানান অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া, ইত্যাদি।
৭.কমন ফ্যাসিলিটি যেমন জেনারেটর, ইন্টারনেট, সিকিউরিটি ইত্যাদির ব্যবস্থা করা।
শুরু করতে কী লাগবে=
১. মোটামুটি বছরখানেক দাঁতে দাঁত চেপে ঠিকে থাকার মতো ফান্ড,
২. ইন্ডাস্ট্রির সফল লোকেদের সঙ্গে ভাল যোগাযোগ এবং তাদের সহযোগিতার কমিটমেন্ট
৩. অলস টাকা আছে এমন বিনিয়োগকারীদের খবর
৪. শুরু থেকে যোগ দেবে এমন ১০টি স্টার্ট আপ, এবং
৫. সরকারি সহায্য (টাকা পয়সা অর্থে) ছাড়াই দাঁড়াতে পারবো এমন মানসিকতা।
এর মধ্যে ৪ নম্বরটির দরকার প্রথমে। সেটি থাকলে ১ নংএর জন্য দৌঁড়ঝাপ করা যাবে। ২ নংএর বেলায় অনেকে সহযোগিতা করবে বলে আমার ধারণা। এই নিয়ে আমার বিডিজবসের ফাহিম, স্পেকট্রামের ফোরকান ও মুশফিক, নিলাভোর শিহাব এমন কয়েকজনের সঙ্গে আলাপও হয়েছে। তারা তাদের সহযোগিতার কথা বলে রেখেছেন।
৩ নং টা পেতে একটু সময় লাগবে, তবে ঠিক মতো ঢোল বাজাতে পারলে সেটি হবে। পল্লবের মতো লোকজনের সহায়তা থাকলে ঢোল বাজানোর কাজটা সহজ হবে।
এখন দেখা যাক আমরা শুরু করতে পারি কী না। তবে, সবার মনে রাখা দরকার যে, হাজার খানেক ফেইলিউরের পর একটি গুগোল মেলে!!!
বি. দ্র. কিছুটা এগোনোর পর আইটি উদ্যোক্তার পরিচয়টা দেবো। তবে, আলোচনার জন্য সেটি মনে হয় খুব একটা দরকার নেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।