সমাজের প্রয়োজনকে ঘিরে যার জীবন আবর্তিত সেই তো প্রকৃত মানুষ
বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষক-কর্মচারীকে সরকার এমপিও (মানথলি পেমেন্ট অর্ডার)-র মাধ্যমে মাসিক বাড়ি ভাড়া ভাতা ও চিকিৎসা ভাতা যথাক্রমে ১০০.০০ টাকা ও ১৫০.০০ টাকা করে দিয়ে থাকে। পদমর্যাদা নির্বিশেষে সবাইকে নির্ধারিত এই একই পরিমাণ ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে দীর্ঘদিন থেকে। এর মধ্যে একাধিকবার পে-স্কেল পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতার কোনো পরিবর্তন হয়নি। এটা বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রতি সরকারের বিমাতাসুলভ আচরণ নয় কি? আমার জানা মতে, সকল সরকারি ও প্রাইভেট সেক্টরের অধিকাংশ চাকরিতে স্কেল অনুযায়ী মূল বেতনের নির্ধারিত শতাংশ হারে বাড়ি ভাড়া ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে। আমরা এও জানি যে, সরকারি চাকরিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে যার-যার বেতন স্কেল অনুযায়ী বার্ষিক প্রবৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) দেওয়া হয়।
আর ব্যক্তি মালিকানাধীন কোনো-কোনো প্রতিষ্ঠান ও প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিতে তাদের এমপ্লয়ীদের বছরে একাধিক ইনক্রিমেন্ট দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা এমপিও-র মাধ্যমে কোনো বার্ষিক প্রবৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট)-ই পান না। অথচ আমরা বাসা-বাড়ির কাজের লোক কিংবা দোকানের কর্মচারীকে পর্যন্ত বছরে একাধিকবার বেতন বাড়িয়ে দিয়ে থাকি। এমপিও-ভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাংলাদেশের সব চাকরিতেই অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন করা হয় আর্থিক সুবিধা তথা বার্ষিক প্রবৃদ্ধি প্রদান করে। এতে করে ওই সমস্ত চাকরিতে একই স্কেলে যোগদান করলেও জুনিয়র-সিনিয়র চেনা যায় তাদের মূল বেতন (বেসিক) দেখে।
আর বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একই স্কেলে যোগদানকারী শিক্ষক-কর্মচারীদের মূল বেতন (বেসিক) টাইম স্কেল না পাওয়া (৮ বছর পূর্ণ না হওয়া) পর্যন্ত একই থাকে। অর্থাৎ অর্বাচীন আর ৭ বছরের অভিজ্ঞ একই স্কেলের বেতনভোগীর মধ্যে মূল বেতনের কোনো পার্থক্য নেই। কিন্তু বাংলাদেশের কোনো সরকারই বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের এসব আর্থিক বঞ্চনার দিকগুলো মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করে দেখেনি। কেবল এটুকু নয়, বঞ্চনার আরও নানা দিক আছে। যেমন; সরকারি কর্মচারীরা একই যোগ্যতায় চাকরি জীবনে অন্যূন ৩ বার (যথাক্রমে ৮, ১২ ও ১৫ বছর পর) টাইম স্কেল পান।
অপর দিকে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা পান মাত্র ১ বার (৮ বছর পর)। এত বৈষম্য কেন?
সরকার প্রদত্ত এমপিও-র টাকাও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা যথাসময়ে হাতে পান না। প্রতি মাসের বেতন পরবর্তী মাসের ১০ তারিখের মধ্যে সরকার বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে এমপিও-র মাধ্যমে পাঠালেও আমলানির্ভর বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির মর্যাদাকাঙাল সদস্যদের অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের কারণে এর নগদায়ন হতে-হতে পরের মাসও শেষ হওয়ার উপক্রম হয়। এ রকম আর্থিক দুরবস্থায় বেসরকারি শিক্ষকরা শ্রেণীকক্ষে শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে কতটুকু আন্তরিক হবেন? এ সমস্ত কারণে তাঁরা এখন নিজেদের পরিচয় দেন 'বেদরকারি শিক্ষক' বলে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।