গত পর্বে পাঁচটা সিরিজের কথা বলেছিলাম। এবার আরও কয়েকটার স্মৃতিচারণ করি, দেখি কতদূর মনে আছে।
৬. নাইট রাইডার
এই সিরিজটাও বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। মাইকেল নাইট, যার একটা বুদ্ধিমান গাড়ি থাকে, কথা বলে, নিজের বুদ্ধিতে চলে। গাড়িটার নাম নাইট রাইডার।
তাই বলে নায়কের চেয়ে তার বুদ্ধি বেশি না।
মাইকেলের একটা ঘড়ি থাকে যেটা দিয়ে গাড়িটার সাথে সে মোবাইল ফোনের মত কথা বলতে পারত। আর কি, নায়ক আর গাড়ি - দুজনে মিলে দুষ্টুলোকদের ধরত। গাড়িটার আবার থাকার জন্য একটা বড় গাড়ি ছিল। আর মাইকেলের বস সব সময় ওয়েবক্যামের মত একটা টিভি দিয়ে মাইকেলের সাথে কথা বলত।
তখনকার দিনে এটা একটা বিস্ময়কর জিনিস ছিল, কারণ তখনও ওয়েবক্যাম জিনিসটা ছিল না। যখন প্রথম ওয়েবক্যাম চালু হল আর খবরে দেখলাম, খুব অবাক হয়ে ভাবছিলাম, এই জিনিস তো সেই কবে থেকে নাইট রাইডার ব্যবহার করছে, তাহলে এতদিনে কেন খবরে এত ফলাও করে প্রচার করছে।
ওহ, নাইট রাইডার গাড়িটার আরেকটা গুণ ছিল, সে ইচ্ছামত লাফ দিতে পারত। একবার এক দুষ্টুলোক নাইট রাইডারের ব্লু-প্রিন্ট চুরি করে একই রকম আরেকটা গাড়ি বানায়। কিন্তু গাড়িটাও ছিল দুষ্টুলোক, মানে দুষ্টুগাড়ি।
পরে দুই গাড়ির মধ্যে মারামারি হয়। শেষে দুই গাড়ি একসাথে লাফ দিয়ে এসে ঢুশ খায়, আর নায়ক গাড়ি জিতে যায়।
৭. দ্য ফল গাই
এটা ছিল দুইজন স্টান্টম্যানের কাহিনী। তারা সিনেমায় নায়কদের স্টান্টম্যানের কাজ করত। তবে গোপনে গোপনে গোয়েন্দাগিরিও করত।
এর নায়কটা একটু বুড়ো টাইপের ছিল। আর টাইটেল সংটা আমার খুব প্রিয় ছিল। একটা লাইন ছিল 'ইটস ওনলি হেই, হেই হেই', ওটা সব সময় সাথে গাইতাম। নায়ক প্রায় প্রতি পর্বে একটা করে গাড়ি ভেঙে চুরমার করত। মানে ইচ্ছা করে না, কিন্তু হয়ে যেত।
একটা পর্বে দেখিয়েছিল তার যতজনের সাথে দেখা হয়, ঘটনাক্রমে প্রত্যেকের গাড়িই সে অ্যাকসিডেন্ট করে চুরমার করে।
৮. ম্যানিম্যাল
ম্যান আর অ্যানিম্যাল, দুই মিলে হল ম্যানিম্যাল। এখানে নায়ক ইচ্ছা করলেই যে কোন প্রাণী হতে পারত। বাঘ, সিংহ, ঈগল, সাপ - যখন যেটা দরকার।
প্রাণীতে রূপান্তরের আগে সে ঘন ঘন গভীর শ্বাস নিত, তারপর ধীরে ধীরে পরিবর্তনটা হত।
বাঘ হওয়ার সময় আস্তে আস্তে হাত মুঠি করে ফেলত, আর সেটা বাঘের থাবা হয়ে যেত, নখ গজাত। ঈগল হবার সময় গাল দিয়ে পালক গজাত। সাপ হওয়ার সময় সবচেয়ে মজা হত, কুটুস করে তার কান দুটো মাথার ভিতর ঢুকে পড়ত। এইরকম পশু-পাখিতে রূপান্তর হয়ে সে দুষ্টুলোকদের জব্দ করত।
৯. মিস্টেরিয়াস আইল্যান্ড
এই সিরিজটার নাম শুনেই বোঝা যায় জুল ভার্নের সেই বিখ্যাত গল্পের আদলে একটা রহস্যময় দ্বীপের কাহিনী।
একদল মানুষ ঘটনাক্রমে বেলুনে চড়ে এক নাম না জানা দ্বীপে এসে পৌঁছায়। অনেক চেষ্টার পরেও দ্বীপ থেকে তারা বের হতে পারে না। এরপর এখানেই বসবাস শুরু করে। কিন্তু তারা এক সময় বুঝতে পারে দ্বীপে মানুষ বলতে শুধু তারাই না, আরও কেউ আছে, যে গোপনে তাদের উপর নজর রাখছে। এইভাবেই এগিয়ে যায় কাহিনী।
কখনও বন্যপ্রাণীর আক্রমণ, কখনও বা পাশের দ্বীপের আদিবাসীদের - সবকিছুর মোকাবিলা করতে থাকে এই শহুরে মানুষের দলটি।
১০. মিসফিটস অফ সায়েন্স
এই সিরিজটা ছিল একদল অদ্ভূত মানুষকে নিয়ে যারা দেখতে স্বাভাবিক হলেও একেক জনের একেক রহস্যময় শক্তি ছিল। একজন মাথায় হাত দিয়ে সবকিছু ধ্বংস করে ফেলতে পারত, আবার কেউ হয়ত চোখ দিয়ে ভস্ম করে দিতে পারত। এরকম আরও সব সুপারন্যাচারাল শক্তিওয়ালা মানুষেরা একত্র হয়ে একটা দল গঠন করে আর দুষ্টুলোকদের শায়েস্তা করে বেড়ায়। ওদের একটা মাইক্রোবাস টাইপের গাড়ি ছিল।
সিরিজের টাইটেলে দেখানো হত কেউ একজন টিভি দেখছে, টিভিতে একটা লোক পিয়ানো বাজিয়ে বাজিয়ে গান গাইছে, দিস ইজ মিসফিটস, মিসফিটস অফ সায়েন্স। যে টিভি দেখছে সে চ্যানেল বদলাতে চায়, কিন্তু চ্যানেল আর বদলায় না। তারপর সে টিভিতে থাবড়া মারতে শুরু করে কিন্তু কোন কাজ হয় না। শেষ পর্যন্ত রাগের চোটে টিভিটা লাথি দিয়ে ফেলেই দেয়।
১১. দ্য ম্যাজিশিয়ান
এটাও নাম শুনেই বোঝা যায় এক ম্যাজিশিয়ানের কাহিনী।
এই ম্যাজিশিয়ান আবার গোয়েন্দাগিরিও করে।
এই সিরিজ দেখে অনেক জনপ্রিয় কিন্তু বড় বড় ম্যাজিকের পেছনের রহস্য শিখে ফেলেছিলাম। এইজন্যই ভালো লাগত। তবে কিছু কিছু ম্যাজিক রহস্যময়ই রেখে দিত ইচ্ছা করেই।
১২. ভয়েজার
এটা খুব পছন্দের একটা সিরিজ ছিল।
এখানে নায়ক আর একজন কিশোর বয়সের ছেলে, ছেলেটা নায়কের কী হয় এখন মনে নেই, তারা দুজন হল ভয়েজার, সারা দুনিয়া ভ্রমণ করে বেড়ায়। তবে এই ভ্রমণ কোন সাধারণ ভ্রমণ নয়। তাদের কাছে থাকে একটা অদ্ভূত ছোট্ট টাইম মেশিন, দেখতে একটা দিকনির্দেশক কম্পাসের মত। এই কম্পাসে করে তারা ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে চলে যায়, আর সেই সময়ের নানান সমস্যার মধ্যে পড়ে। কোন কোন সমস্যার হয়ত সমাধান করতে পারে, বেশির ভাগ সময়েই শেষ পর্যন্ত ধরা খেতে খেতে টাইম মেশিন ঘুরিয়ে অন্য কোথাও চলে আসে।
তবে টাইম মেশিনটা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না, সে তার ইচ্ছামত জায়গায় ইচ্ছামত সময়ে নিয়ে যায়।
একবার এমন টাইম মেশিন ঘুরিয়ে একটা সুন্দর রেস্টুরেন্টে চলে আসে তারা। পরে টের পায়, এটা রেস্টুরেন্ট না, একটা জাহাজ। তাও যে সে জাহাজ না, খোদ টাইটানিক। তারা খুব চেষ্টা করে ক্যাপ্টেনকে বোঝাতে যাতে জাহাজটা আগেই ঘোরায়, কিন্তু ক্যাপ্টেন কিছুতেই তাদের কথা বিশ্বাস করে না।
আর কী, টাইটানিকের আইসবার্গে ধাক্কার কাহিনী চলতে থাকে। জাহাজটা ডুবে যাওয়ার পর তারা ভাসতে ভাসতে আবার টাইম মেশিন টিপে অন্য কোথাও চলে আসে।
১৩. দ্য উইজার্ড
এই সিরিজের নায়ক ছিল এক বামন, নাম সাইমন। সে মূলত বাচ্চাদের খেলনা তৈরি করত। কিন্তু সে ছিল এক জাদুকর।
আর সেই সাথে গোয়েন্দাও।
ঐ সময়ের সিরিজগুলো মনে হয় বেশির ভাগই এমন ছিল, যে যাই করুক, গোপনে গোপনে গোয়েন্দাগিরিই চালিয়ে যেত আর দুষ্টুলোকদের জব্দ করত।
১৪. ডার্ক জাস্টিস
এই সিরিজের নায়ক একজন বিচারক। কিন্তু সে প্রায়ই দেখত যে উকিলের কারসাজীতে বা আলামত বা সাক্ষীর অভাবে দোষীরা নির্দোষ প্রমাণিত হত, বা এমন পরিস্থিতি হত যে সে অসহায়ের মত কেস ডিসমিস করে যেত। তাই সে ঠিক করে আসল অপরাধীকে সে নিজেই শাস্তি দিবে, কিন্তু গোপনে, রাতের আঁধারে।
এজন্য সে একটা দল তৈরি করে, এর সদস্যদের সে নিজেই খুঁজে বের করে তার কেস থেকে যেখানে মিথ্যা সাক্ষ্যের জন্য কিছু নিরপরাধ ব্যক্তি জেলে যায়। তাদের সে কৌশলে জেল থেকে বের করে তার দল তৈরি করে। এই দলের নাম ডার্ক জাস্টিস।
নায়ক যখন বিচারকের আসনে বসে তখন সে নিপাট ভদ্রলোক, চুলগুলো জেল দিয়ে চুপসানো, পিছনে টাইট করে ঝুঁটি বাঁধা, আর যখন রাতের বেলা আসল মিশনে বের হয়, তখন সে জিন্স জ্যাকেট পরা ঝাকড়াচুলো যে বাইক চালায়। কেউ এই দুই চেহারা মিলাতে পারে না।
এটাই তার ছদ্মবেশ।
১৫. রেমিংটন স্টীল
পিয়ার্স ব্রসনান জেমস বন্ড করে জনপ্রিয় হলেও রেমিংটন স্টীল ছিল তার তরুণ সময়ের করা সিরিজ। এখানে সে একজন গোয়েন্দা। তার সহকারী একজন মেয়ে, তার গার্লফ্রেন্ড।
তবে কি জানি একটা রহস্য ছিল এর মধ্যে।
এখন ঠিক মনে পড়ছে না। এইটুকু মনে পড়ে যে রেমিংটন স্টীল নায়কের নাম হলেও টাইটেলে দেখানো হত যে একটা মেয়ে এই নামটা সাক্ষর করছে। কাহিনীগুলো মনে নেই, তবে পিয়ার্সকে অসাধারণ লাগত।
১৬. র্যাভেন
র্যাভেন ছিল এক মার্শাল আর্ট জানা নায়ক। আর যা হয়, সেই সাথে একজন গোয়েন্দার কাজ দুষ্টুলোক ধরা, সেটাও সে করত।
এই সিরিজের মারামারিগুলোই ছিল আকর্ষণীয়।
র্যাভেন ছিল ব্ল্যাক ড্রাগন মার্শাল আর্টে দক্ষ। তবে এই সিরিজের নায়িকাগুলো কাপড়-চোপড় একটু কম কম পরতে পছন্দ করত। এটুকুই বিরক্ত লাগত।
১৭. ভি
এটা ছিল এলিয়েনদের কাহিনী নিয়ে করা সিরিজ।
একদল এলিয়েন পৃথিবীতে আসে। তাদেরকে ভি ডাকা হয়।
এরা মানুষের চামড়া গায়ে দিয়ে মানুষ সেজে থাকত। কিন্তু চামড়া তুললেই দেখা যেত সবুজ রঙের রক্ত-মাংসের ভয়ংকর শরীর। এরা মূলত দুষ্টুলোক ছিল, তবে তাদের কয়েকজন ভালোও ছিল।
নায়ক-নায়িকা আর তাদের দল এই দুষ্টুলোকদের ধ্বংস করার মিশনে নামে। আর চলতে থাকে তাদের মারামারি।
১৮. স্টার ট্রেক - দ্য নেক্সট জেনারেশন
এটা হল আরেকটা এলিয়েন নিয়ে সিরিজ। তবে এর কাহিনী পৃথিবীতে না, একটা বিশাল স্পেসশিপে।
এক বুড়ো থাকে এই স্পেসশিপের ক্যাপ্টেন।
সে মনে হয় মানুষ। আর অন্যান্য সদস্যদের একেকজন একেক গ্রহের। একেক জনের একেক রকম বৈশিষ্ট্য। একজনের কপালে কেমন যেন ভাঁজ ভাঁজ, একজন একেবারে সাদা, সে মনে হয় রোবট, একটা মেয়ে যে চাইলে মুখ বন্ধ করেও কথা বলতে পারে। তার মা একটা পর্বে এসেছিল।
আরও কি কি জানি ছিল। একটা পর্বে রোবটটার একটা ডুপ্লিকেট তৈরি হয়ে গিয়েছিল। সে আবার দুষ্টুলোক। তারপর নানান কনফিউশন, মারামারি ইত্যাদি শেষে দুষ্টু রোবটটা ধ্বংস করা হয়।
১৯. এল. এ. ল
এটা একটা ল ফার্মের কাহিনী।
এখানে সবাই লইয়ার, অ্যাডভোকেট কিংবা বিচারক। এদের মধ্যে সম্পর্কসহ নানান কেসের ঘটনা দেখানো হয়।
প্রথম পর্বেই মনে হয় একটা খুনের কেস দেখিয়েছিল। কেসগুলোর ঘটনাই মূল কাহিনী। তবে আমার সেগুলো মনে নেই এখন।
একবার দুই লইয়ারের মধ্যে বিয়ে হয়, সেই বিয়ে নিয়ে নানান কাহিনী। আরেক পর্বে এক লইয়ার দম্পতি বাবা-মা হয়। আরেক দম্পতির মধ্যে ইগোজনিত সমস্যা হয়, কারণ তারা শুরুতে দুজনেই অ্যাডভোকেট ছিল, পরে বউটা প্রমোশন পেয়ে বিচারক হয়ে যায়। এটা তার স্বামী সহজভাবে নিতে পারে না। একজন দপ্তরী থাকে, মানসিক প্রতিবন্ধী।
তাকে নিয়েও মনে হয় কয়েকটা পর্ব হয়েছিল।
২০. গার্ল ফ্রম টুমরো
এই সিরিজটা দেখানো হত শুক্রবার সকালবেলা। মিস করতাম না সাধারণত। তবে মাঝে মাঝে এই সময় হুজুর পড়াতে আসত, তখন যে মনে মনে হুজুরকে কত্ত বকা দিতাম।
এর কাহিনী হল ৩০০০ সালের।
এই সময়ের একটা কিশোরী মেয়ে টাইম মেশিনে করে ঘটনাক্রমে ১৯৯০ কি ৯২-তে চলে আসে। এসেই দেখা হয় তার বয়সী আরেক কিশোরীর সাথে। তারপর চলতে থাকে তাদের মজার কাহিনী। একটা দুষ্টুলোকও থাকে, সে আসে মনে হয় ২০৫০ সাল থেকে। তার সময়ের পৃথিবী হল যুদ্ধ-বিগ্রহ করা ধ্বংসপ্রায় পৃথিবী, সেখানে বিশুদ্ধ পানি আর বাতাসের অভাব।
দুষ্টুলোকটা ৯০-এর সময় থেকে পানি নিয়ে ঐ সময়ে চড়া দামে বিক্রি করে।
৯০-এর কিশোরীর একটা ছোটভাইও থাকে। সবাই মিলে একবার ৩০০০ সালে আরেক ২০৫০ সালে যাওয়া-আসা চলতে থাকে। মারামারিও চলে। শেষ পর্যন্ত দুষ্টুলোকদের ডাইনোসরদের যুগে পাঠিয়ে দেয় ছোট ভাইটা।
আর বাকীরা যার যার নিজেদের সময়ে ফিরে যায়। ৩০০০ সালের মেয়েটার একটা মজার ঘড়ি থাকে যেটা কথা বলতে পারে, যার মধ্যে প্রজেক্টরও থাকে। আর থাকে একটা সাদা রঙের ব্যান্ড, যেটা কপালে পরে মেন্টাল কন্ট্রোল করা যায় অনেক কিছুর। আমরা ঐ সময় মাথার ব্যান্ড কপালে পরে ভান করতাম যেন সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করছি।
আহ, আবারও একটা বড় পর্ব হয়ে গেল।
আরও অনেক সিরিজের নাম মনে পড়ছে। চলতে থাকুক তাহলে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।