আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছোটবেলায় পড়া ছড়া-কবিতা ....... ( কয়টা মনে আছে আপনার ? )

বালক ভুল করে পড়েছে ভুল বই , পড়েনি ব্যাকরণ পড়েনি মূল বই সফদার ডাক্তার সফদার ডাক্তার মাথা ভরা টাক তার খিদে পেলেপানি খায় চিবিয়ে। চেয়ারেতে রাত দিন বসে গুনে দুই তিন পড়ে বইআলোটারে নিভিয়ে। ইয়া বড় গোফ তার নাই তার জুড়ি দার শুলে তারভুড়ি ঠেকে আকাশে। নুন দিয়ে খায় পান সারাক্ষন গায় গান বুদ্ধিতেঅতি বড় পাকা সে। রোগী এলে ঘরে তার খুশিতে সে চার বার কষে দেয় ডন আর কুস্তি।

তার পর রোগীটারে গোটা দুই চাটি মারে যেন তার সাথে কত দোস্তি। ম্যালেরিয়া রোগী এলে তার নাই নিস্তার ধরে তারে দেয় কেচো গিলিয়ে। আমাশার রোগী এলে ই হাতে কান ধরে পেটটারে ঠিক করে কিলিয়ে। কলেরার রোগী এলে দুপুরের রোদে ফেলে দেয় তারে কুইনিন খাইয়ে। তারপরে দুই টিন পচা জলে তারপিন ঢেলে তারে দেয় শুধু নাইয়ে।

ডাক্তার সফদার নামডাক খুব তার নামে গাও থরথরি কম্প, নাম শুনে রোগীসব করে জোরে কলরব পিঠটান দেয় দিয়ে লম্ফ। একদিন সক্ কাল ঘটল কী জঞ্জাল ডাক্তারে ধরে এসে পুলিশে, হাত কড়া দিয়ে হাতে নিয়ে গেল থানাতে তারিখটা আষাঢ়ের উনিশে। কাজলা দিদি - যতীন্দ্র মোহন বাগচী বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই, মাগো আমার শোলক-বলা কাজলা দিদি কই? পুকুর ধারে লেবুর তলে থোকায় থোকায় জোনাক জ্বলে ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না একলা জেগে রই- মাগো আমার কোলের কাছে কাজলা দিদি কই? সেদিন হতে কেন মা আর দিদিরে না ডাকো;- দিদির কথায় আঁচল দিয়ে মুখটি কেন ঢাকো? খাবার খেতে আসি যখন, দিদি বলে ডাকি তখন, ওঘর থেকে কেন মা আর দিদি আসে নাকো? আমি ডাকি তুমি কেন চুপটি করে থাকো? বল মা দিদি কোথায় গেছে, আসবে আবার কবে? কাল যে আমার নতুন ঘরে পুতুল-বিয়ে হবে! দিদির মত ফাঁকি দিয়ে, আমিও যদি লুকাই গিয়ে তুমি তখন একলা ঘরে কেমন করে রবে, আমিও নাই-দিদিও নাই- কেমন মজা হবে। ভুঁই চাপাতে ভরে গেছে শিউলি গাছের তল, মাড়াস্ নে মা পুকুর থেকে আনবি যখন জল। ডালিম গাছের ফাঁকে ফাঁকে বুলবুলিটি লুকিয়ে থাকে, উড়িয়ে তুমি দিও না মা, ছিঁড়তে গিয়ে ফল,- দিদি এসে শুনবে যখন, বলবি কি মা বল! বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই- এমন সময় মাগো আমার কাজলা দিদি কই? লেবুর ধারে পুকুর পাড়ে ঝিঁঝিঁ ডাকে ঝোপে ঝাড়ে’ ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না, তাইতে জেগে রই রাত্রি হলো মাগো আমার কাজলা দিদি কই? বাবুরাম সাপুড়ে - সুকুমার রায় বাবুরাম সাপুড়ে, কোথা যাস্ বাপুরে? আয় বাবা দেখে যা, দুটো সাপ রেখে যা— যে সাপের চোখ্ নেই, শিং নেই, নোখ্ নেই, ছোটে না কি হাঁটে না, কাউকে যে কাটে না, করে নাকো ফোঁস্ ফাঁস্, মারে নাকো ঢুঁশ্ঢাঁশ, নেই কোনো উৎপাত, খায় শুধু দুধ ভাত, সেই সাপ জ্যান্ত গোটা দুই আন্ত! তেড়ে মেরে ডাণ্ডা ক'রে দিই ঠাণ্ডা৷ জীবনের হিসেব -(সুকুমার রায়) বিদ্যেবোঝাই বাবুমশাই চড়ি সখের বোটে মাঝিরে কন, "বলতে পারিস সূর্যি কেন ওঠে ? চাঁদটা কেন বাড়ে কমে ? জোয়ার কেন আসে ?" বৃদ্ধ মাঝি অবাক হয়ে ফ্যালফেলিয়ে হাসে।

বাবু বলেন, "সারা জনম মরলিরে তুই খাটি, জ্ঞান বিনা তোর জীবনটা যে চারি আনাই মাটি। " খানিক বাদে কহেন বাবু "বলত দেখি ভেবে নদীর ধারা কেমনে আসে পাহাড় হতে নেবে ? বলত কেন লবণপোরা সাগর ভরা পানি ?" মাঝি সে কয়, "আরে মশাই অত কি আর জানি ?" বাবু বলেন, "এই বয়সে জানিসনেও তা কি জীবনটা তোর নেহাৎ খেলো, অষ্ট আনাই ফাঁকি ?" আবার ভেবে কহেন বাবু "বলতো ওরে বুড়ো, কেন এমন নীল দেখা যায় আকাশের ঐ চূড়ো ? বলত দেখি সূর্য চাঁদে গ্রহণ লাগে কেন ?" বৃদ্ধ বলে, "আমায় কেন লজ্জা দেছেন হেন ?" বাবু বলেন, "বলব কি আর, বলব তোরে কি তা, দেখছি এখন জীবনটা তোর বারো আনাই বৃথা। " খানিক বাদে ঝড় উঠেছে, ঢেউ উঠেছে ফুলে, বাবু দেখেন, নৌকোখানি ডুবল বুঝি দুলে ! মাঝিরে কন, "একি আপদ ! ওরে ও ভাই মাঝি, ডুবল নাকি নৌকো এবার ? মরব নাকি আজি ?" মাঝি শুধায়, "সাঁতার জানো ?" --মাথা নাড়েন বাবু, মূর্খ মাঝি বলে, "মশাই, এখন কেন কাবু ? বাঁচলে শেষে আমার কথা হিসেব করো পিছে, তোমার দেখি জীবন খানা ষোল আনাই মিছে। " নন্দলাল নন্দলাল তো একদা একটা করিল ভীষণ পণ - স্বদেশের তরে, যা করেই হোক, রাখিবেই সে জীবন। সকলে বলিল, 'আ-হা-হা কর কি, কর কি, নন্দলাল?' নন্দ বলিল, 'বসিয়া বসিয়া রহিব কি চিরকাল? আমি না করিলে কে করিবে আর উদ্ধার এই দেশ?' তখন সকলে বলিল- 'বাহবা বাহবা বাহবা বেশ।

' নন্দর ভাই কলেরায় মরে, দেখিবে তারে কেবা! সকলে বলিল, 'যাও না নন্দ, করো না ভায়ের সেবা' নন্দ বলিল, ভায়ের জন্য জীবনটা যদি দিই- না হয় দিলাম, -কিন্তু অভাগা দেশের হইবে কি? বাঁচাটা আমার অতি দরকার, ভেবে দেখি চারিদিক' তখন সকলে বলিল- 'হাঁ হাঁ হাঁ, তা বটে, তা বটে, ঠিক। ' নন্দ একদা হঠাৎ একটা কাগজ করিল বাহির, গালি দিয়া সবে গদ্যে, পদ্যে বিদ্যা করিল জাহির; পড়িল ধন্য দেশের জন্য নন্দ খাটিয়া খুন; লেখে যত তার দ্বিগুণ ঘুমায়, খায় তার দশ গুণ; খাইতে ধরিল লুচি ও ছোকা ও সন্দেশ থাল থাল, তখন সকলে বলিল- 'বাহবা বাহবা, বাহবা নন্দলাল। ' নন্দ একদা কাগজেতে এক সাহেবকে দেয় গালি; সাহেব আসিয়া গলাটি তাহার টিপিয়া ধরিল খালি; নন্দ বলিল, 'আ-হা-হা! কর কি, কর কি! ছাড় না ছাই, কি হবে দেশের, গলাটিপুনিতে আমি যদি মারা যাই? বলো কি' বিঘৎ নাকে দিব খত যা বলো করিব তাহা। ' তখন সকলে বলিল – 'বাহবা বাহবা বাহবা বাহা!' নন্দ বাড়ির হ'ত না বাহির, কোথা কি ঘটে কি জানি; চড়িত না গাড়ি, কি জানি কখন উল্টায় গাড়িখানি, নৌকা ফি-সন ডুবিছে ভীষণ, রেলে 'কলিসন' হয়; হাঁটতে সর্প, কুকুর আর গাড়ি-চাপা পড়া ভয়, তাই শুয়ে শুয়ে, কষ্টে বাঁচিয়ে রহিল নন্দলাল সকলে বলিল- 'ভ্যালা রে নন্দ, বেঁচে থাক্ চিরকাল। ' রানার -(সুকান্ত ভট্টাচার্য) রানার ছুটেছে তাই ঝুম্ঝুম্ ঘণ্টা বাজছে রাতে রানার চলেছে, খবরের বোঝা হাতে, রানার চলেছে রানার! রাত্রির পথে পথে চলে কোনো নিষেধ জানে না মানার।

দিগন্ত থেকে দিগন্তে ছোটে রানার কাজ নিয়েছে সে নতুন খবর আনার। রানার! রানার! জানা-অজানার বোঝা আজ তার কাঁধে, বোঝাই জাহাজ রানার চলেছে চিঠি আর সংবাদে; রানার চলেছে, বুঝি ভোর হয় হয়, আরো জোরে,আরো জোরে, এ রানার দুর্বার দুর্জয়। তার জীবনের স্বপ্নের মতো পিছে স'রে যায় বন, আরো পথ, আরো পথ- বুঝি হয় লাল ও-পূর্বকোণ। অবাক রাতের তারারা, আকাশে মিট্মিট্ ক'রে চায়! কেমন ক'রে এ রানার সবেগে হরিণের মতো যায়! কত গ্রাম, কত পথ যায় স'রে স'রে- শহরে রানার যাবেই পৌঁছে ভোরে; হাতে লণ্ঠন করে ঠন্ঠন্, জোনাকিরা দেয় আলো মাভৈঃ, রানার! এখনো রাতের কালো। এমনি ক'রেই জীবনের বহু বছরকে পিছু ফেলে, পৃথিবীর বোঝা ক্ষুধিত রানার পৌঁছে দিয়েছে 'মেলে' ক্লান্তশ্বাস ছুঁয়েছে আকাশ, মাটি ভিজে গেছে ঘামে জীবনের সব রাত্রিকে ওরা কিনেছে অল্প দামে।

অনেক দুঃখে, বহু বেদনায়, অভিমানে, অনুরাগে,ঘরে তার প্রিয়া একা শয্যায় বিনিদ্র রাত জাগে। রানার! রানার! এ বোঝা টানার দিন কবে শেষ হবে? রাত শেষ হয়ে সূর্য উঠবে কবে? ঘরেতে অভাব; পৃথিবীটা তাই মনে হয় কালো দোঁয়া, পিঠেতে টাকার বোঝা, তবু এই টাকাকে যাবে না ছোঁয়া, রাত নির্জন, পথে কত ভয়, তবুও রানার ছোটে, দস্যুর ভয়, তারো চেয়ে ভয় কখন সূর্য ওঠে। কত চিঠি লেখে লোকে কত সুখে, প্রেমে, আবেগে, স্মৃতিতে, কত দুঃখে ও শোকে। এর দুঃখের চিঠি পড়বে না জানি কেউ কোনো দিনও,এ র জীবনের দুঃখ কেবল জানবে পথের তৃণ, এর দুঃখের কথা জানবে না কেউ শহরে ও গ্রামে, এর কথা ঢাকা পড়ে থাকবেই কালো রাত্রির খামে। দরদে তারার চোখ কাঁপে মিটিমিটি,... এ-কে যে ভোরের আকাশ পাঠাবে সহানুভূতির চিঠি রানার! রানার! কি হবে এ বোঝা ব'য়ে? কি হবে ক্ষুদার ক্লান্তিতে ক্ষয়ে ক্ষয়ে? রানার! রানার ! ভোর তো হয়েছে- আকাশ হয়েছে লাল আলোর স্পর্শে কবে কেটে যাবে এই দুঃখের কাল রানার! গ্রামের রানার! সময় হয়েছে নতুন খবর আনার; শপথের চিঠি নিয়ে চলো আজভীরুতা পিছনে ফেলে- পৌঁছে দাও এ নতুন খবর অগ্রগতির 'মেলে', দেখা দেবে বুঝি প্রভাত এখুনিনেই, দেরি নেই আর, ছুটে চলো, ছুটে চলো আরো বেগে দুর্দম, হে রানার।

স্বাধীনতার সুখ -(রজনীকান্ত সেন) বাবুই পাখিরে ডাকি, বলিছে চড়াই, কুঁড়েঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই, আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ে। বাবুই হাসিয়া কহে-সন্দেহ কি তায়? কষ্ট পাই, তবু থাকি নিজের বাসায়, পাকা হোক, তবু ভাই, পরের ও বাসা, নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর খাসা। হাসি -(রোকনুজ্জামান খান) হাসতে নাকি জানেনা কেউ কে বলেছে ভাই? এই শোন না কত হাসির খবর বলে যাই। খোকন হাসে ফোঁকলা দাঁতে চাঁদ হাসে তার সাথে সাথে কাজল বিলে শাপলা হাসে হাসে সবুজ ঘাস। খলসে মাছের হাসি দেখে হাসে পাতিহাঁস।

টিয়ে হাসে, রাঙ্গা ঠোঁটে, ফিঙ্গের মুখেও হাসি ফোটে দোয়েল কোয়েল ময়না শ্যামা হাসতে সবাই চায় বোয়াল মাছের দেখলে হাসি পিলে চমকে যায়। এত হাসি দেখেও যারা গোমড়া মুখে চায়, তাদের দেখে পেঁচার মুখেও কেবল হাসি পায়। আসমানী আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও, রহিম উদ্দীনের ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও। বাড়ি তো নয় পাখির বাসা-ভেন্না পাতার ছানি, একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি। একটুখানি হওয়া দিলেই ঘর নড়বড় করে, তারি তলে আসমানীরা থাকে বছর ভরে।

পেটটি ভরে পায় না খেতে, বুকের ক’খান হাড়, সাক্ষী দেছে অনাহারে কদিন গেছে তার। মিষ্টি তাহার মুখটি হতে হাসির প্রদীপ-রাশি থাপড়েতে নিবিয়ে গেছে দারুণ অভাব আসি। পরণে তার শতেক তালির শতেক ছেঁড়া বাস, সোনালী তার গার বরণের করছে উপহাস। ভোমর-কালো চোখ দুটিতে নাই কৌতুক-হাসি, সেখান দিয়ে গড়িয়ে পড়ে অশ্রু রাশি রাশি। বাঁশীর মত সুরটি গলায় ক্ষয় হল তাই কেঁদে, হয়নি সুযোগ লয় যে সে-সুর গানের সুরে বেঁধে।

আসমানীদের বাড়ির ধারে পদ্ম-পুকুর ভরে ব্যাঙের ছানা শ্যাওলা-পানা কিল-বিল-বিল করে। ম্যালেরিয়ার মশক সেথা বিষ গুলিছে জলে, সেই জলেতে রান্না খাওয়া আসমানীদের চলে। পেটটি তাহার দুলছে পিলেয়, নিতুই যে জ্বরতার, বৈদ্য ডেকে ওষুধ করে পয়সা নাহি আর। খোসমানী আর আসমানী যে রয় দুইটি দেশে, কও তো যাদু, কারে নেবে অধিক ভালবেসে? কাজের লোক -(নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্য ) মৌমাছি, মৌমাছি কোথা যাও নাচি নাচি দাঁড়াও না একবার ভাই। ওই ফুল ফোটে বনে যাই মধু আহরণে দাঁড়াবার সময় তো নাই।

ছোট পাখি, ছোট পাখি কিচিমিচি ডাকি ডাকি কোথা যাও বলে যাও শুনি। এখন না কব কথা আনিয়াছি তৃণলতা আপনার বাসা আগে বুনি। পিপীলিকা, পিপীলিকা দলবল ছাড়ি একা কোথা যাও, যাও ভাই বলি। শীতের সঞ্চয় চাই খাদ্য খুঁজিতেছি তাই ছয় পায়ে পিল পিল চলি। প্রভাতী - কাজী নজরুল ইসলাম ভোর হলো দোর খোলো খুকুমণি ওঠ রে! ঐ ডাকে যুঁই-শাখে ফুল-খুকি ছোটরে! রবি মামা দেয় হামা গায়ে রাঙা জামা ঐ, দারোয়ান গায় গান শোন ঐ, রামা হৈ!’ ত্যাজি নীড় করে ভিড় ওড়ে পাখি আকাশে এন্তার গান তার ভাসে ভোর বাতাসে।

চুলবুল বুলবুল শিস্ দেয় পুষ্পে, এইবার এইবার খুকুমণি উঠবে! খুলি হাল তুলি পাল ঐ তরী চললো, এইবার এইবার খুকু চোখ খুললো। আলসে নয় সে ওঠে রোজ সকালে রোজ তাই চাঁদা ভাই টিপ দেয় কপালে । খোকার সাধ আমি হব সকাল বেলার পাখি সবার আগে কুসুম-বাগে উঠব আমি ডাকি। সূয্যিমামা জাগার আগে উঠব আমি জেগে, ‘হয়নি সকাল, ঘুমো এখন’- মা বলবেন রেগে। বলব আমি, ‘আলসে মেয়ে ঘুমিয়ে তুমি থাক, হয়নি সকাল- তাই বলে কি সকাল হবে না কা! আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে? তোমার ছেলে উঠলে গো মা রাত পোহাবে তবে!’ ইচ্ছা -(আহসান হাবীব) মনারে মনা কোথায় যাস? বিলের ধারে কাটব ঘাস।

ঘাস কি হবে? বেচব কাল, চিকন সুতোর কিনব জাল। জাল কি হবে? নদীর বাঁকে মাছ ধরব ঝাঁকে ঝাঁকে। মাছ কি হবে? বেচব হাটে, কিনব শাড়ি পাটে পাটে। বোনকে দেব পাটের শড়ি, মাকে দেব রঙ্গিন হাঁড়ি। . পাছে লোকে কিছু বলে -(কামিনী রায়) করিতে পারিনা কাজ, সদা ভয় - সদা লাজ, সংশয়ে সংকল্প সদা টলে, পাছে লোকে কিছু বলে।

আড়ালে আড়ালে থাকি, নীরবে আপনা ঢাকি সম্মুখে চরণ নাহি চলে , পাছে লোকে কিছু বলে। কাঁদে প্রাণ যবে, আঁখি - সযতনে শুষ্ক রাখি নির্মল নয়নের জলে, পাছে লোকে কিছু বলে। একটি স্নেহের কথা - প্রশমিতে পারে ব্যথা চলে যায় উপেক্ষার ছলে, পাছে লোকে কিছু বলে। মহৎ উদ্দেশ্য যবে - একসাথে মিলে সবে, পারিনা মিলিতে সেই দলে, পাছে লোকে কিছু বলে। বিধাতা দিয়েছে প্রাণ, থাকি সদা ম্রিয়মান, শক্তি মরে ভীতির কবলে, পাছে লোকে কিছু বলে।

বীরপুরুষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মনে করো যেন বিদেশ ঘুরে মাকে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দূরে । তুমি যাচ্ছ পালকিতে মা চড়ে দরজা দুটো একটুকু ফাঁক করে, আমি যাচ্ছি রাঙা ঘোড়ার ’পরে টগবগিয়ে তোমার পাশে পাশে । রাস্তা থেকে ঘোড়ার খুরে খুরে রাঙা ধুলোয় মেঘ উড়িয়ে আসে । সন্ধে হল,সূর্য নামে পাটে এলেম যেন জোড়াদিঘির মাঠে । ধূ ধূ করে যে দিক পানে চাই কোনোখানে জনমানব নাই, তুমি যেন আপনমনে তাই ভয় পেয়েছ; ভাবছ, এলেম কোথা? আমি বলছি, ‘ভয় পেয়ো না মা গো, ঐ দেখা যায় মরা নদীর সোঁতা ।

’ চোরকাঁটাতে মাঠ রয়েছে ঢেকে, মাঝখানেতে পথ গিয়েছে বেঁকে । গোরু বাছুর নেইকো কোনোখানে, সন্ধে হতেই গেছে গাঁয়ের পানে, আমরা কোথায় যাচ্ছি কে তা জানে, অন্ধকারে দেখা যায় না ভালো । তুমি যেন বললে আমায় ডেকে, ‘দিঘির ধারে ঐ যে কিসের আলো!’ এমন সময় 'হারে রে রে রে রে’ ঐ যে কারা আসতেছে ডাক ছেড়ে । তুমি ভয়ে পালকিতে এক কোণে ঠাকুর দেবতা স্মরণ করছ মনে, বেয়ারাগুলো পাশের কাঁটাবনে পালকি ছেড়ে কাঁপছে থরোথরো। আমি যেন তোমায় বলছি ডেকে, ‘আমি আছি, ভয় কেন মা কর।

’ হাতে লাঠি, মাথায় ঝাঁকড়া চুল কানে তাদের গোঁজা জবার ফুল । আমি বলি, ‘দাঁড়া, খবরদার! এক পা আগে আসিস যদি আর - এই চেয়ে দেখ আমার তলোয়ার, টুকরো করে দেব তোদের সেরে । ’ শুনে তারা লম্ফ দিয়ে উঠে চেঁচিয়ে উঠল, ‘হারে রে রে রে রে। ’ তুমি বললে, ‘যাস না খোকা ওরে’ আমি বলি, ‘দেখো না চুপ করে। ’ ছুটিয়ে ঘোড়া গেলেম তাদের মাঝে, ঢাল তলোয়ার ঝন্ঝনিয়ে বাজে কী ভয়ানক লড়াই হল মা যে, শুনে তোমার গায়ে দেবে কাঁটা।

কত লোক যে পালিয়ে গেল ভয়ে, কত লোকের মাথা পড়ল কাটা। এত লোকের সঙ্গে লড়াই করে ভাবছ খোকা গেলই বুঝি মরে। আমি তখন রক্ত মেখে ঘেমে বলছি এসে, ‘লড়াই গেছে থেমে’, তুমি শুনে পালকি থেকে নেমে চুমো খেয়ে নিচ্ছ আমায় কোলে - বলছ, ‘ভাগ্যে খোকা সঙ্গে ছিল! কী দুর্দশাই হত তা না হলে। ’ রোজ কত কী ঘটে যাহা তাহা - এমন কেন সত্যি হয় না আহা। ঠিক যেন এক গল্প হত তবে, শুনত যারা অবাক হত সবে, দাদা বলত, ‘কেমন করে হবে, খোকার গায়ে এত কি জোর আছে।

’ পাড়ার লোকে বলত সবাই শুনে, ‘ভাগ্যে খোকা ছিল মায়ের কাছে। ’ আমাদের ছোটো নদী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের ছোটো নদী চলে বাঁকে বাঁকে বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে। পার হয়ে যায় গোরু, পার হয় গাড়ি, দুই ধার উঁচু তার, ঢালু তার পাড়ি। চিক্ চিক্ করে বালি, কোথা নাই কাদা, একধারে কাশবন ফুলে ফুলে সাদা। কিচিমিচি করে সেথা শালিকের ঝাঁক, রাতে ওঠে থেকে থেকে শেয়ালের হাঁক।

আর-পারে আমবন তালবন চলে, গাঁয়ের বামুন পাড়া তারি ছায়াতলে। তীরে তীরে ছেলে মেয়ে নাহিবার কালে গামছায় জল ভরে গায়ে তারা ঢালে। সকালে বিকালে কভু নাওয়া হলে পরে আঁচলে ছাঁকিয়া তারা ছোটো মাছ ধরে। বালি দিয়ে মাজে থালা, ঘটিগুলি মাজে, বধূরা কাপড় কেচে যায় গৃহকাজে। আষাঢ়ে বাদল নামে, নদী ভর ভর মাতিয়া ছুটিয়া চলে ধারা খরতর।

মহাবেগে কলকল কোলাহল ওঠে, ঘোলা জলে পাকগুলি ঘুরে ঘুরে ছোটে। দুই কূলে বনে বনে পড়ে যায় সাড়া, বরষার উৎসবে জেগে ওঠে পাড়া। । রসাল ও স্বর্ণলতিকা - মাইকেল মধুসূদন দত্ত রসাল কহিল উচ্চে স্বর্ণলতিকারে - শুন মোর কথা, ধনি, নিন্দ বিধাতারে। নিদারুণ তিনি অতি; নাহি দয়া তব প্রতি; তেঁই ক্ষুদ্র-কায়া করি সৃজিলা তোমারে।

মলয় বহিলে, হায়, নতশিরা তুমি তায়, মধুকর- ভরে তুমি পড় লো ঢলিয়া; হিমাদ্রি সদৃশ আমি, বন-বৃক্ষ-কুল-স্বামী, মেঘলোকে উঠ শির আকাশ ভেদিয়া! দূরে রাখি গাভী-দলে, রাখাল আমার তলে বিরাম লভয়ে অনুক্ষণ,- শুন, ধনি, রাজ-কাজ দরিদ্র পালন! আমার প্রসাদ ভুঞ্জে পথ-গামী জন। কেহ অন্ন রাঁধি খায় কেহ পড়ি নিদ্রা যায এ রাজ চরণে। মধু-মাখা ফল মোর বিখ্যাত ভূবনে! তুমি কি তা জান না ললনে? দেখ মোর ডাল-রাশি, কত পাখি বাঁধে আসি বাসা এ আগারে! ধন্য মোর জনম সংসারে! কিন্তু তব দুঃখ দেখি নিত্য আমি দুঃখী নিন্দ বিধাতায় তুমি, নিন্দ, বিধুমুখী! নীরবিলা তরুরাজ; উড়িল গগনে যমদূতাকৃতি মেঘ গম্ভীর স্বননে; মহাঘাতে মড়মড়ি রসাল ভূতলে পড়ি হায়, বায়ুবলে হারাইল আয়ু-সহ দর্প বনস্থলে! ঊর্ধ্বশির যদি তুমি কুল মান ধনে; করিও না ঘৃণা তবু নিচ-শির জনে। কাজের ছেলে - যোগীন্দ্রনাথ সরকার ‘দাদ্খানি চাল্, মুসুরির ডাল, চিনি-পাতা দৈ, দু’টা পাকা বেল, সরিষার তেল, ডিমভরা কৈ। পথে হেঁটে চলি, মনে মনে বলি, পাছে হয় ভুল৵ ভুল যদি হয়, মা তবে নিশ্চয়, ছিঁড়ে দেবে চুল।

‘দাদ্খানি চাল, মুসুরির ডাল, চিনি-পাতা দৈ, দু’টা পাকা বেল, সরিষার তেল, ডিম-ভরা কৈ। ’ বাহবা বাহবা−ভোলা ভুতো হাবা খেলিছে তো বেশ! দেখিব খেলাতে, কে হারে কে জেতে, কেনা হলে শেষ। ‘দাদ্খানি চাল, মুসুরির ডাল, চিনি-পাতা দৈ, ডিম-ভরা বেল, দু’টা পাকা তেল, সরিষার কৈ। ’ ওই তো ওখানে ঘুড়ি ধরে টানে, ঘোষেদের ননী৵ আমি যদি পাই, তা হলে উড়াই আকাশে এখনি! দাদ্খানি তেল, ডিম-ভরা বেল, দুটা পাকা দৈ, সরিষার চাল, চিনি-পাতা ডাল, মুসুরির কৈ! এসেছি দোকানে−কিনি এই খানে, যত কিছু পাই৵ মা যাহা বলেছে, ঠিক মনে আছে, তাতে ভুল নাই! দাদ্খানি বেল, মুসুরির তেল, সরিষার কৈ, চিনি-পাতা চাল, দুটা পাকা ডাল, ডিম-ভরা দৈ। চাষী সব সাধকের বড় সাধক আমার দেশের চাষা, দেশ মাতার-ই মুক্তিকামী, দেশের সে যে আশা।

দধীচি কি তাহার চেয়ে সাধক ছিল বড়? পুণ্য অত হবে না'ক সব করিলে জড়। মুক্তিকামী মহাসাধক মুক্ত করে দেশ, সবারই সে অন্ন জোগায় নাইক গর্ব লেশ। ব্রত তাহার পরের হিত, সুখ নাহি চায় নিজে, রৌদ্র দাহে শুকায় তনু, মেঘের জলে ভিজে। আমার দেশের মাটির ছেলে, নমি বারংবার তোমায় দেখে চূর্ণ হউক সবার অহংকার। বনভোজন - গোলাম মোস্তফা নুরু, পুশি, আয়েশা, শফি সবাই এসেছে আম বাগিচার তলায় যেন তারা হেসেছে।

রাঁধুনিদের শখের রাঁধার পড়ে গেছ ধুম, বোশেখ মাসের এই দুপুরে নাইকো কারো ঘুম। বাপ মা তাদের ঘুমিয়ে আছে এই সুবিধা পেয়ে, বনভোজনে মিলেছে আজ দুষ্টু কটি মেয়ে। বসে গেছে সবাই আজি বিপুল আয়োজনে, ব্যস্ত সবাই আজকে তারা ভোজের নিমন্ত্রণে। কেউবা বসে হলদি বাটে কেউবা রাঁধে ভাত, কেউবা বলে দুত্তুরি ছাই পুড়েই গেল হাত। বিনা আগুন দিয়েই তাদের হচ্ছে যদিও রাঁধা, তবু সবার দুই চোখেতে ধোঁয়া লেগেই কাঁদা।

কোর্মা পোলাও কেউবা রাঁধে, কেউবা চাখে নুন, অকারণে বারে বারে হেসেই বা কেউ খুন। রান্না তাদের শেষ হল যেই, গিন্নী হল নুরু, এক লাইনে সবাই বসে করলে খাওয়া শুরু। ধূলোবালির কোর্মা-পোলাও আর সে কাদার পিঠে, মিছিমিছি খেয়া সবাই, বলে- বেজায় মিঠে। এমন সময় হঠাৎ আমি যেই পড়েছি এসে, পালিয়ে গেল দুষ্টুরা সব খিলখিলিয়ে হেসে। জোনাকিরা (আহসান হাবীব) দু'টি তিনটি করে এলো তখন- বৃষ্টি-ভেজা শীতের হাওয়া বইছে এলোমেলো, তারা- একটি দু'টি তিনটি করে এলো।

থই থই থই অন্ধকারে ঝাউয়ের শাখা দোলে সেই- অন্ধকারে শন শন শন আওয়াজ শুধু তোলে। ভয়েতে বুক চেপে ঝাউয়ের শাখা , পাখির পাখা উঠছে কেঁপে কেঁপে । তখন- একটি দু'টি তিনটি করে এসে এক শো দু শো তিন শো করে ঝাঁক বেঁধে যায় শেষে তারা- বললে ও ভাই, ঝাউয়ের শাখা, বললে ও ভাই পাখি, অন্ধকারে ভয় পেয়েছো নাকি ? যখন- বললে, তখন পাতার ফাঁকে কী যেন চমকালো। অবাক অবাক চোখের চাওয়ায় একটুখানি আলো। যখন- ছড়িয়ে গেলো ডালপালাতে সবাই দলে দলে তখন- ঝাউয়ের শাখায়- পাখির পাখায় হীরে-মানিক জ্বলে।

যখন- হীরে-মানিক জ্বলে তখন- থমকে দাঁড়াঁয় শীতের হাওয়া চমকে গিয়ে বলে- খুশি খুশি মুখটি নিয়ে তোমরা এলে কারা? তোমরা কি ভাই নীল আকাশের তারা ? আলোর পাখি নাম জোনাকি জাগি রাতের বেলা, নিজকে জ্বেলে এই আমাদের ভালোবাসার খেলা। তারা নইকো- নইকো তারা নই আকাশের চাঁদ ছোট বুকে আছে শুধুই ভালোবাসার সাধ। খুকি ও কাঠবেড়ালি কাঠবেড়ালি! কাঠবেড়ালি! পেয়ারা তুমি খাও? গুড়-মুড়ি খাও? দুধ-ভাত খাও? বাতাবি-নেবু? লাউ? বেড়াল-বাচ্চা? কুকুর-ছানা? তাও- ডাইনি তুমি হোঁৎকা পেটুক, খাও একা পাও যেথায় যেটুক! বাতাবি-নেবু সকলগুলো একলা খেলে ডুবিয়ে নুলো! তবে যে ভারি ল্যাজ উঁচিয়ে পুটুস পাটুস চাও? ছোঁচা তুমি! তোমার সঙ্গে আড়ি আমার! যাও! কাঠবেড়ালি! বাঁদরীমুখী! মারবো ছুঁড়ে কিল? দেখবি তবে? রাঙাদাকে ডাকবো? দেবে ঢিল! পেয়ারা দেবে? যা তুই ওঁচা! তাই তোর নাকটি বোঁচা! হুতমো-চোখী! গাপুস গুপুস একলাই খাও হাপুস হুপুস! পেটে তোমার পিলে হবে! কুড়ি-কুষ্টি মুখে! হেই ভগবান! একটা পোকা যাস পেটে ওর ঢুকে! ইস! খেয়ো না মস্তপানা ঐ সে পাকাটাও! আমিও খুবই পেয়ারা খাই যে! একটি আমায় দাও! কাঠবেড়ালি! তুমি আমার ছোড়দি’ হবে? বৌদি হবে? হুঁ! রাঙা দিদি? তবে একটা পেয়ারা দাও না! উঃ! এ রাম! তুমি ন্যাংটা পুঁটো? ফ্রকটা নেবে? জামা দুটো? আর খেয়ো না পেয়ার তবে, বাতাবি-নেবুও ছাড়তে হবে! দাঁত দেখিয়ে দিচ্ছ ছুট? অ’মা দেখে যাও!- কাঠবেড়ালি! তুমি মর! তুমি কচু খাও!! পাখী-সব করে রব, রাতি পোহাইল। কাননে কুসুমকলি, সকলি ফুটিল। ।

রাখাল গরুর পাল, ল'য়ে যায় মাঠে। শিশুগণ দেয় মন নিজ নিজ পাঠে। । ফুটিল মালতী ফুল, সৌরভ ছুটিল। পরিমল লোভে অলি, আসিয়া জুটিল।

। গগনে উঠিল রবি, লোহিত বরণ। আলোক পাইয়া লোক, পুলকিত মন। । শীতল বাতাস বয়, জুড়ায় শরীর।

পাতায় পাতায় পড়ে, নিশির শিশির। । উঠ শিশু মুখ ধোও, পর নিজ বেশ। আপন পাঠেতে মন, করহ নিবেশ। ।

নোটন নোটন পায়রাগুলি ঝোটন বেঁধেছে ওপারেতে ছেলেমেয়ে নাইতে নেমেছে। দুই ধারে দুই রুই কাতলা ভেসে উঠেছে কে দেখেছে কে দেখেছে দাদা দেখেছে দাদার হাতে কলম ছিল ছুঁড়ে মেরেছে উঃ বড্ড লেগেছে। বাক্ বাক্ কুম পায়রা মাথায় দিয়ে টায়রা বউ সাজবে কাল কি? চড়বে সোনার পালকি? পালকি চলে ভিন গাঁ- ছয় বেহারার তিন পা। পায়রা ডাকে বাকুম বাক্ তিন বেহারার মাথায় টাক। বাক্ বাকুম কুম্ বাক্ বাকুম ছয় বেহারার নামলো ঘুম।

থামলো তাদের হুকুম হাঁক পায়রা ডাকে বাকুম্ বাক্। ছয় বেহারা হুমড়ি খায় পায়রা উড়ে কোথায় যায়? আম পাতা জোড়া-জোড়া. আম পাতা জোড়া-জোড়া.. মারবো চাবুক চড়বো ঘোড়া.. ওরে বুবু সরে দাঁড়া.. আসছে আমার পাগলা ঘোড়া.. পাগলা ঘোড়া ক্ষেপেছে.. চাবুক ছুঁড়ে মেরেছে. বিষটি এলো কাঁশবনে, জাগলো সাড়া ঘাসবনে, বকের সাড়ি কোথা-রে, লুকিয়ে গেলো বাঁশ বনে.. নদীতে নাই খেয়া যে, ডাকলো দূরে দেয়া যে, কোন সে বনের আড়ালে, ফুটলো আবার কেয়া যে.. গাঁয়ের নামটি হাটখোলা, বিষটি বাদল দেয় দোলা, রাখাল ছেলে মেঘ দেখে, যায় দাড়িয়ে পথ ভোলা.. মেঘের আকাশ মন টানে , যায় সে ছুটে কোন খানে, আউশ ধানের মাঠ ছেড়ে, আমন ধানের দেশ পানে.. ছিপখান তিন-দাঁড় তিনজন মাল্লা.. . চৌপর দিন-ভর দেয় দৌঁড়-পাল্লা!.. পাড়ময় ঝোপঝাড় জংগল, জঞ্জাল... জলময় শৈবাল পান্নার টাঁকশাল!... কঞ্চির তীর-ঘর ঐ-চর জাগছে.. বন-হাঁস ডিম তার শ্যাওলায় ঢাকছে.. . চুপ চুপ- ওই ডুব দ্যায় পান্ কৌটি.. . দ্যায় ডুব টুপ টুপ ঘোমটার বৌটি!.. পান সুপারি ! পান সুপারি !.. এইখানেতে শঙ্কা ভারি. . পাঁচ পীরনী শীর্ণি মেনে.. চলরে টেনে বৈঠা হেনে. গোল করোনা গোল করোনা ছোটন ঘুমায় খাটে.. এই ঘুমকে কিনতে হলো নওয়াব বাড়ির হাটে.. সোনা নয় রূপা নয় দিলাম মোতির মালা.. তাই তো ছোটন ঘুমিয়ে আছে ঘর করে উজালা..  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.