আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছোটবেলায় দেখা টিভি সিরিজগুলো - ৩

ছোটবেলায় দেখা টিভি সিরিজগুলো - ১ , ২ ২১. স্পেলবাইন্ডার গত দুই পর্বের মন্তব্যে অনেকেই এই সিরিজটার কথা বলেছেন। আজকে শুরুই করলাম এই দিয়ে। যদিও সাহস পাচ্ছিলাম না। কারণ এই সিরিজটায় কেন যেন স্মৃতি ধোঁকা দিচ্ছে। ঠিক মনে পড়ছে না, তবে স্মৃতি হাতড়ে হাতড়ে যেটুকু বের করতে পেরেছি বলি, ভুল হলে হবে।

যতদূর মনে পড়ে, দুইটা বিজ্ঞানী পরিবার থাকে। এক পরিবারে মা আর দুই মেয়ে, আরেক পরিবারে বাবা আর এক ছেলে। এই বাবা আর মা দুজনেই কোন স্পেস সেন্টারে কাজ করে। তাদের ছেলেমেয়েরাও সব কয়টা হাফ বিজ্ঞানী। তো যা হোক, একবার কিভাবে যেন কোন একটা চাঁদ-সূর্য নক্ষত্রের কম্বিনেশনে পিচ্চিগুলার সামনে একটা প্যারালাল দুনিয়ার দরজা খুলে যায়।

ওরা সেখানে গিয়ে দেখে একেবারেই অন্যরকম নিয়ম-কানুন ঐ দুনিয়ার। একটা ডাইনী/জাদুকরী থাকে দুষ্টু, একটা না, অনেকগুলো থাকে মনে হয়। আচ্ছা যা হোক, তারাই সব রকমের টেকনোলজী ব্যবহার করে, সাধারণ মানুষের যেকোন রকম টেকনোলজী ব্যবহার নিষিদ্ধ। তারা খুবই দুর্দশার মধ্যে থাকে। এর মধ্যে পিচ্চিগুলো গিয়ে তাদের টেকনোলজীর ব্যবহার শেখায় আর ডাইনী আর সব দুষ্টুলোকের মোকাবিলা করে।

কি জানি কী লিখলাম। মনে হচ্ছে দুইটা সিরিজ একসাথে গুলিয়ে ফেলেছি। করলে করেছি, কিন্তু তবু ইউটিউবে দেখে মিলিয়ে নিব না। যা মনে আছে, তাই। ২২. থান্ডার ইন প্যারাডাইজ এটার কাহিনীটা মনে পড়লেও নাম ভুলে গিয়েছিলাম।

গত দুই পর্বের মন্তব্যে নামটা পেয়ে গিয়েছি। এখানে দুইজন অ্যাডভেঞ্চারাস লোকের একটা টিম থাকে, যাদের একটা অদ্ভূত বোট থাকে। এমনিতে দেখতে খুব সাধারণ স্পিডবোটের মত, কিন্তু দরকার পড়লে এটাকে হাই-টেক মিনি ডুবোজাহাজ বানানো যায়। এই হাই-টেক বোট দিয়ে তারা নানান অ্যাডভেঞ্চারে যায়, এটাই এই সিরিজের মূল কাহিনী। এ্যাডভেঞ্চারগুলো দেখতে ভালোই লাগত, শুধু পিচ্চি স্পিডবোটের ডুবোজাহাজে বদল হওয়ার পর ভিতরে এত বেশি জায়গা দেখাত যে দৃষ্টিকটু লাগত।

২৩. এন ওয়াই পি ডি ব্লু নাম শুনেই বোঝা যায় সিরিজের কাহিনী কি হতে পারে। নিউ ইয়র্ক পুলিস ডিপার্টমেন্টের নানান কেস নিয়ে সিরিজ। শুরুতে শুরুতে বেশ কয়েকটা পর্ব দেখলেও পরে কেন যেন নিয়মিত দেখা হয়নি। ২৪. রেসক্যু এটারও নাম শুনেই বোঝা যায় কিসের গল্প। (ছবি পেলাম না।

) একটা রেসক্যু টিম, যারা বিভিন্ন দুর্যোগের সময় আক্রান্ত মানুষদের উদ্ধার করে। একেকেটা উদ্ধারকাজ দেখতে গিয়ে মনে হয় যেন নিজেই ঐ দুর্যোগের মধ্যে পড়ে গিয়েছি। টান টান উত্তেজনায় থাকতাম এটা দেখার সময়। উদ্ধারকাজ ছাড়াও এই টিমের সদস্যদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও কাহিনী চলত পাশাপাশি। ২৫. রোবোকপ এই নামটা অবশ্য এখানে দিতে চাইছিলাম না, কারণ এটা দেখার সময় আর খুব বেশি ছোট ছিলাম না মনে হয়।

যা হোক, এটাও যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিল। ভালোই লাগত। শুধু তার হাঁটার গতি এত কম ছিল যে বিরক্ত লাগত। বাসায় ছোট ভাই প্রায়ই রোবোকপের নড়াচড়া অভিনয় করে দেখাত। ২৬. টাইম ট্র্যাক্স এই সিরিজটা ছিল টাইম মেশিন নিয়ে।

তবে গার্ল ফ্রম টুমরোর মত এত সুন্দর না। এখানে ভবিষ্যতের একজন পুলিশ অফিসারের কাহিনী নিয়ে দেখানো হয়। তার ছিল একটা হলোগ্রাফিক অ্যাসিস্টেন্ট যার চেহারা তার মায়ের মত করে বানানো হয়েছে। তো এক দুষ্টুলোক জেল থেকে পালিয়ে টাইম মেশিন দিয়ে অতীতে চলে যায়। তাকে সেখান থেকে ধরে আনতে নায়ককেও যেতে হয়।

তারপর চলতে থাকে তাদের চোর-পুলিশ খেলা। সিরিজটা শেষের দিকে বাংলায় ডাবিং করে দেখানো হত। ২৭. সিনবাদ এটাও একটু বড়বেলায় দেখা সিরিজ। যা হোক জনপ্রিয়তায় কমতি ছিল না এই সিরিজেরও। বিশেষ করে মালিকা হামিরার জাদুটোনা নিয়ে নানান জনকে পচানো একটা প্রিয় কাজ ছিল।

শেষের দিকে সিন্দবাদের গেট-আপে একটা পরিবর্তন আনা হয়। ঢিলে ঢালা কুর্তার বদলে লেদার প্যান্ট আর লেদার কোটি, হেয়ার স্টাইলেও পরিবর্তন ছিল। কেন যেন চরিত্রের সাথে ঠিক মানাতে পারিনি। ২৮. লুইস এন্ড ক্লার্ক: দ্য নিউ অ্যাডভেঞ্চার্স অব সুপারম্যান সুপারম্যানের যত সিরিজ বা মুভি দেখা হয়েছে, এইটাই সবচেয়ে ভালো লেগেছে। সুন্দরী নায়িকাকে দেখে তাকিয়ে থাকতাম শুধু।

আর ক্লার্কের সাথে লুইসের ঝগড়াটা ছিল খুব মজার। আর সুপারম্যানের কারিশমা তো আছেই সিরিজের মূল আকর্ষণ। ২৯. এক্স ফাইলস এটা অবশ্য স্কুল জীবন পার হয়ে এসে দেখেছি। তারপরও দিলাম, কারণ আমার খুব প্রিয় একটা সিরিজ, আর প্রথম দেখেছিলাম বিটিভিতেই। পরে স্টার ওয়ার্ল্ডে দেখা হয়।

এই সিরিজের নায়িকা ডানা স্কালি (জিলিয়না অ্যান্ডারসন)-কে দেখে ভাবতাম কেউ এত সুন্দর হয় কিভাবে। যা হোক, এর প্যারানরমাল কাহিনীগুলোও খুব আকর্ষণীয়। একটা ব্যাপার হল যখন সিরিজটা দেখা শুরু করি, তখন কলেজে পড়ি, তখন এর ভাষাটা খুব কঠিন মনে হত। কি সব ইংলিশ টার্ম ব্যবহার করত বেশির ভাগই বুঝতাম না। আর শুধু বলতাম, এত কঠিন কেন? পরে যখন মেডিকেলে ভর্তি হলাম, এরপর সিরিজটা দেখতে বসে দেখি আরে এ তো সবই মেডিকেল টার্ম।

আর কঠিন রইল না আমার কাছে এই সিরিজ। ৩০. ডালাস এটা নিয়ে আসলে কী বলব। এটা নিয়মিত দেখতাম এটুকুই মনে আছে। কিছুই বুঝতাম না তখন, তবু দেখতাম। কী আকর্ষণ ছিল নিজেও জানি না।

তবে একটা জিনিস খুব মনে আছে, সিরিজের টাইটেল দেখানোর স্টাইলটা খুব ভালো লাগত। প্রত্যেকের তিনটা করে ছবি দেখাত আর নাম দেখাত। ৩১. ডাইন্যাস্টি এই সিরিজটাও অনেক ডালাস টাইপের। বিরাট বড়লোকের পরিবারের কাহিনী। বউ-শাশুড়ি, সতীন - এই সবও আছে এর মধ্যে।

এই সিরিজটা একেবারে নিয়মিত না হলেও দেখা হত। ৩২. ওয়ার এন্ড রিমেমব্রেন্স দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কাহিনী নিয়ে এই সিরিজ নিয়মিত দেখার চেষ্টা করতাম। ছোট ছিলাম বলে খুব বেশি বুঝতাম না, কিন্তু যুদ্ধের ভয়াবহতা বোঝার মত বয়স হয়েছিল। ৩৩. ওশিন জাপানী এই সিরিজটার একটা পর্ব মিস হলে পুরো এক সপ্তাহ তার দুঃখ চলতে থাকত। জাপানী মেয়ে ওশিনের দারিদ্র জয় করার কাহিনী সবার মন ছুঁয়ে গিয়েছিল।

ওশিনের চরিত্রে অভিনয় করা তিনজনকেই খুব ভালো লাগত। পিচ্চি ওশিন ছিল ভীষণ কিউট, তরুণী ওশিন তো ঠিক একটা পুতুল, আর বৃদ্ধা ওশিনও যথেষ্ট স্মার্ট। এই সিরিজের কাহিনী পুরোটাই আগায় ওশিনের নিজের মুখে বলা গল্প দিয়ে, যা সে তার বান্ধবীর নাতিকে শোনায়। এই বান্ধবীর মৃত্যুর পর তার ছেলেকে সে পালক হিসেবে নিয়েছিল। ওশিনের জীবনের প্রতিটা উত্থান-পতনের কাহিনীতে আমরাও খুশি বা দুঃখ পেতাম একেবারে মন থেকেই।

দুঃখের ব্যাপার হল ওশিনের শেষ পর্বটা লোড শেডিং-এর জন্য দেখতে পারিনি। তবে আমরা যত না দুঃখ পেয়েছি, আম্মা পেয়েছিল তার চেয়ে অনেক বেশি। বাসায় আম্মাই ছিল এর সবচেয়ে বড় ভক্ত। ৩৪. স্যানসুই উইমেন এটা ছিল একটা সিঙ্গাপুরের সিরিজ। আসিও-আকিও নামের দুই বোনের গল্প।

এটাও আসলে আকিও-র মুখে বলা গল্প, যা সে তার বোন আসিও-র নাতিকে শোনায়। (এটারও ছবি পেলাম না। ) এই দুই বোনও খুব সুন্দরী ছিল। আর গরীবও। তাদের জীবনের নানান ঘটনা নিয়ে আগায় গল্প।

শেষে মনে হয় আসিও মারা যায়। সিরিজটা নাম কঠিন লাগত বলে আমরা আসিও-আকিও বলতাম। একটা মজার পর্বের কথা মনে পড়ছে। গ্রামে এক বাড়িতে বিয়ে। সেখানে রান্নার দায়িত্ব আসিও বা আকিও কোন একজনের, ঠিক মনে নেই।

তার সাথে প্রেম করতে চায় এক ছেলে। কিন্তু তার সামনে যেতে ভয় পায়। তার বন্ধুরা বুদ্ধি দেয় যে আসিও/আকিও-র সামনে একটা ইঁদুর ছুঁড়ে ফেলবে, এতে আসিও/আকিও ভয় পেয়ে ঐ ছেলেকে জড়িয়ে ধরবে। কিন্তু সমস্যা হল সেই ছেলেটাই আসলে ইঁদুর ভয় পায়, তাও কোনমতে সাহস করে গ্লাসের মধ্যে মরা ইঁদুর নিয়ে ছুঁড়ে দেয়। সেই ইঁদুর আসিও/আকিও-র সামনে না পড়ে, একবারে স্যুপের গামলার মধ্যে গিয়ে পড়ে।

ছেলেরা তাই দেখে ভয়ে দৌড়ে পালায়। পরে সবাই যখন খুব মজা করে স্যুপ খায়, ঐ দুষ্টু ছেলের দল কিছুতেই স্যুপ ছোঁয় না। তারা শুধু দেখে কনেকে বর কত আহ্লাদ করে স্যুপ খাইয়ে দিচ্ছে। হঠাৎ একজনের চামচে ইঁদুর ওঠে, আর তারপর হৈ চৈ, কনে বমি করতে করতে অস্থির। ৩৫. এগেইনস্ট দ্য উইন্ড এটা ছিল সিঙ্গাপুরের একটা সিরিজ।

এর টাইটেল গানটা খুবই সুন্দর ছিল। আর টাইটেল দেখানোর সময় গানের লাইনগুলো সাবটাইটেলে দেখাত। (সিঙ্গাপুরের সিরিজগুলোর ছবি পাই না কেন?) এর কাহিনী ছিল এক বড়লোকের মেয়ে প্রেম করে এক গরীব ছেলের সাথে। তাকে বিয়েও করে, একটা মেয়ে হয় ওদের। কিন্তু এক সময় তাদের সংসারে ভাঙন আসে।

মেয়েটা ডিভোর্স দিয়ে চলে যায় তার বাবার কাছে। তারপর চলতে থাকে কাহিনী। নায়িকার সাথে দেখা হয় এক বড়লোক তরুণ ব্যবসায়ীর, আর নায়কের কাজিন নায়ককে মনে মনে পছন্দ করে। কিন্তু পরে আবার এই কাজিনের সাথে নায়িকার এক কাজিনের প্রেম হয়। আর শেষ পর্যন্ত নায়ক-নায়িকার পুনর্মিলন ঘটে।

সিঙ্গাপুরের আরও একটা সিরিজ হত, এক দল হাই স্কুল ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে। একেকজন একেক রকম পরিবার থেকে এসেছে। তাদের ব্যক্তিগত জীবন আর বন্ধুত্ব নিয়ে চলতে থাকে কাহিনী। সিরিজটার নাম মনে নেই। আরেকটা জাপানী সিরিজ দেখেছিলাম, যেখানে এক দম্পতির কাহিনী দেখানো হয়।

স্বামী চাকরী করলেও স্ত্রীর চাকরী করা তার পছন্দ নয়। কিন্তু স্ত্রী চায় নিজের পায়ে দাঁড়াতে। সে জোর করেই চাকরী নেয় আর বেশ সফলও হয়। কিন্তু কিছু সমস্যা শুরু হয়েই যায়, আর শেষ পর্যন্ত চাকরী ছেড়েই দেয় নায়িকা। শেষটুকু আর ভালো লাগেনি, দেখানো হয় যে নায়িকার চাকরীর সিদ্ধান্ত ভুল ছিল, আসলে মেয়েদের চাকরী না করাই ভালো।

যা হোক, এই সিরিজটা দেখতাম মূলত সুন্দরী নায়িকার জন্য। সিরিজটার নাম মনে নেই। অনেক লিখেছি। আজকের মত থাক। আবার পরের পর্বে বাকীটুকু।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.