আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বেকারের বেকারত্ব(Copy-Paste)

আমি একজন ফাউ ইঞ্জিনিয়ার.। । । আমার বন্ধু নিরঞ্জন (ছদ্মনাম, ইচ্ছে করেই আসল নামটা দেওয়া হয়নি)। খুবই মেধাবী আর পরিশ্রমী।

দিন-রাত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মাত্র কয়েক ঘণ্টার ঘুম ছাড়া সে শুধু পড়ালেখাতেই করতো। তার স্বপ্ন একটাই, প্রথম শ্রেণীর একটা সরকারি চাকরি। আর সে জন্যই তার এতো পড়ালেখা। বন্ধুদের আড্ডায় তাকে ডাকলে সবসময়ই তার এক জবাব, ‘আগে চাকরিটা পাই তারপর জমিয়ে আড্ডা হবে। ’ সে বিসিএস দিয়েছে বেশ কয়েকবার।

প্রিলিমিনারি, লিখিত পরীক্ষায় খুবই ভালো করলেও মৌখিক পরীক্ষায় গিয়ে সবসময় বাদ পড়ে। তার কারণ একটাই দেখানো হয়। আর তা হলো শারীরিক গঠন। বেশ কয়েকটি চাকরির পরীক্ষায় প্রথম হলেও একই কারণে মৌখিক পরীক্ষায় তাকে বাদ দেওয়া হয়। আমার বন্ধুটির পড়ালেখার চাপে এবং চাকরির চিন্তায় শারীরিক গড়ন কিছুটা দুর্বল ছিল।

তবে সে শারীরিকভাবে অক্ষম নয়। বেশ লম্বা থাকায় তাকে বেশি দুর্বল লাগতো। তার যখন চাকরির বয়স শেষের দিকে তখন সে একদিন বন্ধুদের আড্ডায় এসেছিল। অবশ্য সেদিন সবার খুশি হওয়ার কথা ছিল। কারণ সে বলেছিল চাকরি পেয়েই বন্ধুদের আড্ডায় আসবে।

কিন্তু হয়নি তার স্বপ্নপূরণ। ওইদিন মনের দুঃখে সে আমাদের বললো, চাকরিদাতারা প্রচুর মেধাবীও চাইবে আবার শারীরিক গঠন চিকন হলে মৌখিক পরীক্ষায় বাদ দিয়ে দিবে। অবশ্য বন্ধুদের আড্ডায় সেদিন এর কারণ হিসেবে অনেকেই অনেক কিছু বলছিল। কেউ কেউ বলে, আসলে শারীরিক গঠনটঠন কিছু না। যাকে চাকরি দেওয়া হবে তাকে আগে থেকেই ঠিক করা থাকে।

তাই বাহানা দেখিয়ে তোকে বারবার বাদ দেওয়া হয়েছে। ব্যস্ততার কারণে ওই বন্ধুটির সঙ্গে যোগাযোগ রাখা সম্ভব হয়নি। তবে অনেকদিন পর তার সঙ্গে আমার দেখা হয়। তাকে দেখে চোখের জল আটকিয়ে রাখতে পারিনি। মুখ ভর্তি এলোমেলো দাড়ি, আগের মতোই চিকন দেহ, ময়লা কাপড়।

এক বুক কষ্ট নিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলাম। কিন্তু সে তাতে বিস্মিত হলো না। অনেক কষ্টে তাকে রাজি করিয়ে নিয়ে গেলাম একটি রেস্টুরেন্টে। সেখানে কথার মাঝে বেরিয়ে এলো তার জীবনের দুঃখগুলো। চাকরি না পাওয়ায় তার বহু বছরের প্রেমিকা অন্য এক চাকরিজীবীকে বিয়ে করে সুখি হয়েছে।

তবে বিয়ের আগে তার হাতে সে একটি চিরকুট ধরিয়ে দেয়। যাতে লেখা ছিল- ‘আসলে তুমি শুধু তোমার বেকারত্বকেই ভালোবেসেছ, আমাকে কখনো ভালোবাসোনি। আর আমি শুধু তোমাকেই ভালোবেসেছি, তোমার ওই বেকারত্বকে নয়। ’ স্মৃতিচারণে দেখলাম বন্ধুর চোখের কোণ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। পড়ারই কথা, এ কথা শুনে আমি নিজেই ঠিক থাকতে পারছিলাম না।

নিরঞ্জনকে জিজ্ঞেস করলাম এখন কি করছিস? বললো, হঠাৎ করেই বাবা মারা গেলেন। সংসারে নেমে আসে টানাপোড়েন। ব্যাংক ড্রাফটের টাকা যোগার করতে না পারায় অনেকগুলো চাকরির আবেদন করা যায়নি। এক সময় সরকারি চাকরির বয়সও শেষ হয়ে যায়। তাই বর্তমানে ঢাকায় থাকার জন্য পত্রিকায় কিছু লেখালেখি করছি।

তাতে যা আসে তাই দিয়েই চলছে বেঁচে থাকার সংগ্রাম। বাংলাদেশে বেকারত্বের হার ও সংখ্যা কতো তার সঠিক বা বিশ্বাসযোগ্য কোনও হিসাব নেই। সরকারি তথ্যে বর্তমানে বেকারত্বের হার ২ দশমিক ১ শতাংশ। তবে আধা বেকারের (আন্ডার অ্যাপ্লয়মেন্ট) হার ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ। অথচ বেকারত্বের হার ১৯৬১ সালে ০ দশমিক ৫, ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৪ সাল ১ দশমিক ৮, ১৯৯০ থেকে ১৯৯১ সাল ১ দশমিক ৯, ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৬ সাল ৩ দশমিক ৫, ১৯৯৯ থেকে ২০০০ সাল ৪ দশমিক ৩, ২০০২ থেকে ২০০৩ সাল ৪ দশমিক ৩ এবং ২০০৫ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ৪ দশমিক ৩ ছিল।

বাংলাদেশের বিভিন্ন বছরের লেবার ফোর্স সার্ভে থেকে এ তথ্য পাওয়া যায়। তবে তার আগে জানা দরকার বেকারত্ব আসলে কি। যদিও বাংলাদেশের মানুষের কাছে বেকারত্ব বোঝানোর কিছু নেই। বেকারত্ব সম্পর্কে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন মত রয়েছে। তবে অধিকাংশ অর্থনীতিবিদের ধারণার আলোকে বেকারত্ব বলতে বোঝায়, প্রচলিত মজুরিতে কাজ করতে চাইলেও একজন কর্মক্ষম শ্রমিকের যোগ্যতা অনুযায়ী কোনও কাজ না পাওয়া।

এখানে ‘বেকারত্ব’ বলতে অনিচ্ছাকৃত বেকারত্বকেই বোঝানো হয়েছে। অধ্যাপক পিগুর ভাষায়, ‘ওই অবস্থাকেই বেকারত্ব বলা হয়, যখন কর্মক্ষম ব্যক্তিরা ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ পায় না। ’ অবশ্য বিত্তবান লোকের সন্তান, যাদের ‘আলালের ঘরের দুলাল’ বলা হয়, তাদেরকে বেকারদের তালিকায় ফেলা ঠিক নয়। কারণ তারা কর্মক্ষম হওয়া সত্ত্বেও কোনও কাজ না করে বাপ-দাদার সঞ্চিত সম্পত্তি ভোগ করে আলস্যে দিন কাটায়। তাদেরকে সমাজের জন্য অভিশাপও বলা চলে।

বেকারত্বটা যে শুধু দেশের জন্য অভিশাপ তা নয়, এটি একজন বেকারের জীবনকেও করে দেয় এলোমেলো। প্রতিমাসে চাকরির আবেদনের ব্যাংক ড্রাফটের জন্য কয়েক হাজার টাকা জোগাড় করা, প্রিয়তমা অন্যের হাত ধরে চলে যাওয়া, তদবিরের জন্য মামা-খালু না থাকা, ঘুষের টাকা জোগাড় করা একজন বেকারের জীবনে যেন আরেক বেকারত্ব। বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, বাংলাদেশে এখন বেকারের সংখ্যা ৫ কোটির ওপরে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০১৫ সালে দেশে বেকারের হার বর্তমান থেকে দ্বিগুণ হবে। প্রতি বছর প্রায় ২৭ লাখ ছেলে-মেয়ে দেশ প্রথমবারের মতো চাকরির বাজারে প্রবেশ করে।

কিন্তু এদের মধ্যে মাত্র ৭ লাখের কর্মসংস্থান হচ্ছে। ফলে বাকিরা সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের দিকে ধাবিত হয়। তাই সমাজে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, খুন, ধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ওয়াদার মধ্যে ছিল ক্ষমতায় গেলে প্রতিটি পরিবারের একজনের চাকরির ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু সরকারের ৩ বছর চলে গেলেও দেখা যাচ্ছে না তাদের ওই ওয়াদা পূরণ।

উল্টো টাকার বিনিময়ে একের পর এক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে মেধাবীদের বাদ দিয়ে মেধাহীনদের চাকরির বাজারে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। ফলে দিনদিন বাড়ছে দুর্নীতি। হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে মেধাবীরা Main Link ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।