আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বেকারের সংখ্যা বাড়ছে

mojnu@ymail.com

• কাজ নেই। কাজের সুযোগও নেই। অথচ দ্রব্যমূল্য আকাশছোঁয়া। আছে মূল্যস্ফীতি। নেই ক্রয় ক্ষমতা।

দেশে বেকারের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। সবচেয়ে বেকায়দায় আছে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী। এক দিকে মূল্যস্ফীতির কারণে তারা টিকে থাকতে পারছে না, অন্যদিকে বেকারত্ব তাদের আরও দুর্বল করে দিচ্ছে। কাজের অভাবে দরিদ্র জনগোষ্ঠী মারাৱক সংকটে পড়ে গেছে। কাজের অভাবে সংকটে আছে মধ্যবিত্ত শ্রেণীও।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০০৩ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে ৩ বছরের ব্যবধানে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে প্রবৃদ্ধি অর্ধেকে নেমে গেছে। অন্যদিকে দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনার ভিত্তি হিসেবে ২০০৫-০৬ অর্থবছর থেকে গৃহীত দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্রের (পিআরএসপি) লক্ষ্যমাত্রার মাত্র এক-তৃতীয়াংশ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে সক্ষম হচ্ছে সরকার। অর্থনীতিবিদদের মতে, দেশে বর্তমানে কর্মসংস্থানের সুযোগ সবচেয়ে কম। তাদের মতে, চলতি অর্থবছরে নানা কারণে শিল্পখাতে বিনিয়োগ হয়নি। সরকারের নানা অভিযানের কারণে ব্যবসায়ীরা আস্থা হারিয়ে নতুন শিল্প স্থাপন করেননি।

নতুন কর্মসংস্থান হয়নি। ভীতির কারণে কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী নির্মাণ শিল্পখাতেও মারাৱক মন্দার সৃষ্টি হয়েছে। উচ্ছেদ অভিযানের কারণে অর্থনীতির অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত বিশেষ করে দরিদ্রদের আৱকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিকারী ক্ষুদ্র ব্যবসা খাত ক্ষতিগ্রস- হয়েছে। কৃষি খাত বিশেষ করে পোলট্রি শিল্প এক অর্থে ধসে গেছে। শিল্প ও কৃষি- অর্থনীতির এই দুই প্রকৃত খাতের দুরবস্থার কারণে সেবা খাতেও মন্দাবস্থা চলছে।

এমন অবস্থায় চলতি বছরে অর্থনীতিতে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত হয়ে গেছে বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শ্রমশক্তি জরিপের খসড়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৩ সালে যেখানে দেশে মোট কর্মসংস্থান ছিল ৪ কোটি ৪৩ লাখ, ২০০৬ সালে তা হয়েছে ৪ কোটি ৭৪ লাখ। ৩ বছরে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে মাত্র ৩১ লাখ লোকের। অর্থাৎ ৩ বছরে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ২ দশমিক ২ শতাংশ। ২০০০ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন- ৩ বছরে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৪ দশমিক ৪ শতাংশ।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাড়তি কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হওয়ায় দেশে বেকার লোকের সংখ্যা বাড়ছেই। ২০০৬ সালে দেশে মোট বেকার লোকের সংখ্যা হয়েছে ২ কোটি ১০ লাখ। ২০০৩ সালে বেকার লোকের সংখ্যা ছিল ২ কোটি এবং ২০০০ সালে ছিল ১ কোটি ৯০ লাখ। অন্যদিকে অর্ধ-বেকার এবং নির্ভরশীল লোকের সংখ্যাও বাড়ছে। চলতি ২০০৭-০৮ অর্থবছরে দেশে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সবচেয়ে বড় সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

১ কোটি ৫০ লাখ লোকের কর্মসংস্থানকারী বেসরকারি খাতের নির্মাণ শিল্প ধসে গেছে। দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের প্রভাব পড়েছে এ শিল্পে। বার্ড ফ্লু ও ঘূর্ণিঝড় সিডরের কারণে ৬০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী দেশের পোলট্রি শিল্পে নেমে এসেছে বিপর্যয়। ব্যবসায়ে আস্থাহীনতা ও ভীতির কারণে ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পে নতুন বিনিয়োগ করেননি শিল্পপতিরা। বিনিয়োগ না হওয়ায় ৫২ লাখ লোকের কর্মসংস্থানকারী এ খাতে নতুন কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়নি।

অন্যদিকে দেশের মোট কর্মসংস্থানের অর্ধেকের বেশি বা প্রায় ৫২ শতাংশ কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী কৃষিখাতও বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে দরিদ্রদের জন্য বাড়তি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারেনি। আর সরকারের প্রধান বিনিয়োগ কর্মসূচি এডিপি বাস-বায়নে ধীরগতির কারণেও নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে না। অর্থনীতিবিদদের মতে, অথনীতিতে মন্দাবস্থার কারণে সব মিলিয়ে এখন দেশে চরম বেকারত্ব বিরাজ করছে। এদিকে সরকার পিআরএসপিতে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হচ্ছে। অর্থনীতিতে টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে দরিদ্রতম জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে দারিদ্র্য নিরসনের যে লক্ষ্যমাত্রা পিআরএসপিতে নেয়া হয়েছে, তা অর্জিত হচ্ছে না।

বিগত ২০০৬-০৭ অর্থবছরে পিআরএসপিতে ৩০ লাখ ৬০ হাজার নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে মাত্র ৮ লাখ ৬০ হাজার। এর আগে ২০০৫-০৬ অর্থবছরে পিআরএসপিতে ২৭ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে মাত্র ৮ লাখ ৬০ হাজার নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছিল। আর চলতি ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ৩০ লাখ নতুন কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন' অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকের সামপ্রতিক প্রবণতা দেখে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলেছে, চলতি অর্থবছরে খুব বেশি হলে ১২ লাখ লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে। পিআরএসপিতে মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামোর (এমটিএমএফ) আওতায় ২০০৫-০৬ থেকে ২০০৭-০৮ অর্থবছরের মধ্যে অর্থাৎ ৩ বছরে ৮০ লাখ ২০ হাজার নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এর মধ্যে পল্লী অঞ্চলে ৫০ লাখ ৩৯ হাজার এবং শহরাঞ্চলে ২৬ লাখ ৩০ হাজার নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি বছর ২৭ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সিপিডি পিআরএসপি অনুযায়ী শ্রমবাজার বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছে, পিআরএসপিতে কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা এবং পিআরএসপি নির্দেশিত কর্মসংস্থান-জিডিপি স্থিতিস্থাপকতার মধ্যে বিরাট ফারাক রয়েছে। কর্মসংস্থান-জিডিপি স্থিতিস্থাপকতা পদ্ধতি (অর্থাৎ জিডিপি বৃদ্ধির কারণে যে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সৃষ্টি হয় তার সঙ্গে কর্মসংস্থানের সম্পর্ক) অনুযায়ী বিগত ২০০৬-০৭ অর্থবছরে পিআরএসপিতে ৩০ লাখ ৬০ হাজার নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে মাত্র ১০ লাখ ৪০ হা্‌জার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০ লাখ ২০ হাজার কম।

২০০৫-০৬ অর্থবছরে পিআরএসপিতে ২৭ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে মাত্র ৮ লাখ ৬০ হাজার নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছিল। আর চলতি ২০০৭-০৮ অর্থবছরে নতুন কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ লাখ। কিন' অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকের সামপ্রতিক প্রবণতা দেখে সিপিডি বলেছে, চলতি অর্থবছরে খুব বেশি হলে ১২ লাখ লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে। সিপিডি’র মতে, পিআরএসপিতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা দেশের অর্থনীতির বাস-বতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। সিপিডি ২০০৫-০৬ ও ২০০৬-০৭ অর্থবছরে পিআরএসপি’র ৮টি ক্ষেত্রে ‘অর্জিত’ লক্ষ্যমাত্রা বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছে, সরকার প্রায় সব ক্ষেত্রেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে।

এর মধ্যে পিআরএসপিতে ‘প্রো-পুওর’ বা দরিদ্র-বান্ধব প্রবৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। কিন' এ প্রবৃদ্ধির সঙ্গে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমানের উন্নতির সম্পর্ক পরিমাপের কোন পদ্ধতি সরকারের কাছে নেই। জাতীয় আয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অবদান প্রতি বছর কমছে। ১৯৯৯ সালে দেশের সবচেয়ে দরিদ্র ১০ শতাংশের আয় যেখানে জাতীয় আয়ের ১ দশমিক ৭ শতাংশ ছিল, ২০০৪ সালে তা হ্রাস পেয়ে ১ দশমিক ৫ শতাংশ হয়েছে। পিআরএসপিতে প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে দরিদ্রতম জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের কথা বলা হলেও প্রবৃদ্ধির সমতাভিত্তিক বিতরণ হচ্ছে না।

প্রতি বছর অর্থনীতিতে যে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে তার সুফল পাচ্ছে মুষ্টিমেয় ধনিক শ্রেণী। দরিদ্রদের কাছে প্রবৃদ্ধির সুফল পৌঁছাচ্ছে না। অর্থনীতিবিদ ড. আতিউর রহমান যুগান-রকে বলেন, দেশে ধারাবাহিকভাবে কর্মসংস্থান কমছে। নতুন শিল্প স্থাপিত হচ্ছে না। ব্যাংকে অলস টাকা পড়ে আছে।

সবকিছু মিলিয়ে অর্থনীতিতে মন্দাভাব চলছে। তিনি বলেন, যখন মূল্যবৃদ্ধির কারণে দরিদ্র মানুষ জর্জরিত ঠিক সেই সময়ে দেশে নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে না। এ কারণে দরিদ্রদের খাদ্য নিরাপত্তার সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, এসব সমস্যার সমাধান না করলে সামাজিক সংকট সৃষ্টি হওয়ার আশংকা দিতে পারে। তিনি কর্মসংস্থান বাড়াতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস-বায়নে আরও তৎপর হতে সরকারকে পরামর্শ দেন।

দেশে কর্মসংস্থানে বর্তমান নেতিবাচক প্রবণতা ব্যাখ্যা করে অর্থনীতিবিদ ও ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপের (ইআরজি) নির্বাহী পরিচালক ড. সাজ্জাদ জহির যুগান-রকে বলেন, চলতি অর্থবছরে নানা কারণে অথনৈতিক কর্মকাণ্ড ধীর হয়ে গেছে। শিল্প খাতে তেমন বিনিয়োগ বাড়েনি। বছরের শুরুতেই উচ্ছেদ অভিযানের কারণে অর্থনীতির অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত বিশেষ করে দরিদ্রদের আৱকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিকারী খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস- হয়েছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী নির্মাণ শিল্প খাত ও পোলট্রি শিল্প খাত এক অর্থে ধসে গেছে। শিল্প ও কৃষি- অর্থনীতির এই দুই প্রকৃত খাতের দুরবস্থার কারণে সেবা খাতেও মন্দাবস্থা চলছে।

তিনি বলেন, এমন অবস্থায় চলতি বছরে অর্থনীতিতে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত হয়ে গেছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, দেশে বর্তমানে কর্মসংস্থানের হার সবচেয়ে কম। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে দরিদ্র মানুষের জীবনযাত্রায়। একদিকে মূল্যস্ফীতির কারণে তারা টিকে থাকতে পারছে না, অন্যদিকে বেকারত্ব তাদের আরও দুর্বল করে দিচ্ছে। তিনি বলেন, কাজের অভাবে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমানের মারাৱক অবনতি হয়েছে।

http://www.shonglap.com/index.php?id=473

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।