Never argue with idiots. They bring you down to their level and then beat you with experience
সময় পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের কাজের গতিও বেড়েছে বহুগুণে। আর এই গতিময় যুগে এসে তাল মিলিয়ে চলতে বা টিকে থাকতে খুঁজে নিতে হচ্ছে গতিশীল বাহককে। তাই তো সেই চাহিদার পূরক হিসেবে সব সময় পাশে আছে মোটরবাইক। বর্তমান প্রজন্মের তারুণ্যের চাহিদার মধ্যে একটি হচ্ছে তার স্বপ্নের বাহন ‘মোটরবাইক’। আর সেই সব মোটরবাইকপ্রেমীর কথা মাথায় রেখে সেসব প্রয়োজনীয় তথ্য এবং মোটরবাইকের খোঁজখবর নিয়ে বিস্তারিত-
মোটরবাইক কেনার প্রস্তুতি
আপনার সাধ আর সাধ্যের মেলবন্ধন ঘটিয়ে পছন্দের বাইক কেনার জন্য একটি বাজেট করে ফেলুন।
অবশ্য বাজেটের কম-বেশি হতে পারে। বাজারে এতো মডেলের বাইকের মধ্যে কোনটি কিনবেন? কত সিসির কিনবেন? দাম কত? ইত্যাদি নানা প্রশ্নের বেড়াজালে থেকেও আপনাকে দেখেশুনে যাচাই-বাছাই করে কিনতে হবে। কেননা বাইক কেনার সঙ্গে সঙ্গে যুক্ত হবে গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ খরচ। তাই বিভিন্ন মডেলের মোটরবাইকের পার্থক্য, বাইকের দামের পার্থক্য, পার্টসের সহজলভ্যতা, এক্সেসরিজ, পারফরম্যান্স ইত্যাদি বিষয়ে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নিন। মোটরবাইক দেখার সময় জেনে নিন প্রতি লিটারে কত কিলোমিটার চলে।
নিয়মিত হাইওয়েতে চালানোর জন্য ভারি মোটরবাইক অর্থাৎ ১২৫ সিসি বা এর ওপরে কেনাটাই ভালো। এ ছাড়া কেনার সময় ইঞ্জিন, টিউব, অন্যান্য পাটর্স ভালো করে চেক করে কিনুন। সম্ভব হলে কেনার সময় একজন অভিজ্ঞ মিস্ত্রি সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেন।
মোটরবাইকের ডিস্ট্রিবিউটর ও শোরুমের খোঁজখবর
বাজাজ ব্র্যান্ডের একমাত্র ডিস্ট্রিবিউটর বা পরিবেশক উত্তরা মোটর্স লিমিটেড। সিঙ্গার ব্র্যান্ডের মোটরবাইকগুলোর একমাত্র পরিবেশক সিঙ্গার প্লাস।
হিরো হোন্ডা ও হোন্ডার মোটরবাইকের একমাত্র পরিবেশক এটলাস বাংলাদেশ লিমিটেড। ইয়ামাহা ব্রান্ডের বাইকগুলোর পরিবেশক কর্ণফুলী ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এবং টিভিএস ব্র্যান্ডের পরিবেশক টিভিএস মোটর্স বাংলাদেশ। ওয়ালটন ব্র্যান্ডের মোটরবাইক পাবেন ওয়ালটনের সব শোরুমে। ঢাকাসহ সারা দেশেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বিভিন্ন কোম্পানির মোটরবাইকের শোরুম। ঢাকা থেকে মোটরবাইক কিনতে চাইলে নিউ ইস্কাটন, মগবাজার, কাকরাইল, বিজয়নগর, মিরপুর-১, মিরপুর-১০, শেওড়াপাড়া, উত্তরা, জিগাতলা, গুলশান-১, বংশাল, মোহাম্মদপুরসহ বেশ কিছু জায়গায় মোটরবাইকের শোরুম আছে।
সরাসরি কোম্পানির শোরুম থেকে কিনলে কোম্পানি কর্তৃক প্রদত্ত সব সুবিধাই পাবেন আপনি।
মোটরবাইক কেনার পর করণীয়
মোটরবাইক কেনার কাজটি হয়ে গেলেই আপনার কাজ শেষ নয়। আপনি মোটরবাইক নিয়ে রাস্তায় নামবেন তার চাই প্রয়োজনীয় বৈধ কাগজপত্র। গাড়ি চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র করাতে আপনাকে যেতে হবে বিআরটিএ কার্যালয়ে। ১২৫ সিসি, ১৩৫ সিসি এবং ১৫০ সিসিতে সরকারি ফি এবং বিআরটিএসহ মোট খরচ পড়বে ১৭ হাজার টাকা।
১০০ সিসি এবং ৮০ সিসির ক্ষেত্রে এই খরচ ১৬ হাজার ৫০০ এবং ১০ হাজার ৫০০ টাকা। এ ছাড়া মোটরবাইকের নিরাপত্তার জন্য যে কোনো ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে গিয়ে ২২৫ টাকা দিয়ে এক বছরের জন্য একটি ইন্স্যুরেন্স করতে পারেন। এভাবে প্রতিবছর একই পরিমাণ অর্থ প্রদান করে ইন্স্যুরেন্স রিভিউ করে নিতে পারবেন।
নতুন বাইকের যত্নআত্তি
আপনার পছন্দের মোটরবাইক কেনার পর জেনে নিন নিকটস্থ সার্ভিস সেন্টারের খোঁজখবর। কেননা নতুন মোটরবাইকে ৮০০ থেকে ১১০০ কিলোমিটার চালানোর পর সার্ভিসিং করাতে হয়।
প্রথম সার্ভিসিং করানোর আগ পর্যন্ত বাইকের চালানোর গতি প্রতি ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার রাখুন। পরবর্তীতে প্রতি ২০০০ থেকে ২৫০০ কিলোমিটার চলার পর অথবা প্রতি তিন মাস পর পর নিয়মিত সার্ভিসিং করানো ভালো। এ ছাড়া আপনার মোটরবাইকে ভালোমানের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করুন। মোটরবাইকের সার্ভিসিংয়ের জন্য ঢাকার বাংলামোটর, উত্তরা, বংশাল এবং এয়ারপোর্টে বেশকিছু ভালোমানের সার্ভিস সেন্টার রয়েছে। ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু ভালোমানের সার্ভিস সেন্টার পাবেন।
সার্ভিস সেন্টারগুলোতে মোটরবাইক ডেকোরেশনের সরঞ্জামও পাওয়া যাবে। নিজের মোটরবাইক শুধু নিজেই চালান এবং নতুনত্ব ধরে রাখতে নিজেই যতœ নিন আপনার মোটরবাইকটির।
তরুণরা যারা মোটরবাইক কিনবেন বলে প্লান করেছেন তারা মোটরবাইক কেনার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন আপনার মোটরবাইকের সঙ্গে আর কী কী পাচ্ছেন। যেমন পেতে পারেন রেইনকোর্ট, ইঞ্জিন অয়েল, হেলমেট ইত্যাদি। নিজের পছন্দের ভালোমানের হেলমেট কিনতে পারেন দাম পড়বে ১৫০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত।
অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি কিনে নিন এবং মোটরবাইক চালানোর আনন্দ উপভোগ করুন।
আরও বিস্তারিত তথ্যের জন্য
বিস্তারিত তথ্য দরকার হলে ব্যাবহার করতে পারবেন মোটরবাইক কোম্পানির ওয়েবসাইট। এতে নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের মোটরবাইক সম্পর্কে আপডেট এবং বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে http://www.waltonbd.com এই ওয়েবসাইটে। হিরো হোন্ডা ব্র্যান্ডের মোটরবাইকগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য এবং আপডেট নিউজ পাওয়া যাবে http://www.herohonda.com এই ওয়েবসাইটে। বাজাজ ব্র্যান্ডের মোটরবাইক সম্পর্কে আপডেট যে কোনো নিউজ এবং বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে http://www.bajajauto.com এই ওয়েবসাইটে।
সিঙ্গার ব্র্যান্ডের মোটরবাইক সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যাবে http://www.singerbd.com এই ওয়েবসাইটে। ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের মোটরবাইক সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে http://www.yamaha.com.bd এই ওয়েবসাইটে।
বিভিন্ন ব্র্যান্ডের, মডেলের মোটরবাইক ও দরদাম
আমাদের দেশে বিভিন্ন কোম্পানির বিভিন্ন ব্র্যান্ডের, মডেলের মোটরবাইক পাওয়া যায়। বিদেশি মোটরবাইকের মধ্যে হিরো হোন্ডা, বাজাজ, সিঙ্গার, ইয়ামাহা, টিভিএস এবং দেশীয় মোটরবাইক ওয়ালটন ব্র্যান্ড তরুণদের পছন্দের শীর্ষে অবস্থান করছে। বাংলাদেশের বাজারে বাজাজের মডেলগুলো হল ডিসকভার, প্লাটিনা, পালসার।
সিঙ্গারের মডেলগুলোর নাম হল এসএম ভিক্টরি, এসএম সিডিআই। হিরো হোন্ডার মডেলগুলোর নাম হলো- সিডি ডন, সিডি ডিলাক্স, সিডি ডিলাক্স (অ্যালয় এন্ড সেল্ফ), স্পেন্ডার (নিউ স্ট্রিপ), স্পেন্ডার (অ্যালয় এন্ড নন সেল্ফ), স্পেন্ডার প্রো (সেল্ফ), স্পেন্ডার এনএক্সজি (সেল্ফ এন্ড অ্যালয়), প্যাশন প্রো (সেল্ফ ডিজিটাল মিটার), প্লিয়াসু, গ্ল্যামার (হাইড্রোলিক), সুপার স্পেল্ডার, সিবিজেডএক্স-থিম, হাঙ্ক (সিঙ্গেল ডিস্ক), হাঙ্ক (ডবল ডিস্ক)। এছাড়া হোন্ডার সুপরিচিত এবং জনপ্রিয় মডেলের সিডি ৮০ পিএকে মডেলটি পাওয়া যায়। ইয়ামাহার মডেলগুলোর নাম হল-ক্রুক্স, ওয়াইবিআর ১১০, এসএস, এন্টিকার, এসজেড ১৬ এক্স(ড্রাম ব্রেইক), এসজেড ১৬ এক্স (ডিস্ক ব্রেইক), এফজেড ১৬, এফজেড-এস, ফেজার, ওয়াইজেড এফআর-১৫ । টিভিএস-এর মডেলগুলো হল এপাচি আরটিআর, ফ্লেইম এসআর, স্টার স্পোটর্স, জিভ, মেট্রো ইএস।
ওয়ালটনের আছে এক্সপ্লোর, মার্স, ক্রুইজ, স্প্রিন্ট, ফিউশন, স্টাইলেক্স, লিও। মডেল ভেদে এগুলোর সিসি ও দরদাম কমবেশি রয়েছে। বাজাজের পালসার এলএস ১৩৫ সিসি এক লাখ ৫২ হাজার ৫০০, পালসার ভিটিএস-আই ১৫০ সিসি এক লাখ ৮৬ হাজার, ডিসকভার ১৫০ সিসি এক লাখ ৫৭ হাজার ৫০০, ডিসকভার ১০০ সিসি এক লাখ ৩৮ হাজার ৫০০, প্লাটিনা ১০০ সিসি এক লাখ ১৬ হাজার ৫০০, প্লাটিনা ১২৫ সিসি এক লাখ ৩০ হাজার এবং সিটি ১০০ সিসি এক লাখ ১৪ হাজার টাকা। বাজাজ মোটরবাইকের সঙ্গে দুটি মোবিল, চারটি ফ্রি সার্ভিস, দু’বছর ইঞ্জিন ওয়ারেন্টি, একটি চাবির রিং, টুলস প্রভৃতি ফ্রি পাওয়া যাবে। বর্তমানে বিদেশি মোটরবাইকের মধ্যে তরুণদের সবচেয়ে বেশি পছন্দ পালসার।
সিঙ্গারের এসএম ভিক্টরি ১২৫ সিসি এক লাখ ৭ হাজার ৯০০, এসএম সিটিআই ১০০-৩ সিসি ৭১ হাজার ৯০০ এবং ১২৫ সিসি ৪৫ হাজার টাকা। সিঙ্গারের বাইক কিস্তিতে পাওয়া যাবে। সেক্ষেত্রে অন্যদিকে হিরো হোন্ডার দামের পার্থক্য হবে সিডি ডন ১০০ সিসি এক লাখ ৪ হাজার টাকা। সিডি ডিলাক্স ১০০ সিসির দুটি মডেল যথাক্রমে এক লাখ ১২ হাজার ও এক লাখ ১৮ হাজার টাকা। স্পেন্ডার ১০০ সিসির বিভিন্ন মডেল ভেদে যথাক্রমে এক লাখ ১৫ হাজার, এক হাজার ১৯ হাজার, এক লাখ ২৪ হাজার, এক লাখ ২২ হাজার টাকা।
সেশন প্রো ১০০ সিসি এক লাখ ৩৩ হাজার, প্লেজার ১০০ সিসি এক লাখ ২১ হাজার, গ্ল্যামার ১২৫ সিসি এক লাখ ৪৩ হাজার ৫০০, স্পেন্ডার ১২৫ সিসি এক লাখ ৩৫ হাজার ৫০০, সিবিজেডএক্স -ট্রিম ১৫০ সিসি এক লাখ ৭৫ হাজার ৫০০, হাঙ্ক ১৫০ সিসি দুটি মডেল যথাক্রমে এক লাখ ৭৭ হাজার ৫০০ ও এক লাখ ৪৭ হাজার টাকা। হোন্ডার সিডি ৮০ পিএকে ৮০ সিসির দাম ৯৫ হাজার টাকা। এদিকে ইয়ামাহার ক্রুক্স ১০৬ সিসি এক লাখ ১০ হাজার, এস এস ১২৫ সিসি এক লাখ ৫৩ হাজার, ওয়াইবিআর-১১০ ১১০ সিসি এক লাখ ২৫ হাজার, এন্টিকার ১২৫ সিসি এক লাখ ৬৫ হাজার, এসজেড ১৬ এক্স (ড্রাম ব্রেইক) ১৫৩ সিসি এক লাখ ৬৫ হাজার, এসজেড ১৬ আর (ডিস্ক ব্রেইক) ১৫৩ সিসি এক লাখ ৭৩ হাজার, এফজেড-১৬ ১৫৩ সিসি এক লাখ ৯৫ হাজার, এফজেড- এস ১৫৩ সিসি দুই লাখ ১৫ হাজার, ফেজার ১৫৩ সিসি দুই লাখ ২৫ হাজার এবং ওয়াইজেডএফ আরআইএস ১৫০ সিসি ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। মোটরবাইকের বাজারে টিভিএসের মেট্রো ইএস ১০০ সিসি গাড়িটি এক লাখ ২৭ হাজার, এপাচি আরটিআর ১৫০ সিসি গাড়িটি এক লাখ ৯০ হাজার, জিভ ১১০ সিসি এক লাখ ২৮ হাজার ৫০০, স্টার স্পোর্ট ২৫ সিসি এক লাখ ৩২ হাজার ও ১০০ সিসি এক লাখ ২৫ হাজার। ফ্লেইমএস আর ১২৫ সিসি এক লাখ ৪৭ হাজার টাকা।
দেশীয় মোটরবাইক ওয়ালটনের এক্সপ্লোর ১৪০ সিসি এক লাখ ২৩ হাজার, ফিউশন ১২৫ সিসি এক লাখ ২ হাজার, কুইজ ১০০ সিসি ৮৩ হাজার ৭০০, লিও ৮০ সিসি ৭০ হাজার টাকা। বর্তমানে ওয়ালটনের প্রতিটি বাইকের মূল্যে ৫ শতাংশ ডিসকাউন্ট প্রদান করা হচ্ছে। ওয়ালটনের মোটরবাইকের সঙ্গে সব সময়ের জন্য গিফট প্রদান করা হয় ডিনার সেট। ওয়ালটন মোটরবাইক পাওয়া যাবে সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নিজস্ব শোরুম ও ডিলারদের কাছে।
মোটরবাইক নিয়ে আরো একটি লেখা :
তারুণ্যের মোটরবাইক
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।