সব কিছুর মধ্যেই সুন্দর খুঁজে পেতে চেষ্টা করি............
তারুণ্যের ম্যানার্সঃ
"আঠার বছর বয়স
কি দুঃসহ স্পর্ধায় নেয় মাথা তুলবার ঝুঁকি
আঠার বছর বয়সেই অহরহ
বিরাট দুঃসাহসেরা দেয় যে উঁকি। "
তারুণ্যের কবি সুকান্ত এভাবেই যে তারুণ্যের রূপ একেছেন তার অমর সৃষ্টিশীলতায়, তার প্রতিধ্বনিই যেন বেজে উঠেছে তারুণ্যের দীপ্ত পদচারণায়। যুগে যুগে এই তরুণরাই করেছে সব অসম্ভবকে সম্ভব। তারুণ্যের হাত ধরেই বসন্ত হেটে যায় গর্বিত গরীমায়। একটা সময় ছিল যখন আমাদের শিল্প-সাহিত্য, রাজনীতির সৃষ্টিশীলতায় নেতৃত্ব দিয়েছে তরুণরা, ভাষার দাবীর পথ ধরে স্বাধিকারের বজ্র কঠিন শপথও ধ্বনিত হয়েছিল তরুণদের স্বরেই।
তবু সময় যে বয়ে যায়। অনেকেই আজকের তরুণদের মাঝে যেন তারুণ্যের অস্তমিত সূর্যকে আড়ালে উঁকি মারতে দেখেন।
তারুণ্য জীবনের এমন একটা সময় যখন সবকিছুকে জয় করবার এক অদম্য সাহস কাজ করে, সব বাধাকে তীব্র জোয়ারে ভেঙ্গে ফেলবার প্রত্যয় দানা বাঁধে। তারুণ্যের এই সৃষ্টিশীল উন্মুক্ততাকে সবাই সমীহ করে, শ্রদ্ধা করে। কিন্তু তারুণ্যের এই বাধভাঙা জোয়ারে অনেক তরুণই আজকাল নিজেদের ভাসিয়ে দেন।
অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা আর পরমত সহিষ্ণুতাকে তারা থোড়াই কেয়ার করেন। তারুণ্যের নিজস্ব যে স্বকীয়তা আছে তাকে বেমালুম ভুলে গিয়ে, অনেক কিছু করবার যে আকাঙক্ষা তাকে ভিন্নপথে টেনে নিয়ে আজ অনেকেই এই বয়সের রঙটাকে ফিকে করে ফেলেছেন। এই সময়টা যেমন সব কিছু ভাঙবার বয়স ঠিক তেমনি অনেক নতুন কিছু গড়বার বয়সও বটে। অথচ গড়ার চেয়ে ভাঙার প্রতিযোগিতাই যেন কারো কারো মাঝে ক্রমশ: বেড়ে চলেছে। আর তাই তরুণদের প্রতি সকলের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তিত হয়ে নেতিবাচক দিকে মোড় নিতে শুরু করেছে।
এজন্য অনেকাংশেই দায়ী আজকের কিছুকিছু তরুণদের আচরণ।
শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস, মাদকের করাল গ্রাস, পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অন্ধ আতিথেয়তা তার গৌরবোজ্জ্বল সোনালী অধ্যায়ের সূর্যকে মেঘের কালো চাঁদরে ঢাকতে শুরু করেছে। বৃক্ষ যেমনি তার ফল দিয়ে পরিচিতি পায় তদ্রুপ একজন ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব, মনন প্রকাশিত হয় তার আচরণের মধ্য দিয়ে। আচরণগত পার্থক্যই আমাদেরকে বাকী সবার থেকে পৃথক মর্যাদা দেয়। নিজস্ব স্বকীয়তার পরিচয় বহন করে।
কিন্তু আধুনিক "গ্লোবাল ভিলেজ" এর যুগে বর্তমান তরুণদের আচরণ ও জীবনযাত্রা প্রণালী নিয়ে অনেকেই তীর্যক মন্তব্য করেন, বাঁকা দৃষ্টিতে তাকান। যেই তরুণদের হাতে রচিত হয়েছে অনেক বিজয় গাঁথা, তাদের হৃত মর্যাদা পুনরুদ্ধারে তাদের উচিত হবে স্বীয় আচরণের পরিবর্তন ঘটানো এবং অবশ্যই সকলের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করা। তবে এর জন্য আপনার প্রয়োজন হবে না কোনো উচ্চশিক্ষাগত যোগ্যতা বা প্রশিক্ষণের। কেবল নিজেকে অন্যের কাছে মার্জিতভাবে তুলে ধরার এবং ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করার একাগ্র প্রয়াসই যথেষ্ট। অন্যের কাছে ব্যক্তির নিজস্ব ইমেজ তৈরি হয় তার আচরণের মধ্যে দিয়ে।
জীবনের প্রতিটি পর্যায়েই তাই ব্যক্তিকে সচেতন হতে হয় আচরণগত দিকটি নিয়ে। তারুণ্যের অনেক বর্ণিল রঙ যেন আপনার আচরণে ম্লান না হয়ে পড়ে তার জন্য কিছু পরামর্শঃ
০ একজন ব্যক্তি সম্পর্কে অন্যের একটি প্রাথমিক ধারণা তৈরি হয়ে যায় প্রথম দর্শনেই। এক্ষেত্রে পোশাক একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। তাই আপনাকে পোশাক নির্বাচনের সময়ে সচেতন হোন। স্মার্ট হওয়া মানে এই নয় যে, হাল আমলের ফ্যাশনই আপনাকে অনুসরণ করতে হবে বরং কোন ধরনের পোশাক বা রঙ আপনাকে মানায় সে বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি দেয়াই বাঞ্চনীয়।
এমন কিছু পরবেন না যা আপনার ব্যক্তিত্বের সাথে মানানসই নয় কিংবা অন্যের কাছে আপনাকে হাস্যকর করে তুলতে পারে। অন্যের চোখ দিয়ে নিজেকে দেখুন।
০ গুরুজন বা মুরব্বিদের দেখলে অবশ্যই সালাম/ আদাব দিন। পরিচিতজন হলে থেমে স্মিতহাস্যে তার কুশল জিজ্ঞেস করুন। দেখেও না দেখার ভান করবেন না।
০ অন্যের সাথে কথা বলার সময় যথাসম্ভব মার্জিত ভাষায় কথা বলুন। অযথা উচ্চস্বরে কথা বলবেন না। স্যাটেলাইটের কল্যাণে অনেকই কথোপকথনে হিন্দী এবং এফ এম কালচারের প্রভাবে অহেতুক বাংলা ও ইংরেজি ভাষার মিশ্রণ করেন। এ ধরনের অভ্যাস পরিত্যাগ করুন। ইংরেজি শব্দ চয়নে ভুল-ভ্রান্তির বিষয়ে সচেতন হোন।
০ কোনো বিষয়ে যখন গুরুজনরা কথা বলেন তখন চুপচাপ থাকাটাই শোভন। তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। যদি কোনো বিষয়ে আপনার মতামত দিতে চান তবে আগে বিনীতভাবে অনুমতি নিয়ে নিন।
০ যেকোনো পরিমন্ডলেই আপনার নিজস্ব অভিমতকে অন্যের উপর চাপিয়ে দেবেন না। এতে করে আপনি অন্যের বিরক্তির কারণ হতে পারেন।
বরং অন্যের মতামতকেও প্রাধান্য দিন এবং আপনার ধারণাটিকে যুক্তি দিয়ে গ্রহণযোগ্য করে তুলুন।
০ শত ব্যস্ততার মাঝেও পরিবারকে যতটুকু সম্ভব সময় দেয়ার চেষ্টা করুন। আপনার প্রতি পরিবারের সদস্যদেরও অধিকার রয়েছে- এ বিষয়টি মাথায় রাখুন।
০ সবাই মিলে যখন একত্রে টিভি দেখছেন, তখন রিমোট কন্ট্রোলের একচ্ছত্র মালিকানা আপনার হাতে নিয়ে নেবেন না। বরং অন্যদের পছন্দের চ্যানেলগুলোও তাদের দেখতে দিন।
বিশেষ করে বাচ্চারা যেহেতু কার্টুন দেখতে পছন্দ করে তাই তাদেরকে বিকেল বেলাটা ছেড়ে দিন। বয়োজ্যেষ্ঠরা যেহেতু খবর শুনতে পছন্দ করেন তাদেরও সেই সুযোগটা দিন।
০ যেকোনো পাবলিক প্লেসে ফোনে কথা বলার সময় গলার স্বর নিচু রাখুন। ফোনে আপনার ব্যক্তিগত কথোপকথন যেন অন্যের বিরক্তির উদ্রেক না ঘটায় সে বিষয়ে সতর্ক থাকুন।
০ বাসার ফোনে কথা বলার সময়ও বিরতিহীন গাড়ি ছাড়বেন না।
পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের দিকটিও লক্ষ্য রাখুন। তাছাড়া দীর্ঘক্ষণ ফোনটি এনগেজড থাকলে হয়ত বাইরের কেউ জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারবে না।
০ মাদকের করাল গ্রাস থেকে নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখুন। যারা একান্তই ধূমপান করেন তারা গুরুজন বা বায়োজ্যেষ্ঠদের সামনে ধূমপান থেকে বিরত থাকুন। মুখোমুখি অবস্থায় পড়ে গেলে দ্রুত তা সরিয়ে ফেলুন।
০ বাস-ট্রেনসহ যেকোনো পাবলিক পরিবহনে যাতায়াতের সময় বৃদ্ধ কিংবা বায়োজ্যেষ্ঠ-গুরুজন শ্রেণীর কেউ আপনার সামনে থাকলে তাকে আপনার আসনটিতে বসতে দিন। মনে রাখবেন এই সামান্য শ্রদ্ধাবোধটুকু আপনার কাছে প্রাপ্য। একইভাবে নারী-পুরুষ সবাই সমান এই ধারণাতে বদ্ধমূল না থেকেও সম্মুখে ভীড়ে দাঁড়িয়ে থাকা মহিলাকেও বসার সুযোগটি দিতে পারেন। কারণ একজন পুরুষ যত সহজে ভীড়ের মধ্যে দাঁড়াতে পারেন একজন মহিলার জন্য তা হয়ত অনেকটাই বিড়ম্বনার বা বিব্রতকর।
০ পাড়ায়/মহল্লায়, রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে আড্ডা দেয়ার অভ্যাস পরিত্যাগ করুন।
গুরুজনরা এই বিষয়টিকে খুবই বাঁকা চোখে দেখেন। এছাড়া আপনার দলবেধে আড্ডা দেয়া কারো যাতায়াতের বিঘœ ঘটাতে পারে কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্ট করতে পারে। একইভাবে স্কুল-কলেজগামী ছাত্রীদের উত্যক্ত করাও চরম অভদ্রতার শামিল।
০ নিজেদের আচরণ ও কথাবার্তায় শালীনতা বজায় রাখুন। নিজেকে আকর্ষণীয় করে তুলবার জন্য এমন কোনো আচরণ করবেন না যা দৃষ্টিকটু।
যে কোনো প্রকাশভঙ্গিকে সংযত রাখুন।
মনে রাখবেন কাউকে স্নেহ, শ্রদ্ধা জানালে আপনিও পাবেন স্নেহ, সম্মান। অন্যকে সম্মানীত করেই নিজেকে সম্মানীয় করা যায়। যিনি যত বেশী বড় মনের মানুষ তিনিই ততবেশী পারেন কাউকে সম্মানীত করতে। একজন ছোট মনের মানুষ কখনো কাউকে সম্মানীত করতে পারেননা এবং অন্যের চোখে নিজেও সম্মানীত নন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।