আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তারুণ্যের স্বপ্নযাত্রা



মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীর গণ্ডি পেরিয়ে অনেকেই শুধুমাত্র সঠিক সিদ্ধান্ত ও দিক নির্দেশনার অভাবে পরবর্তী জীবণের প্রকৃত লক্ষে পৌছাতে পারেনা। অভিবাবকদের আশা আকাশ সমান উঁচু হলেও দিশেহরা এই সকল তরুণ খুঁজে পায়না তাদের সঠিক গন্তব্য। সাফল্য তাদের জীবণ থেকে দূরে সরে যায়। চুয়েট স্কুল এন্ড কলেজ থেকে পাশ করা এমনই এক মেধাবী শিক্ষার্থী আরিফ। সে গত বছর (২০০৯ সালে) জিপিএ পাঁচ পেয়ে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তির্ণ হয়েছিল।

বাবা-মার ইচ্ছা ছিল ডাক্তার হবে, কিন্তু ছোটবেলা থেকে তার নিজের শখ ছিল ইঞ্জিনিয়ার হবার। বাবা-মার মন খুশি রাখতেই সে ভর্তি হয়েছিল মেডিকেল এর কোচিং সেন্টার রেটিনাতে। কিন্তু আসন সংখ্যার তলনায় শিক্ষার্থী সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ার কারণে নিশ্চিন্ত হতে পারছিলনা। তাই নিজের ইচ্ছাতে ভর্তি হয়েছিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর কোচিং সেন্টার অমেকা(ঙসবপধ) তে। কথায় বলে যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যে হয়, ফলসরূপ দুই নৌকায় পা দেওয়ার মতই অবস্থা হয়েছে তার।

কোথাও ভর্তি হতে না পেরে এ বছর সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য কোচিং করছে। এখনও জানেনা তার ভাগ্যে কি ঘটবে। স্কুল অথবা কলেজে পড়–য়া এরকম অসংখ্য শিক্ষার্থীই জানেনা তাদের ভবিষ্যত লক্ষ্য কি হওয়া উঁচিৎ। অনেকেরই শখ থাকে ডাক্তার অথবা ইঞ্জিনিয়ার হবার। কিন্তু আধুনিকতার এই যুগে একজন মানুষের জীবনের সাফল্য শুধু ডাক্তার আথবা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।

উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পার হয়েই শিক্ষার্থীরা কোচিং সেন্টারগুলোতে ছুটে। বিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষার্থী শুধুমাত্র মেডিকেল অথবা ইঞ্জিনিয়ারিং এর কোচিং করে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেনা। একই সাথে সে করে মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং এর কোচিং। অনেকে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়গুলেতেই ভর্তি হবার স্বপ্ন দেখে এর জন্য নিরন্তর চেষ্টা চালায়। কিন্তু এর পরও কি পায় তারা সাফল্যের দেখা? শুধু শিক্ষার্থীরাই নয় অভিবাবকরাও এসব বিষয় নিয়ে থাকে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ।

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় চাকরির বাজারে যে সকল বিষয়ের চাহিদা এবং সুযোগ বেশি থাকে মেধিাবী শিক্ষার্থীরা সেই বিষয়টাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। শিক্ষার্থীও ব্যাক্তিগত পছন্দ তখন উপেক্ষিত হয়। কিন্তু সেই শিক্ষার্থীই যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরাশুনার পাঠ শেষ করে বের হয় তখন পরিস্থিতি হয় ভিন্ন। দেখা যায় চার থেকে পাঁচ বছর পর সেই বিষয়ের চাকরির দর অনেক নিচে নেমে গেছে। তখনই শিক্ষার্থী ভোগে হতাশায় ।

আবার এমনও দেখা গেছে যে চাকরির বাজারে অনেক চাহিদা থাকা সত্বেও অনেকে সে বিষয় পড়তে চায়না। যেমন, কৃষি অথবা ভেটেরেনারি একটি সম্ভবনাময় সাবজেক্ট এবং এর চাকরির বাজার ভাল হওয়া সত্বেও অনেকেই একে উচ্চশিক্ষার বিষয় হিসেবে নিতে চায়না। এর কারণ হিসেবে অজ্ঞতাকেই দায়ী করা যায়। স¤প্রতি উচ্চ শিক্ষার জন্য বেশ কিছু নতুন বিষয় এসে যোগ হয়েছে। অনেকেই সে সব বিষয় সম্পর্কে জানেনা।

যেমন, ফ্যাশন ডিজাইনিং একটি ভাল এবং সম্ভবনাময় বিষয় হওয়া সত্বেও অনেক অভিবাবক উচ্চশিক্ষার বিষয় হিসেবে এ সাবজেক্টকে পছন্দ করেনা। এসব কিছু অনুধাবন করেই চুয়েটের এক দল তরুণ হাতে নিয়েছে ব্যাতিক্রমী এক উদ্যোগ। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের পরবর্তী জীবনের সঠিক দিক নির্দেশনা দেয়ার জন্য চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের(চুয়েট) সংগঠন ‘ডিবেটিং সোসাইটি’র উদ্যোগে শুর হয়েছে বিশেষ ক্যম্পেইন প্রোগ্রাম ‘পথ প্রদর্শন’ । ছয় মাস ব্যাপী এ ক্যাম্পেইনে চুয়েটের ‘ডিবেটিং সোসাইটি’র পক্ষ থেকে একশটিরও বেশি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীদের দিক নির্দেশনা দেয়া হবে। গত ২৫.০৯.২০১০ তারিখ বিকাল ৩ টায় চুয়েট স্কুল এন্ড কলেজে এই ক্যাম্পেইন এর যাত্রা শুরু হয়।

ক্যাম্পেইনটির শিরোনাম হল, ‘স্বপ্নবাজ তারুণ্যের স্বপ্ন যাত্রা “পথ প্রদর্শন” ’। ক্যাম্পেইনে শিক্ষার্থীদের সঠিক দিকনির্দেশনা দেবার জন্য তৈরী হয়েছে বিশেষ নিবন্ধ। এ ছাড়াও প্রেজেন্টেশনের জন্য রয়েছে কম্পিউটারাইজড ডকুমেন্ট। প্রজেক্টরের মাধ্যমে বিষয়গুলো উপস্থাপিত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের সামনে। বোঝার সুবিধার্থে প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহৃত হয়েছে কম্পিউটার গ্রাফিক্স।

ক্যাম্পেইনে অংশ নেয়া উচ্চমাধ্যমিক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মুনির জানায়, এইচএসসি পাশ করে কি করব কখনও চিন্তা করিনি। আরও পড়াশুনা করব কিনা এ চিন্তা মাথায় আসেনি এতদিন। এই ক্যস্পেইনে এসে মনে হচ্ছে নতুনভাবে সবকিছু নিয়ে ভবা উঁচিৎ। অন্তত এটুকু বুঝতে পারছি যে আমাদের সামনে কঠিন একটি সময় অপেক্ষা করছে। বিশ্ববিদ্যালয় অনেক বড় একটি যায়গা।

সেখানে ভাল যায়গায় যাওয়ার জন্য একটু প্রস্তুতি দরকার। ক্যাম্পেইনগুলোতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপকের দায়িত্বে আছে চুয়েট ‘ডিবেটিং সোসাইটি’র সাংগঠনিক সম্পাদক রকি বৈদ্য ও সহ অর্থ-সম্পাদক মরিয়ম বিন্তে আজিজ। ক্যম্পেইন প্রোগ্রাম গুলোতে চুয়েট স্কুল এন্ড কলেজ সহ অন্যান্য স্কুল-কলেজের কবিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর স্বতস্ফুর্ত উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। অনুষ্ঠানকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করে এই ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা হয়। উপস্থাপকরা প্রজেক্টরে প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে দিক নির্দেশনা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

শিক্ষার্থীদের এইচএসসি পরবর্তী শিক্ষা হিসেবে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন কোন বিষয় পরার সুযোগ আছে সে বিষয়ে ধারণা দেয়ার পাশাপাশি তারা যাতে পরাশুনা থেকে ছিটকে না পড়ে তার ব্যপারে পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা দেয়া হয়। এ ছাড়াও শিক্ষার্থীদের পরবর্তী জীবনের কর্মক্ষেত্র কোথায় হতে পারে তার ব্যপারেও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। এ ক্ষেত্রে বিজ্ঞান, ব্যবসা ও মানবিক বিভাগ গুলোকে পেশাগত ক্ষেত্রের বিভিন্নতা অনুসারে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে প্রবন্ধ উপস্থাপনার মাধ্যমে বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়। এ প্রসঙ্গে চুয়েটের ‘ডিবেডটং সোসাইটি’র সভাপতি খায়রুল বাসার জাহিদ বলেন, ‘মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে দেশের শিক্ষার্থী সংখ্যা অনেক । কিন্তু সঠিক দিক নিদের্শনার অভাবে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীই অকালে ঝড়ে পড়ে।

সবার মধ্যে একটি ধারনা কাজ করে ডাক্তার অথবা ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে। এটা ঠিক না, পরাশুনা করে এসব ছাড়াও অনেক সম্মান জনক কাজ করার আছে। আমরা দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে এই নির্দেশনাই দেব। ’

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।