বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের বীজ রোপিত হয় পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর রাজনীতিতে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী জামায়াতের পুনর্বাসনের মাধ্যমে। ১৯৯৯ সালের মার্চ মাসে যশোরে উদীচীর সম্মেলনে বোমা হামলার মাধ্যমে প্রকাশ্যে তারা জিহাদ শুরুর ঘোষণা দেয়। তারপর জামায়াত-বিএনপি সরকারের ২০০১-২০০৬ মেয়াদে জঙ্গিদের ব্যাপক উত্থান ও বিস্তার ঘটে বাংলাদেশে। গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও প্রগতির অগ্রায়নের পথে বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বড় বাধা ও চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে ধর্মান্ধতায় আবিষ্ট এই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ। আধুনিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক সভ্যতার যুগে সন্ত্রাস ও আত্দঘাতী বোমাবাজি দ্বারা রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়া সম্ভব নয়, সেটি এই জঙ্গি নেতারা কতটুকু বোঝে জানি না।
কিন্তু তারাও রক্ত-মাংসের মানুষ। রাষ্ট্রক্ষমতার মধুর স্বাদ পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা মনে জাগা কোনো অস্বাভাবিক কিছু নয়। তাইতো এখন পত্রিকায় দেখছি, নতুন গজিয়ে ওঠা হেফাজতে ইসলাম আগামী নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে জোটে যোগ দিয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হবে। যদিও এতদিন তারা বলে আসছে, তাদের রাজনৈতিক কোনো আকাঙ্ক্ষা নেই। কথা ও কাজের মধ্যে অমিল ইসলাম ধর্মের পরিচয় নয়।
এদের আকাঙ্ক্ষা আছে, কিন্তু সক্ষমতা নেই। তাই নিজেদের অক্ষমতা ঢাকতেই আধুনিক বিজ্ঞান ও যুক্তির পথ পরিহার করে তারা ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে চায়। কিন্তু এদের সমস্যা হলো, প্রকৃত ধর্মের ধারেকাছেও তারা নেই, আবার একটি দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর মনস্তাত্তি্বকতা বোঝার সক্ষমতাও তারা রাখে না। যার ফলে মানুষের মন জয় করে, মানুষের সমর্থন নিয়ে কোনো দিন তারা রাষ্ট্রক্ষমতায় আসতে পারবে না। যার কারণে তারা সন্ত্রাস ও ভুল জিহাদি তত্ত্বের পথ ধরে শর্টকাট পথে ক্ষমতায় যেতে চায়।
আর নয়তো নিদেনপক্ষে, রাষ্ট্রক্ষমতায় যারা থাকে তাদের ঘাড়ে সওয়ার হয়ে নিজেদের মতামতকে রাষ্ট্রের ওপর চাপিয়ে দিতে চায়। তাদের মতের বিরুদ্ধবাদীদের হত্যা ও নিশ্চিহ্ন করার কাজে লিপ্ত হয়। এই কাজটি তারা বেশি করার সুযোগ পায় যখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকে প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দল। এ কথার একটি জলন্ত উদাহরণ পাকিস্তান। এই জিহাদি সন্ত্রাসীরা একটা গ্লোবাল ও আঞ্চলিক নেটওয়ার্কের আওতায় এখন কাজ করছে।
যদিও একেক দেশে তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য একেকরকম।
২০০১-২০০৬ মেয়াদে বাংলাদেশে বিএনপি নেতৃত্বাধীন যে সরকার ছিল তার ভেতরে ওই জঙ্গিবাদীদের রাজনৈতিক ফ্রন্টের উপস্থিতির কারণে বাংলাদেশে তখন সন্ত্রাস ও জঙ্গি তৎপরতার ব্যাপক বিস্তার ঘটে। জঙ্গিদের রাজনৈতিক ফ্রন্টের প্রভাবে ওই সময় বিএনপি সরকার একটা গ্রহণযোগ্য প্রগতিশীল নারীনীতি তৈরি করতে পারেনি। একই কারণে তাদের তৈরি শিক্ষানীতিটি ছিল পশ্চাৎপদতা ও ধর্মান্ধতার আদর্শে পরিপূর্ণ। কিন্তু দেশের প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীদের প্রবল বাধার কারণে ওই শিক্ষানীতি বিএনপি বাস্তবায়ন করতে পারেনি।
২০০১-২০০৬ সালের পত্রিকাগুলো খুললেই ওই সময়ে বাংলাদেশে জঙ্গিদের ভয়াবহ তৎপরতার প্রমাণ পাওয়া যাবে। ওই সময়ে অফিস, আদালত, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, যেগুলোকে তারা তাদের আদর্শ বাস্তবায়নের পথে শত্রু মনে করেছে সেগুলোর ওপর গ্রেনেড ও বোমা হামলা চালিয়েছে। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা হয়েছিল সিলেটের মাজার প্রাঙ্গণে। তিনি অল্পের জন্য বেঁচে গেলেও তার সঙ্গের তিনজন নিহত হন।
পাকিস্তানি জামায়াতিদের অনুসরণে বাংলাদেশি জামায়াতের ছত্রছায়ায় ওই উগ্রপন্থি ইসলামধারীরা আহমদীয়া সম্প্রদায়ের মসজিদে বোমা হামলা চালিয়েছে।
তাদের মসজিদ দখল করার পাঁয়তারা করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার চেষ্টা করেছে। বাংলাদেশে উগ্রবাদী জঙ্গিদের টার্গেট আওয়ামী লীগসহ প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল এবং উদারমনা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। এ পর্যন্ত এদের ওপরই ওই উগ্রবাদীদের সব আক্রমণ হয়েছে। বিএনপি, জামায়াত বা তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠান বা দলের ওপর আজ পর্যন্ত ধর্মান্ধ জঙ্গিদের কোনো আক্রমণ হয়নি। এতে বাংলাদেশে ওই ধর্মান্ধ উগ্র জঙ্গিদের লক্ষ্য সম্পর্কে কোনো সন্দেহ থাকে না।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ২৩ বছরের সংগ্রাম ও একাত্তরে ৩০ লাখ মানুষের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় দর্শন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় উদার গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থা। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। আর এখনো আওয়ামী লীগই মুক্তিযুদ্ধের দর্শনের মূল প্রবক্তা, অবলম্বন ও শক্তি। বাংলাদেশে জঙ্গিদের আদর্শ ধর্মীয় রাষ্ট্র, শরিয়া আইন, নারীদের ঘরে আবদ্ধ করার মতো প্রতিক্রিয়াশীল নীতি বাস্তবায়নের পথে প্রধান বাধা রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আওয়ামী লীগ। আর এ কারণেই জঙ্গিদের মূল টার্গেট আওয়ামী লীগ ও তার নেত্রী শেখ হাসিনা।
বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ও আদর্শ থেকে অনেক দূরে অবস্থান করলেও স্বতন্ত্রভাবে নিজেদের জায়গা থেকে বাংলাদেশ একটা ঘোর জঙ্গিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত হোক তা হয়তো তারা মনেপ্রাণে চায় না। কিন্তু ক্ষমতা আরোহণের রাজনীতিতে বিএনপি ওই উগ্র-জঙ্গি সংগঠনগুলোর রাজনৈতিক ফ্রন্ট জামায়াত ও অন্যান্য তালেবানপন্থি ইসলামিক ঐক্যজোটসহ অন্য রাজনৈতিক ইসলামিক দলগুলোর সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধছে। আর এ সব জঙ্গি সংগঠনের বেশিরভাগের এবং জামায়াতের মূল ভিত্তি পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। তাই বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে জঙ্গি তৎপরতা বেড়ে যায়। পাকিস্তানের জঙ্গিরা অবাধে বাংলাদেশে চলাফেরা করে।
যার ফলে ভারতের অভ্যন্তরে জঙ্গি তৎপরতা চালানোর পর ওই সব জঙ্গি অনেক সময় বাংলাদেশে চলে আসে। ফলে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের অবনতি ঘটে।
গত সপ্তাহে ভারতের 'দ্য ইন্ডিয়ান এঙ্প্রেস' পত্রিকায় বাংলাদেশ সমপর্কে একটি নিবন্ধ ছাপা হয়েছে। উক্ত নিবন্ধে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, আগামীতে বাংলাদেশে জামায়াত-বিএনপি আবার ক্ষমতায় এলে আগের মতো জঙ্গিবাদের ভয়ানক উত্থান ঘটবে। তেমন পরিস্থিতে ভারত এবং বাংলাদেশ উভয়ের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও ভৌগলিক অখণ্ডতার জন্য ভয়ানক হুমকি সৃষ্টি করবে।
বিশ্লেষকদের ধারণা এই উগ্রবাদী শক্তি যদি বিএনপির কাঁধে চড়ে শক্তি অর্জন করে আওয়ামী লীগকে একবার নিশ্চিহ্ন অথবা অকার্যকর করে দিতে পারে তাহলে বিএনপিও আর বর্তমান বিএনপির জায়গায় থাকতে পারবে না, হয় বিএনপিকেও ওই অপশক্তি নিশ্চিহ্ন করবে, নয়তো জামায়াত ও ইসলামী ঐক্যজোটের সঙ্গে মিলেমিশে বিএনপি নিজেদের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব হারাবে। তখন বাংলাদেশের অবস্থা কেমন হবে তা বোঝার জন্য বর্তমানের পাকিস্তান এবং ২০০১ আগের তালেবানি আফগানিস্তানের দিকে তাকালেই তা বোঝা যাবে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে তাদের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে। ফলে অনেক জঙ্গি নেতা এখন জেলে আবদ্ধ আছে। আর পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়্যবা ও জইশী মোহাম্মাদের মতো জঙ্গি সংগঠনের নেতাদের কিছু এখানে গ্রেফতার হয়েছে, কিছু পালিয়ে গেছে।
জঙ্গি দমনে সরকারের সাফল্য দেশ-বিদেশে প্রশংসিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডেপার্টমেন্টের বার্ষিক রিপোর্টে এই সাফল্যের প্রশংসা করা হয়েছে। কিন্তু সরকারের শেষ সময়ে পুরনো জঙ্গিরা কেউ আগের নামে, কেউ নতুন নামে ফের ওঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা শুরু করেছে। ইতোমধ্যে র্যাব ও পুলিশ আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রসহ দুই-তিনটি গ্রুপের সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। বিগত দুই সপ্তাহে এ সম্পর্কে পত্রিকায় আশঙ্কাজনক অনেক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, যার দু'একটি এখানে উল্লেখ করছি।
'জঙ্গিদের হাতে যত আধুনিক অস্ত্র, জেএমবির আদলে নতুন সংগঠন বিইএম' (বাংলাদেশ প্রতিদিন ২৪ আগস্ট)। 'থানার অস্ত্র লুটসহ ব্যাপক নাশকতাই লক্ষ্য, আনসারুল্লাহর ৯ জঙ্গি গ্রেফতার' (প্রাগুক্ত-২৬ আগস্ট)। 'আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি জসিম উদ্দিন জেএমবিরও প্রশিক্ষক ছিল' (প্রথম আলো ১৮ আগস্ট)। এই আনসারুল্লাহ বাংলা টিম মূলত পাকিস্তান থেকে পরিচালিত হয়। তারা সশস্ত্র জিহাদ করে আল-কায়েদার আদর্শে বাংলাদেশকে শরিয়া রাষ্ট্র বানাতে চায়।
সরকারের এখন শেষ সময় এবং জাতীয় নির্বাচন আসন্ন। এ মুহূর্তে জঙ্গি গাত্রোত্থানের যে প্রচেষ্টা তার বহুবিধ কারণ থাকতে পারে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় মেয়াদের শেষ প্রান্তে, সঙ্গত কারণেই সরকারের ওপর চারদিক থেকে একটা বাড়তি চাপ আসে। এই সুযোগটা জঙ্গিরা নিতে চাইবে, এটাই স্বাভাবিক। তাই দীর্ঘদিন দমনে থাকার পর এই সময়টাকে তারা সঠিক সময় মনে করেছে নিজেদের পুনর্গঠিত করার জন্য।
এতে তাদের অনেক লাভ। প্রথমত, জঙ্গিদের রাজনৈতিক গুরু জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের কয়েকজন এখন যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার অপেক্ষায়। আইন ও আদালতের সব প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর জামায়াত নেতাদের ফাঁসির আদেশ কার্যকর করা সময় যদি এসে যায়, তখন জঙ্গিদের দ্বারা আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি হতে পারে, এই আশঙ্কায় যদি সরকার পিছপা হয় তাহলে হয়তো এ যাত্রায় তাদের রাজনৈতিক নেতাদের বেঁচে যাওয়ার একটা সুযোগ আগামীতে এলেও আসতে পারে। দ্বিতীয়ত. জঙ্গিদের প্রতি সহানুভূতিশীল রাজনৈতিক দল এবং তাদের আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক নেটওয়ার্কের নেতৃত্বের কাছে একটা বার্তা দেওয়া যে, তাদের শক্তি এখনো অটুট আছে এবং আগামী দিনগুলোতে যেন সঠিকভাবে তাদের মূল্যায়ন করা হয়। তৃতীয়ত. যেভাবে বা যে ফর্মুলায় আগামী নির্বাচন হোক না কেন, তারা যে একটা শক্তি, এখনো টিকে আছে সেটি সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে জানিয়ে দেওয়া।
জামায়াত-বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে একরকম, আর না করলে অন্যরকম ভূমিকায় যেতে পারে এসব অস্ত্রধারী উগ্র সংগঠনগুলো। তবে জঙ্গিদের এই গাত্রোত্থানের খবরের মাধ্যমে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়েছে, বিগত সাড়ে চার বছর বর্তমান সরকার এদেরকে দমন করে রাখতে পারলেও তাদের আন্তর্জাতিক সংযোগ ও বিদেশ থেকে অস্ত্র ও অর্থের আগমন বন্ধ করতে পারেনি। আগামী জাতীয় নির্বাচন কেমন হবে এবং তার ফলের ওপর নির্ভর করছে আগামী দিনে বাংলাদেশে এই জঙ্গিদের অবস্থান ও ভূমিকা কেমন হবে। সম্প্রতি পাঁচটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে জামায়াত-হেফাজতের সমর্থনে বিএনপির প্রার্থী বিপুল ভোটে জয় পেয়েছে। তবে তিন-সাড়ে তিন মাসের মাথায় অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনে বহুমুখী জাতীয় ইস্যুতে কোন দলের অর্জন/ব্যর্থতা কতটুকুু তার ওপর নির্ভর করবে ভোটের হিসাব-নিকাশ।
বাংলাদেশকে বলা হয় জোয়ার- ভাটার দেশ। একদিন আগে বা কোনো একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা মানুষের মনস্তাত্তি্বকতা পরিবর্তনে বড় ভূমিকা রাখে, যা আগেও দেখা গেছে। তেমন কিছু হবে না, তা তো এখনো নিশ্চিত করে বলা যায় না। নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে দুই প্রধান দল এখনো বিপরীতমুখী অবস্থানে আছে। যার কারণে নির্বাচন নিয়ে মানুষের মনে এক ধরনের শঙ্কা কাজ করছে এটাও ঠিক।
তবে নৈরাজ্যবাদীদের বাইরেও একটা গ্রুপ আছে, তারা মনে করে নির্বাচন সঠিক সময়ে হবে। জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল ২৩ আগস্ট দুই নেত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন এবং আশা প্রকাশ করেছেন দুপক্ষের মধ্যে একটা সমঝোতা হবে এবং নির্বাচন সঠিকভাবে হবে। নির্বাচনে দেশের মানুষ যে দলকে বিজয়ী করবে তা সবাইকে মেনে নিতে হবে। গণতন্ত্র মানলে মানুষের ভোটের মূল্যকে স্বীকৃতি দিতে হবে। কিন্তু এটাও ঠিক, নির্বাচনের ভোটের ফল সব সময় ভবিষ্যতের জন্য ভালোর নির্দেশক নয়।
দেশে ও বিদেশে এর উদাহরণ আছে। তবে এ কথাও সত্য, গণতন্ত্রে নির্বাচন অপরিহার্য। কিন্তু তারপরেও কথা থাকে। আগের কথা বাদই দিলাম, নব্বইয়ের পর যে নির্বাচনগুলো হয়েছে তার ফলে কি আমরা গণতন্ত্র ও সুশাসনের প্রত্যাশিত ধাপে উঠার প্রত্যয়কে টেকসই ও নির্বিঘ্ন রাখতে পেরেছি? রাষ্ট্রের মৌলিক প্রশ্নের মীমাংসা আজও হয়নি। দেশের মানুষ এখনো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ, দুই ধারায় বিভক্ত।
অথচ নব্বইয়ের পর অনুষ্ঠিত চারটি জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে এই প্রশ্নের মীমাংসা হতে পারত। মীমাংসা অবশ্যই নির্বাচনের মাধ্যমে হতে হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে এ দেশের মানুষকে ভাবতে হবে ভোটটি কোন মার্কায় দিলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ প্রশ্নের মীমাংসার পথ সুগম হবে। তালেবানপন্থি, জেএমবি, হরকাতুল জিহাদ, লস্কর-ই-তৈয়্যবার মতো একশ'রও বেশি জঙ্গি সংগঠন যদি বাংলাদেশে তৎপরতা চালাতে পারে তাহলে রাষ্ট্রের অস্ততি্বর সঙ্গে জড়িত ওই মৌলিক প্রশ্নের সমাধান কোনোদিন হবে না। সমাধানের পথে আমাদের প্রচেষ্টার অবস্থা হবে সেই তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে উপরে উঠার মতো।
একবার ১০ ফুট উপরে উঠি তো পরেরবার নয় ফুট নিচে নেমে যাই। কখন যে চূড়ায় উঠতে পারব তা আর বলা যায় না। পার্বত্য শান্তিচুক্তি, বঙ্গোপসাগরের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা, বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের আশা জাগানিয়া উদ্যম আর উদ্ভাবনী ক্ষমতা বাংলাদেশের জন্য অপার সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছে। উন্নয়নের মূল বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানের পথে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবস্থা পরিমাপের জন্য স্বীকৃত যে সূচকগুলো আছে, তার প্রতিটি সূচকই বিগত কয়েক বছর ধরে ঊধর্্বগামী।
এই ধারাকে অব্যাহত রাখার জন্য প্রয়োজন সুশাসন ও দুর্নীতি প্রতিরোধকরণ। এই লক্ষ্য অর্জন করার জন্য প্রয়োজন হরতাল বর্জন, জ্বালাও-পোড়াও, সংঘাত-সংঘর্ষের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসা। এর সবকিছুই সম্ভব হবে যদি অনাকাঙ্ক্ষিত জাতীয় বিভাজন দূর করে সরকার ও বিরোধী দলসহ সবাই সত্যিকার অর্থে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি হতে পারি। আগামী নির্বাচনে সেই ফয়সালা এদেশের মানুষ ভোটের মাধ্যমে করতে পারে।
লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক
ই-মেইল :sikder52@gmail.com
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।