আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জঙ্গিদের হাতে যত আধুনিক অস্ত্র

দেশে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনগুলো নতুন করে সংগঠিত হচ্ছে। ভিন্ন নাম ও ভিন্ন পরিচয়ে তারা তৎপরতা চালাচ্ছে। তাদের হাতে শোভা পাচ্ছে এসএমজি, এলএমজির মতো ভয়ঙ্কর সব অস্ত্র। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, বড় ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালাতে তারা ভারী অস্ত্রের মজুদ গড়ে তুলছে। আফগানফেরত মুজাহিদ এবং অস্ত্র ও গোলাবারুদ ব্যবহারে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত পলাতক দুর্ধর্ষ জঙ্গিদের এখন নাশকতার জন্য মাঠে নামানো হচ্ছে।

এ ছাড়া বিদেশে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা দেশে এসে সংগঠিত হয়ে অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বলেও খবর রয়েছে গোয়েন্দাদের কাছে। বগুড়ায় নতুন জঙ্গি সংগঠন বিইএমের তিন সদস্যের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্র দেখে হতবাক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা। গতকাল পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, এসব অস্ত্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাই শুধু ব্যবহার করে থাকে। অথচ গোপনে এসব সংগ্রহ করছে জঙ্গিরা। তারা বিভিন্ন সীমান্তপথে এবং বিদেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপের কাছ থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করছে।

এসব অস্ত্র দিয়ে তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে নামার ক্ষমতা রাখে।

র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক এ টি এম হাবিবুর রহমান বলেন, বগুড়ায় উদ্ধার হওয়া অস্ত্রগুলো অত্যাধুনিক ও স্বয়ংক্রিয়। বর্তমানে জঙ্গিরা যে অত্যাধুনিক অস্ত্র সংগ্রহ করছে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের মধ্য দিয়ে তা প্রমাণিত হয়। বর্তমানে জঙ্গিরা প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাসাবাড়ি-মেস ভাড়া নিয়ে অবস্থান করে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালাচ্ছে। তবে র্যাব এ ব্যাপারে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করেছে।

গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নজরদারিতে জঙ্গি সংগঠনগুলো প্রকাশ্যে তেমন আসতে পারেনি। তবে নজরদারি এড়িয়ে বিভিন্ন ছদ্মনাম ধারণ করে কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। বর্তমান সরকারের সময়ে নতুন নামে গড়ে ওঠা জঙ্গি সংগঠনগুলোর মধ্যে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, জাদিদ আল কায়দা, জুমাআতুল আল সাদাত, তামির উদদীন বাংলাদেশ অন্যতম। তবে বৃহস্পতিবার বগুড়ায় ধরা পড়া জঙ্গি সংগঠনের নাম বিইএম। এই সংগঠন একেবারে নতুন।

বিইএম বলতে বাংলাদেশ ইসলামিক মুজাহেদিন বা মুজাহিদ বোঝায় বলে গোয়েন্দা সংস্থা থেকে জানা গেছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের সদস্য ও পলাতক জঙ্গিরাই ভিন্ন সংগঠনের নামে সংগঠিত হচ্ছে। তারা এখন ভয়ঙ্কর সব অস্ত্র নিয়ে মাঠে নেমেছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, সরকারের শেষ সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতাকে কাজে লাগাতে চাইছে জঙ্গিরা। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সতর্কতার কারণে তাদের সাংগঠনিক শক্তি অনেক দুর্বল হয়ে গেছে বলে মনে করেন তারা।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার মনে করেন, নির্বাচন ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সামনে রেখে জঙ্গিরা নতুন করে নিজেদের অবস্থান জানান দেওয়ার চেষ্টা করছে। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে নির্বাচন নিয়ে সরকারের ব্যস্ততা বেশি থাকবে। জঙ্গিরা চাইছে এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সংগঠিত হতে। জামায়াত-শিবিরের সঙ্গেও জঙ্গিদের সংশ্লিষ্টতা আছে বলে মনে করেন তিনি। জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বগুড়ায় নতুন একটি জঙ্গি সংগঠনের সন্ধান পেয়েছে র্যাব।

বগুড়ার ঠনঠনিয়া এলাকার একটি আস্তানা থেকে অত্যাধুনিক এসএমজি একে টুটু সাব মেশিনগান, জার্মানির তৈরি এসএমজি, পিস্তল, তিনটি ম্যাগাজিনসহ ৮০টি গুলি এবং প্রশিক্ষণের উপকরণ উদ্ধার করা হয়। এসব অস্ত্রের পাশাপাশি অত্যাধুনিক অস্ত্রের নকশা ও আত্দঘাতী হতে উদ্বুদ্ধকরণ নোটও উদ্ধার করা হয়। ১২ আগস্ট আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামে একটি জঙ্গি সংগঠনের প্রধান মুফতি জসিমউদ্দিন রহমানীকে বরগুনা থেকে ৩১ সঙ্গীসহ গ্রেফতার করা হয়। আর জসিমউদ্দিনের কার্যালয় থেকে পুলিশ ১২ জনের ছবিসহ একটি তালিকা উদ্ধার করে, যাদের সবাইকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে জানা যায়। এর আগে বিভিন্ন সময়ে জেএমবি, জেএমজেবি, হরকাতুল জিহাদ, শাহাদাত-ই-আল হিকমা ও হিযবুত তাহরীর নামে পাঁচটি জঙ্গি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করে সরকার।

কিন্তু বিভিন্ন নামে জঙ্গিরা এখন সক্রিয় বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার (গোয়েন্দা) মনিরুল ইসলাম মনে করেন জঙ্গিরা সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করলেও বড় নাশকতা চালানোর শক্তি তাদের নেই। বিভিন্ন সময় ব্যবস্থা নেওয়ার পর নতুন নামে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে তারা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।

বগুড়ায় 'বিইএম' নামের আরেক জঙ্গি সংগঠন : জঙ্গি সংগঠন জামা'আতুল মুজাহেদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) নিষিদ্ধ হওয়ার পর আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে নতুন জঙ্গি সংগঠন বিইএম। বিইএম জেএমবির আদলেই সংগঠিত হতে শুরু করেছে। সংগঠনটি ইতোমধ্যে সামরিক ও গোয়েন্দা শাখা তৈরি করেছে। র্যাব-১২ বগুড়া ক্যাম্পের সদস্যরা এই জঙ্গি সংগঠনের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সন্ধান পেয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়া দক্ষিণ পাড়ার একটি ভাড়া বাড়িতে অভিযান চালিয়ে নতুন জঙ্গি সংগঠন বিইএম'র সন্ধান পায়।

এ সময় বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, জিহাদি বইসহ ৩ জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়। র্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইং পরিচালক এটিএম হাবিবুর রহমান গতকাল ভোরে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৪টায় বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়া এলাকার জবানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে জনৈক দুলাল হোসেনের ভাড়া দেওয়া বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। এ সময় একটি কালো বস্তাকে ঘিরে চ্যালেঞ্জ করা হলে জঙ্গি সদস্যদের সঙ্গে ধস্তা-ধস্তি শুরু হয়। একপর্যায়ে তারা পালাতে থাকে। এ সময় র্যাব সদস্যরা ৩ জনকে গ্রেফতার করে।

পরে তল্লাশি চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও জিহাদি বই উদ্ধার করা হয়। সেখানে সুইসাইড স্কোয়াডের ২০ জঙ্গি সদস্য বৈঠক করছিল। তারা বাড়িটি ভাড়া নিয়ে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তারা দেশে বড় ধরনের কোনো নাশকতা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ থানার সেতাবগঞ্জ গ্রামের ফিরোজ আলম (৩৬), গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থানার সোনারপাড়ার বারহা শেখ ওরফে বাবু (২১) ও ঢাকার কমলাপুর রেল কলোনির নাহিদ (২২)।

প্রাথমিকভাবে জিঙ্গাসাবাদে তাদের পরিকল্পনা জানা যায়নি। এমনকি সংগঠনের পুরো নামও বলেনি। বগুড়ার সহকারী পুলিশ সুপার (সদর) গাজিউর রহমান জানান, গ্রেফতারকৃত ৩ জঙ্গিকে সদর থানায় হস্তান্তর করেছে র্যাব-১২ বগুড়া ক্যাম্পের সদস্যরা। তাদের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা, অস্ত্র আইন ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হয়েছে।

 

 



সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.