আমার কিন্তু স্বপ্ন দেখতে আজও ভাল লাগে। - ঋতু মা মনি কোথায় তুমি একটু আসবে?
- আসছি মা, এই তো ভাতের মার ঝরিয়েই আসছি
- আচ্ছা আসো।
- হ্যা মা বলেন।
- আমার চশমাটা একটু দেবে?
- কেন চশমা দিয়ে কি করবেন?
- একটু কোরআন পড়ব।
- এখন না হয় একটু ঘুমান মাত্র ত হেটে এলেন।
- না মা সকালে না পড়লে আর পড়া হয় না।
- আচ্ছা এই যে মা।
- বউ মনি বুয়া এসেছে?
- না
- আসলে কাপড়গুলো ধুতে দিও মনে করে।
- আচ্ছা মা। আপনি এত কিছু চিন্তা করেন কেন? আপনার এই মেয়ের উপর বুঝি আপনি ভরসা করতে পারেন না?
- না বউ মনি।
কি যে বলো না তুমি। তুমি আছো বলেই তো আমার এ দামড়াটার সংসারটা চলছে এত সুন্দর। অনেক ইচ্ছে ছিল একটা মেয়ের কিন্তু হলো না তুমিই তো আমার সে শখ পূরন করে দিয়েছো।
ঋতু তার শ্বাশুড়ি আম্মার জন্য সাদা গিলাপে মোড়ানো কোরান শরীফটা নিয়ে এসে তার শ্বাশুড়ি আম্মার গা ঘেষে বসলো পাশে। খুবই সুন্দরী মহিলা।
বয়সের ভারে হয়তো গায়ের চামড়া মলিন হয়ে গেছে কিন্তু উজ্বলতা এখনো আছে। কালো পাড়ের সাদা শাড়ি পরে চশমা পরলে চমতকার ব্যাক্তিত্ব ফুটে উঠে তার চাহনি তে।
- মা আপনি এই বয়সেও এত রূপ যৌবন কিভাবে ধরে রেখেছেন?
- দেখ নটি বলে কি?
- সত্যি মা আপনি যখন প্রথম বৌ হয়ে আসেন তখন মনে হয় এলাকা গরম হয়ে গিয়েছিল আপনার রূপে?
- বয়স কালের কথা বুড়ো কালে বলে লাভ কি?
- না মা বলেন, আমি শুনব।
- তোমাকে আজ খুব খুশি খুশি লাগছে যে বৌ, ঘটনা কি?
- আছে পরে বলব আগে আপনার কথা বলেন।
- তোমার রান্না করবে কে?
- সে আমি পরে করে নেব।
আজ হাতের কাজ বেশি নেই।
- আর একদিন শুনো বউ মনি?
- না মা আজকেই বলতে হবে।
- আচ্ছা শোনো তাহলে। আমি ছিলাম আমাদের গ্রামের নামকরা সুন্দরী।
- তাই?
- হুম, আমাদের সময় তো আর এতো পড়াশোনা ছিলো না।
গ্রামের মক্তবে আরবী, ফারসী আর উর্দু পড়েছি কিছু। ক্লাশ ফাইভ কি সিক্স পর্যন্ত পড়েছি। তারপর রান্নাঘরের কাজ। মেয়েদের কাজই তো ঘর গোছানো রে মা তাই তখন থেকেই ঘর গোছানোটাই শিখেছি ভালো করে। এখন ও তাই করে যাচ্ছি।
- আপনার সাথে পাড়ার ছেলেরা টাঙ্কি মারতো না? এখনই আপনি যা তখন তো আপনি মনে হয় মাথা খারাপ করে দিয়েছিলেন অনেক মানুষের।
- যাও বজ্জাত কোথাকার। তখন কি আর এত সুযোগ ছিলো? তারপর সমভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে বেড়ে উঠা আমার।
- ইচ্ছে করত না?
- তা কি আর কারো না করে? কাঁচা বয়স।
- বাবা আপনার খবর পেলো কোথা থেকে?
- পুরুষ মানুষ না, চিলের চোখ।
আকাশ থেকে ও সুন্দরী মেয়ে দেখতে পায়।
- অহ তাই? তা দেখলো কিভাবে?
- ওই যে চান্দু মুন্সী। সেই তো আমার সম্বন্ধ নিয়ে আসলো।
- আপনার তখন কেমন লাগছিলো?
- ভয় কি ভয়। আরে বাবা রে পুরুষ মানুষকে তখন আমার কাছে পশুর মতই মনে হতো।
- ইস চাপা!
- হুম, সত্যি।
- তাইলে বিয়ে করলেন কেন?
- আমরা কি আর তোমাদের মত পাক্তে পেরেছিলাম? বাবা মা যা বলত তাই আমাদের মাথা পেতে নিতে হত।
- আচ্ছা বাবা আপনাকে কেমন ভালোবাসতো?
- আমার জন্য পাগল ছিলেন। মারা গিয়েছেন আল্লাহ বেহেশত নসিব করুন। আমার ছবি দেখার পর থেকেই আমাদের বাড়ির পুকুর ঘাটে এসে খালি ঘুর ঘুর করতেন কখন আমি পানি নিতে আসব আর সেই ফাকে একটু দেখে নিবেন।
- আপনি বুঝি খুব ঘন ঘন পানি আন্তে যেতেন?
- দেখ পাকনি বলে কি। আমি কি তখন এতো কিছু বুঝি? তবে উনি যখন সাদা পাঞ্জাবী আর ধুতি পরে বিকেল বেলা পুকুর ঘাটে আসতেন তখন কেমন যেন ভিতরে ফাকা ফাকা লাগতো। কেমন যেন একটা মায়া লাগতো মানুষটার জন্য। সেই কোন দূর গ্রাম থেকে পায়ে হেটে এসে দাঁড়িয়ে থাকত আমাদের পুকুর ঘাটে শুধু আমাকে একটু দেখবে বলে।
- তাই?
- হুম।
একদিন কি হয়েছে জানো?
- কি?
- বিকেল বেলা উনি আসার সময় হয়েছে। আমি কলসি ধরে দেখি কলসিতে পানি আছে। এখন কি করি? আমার ও একটু ইচ্ছে ইচ্ছে করছে যাই। উনি এত কষ্ট করে আসে এতদূর থেকে।
- তারপর।
- কি তুমি হাসছো কেন?
- না মা বলেন। দুষ্টামি করছি আপনার সাথে।
- তোমার শ্বশুরকে সাদা ধুতি আর পাঞ্জাবিতে যা লাগতো না। ল্যাবিব তো তার পৌরুষ্যের ছিটে ফুটোও পায় নি।
- তাই?
- হুম, এলাকার নামকরা ছাত্র ছিলেন।
দূরদুরান্ত থেকে মানুষ আসতো শুধু দেখার জন্য। আমার বিয়ের আগের বছরই তো তোমার শ্বশুর আই এ পাশ করলো। সে কি উতসব সারা গ্রাম জুড়ে। সে আমাদের এলাকায় প্রথম ছাত্র ছিল যে আই এ পাশ করতে পেরেছিলো। তিনটে গরু জবাই করে লোক খায়িয়ে ছিলো আমার শ্বশুর।
- আপনি গিয়েছিলেন খেতে?
- ধুর পাগলি, আমি কি বেশরম নাকি? তখন ওর সাথে আমার বিয়ের কথা চলছে না।
- আপনার কেমন লাগছিলো সেদিন?
- আমার এখন ও মনে আছে কই যায় মানুষের দিন। উনি দূরে এসে ঘাটে দাড়ালেন। প্রতিদিনই দাড়াতেন, অনেক দূরে যাতে কেউ কিছু টের না পায়। লোকে জানলে কেলেঙ্কারি হয় যাবে না? শান্তি কে দিয়ে অনেক আগেই বলেছিলেন যে আমাকে উনার মনে ধরেছে।
- আপনি কি বলেছিলেন?
- মেয়ে মানুষের আবার মত কি? তারপর তোমার শ্বশুরের মত ছেলে লাখে একটা ছিল।
- ইস কি প্রেম!
- ওহ পাকনি, আমাদের প্রেম করার সুযোগ ছিলো কই?
- তারপর সেদিন কি করলেন উনি? আপনাকে জড়িয়ে ধরলেন?
- বউমনি শয়তানি করবি না একদম বলে দিচ্ছি।
- শয়তানি করলাম কই উনি বুঝি আপনাকে জড়িয়ে ধরেনি একরার ও?
- যা ভাগ তোর সাথে আর কথাই বলবো না।
- আচ্ছা মা বলেন আর দুষ্টামি করবো না।
- না যাও, তোমার কাজ শেষ কর বউমনি।
আমি ও একটু কোরান শরীফটা পড়ি।
- না আপনি তো প্রতিদিনই পড়েন আজ আমার সাথে গল্প করতে হবে। বলেন তারপর বাবা কি করলো আপনার সাথে?
- শান্তি আগেই বলেছিলো, উনি আমার চেহারা না দেখে রেজাল্ট আনতে যাবেন না। আমার একটা লাল পাড়ের সাদা শাড়ি ছিলো। আমাকে অনেক সুন্দর লাগতো পরলে।
হা...... মানুষ কোথায় যায়। উনি ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকতো আমার দিকে ওই শাড়িটা পরলে। সেদিন আমি সেই শাড়িটা পরে গেলাম পুকুর পাড়ে। উনি আজ একটু কাছাকাছি দাড়ালেন। বোধ হয় সাহস একটু বাড়ছিলো দুজনেরই।
আমি কখনও চোখ তোলে তাকাতাম না ওর দিকে। শুধু জলের মধ্যে দেখতে পেতাম ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকা একজুড়া চোখ আমার কলসির ঢেউয়ে কাপছে। সেদিন জল উঠানোর সময় আমার চোখ ঝাপ্সা হয়ে আসছিলো জলে। উনি পাশ করতে পারবেন তো, শুধু এই চিন্তায়। মনে আছে পুকুর ঘাট থেকে এসেই নামাযে দাঁড়িয়েছিলাম।
টানা একশ রাকাত হাজাত নামায পড়ে পা ব্যাথা করে ফেলেছিলাম। সন্ধ্যা রাতে শান্তি এসে বলেছিলো উনি ফার্স্ট ডিবিশনে আই এ পাশ করেছেন। তখন খুশিতে আমার চোখ থেকে গর গর করে জল ঝরছিলো।
- হা হা হা আপনার তো এখন ও জল ঝরছে।
- হ্যা বউমনি, পুরুষ মানুষ এমনি।
শুধু কাঁদাতে জানে। বানের জলের মত হঠাত করে এসে কানায় কানায় ভরিয়ে দেয় জীবন। সুখের বাধ ভাঙ্গা জোয়ার বইতে থাকে জীবনের প্রতিটি কানায় কানায়। আবার হঠাত করে মিলিয়ে যায়। তারপর নারীকে বইতে হয় এক খড়াময় শূন্য জীবন।
এবার ঋতু মাথা রাখে তার শ্বাশুরীর কাধে। আচল দিয়ে চোখ মুছে দিতে থাকে আর বলে শূন্য বলছেন কেন মা? আমরা আছি না আপনার জীবনে?
- সে তুমি বুঝবে না বৌ মা। সে ধন যার গেছে সে বুঝে।
- আচ্ছা মা আপনি তো বললেন না সেদিন কি হলো?
- কোনদিন?
- ওই যে, যেদিন বাবা আসলো। আপনি দেখলেন কলসিতে জল ভরা।
- পাকনি বুড়ি খালি ঘুরে ঘুরে একই কথা জিজ্ঞেস করিস না?
- হুম শুনতে ভালো লাগে।
- বউ মা বাদ দাও।
- না। বলতে হবে।
- এই তুমি এমন জেদ ধরো কেন?
- আপনি আমার মা না? আপনার সাথে ধরবো না তো কার সাথে ধরবো?
- বুয়া আসছে না কেন?
- কি জানি বোধ হয় ফাকি দেয়ার চিন্তা করছে।
- কড়া শাষনে রাখবা। রিক্সা ওয়ালা আর কাজের বুয়া। সব গুলার এই একই সমস্যা সুযোগ পেলেই ফাঁকি মারে।
- মা বলেন না সেদিন কি হলো।
- এই যে কলিং বেল দিচ্ছে।
বোধ হয় বুয়া এসেছো দেখো তো।
ঋতু গিয়ে দরজার ফুটা দিয়ে দেখতে পায় বুয়াই এসেছে।
- কি ব্যাপার এত দেরি কেনো? ঋতু জিজ্ঞেস করে বুয়াকে।
- আফা মনি রাইতে জ্বর আইছিলো গা বেদনা করতাছে।
- এহ গা বেদনা করতাছে।
খালি ফাঁকি মারার ধান্দা না?
- হাছা কতা আফা মনি শৈল্ল্য জানি কিমুন জ্বর জ্বর লাগতাছে।
- তাইলে আসছো কি জন্য?
- না কইলে তো আবার মনে করবেন আমি গুল মারতাছি।
- তাইলে তুমি কি কাপড় কাচতে পারবে? ঘর মুছতে...
- না না আফা আইজকা মাফ করেন মাতাডা টন টন কইরা বেদনা করতাছে। নিচে চাইলে মনে অয় মজকটা খুইল্ল্যা পইরা যাইবগা।
- গামছা দিয়ে মাথা বেধে কাজ কর তাইলে আর মজকটা খুলে পড়বে না।
- না আফা, হাসকামি না সত্যি কইতাছি। নিছে চাইলে মজকের মইদ্দি কিমুন জানি ডিলহি মারে।
- আচ্ছা তাইলে আজকে চলে যাও।
- আইচ্ছা আফা।
- কি চলে যেতে বললাম তো দাঁড়িয়ে আছো কেন?
- আফা একটা কতা কই?
- বলো।
- রাইত অইলে ইমুন জ্বর উডে। মনে অয় ততা শৈল্ল্য ভাত ফুটব।
- ভালো তো রাইস কোকার লাগবে না। তোমার মাথায় চাল বসিয়ে দিলেই ভাত ফুটবে।
- হাসকামি না আফা।
পরে যুদি ইট্টু হরলিক্সের লগে রুটি ভিজাইয়া খাই তাইলে গিয়া জিমুন জ্বরডা ইকটু কমে। আফা ইকটু হরলিক্স দিবেন? রাইতে খাইতাম রুটির লগে। গরীব মানুষ বুঝেন না অসুখ বিসুখ অইলে ইকটু ভালো মন্দ খাইতে ইচ্ছা করে। আমগোরে তো আর কেউ অসুখ অইলে আপেল কম্লা লইয়া দেখতো আইয়ে না হেরল্লাইগা চাইয়াই খাই। দিবেন আফা একটু হরলিক্স?
- দাঁড়াও দিচ্ছি।
- আফা ইকটু চিনি ও দিয়েন।
- আচ্ছা।
- ওহ গরীবের মুখটাই সম্বল। চাইতে না পারলে কফালো গন্ডা। তাই চাইয়া খাই আফা কিছু মুনও নিয়েন না।
- আচ্চা এই নাও।
- যাই আফা, আল্লায় আফনের বালা করুক। এই হরলিক্সের বদলে আল্লায় আফনেরে যাত্তে বেহেশতি চিজ দেয়।
- আচ্ছা যাও।
ঋতু দরজা বন্ধ করে তার শ্বাশুড়ির রুমে যায় আবার।
- হ্যা, মা বলো সেদিন কি হলো?
- কি বুয়া চলে গেছে?
- হুম
- ফাকিবাজ।
- না মা অসুস্থই মনে হলো।
- হুম ব্যাঙের আবার সর্দি লাগে কখনো? কাজ করতে ইচ্ছে করছে না তাই অসুস্থতার বাহানা করছে।
- আচ্ছা থাক না মা, ওদের তো আর সাপ্তাহিক ছুটি নাই।
- ওদের ঢিলা দিতে নাই বৌ মা।
তাইলে মাথায় উঠে বসে থাকবে।
- আচ্ছা মা বাদ দেন বলেন সেদিন কি হলো?
- না আজকে বাদ দাও বৌ মা। আর একদিন বলবো।
- না মা না। বলেন, বলতে হবে বলতে হবে।
- আচ্ছা আসো বলছি।
- হুম মা বলেন।
- সেদিন সকাল থেকেই আমার কেমন যেন ফাকা ফাকা লাগছিলো। জানি না কারন কি। কোন কিছু মনোযোগ দিয়ে করতে পারছিলাম না।
শুধু মনে হচ্ছিলো কখন বিকেল হবে কখন উনি আসবে? আবার আমি দেখতে পাব জ্বলের মধ্যে ঢেউয়ের তালে কাপতে থাকা ড্যাব ড্যাব করা এক জোড়া চোখ।
- বাব্বা কি রোমান্স!
- কি ইংলিশ বলো, বুঝি না।
- হা হা হা না মা বলেন।
- অস্থির লাগছিলো তাই দুপুরেই খেয়ে নেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম যাতে সময়টা তাড়াতাড়ি কাটে। বিকেলে ঘুম থেকে উঠে দেখি কামলা আসার কথা ছিলো পাঁচজন কিন্তু আসে নি তাই একটা পানির কলসিও খালি হয় নি।
এখন আমি কি নিয়ে যাই?
- সত্যি মহা বিপদ।
- বিপদ সে কি আর বলতে?
- তারপর কি করলেন?
- কিছুক্ষন পর দেখলাম আম্মা পানি নিচ্ছিলো ঝগে। আমি সুযোগ বুঝে ভাত নাড়ার চামচটা দিয়ে সচেতন ভাবে দিলাম আম্মার হাতটা নাড়িয়ে। ব্যাস যা হবার তাই হলো। কলসির সব পানি পরলো মাটিতে।
আম্মা তো থ। আমি আবার ইচ্ছে করেই আগে থেকে বলে ফেল্লাম সব কাজ আমার কুনুইয়ের নিচে এসে করতে হয় না? দেখছো না আমি ভাতের মার ঝরাচ্ছি? আম্মা তো কিছু বুঝতেই পারলো না। আমি বললাম দাও আমি পানি নিয়ে আসছি।
- হা হা হা হা। আপনি বুঝি খুব চতুর ছিলেন?
- বুঝ না কাঁচা বয়স।
এ বয়সে সবাই একটু আধটু এমনই থাকে।
- হুম বুঝি বুঝি সবই বুঝি। আর এখন কত ভাব।
- ভাব নিব না চল্লিশ পেরুলেই তো চালসে। আর একদিন কি হয়েছিলো জানো?
- কি?
- ওর তখন মাত্র রেজাল্ট বের হলো।
রেজাল্টা নিয়েই নাকি আমার জন্য বাজার থেকে এক কৌটো আলতা আর একজোড়া নুপূর কিনেছিলো। আলতা আর নুপূর ছাড়া নাকি আমার পা খুব খালি খালি লাগে। শান্তি কে দিয়ে পাঠিয়েছিলো আমার কাছে আর আমাকে বলেছিলো আমি যাতে পরে আসি ঘাটে। কিন্তু আমি পরিনি খুব যত্ন করে রেখে দিয়েছিলাম কারন ও তখনো আমার কাছে পর পুরুষ। আর পর পুরুষের জিনিস নিজের গায়ে কেন পরবো? যেদিন এ গায়ের সমস্ত অধিকার সে পাবে সেদিনই তার দেয়া জিনিস পরবো।
আর যদি আমাদের স্বপ্ন পূরন না হয় তবে সে আলতা আর নুপূর এ পুকুরের জ্বলে ফেলেই স্বামীর বাড়ী যাব বলে ঠিক করেছিলাম।
- তাই?
- হুম, আর তুমি যদি দেখতে, এর পরদিন যখন আমি নুপূর আর আলতা ছাড়া ঘাটে গেলাম উনি সে কি রাগ আমার উপর। উনি ভেবেছিলেন আমি বোধহয় পছন্দ করিনি নুপূর আর আলতা। আমার আজো চোখে ভাসে পুকুরের ঢেউয়ে কাপতে থাকা কটমট করা একটা মুখ। তারপর রাগ করে পাঁচদিন পুকুর ঘাটে আসেনি মানুষটা জানো।
- তারপর?
- তারপর আর কি, ওর দেয়া নুপূর আর আলতা পরে প্রথম দাঁড়ালাম তার সামনে। ভয় লজ্জা শ্রদ্ধা আর হাজারো স্বপ্ন মিশ্রিত একটা অনুভূতি ছিলো। সেদিনই প্রথম ওর দিকে চোখ তুলে তাকানো সাহস করি কারন সে নিজেই হাত দিয়ে আমার নিচু মুখটা উচু করে নিয়েছিলো। আমার গায়ে প্রথম লাগালো কোনো পুরুষের স্পর্শ।
- অহ তাই?
- হুম, আচ্ছা তোমাকে আজ এতো খুশি খুশি লাগছে কেন বৌ মা?
- বলেন তো কেন? শ্বাশুড়ির কোলে মাথা রেখে জিজ্ঞেস করলো সে।
- কেন রে মা? না বললে বুঝব কি করে?
- আমার মনে হচ্ছে প্রৃথিবীর সবার আগে আপনারই খবরটা পাওনা।
- কি খবর বৌ মা?
- আপনার বংশে নতুন অতিথি আসছে। তাই সদ্য নিষিক্ত এই ভ্রুনটাকে শোনাচ্ছিলাম তার দাদা দাদুর ভালোবাসার গল্প। বাবা মায়ের ভালোবাসা তো তার প্রতিটি কোষের ডি এন এ তে থাকবেই সাথে যাতে দাদা দাদুর মূল্যবোধটা ও থাকে।
(চলবে) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।