আমার কিন্তু স্বপ্ন দেখতে আজও ভাল লাগে। রুবাইয়াতের মধ্যে এখনো হাসব্যান্ডলি ব্যাপারটা জন্মাচ্ছে না। সে সব সময় তার নিজস্ব চিন্তাগুলো নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এটা নিয়েই অরনীর যত চিন্তা। বিয়ের প্রায় বছর ঘুরতে চলল কিন্তু রুবাইয়াতের চাকরী করার ব্যাপারে চরম উদাসিনতা।
এদিকে অরনীর একটার পর একটা বিয়ে এসেই যাচ্ছে। পড়াশোনার কথা বলে আর কতদিন? তার বাবার অসুস্থতা বাড়েই চলছে। পেনশনের যা কিছু টাকা ছিলো তা ব্যংকে ফিক্সড ডিপোজিট করে কিছু টাকা আয় হয় তা দিয়েই কোনো মত খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে তাদের সংসার। এমন একটা সময় রুবাইয়াতের এরকম উদাসিনতা খুবই কষ্ট দিচ্ছে অরনীকে। সে কোনো কিছুই যেন কেন সিরিয়াসলি নিতে চায় না।
সব কিছুতে কেমন যেন একটা উদাস উদাস ভাব।
অরনী এবারের সামার ভেকেশনে তার মাকে বলতে চেয়েছিলো রুবাইয়াতের সাথে তার বিয়ের কথাটা। কিন্তু কিভাবে বলবে? বললেই তো তার মা জিজ্ঞেস করবে ছেলে কি করে? কত টাকা আয় করে? এমন সময় অরনী কিভাবেই বা বলবে যে সে পরিবারের এমন অবস্থায় সারা জীবনের জন্য তার জীবনটাকে সমর্পন করেছে এক বেকার যুবকের হাতে। তাহলে কি সে ভুল করলো? তার কি উচিত হয়নি? এখন তার জন্য কত ভালো ভালো জব করা ছেলে আসছে তাকে বিয়ে করার জন্য। যাদের এক জনের কাধে ঝুলে পড়লেই নিশ্চিন্ত হতে পারে সে ও তার পরিবার।
বারবার ই সে এসব কথা বলতে চায় রোবাইয়াতকে, কিন্তু বললেই তার মুখ কেমন যেন কালো হয়ে যায়। সে আর কিছু বলে না চুপ করে থাকে।
- কি? কি ভাবছো এত?
- এত তাড়াতাড়ি নামায পড়া শেষ?
- হুম, খালি ফরযটা পড়ে চলে এসেছি।
- ফাকিবাজ।
- নাহ তুমি একলা বসে আছো তাই।
- নিজে তো ঠিকি নামায পড়ে আসলেন। আর আমার নামাযটা তো দিলেন কাযা করে।
- ইস আমি কখন কাযা করলাম?
- আপনি না তো কে? কে আমাকে আজ আসতে বলল?
- হুম, তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিলো তাই।
- সত্যি?
- হুম।
- আপনার তো আমাকে কখনো দেখতে ইচ্ছে করে না।
তা আজ হঠাত কেন?
- কি জানি।
- কি জানি না, বলেন।
- সত্যি বলছি বলতে পারছি না। বিকেলে ঘুম থেকে উঠে যেন কেমন ফাকা ফাকা লাগছিলো। মনে হচ্ছিলো আমার কেউ নাই কিছু নাই।
এই প্ৃথিবীতে আমি কেন আসলাম? কিবা আমার কাজ। তখন মনে হয়ে গেলো নাহ কে বলেছে আমার কেউ নাই? সোনা বঊ আছে না আমার সাথে?
- (এক সুখের দোলায় পরম আনন্দে ঝাকি খায় অরনী) তাই?
- হুম। তুমিই তো আমারা জীবনের শত অপূর্ণতার মাঝে এক অসীম পূর্ণতা।
- তাই কখনো তো বলেন না।
- কখনো তো আজকের মত মনে হয়নি।
- আজকে কেমন মনে হচ্ছে?
- জানি না, বিকেলে ঘুম থেকে উঠার পরে মনে হচ্ছে তুমি ছাড়া এই দুনিয়ায় আমার আর কেউ নাই।
- হি হি হি। আপনি তো পুরোই ছোট বাচচাদের মত করছেন আজ।
- হুম, কেমন যেন লাগছে ঠিক বুঝাতে পারছি না।
- ধুর, এই সব চিন্তা বাদ দেন ঠিক হয়ে যাবে।
- আচ্ছা দিলাম।
- আপ্নি আজকেও নাকের লোম কাটেন নি তাই না?
- এই অন্ধকারে তুমি দেখলে কিভাবে?
- দেখব না কেন? কি বিশ্রি ভাবে বের হয়ে আছে।
- আচ্ছা তুমি পুলিশে চাকরী করলে খুব ভালো হত।
- কেন?
- না পুলিশ না ল পরলে আর ভালো করতে পারতে।
- কেন?
- এই যে সারাদিন মানুষের লেজের সাথে লেগে থেকে ইনভেস্টিগেশন করো যে সে কি করেছে আর না করেছে।
- কি তার মানে আমি পুলিশ?
- তা নয়ত কি? কই আসলাম একটু রোমান্টিক প্রেম ভালোবাসার কথা বলব না শুরু করে দিয়েছে আমি নাকের লোম কেটেছি না কাটিনি এই সব। আমার নাকের লোম তোমাকে কামড় মেরেছে?
- ছেদারে তো একটা বুঝবেন কি করে?
- তোমাদের মেয়ে মানুষের এই একটা সমস্যা। বিরক্তিকর প্রাণী। সারাদিন ছেলেদের কানের কাছে এফ এম রেডিও র মত ঘ্যানর ঘ্যানর করতে না পারলে ষোলো কলা পূর্ণ হয় না।
- কি আমি ঘ্যানর ঘ্যানর করি?
- শুধু কি ঘ্যানর ঘ্যানর কর? সুযোগ পেলে তো কেচর কেচর পেচর পেচর ও কর।
- ঘ্যানর ঘ্যানর আর কেচর কেচর পেচর পেচর এর মধ্যে পার্থক্য কি?
- আমি কি জানি? হবে কিছু একটা খারাপ যা কর সারাদিন ভর।
- আপনি একটা নেমক হারাম।
- কেন?
- এইসব তো আপনার ভালোর জন্যই করি।
- তা বলে নেমক হারাম হব কেন? নিমক হারাম মানে তো যে তোমারটা খেয়ে তোমার সাথে বেইমানি করে।
- আরে ধুর।
এই খারাপ একটা কিছু বুঝে নেন না। সব কিছু কি অর্থের সাথে মিলতে হবে নাকি? মানুষ বকা দেয় মনের খায়েস মেটানোর জন্য। আমার মনের খায়েস মিটলেই তো হয়। অর্থ হতে হবে তা তো নয়। আপনি আবার আপনার এই মুরগী চোর মার্কা নিম দাড়ি রেখেছেন না?
- মুরগী চোরের আবার দাড়ি থাকে নাকি?
- না, তবে এই দাড়ি রাখলে আপনাকে দেখলে কেমন যেন মুরগী চোর মুরগী চোর মনে হয়।
- মুরগী চোরই তো, তাহলে মুরগী চোরের মত লাগবে না তো কার মত লাগবে?
- মানে?
- মানে বোঝোনি? তোমরা যারা হলে থাকো তারা তো মুরগী ই। মুরগীর মত একটা নির্ধারিত সময়ে খোয়াড় থেকে বের হও আবার খোয়াড় বন্ধ হওয়ার সময় হলে খোয়াড়ে চলে যাও।
- ইস শখ কত সারাদিন কি হল গেট খোলা থাকবে নাকি?
- সারাদিন কেন হবে সারারাত খোলা থাকতে পারে না?
- ইস, কেন খোলা থাকলে কি করবেন?
- সারারাত তোমাকে নিয়ে গল্প করব, ঝগড়া করব আবার আদর করব।
- না আমার ভয় করে।
- কেন?
- পুরুষ মানুষ শয়তানের ভাই।
সারাদিন শয়তান তাদের কাধে ভর করে থাকে।
- তাই, আমার সাথে রাত কাটাতে ও তোমার ভয় করে?
- হুম
- কেন?
- কেন জানেন না?
- না
- না জানলে থাক।
- না থাকবে কেন বলো।
- না বলতে পারবো না আমার লজ্জা লাগে।
- ইস লজ্জা কি লজ্জা।
মাইয়ার গতর ভরা খালি শরম।
- সরেন ফাজলামি করবেন না।
- না সরব না।
- ইস মানুষ দেখলে কি বলবে? উফ ছাড়েন তো।
- না ছাড়বো না।
- না ছাড়েন প্লিজ প্লিজ প্লিজ।
- আচ্ছা।
- আপনি দিন দিন খুব ফাজিল হয়ে যাচ্ছেন। আগে তো বলেও কিছু করানো যেত না আর এখন খালি হাত চলে না?
- হুম তোমাকে দেখলে আমি তুলা রাশি হয়ে যাই।
- তুলা রাশি মানে?
- তুলা রাশি মানে জানো না? যাদের হাত অটো চলে তাদের তুলা রাশি বলে।
বাটি পড়া দেখনি কখনো?
- না
- আচ্ছা দেখতে হবে না। এখন আমার হাতের নাচন কোদন দেখলেই বুঝতে পারবে বাটি পড়া দিলে তুলা রাশির হাত কি করে।
- না।
- না করে লাভ কি আমার হাত তো তুলা রাশি এখন। আমার কোনো কনট্রল নাই আমার হাতের উপর।
তোমার যে কোন স্পর্শ কাতর জায়গায় হাত পরতে পারে।
- উহু চারদিকে কত মানুষ।
- আমি তো তুলা রশি।
- উহু হয়েছে। এবার ছাড়েন।
- বাটি চালান তো শেষ হয়নি এখনো।
- ফাজলামো করছেন কেন, ছাড়েন।
- আর একটু।
- না একদম ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।
- কি হবে?
- কি হবে, না? দাঁড়ান দেখাচ্ছি কি হবে।
- উফ মা। এত জোড়ে কেউ খামচি দেয়? দেখ পাঁচ আঙ্গ্ুলের দাগ হয়ে গেছে।
- বেশ হয়েছে। লম্পট কোথাকার।
- ক্ষেত্র বিশেষ প্ৃথিবীর সব পুরুষই লম্পট।
পুরুষেরা লাম্পট্য বন্ধ করে দিলে মানব স্রৃষ্টির প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যেত।
(চলবে) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।