আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অস্তিত্বের অন্তরালে: ৩ - ৪

আমার কিন্তু স্বপ্ন দেখতে আজও ভাল লাগে। - কি সোনা বউ চুপচাপ? - এই নেন। - এই কাঠ গোলাপের পাতা দিয়ে আমি কি করবো? - উল্টিয়ে দেখেন কি লেখা আছে। - (রুবাইয়াত+অরনী+রেহান+এরিনা) হ্যা, মানে কি? - মানে আপনি আমি আর আমাদের দুই ছেলে মেয়ে। - বাব্বা ছেলে মেয়ের নাম ও রেখে ফেলেছো? - হুম, ছেলে হলে আপনার নামে নাম হবে রুবাইয়াত থেকে রেহান আর মেয়ে হলে আমার নামে নাম হবে অরনী থেকে এরিনা।

সুন্দর না? - হুম। তোমার খুব মন খারাপ দেখাচ্ছে। আর পিচিচদের মত এসব করছো কেন? - বলেন আপনার ছেলে মেয়েই হবে আমার ঘরে। - এমা তোমার ঘরে আর কার ছেলে মেয়ে হবে? - সত্যি করে বলেন? আপনার কথা আমি বেদ বাক্যের মত বিশ্বাস করি। - কি ব্যাপার তোমার চোখে জল কেন সোনা বউ? - আমার হাতে মেহেদি পড়েছি ভালো লাগছে না? - হুম খুব কিন্তু তুমি কাঁদছো কেন? - বলেন আমি এই মেহেদি শুধু আপনার জন্যই পরবো।

- হুম আমি ছাড়া তুমি আর কার জন্য পরবা? - আমার মাথায় হাত রেখে বলেন আমার এই মেহেদি রাঙানো হাতে আপনি ছাড়া আর কোনো পুরুষের হাত পরবে না কখনো? - আচ্ছা কেনো পরবে বলোতো সোনা বঊ? - আচ্ছা আপনারা পুরুষ মানুষেরা কেমন তাই না? - তোমার কি হয়েছে সোনা তুমি কাঁদছো কেনো? - আচ্ছা আপনি যখন বেহেশতে যাবেন তখন কি শত শত হূর পেয়ে আমাকে ভুলে যাবেন? - হা হা হা হা। সেটা তো অন্য জগত সে জগতের কথা আমি এ জগতে বসে বলবো কিভাবে? - না বলেলন, আপনার কি মনে হয়? - কথা পেচাচ্ছো কেন? - আমি কই কথা পেচাচ্ছি? - এই যে খালি তেনা পেচাচ্ছো কথার মাঝে। বলো না কাঁদছো কেনো? - না আগে বলেন আপনি কি আমায় ভুলে যাবেন? - এখন মনে হয় ভুলতে পারবো না কোনোদিন কিন্তু এ পৃথিবীতে কার জন্য কার জীবনে থেমে থাকে বলো? জীবন চলে যায় জীবনের নিয়মে। - বুঝেছি আর বলতে হবে না। বলেছিলাম না পুরুষ মানুষ হারামির জাত।

- তাই বুঝি? - হ্যা - তাইলে তো তুমি জানোই আবার জিজ্ঞেস করো কেন? - আমি আগে আপনাকে অনেক আলাদা ভাবতাম। কিন্তু এখন দেখি সব পুরুষই একই রকম। - কেমন? - মন বলেন আর ভালোবাসা বলেন সবই ওদের ঐ দু চার ইঞচি ঝুন ঝুনানির মধ্যে ঝুলে থাকে। - সব শিয়ালের একই ডাক জানো না? - আমি কিন্তু ঠাট্টা করছি না আপনার সাথে। - আমিও কিন্তু সিরিয়াস তোমার সাথে।

এই সোনাবউ বলো কাদছো কেন? - আপনি আমার হাতটা একটু শক্ত করে ধরেন। আমি মনে সরে পরছি আপনার জীবন থেকে। - মানে? - মানে জানি না আমি আজ খুব খারাপ একটা স্বপ্ন দেখলাম। তারপরই পেলাম খারাপ খবরটা। - কি স্বপ্ন দেখলে? আর কি বা খারাপ খবর? - দেখলাম একটা অচেনা খেয়া ঘাট।

খুবই সুন্দর একটা নৌকা। একজন মাঝি বসে আসে আমার জন্য। আমি নৌকায় উঠলাম কিন্তু আপনি নৌকায় উঠার আগেই সেটা ছেড়ে দিয়েছে যা চলছে এক অজানা গন্তব্যে। আমি মাঝিকে বলছি নৌকা থামাতে সে ছায়া মূর্তির মত দাড় টেনেই যাচ্ছে, আপনি ঘাটে এসে দাঁড়িয়ে আছেন কিন্তু নির্লিপ্ত কোনো অনুভূতি নেই আমার চলে যাওয়া নিয়ে। - কখন দেখেছো? - দুপুর বেলা।

- দিনের স্বপ্ন সত্য হয় না তাই কোনো টেনশন নেই। আর কি খারাপ খবর পেলে? - আব্বার জ্বরটা কিছুতেই ভালো হচ্ছে না। মামা ঢাকা নিয়ে এসেছে আব্বা কে। ডাক্তার ব্লাড টেস্ট দিয়েছে কি হয় কে জানে। - তুমি এখনো দেখতে যাও নি? - না সকালে ক্লাশ ছিলো।

আম্মা নিষেধ করেছে ক্লাশ ফাঁকি দিতে। ইভা, আম্মা আর মামা আছে সাথে তাই সকালে আমার দরকার হয়নি। আমি এখন যাব রাতে থাকবো, তাই ভাবলাম আপনাকে জানিয়ে যাই। - না ঠিক আছে। তা কি কি টেস্ট দিয়েছে ডাকতার? আরে তুমি কাঁদছো কেনো শুধু শুধু? - আব্বার অনেকদিন থেকেই একটা টিউমার ছিলো পায়ে ডাক্তার দেখাবে দেখাবে করে দেখানো হয়নি সেটাই হঠাত ব্যাথা করতে শুরু করে আর তা থেকে জ্বর এসেছে।

- ওহ তাই? লক্ষন তো খুব ভালো মনে হচ্ছে না। - দোয়া করবেন। ডাক্তার বায়োস্পি দিয়েছে দেখা যাক রিপোর্টে কি আসে। - আরে না তুমি কোনো চিন্তা কর না খারাপ কিছু আসবে না। - তা হলেই হয়।

এখন খারাপ কিছু হলে আমাদের কি হবে তা ভেবে দেখেছেন? আমরা পুরো সাগরে পরে যাবো। আমাদের তিন বোনকে দেখার কেঊ থাকবে না। - কেন আমি আছি না? - হে হে হে। হাসালেন এই কষ্টের মাঝে। এতদিন ধরে চাকরীর পরীক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন হচ্ছে না তো একটা ও।

আপনি তো আপনাকেই সাপোর্ট দিতে পারছেন না আমাদের দিবেন কিভাবে? - আপমান করলে? - না যা সত্য তাই বললাম আপনি অপমানিত হলে আমার কিছু করার নেই। সত্য একটু তেতু হয় এটাই নিয়ম। - হুম। - আম্মা এখন আমার উপর ডিপেন্ড করতে চাইবে পুরোপুরি। - হুম।

- সংসারের যে কি হবে আল্লাহই ভালো জানে। - হুম। - আম্মা চাইবে খুব ভালো করে আমাকে কোনো বড়লোক ছেলে দেখে বিয়ে দিতে। - হুম। - আমি যে কি করি এখন।

- হুম। - কি ব্যাপার আপনি খালি হুম হুম করছেন কেন? আপনার বলার কিছু নাই? - কি বলব। বেকের পুরুষদের তো কথা বলার ও রাইট নাই। আগে চাকরী পাই তার পর কথা বলব। - কি মন খারাপ করলেন? - না।

জীবনের কঠিন বাস্তবতা ফেইস করছি এই আর কি। - খুব কষ্ট দিয়ে ফেললাম আপনাকে? - না মনি তুমি তো ঠিকি আছো। আমিই বরং বোকার রাজ্যে বাস করছি। কল্পনার পাখা মেলে একটু একটু করে রঙ্গিন করতে চাই পুরু পৃথিবী অথচ সবার অলক্ষ্যে নিজের ঘরটাই সাদা কালো থেকে যায়। আমি যেন সে বাতি ওয়ালার মত যে মানুষের ঘরে ঘরে বাতি জ্বালিয়ে ফেরে অথচ নিজের ঘরে দুর্ভেদ্য অন্ধকার।

- আই আপনি আমার হাতটা একটু শক্ত করে ধরেন আর শক্ত করে বলেন আমি সারা জীবনই আপনার থাকবো। আব্বার কিছু হবে না। - হা হা হা। আমি বললে লাভ কি? - আপনার কথা খুব খাটে। - আমি জানি না আমার যেন কেমন লাগে ইদানিং।

- কেমন? - তোমাকে তো সব বলতে পারি না। বললে তো তুমি ঝগড়া শুরু করে দাও। - কেন কি হয়েছে বলেন? - না থাক বাদ দাও তুমি এমনিতেই চিন্তায় আছো তোমাকে নতুন চিন্তা দিতে চাচ্ছি না। - না বলেন। আপনি কি ওই স্বপ্নটা আবার দেখেছেন? - না।

- তাইলে? - থাক না তুমি সব কিছুতে এত জোর কর কেন? - না বলেন বলেন। - পরে শুনো এখন তোমার মানসিক অবস্থা খুব খারাপ আমি তোমাকে নতুন কোনো খারাপ খবর দিতে চাচ্ছি না। - না বলেন। প্লিজ বলেন। - আমি বোধহয় সাইকোলজিক্যাল পেসেন্ট হয়ে যাচ্ছি।

- মানে? - মানে আমি বুঝাতে পারবো না। - কি বলছেন আমার ভয় হচ্ছে। - হুম মনি যখনি আমি খুব স্ট্রেস ফীল করি তখনি কেমন যেন মাথা উল্টা পাল্টা কাজ করতে থাকে। - উল্টা পাল্টা কাজ করতে থাকে মানে কি? - মানে, আমি কিছু অসংলগ্ন আচরন করি যা আমি পরবর্তীতে বুঝতে পারি যে তা করা আমার ঠিক হয়নি কিন্তু করার সময় বুঝতে পারিনা। - তাই? - হুম।

আমি এক অদ্ৃশ্য সত্ত্বার অস্তিত্ব অনুভব করছি আমার পাশে। আমি যেখানেই যাই মনে হয় যেন সেটা আমাকে দেখছে। আমি তার কাছ থেকে লুকানো জন্যে অনেক কিছু করি- দৌড়ে পালিয়ে যাই তাকে যখন আসতে দেখি, আমি রুমের ভিতর ঢুকে দরজা আটকে দেই আবার মাঝে মাঝে কাথার নিচে লুকিয়ে পড়ি। তখন আশে পাশের মানুষ আমাকে অস্বাভাবিক ভাবে। এত কিছুর পরেও কোথা থেকে যেন সে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।

এক অদ্ভুত নির্লিপ্ততা তার চোখে মুখে। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে জলরঙের শাড়ি পরা ফ্যাকাশে চেহারার একটা মেয়ে। আর তখন আমার মাথা যন্ত্রনা করে অসম্ভব। - আপনি কি বলছেন এসব, আপনার তো ডাক্তার দেখানো উচিত। - উফ এই যে আবার।

- মানে? - তুমি দেখতে পাচ্ছো না? - না কই? - এই যে কাঠ গোলাপ গাছটার নিচে বসে আছে। - না তো। - কি বলো তুমি দেখতে পাচ্ছো না? - না। - যাও না একটা থাপ্পর লাগিয়ে আসো এই বেহায়া মেয়েটাকে। কেমন লাফাঙ্গার মত হাসছে দেখতে পাচ্ছো না? - কই আমি তো কিছুই দেখতে পাচ্ছি না।

- আবার বলে দেখতে পাচ্ছি না। - না সত্যি আমি দেখতে পাচ্ছি না। - উফ আমার মাথা যন্ত্রনা করছে। - কি হয়েছে আপনার? আপনি এমন করছেন কেন? - এই মেয়ে কে তুমি? কি চাও আমার কাছে? যাও। - আরে আমি অরনী আপনার কি হয়েছে? - কি আমি তোমার মত ফ্যাকাশে চেহারার মেয়েদের ভয় পাই।

প্লিজ লীভ মী আলোন। - কি বলছেন আবল তাবল? - অরনী তুমি আমাকে লুকিয়ে ফেলো তোমার পিছনে এই যে সে আসছে আমার দিকে। - কই কেউ নেই তো। - না, তুমি দেখতে পাচ্ছো না? সে আসছে আমাদের দিকে। - আপনি শক্ত করে আমার হাতটি ধরেন আপনার কিচ্ছু হবে না আমি তাকে সরিয়ে দিচ্ছি।

- আচ্ছা তুমি তাকে বলে দাও আমি তার সাথে যাবো না। - আচ্ছা আমি বলে দেব আপনি শান্ত হোন। (চলবে) আগের অংশ অস্তিত্বের অন্তরালে: ৩ - ৩ (১৮+) অস্তিত্বের অন্তরালে: ৩ - ৩ (১৮+) বাকি অংশ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।