আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যে মুভিটি আমাকে কাঁদিয়ে ছাড়লো....Grave of the Fireflies!

হ্যা,এটা একটা এনিমেশন মুভি! জাপানী এনিমেশন!আমি জানি এনিমেশন মুভি শব্দটা শুনেই অনেকে চোখ সরিয়ে নেবেন!! আবার তাও যদি হয় একটা টু ডি এনিমেশন তাহলে তো কথাই নেই! অন্য কাউকে দিয়ে নয়,আমি নিজেকে দেখেই খুব ভাল করে ব্যাপারটা জেনেছি! কিন্তু যেদিন থেকে এনিমেশন দেখা শুরু করলাম সেদিন থেকেই আমার ধারণা পাল্টে যেতে শুরু করল একটু একটু করে।বুঝতে পারলাম এনিমেশন নিয়ে আমার ধারাণা কত বেশি ভুল ছিল!! টয় স্টোরি,আপ,ফাইন্ডিং নিমো,আইস এজ,ওয়াল-ই... এইসব মুভি আমাকে শুধু মুগ্ধই করে যাচ্ছিল! কিন্তু জাপানী এনিমেশন মুভি নিয়ে বরাবরই আমার তাচ্ছিল্য ছিল!!ভাবতাম ওদের বানানো এনিমেশনগুলো শুধুই শিশুদের জন্য!কিন্তু আমার ধারণা সম্পূর্ণ বদলে দিল এই Grave of the Fireflies! ঘুমুতে যাবার আগে আমার হার্ড ডিস্ক ঘেটে দেখছিলাম যে অল্প দৈর্ঘ্যের কোন মুভি আছে কিনা!যেগুলো পেলাম তার মধ্য একটি ছিল।একদম অনীহার সাথেই চালু করলাম মুভিটা!মুভিটা যতই এগোতে লাগল... হাই ভেঙে ততই নড়ে চড়ে বসতে হল। ধীরে ধীরে অন্য এক জগতে ঢুকে যাচ্ছিলাম আমি!শুরু হল অচেনা এক স্বপ্নের দেশে যাত্রা... গল্পসংক্ষেপঃ সেইতা আর সেতসুকো দুই ভাইবোন। সেইতা কিশোর আর সেতসুকো তিন কিংবা চার বছরের শিশু! দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে জাপানে শুরু হয় মিত্র বাহিনীর বিমান হামলা! এতে মরতে থাকে হাজার হাজার নির্দোষ মানুষ! সবাই তখন প্রাণ বাঁচানোর জন্য ছুটছে চারিদিকে! কিশোর সেইতাও তার ছোট্ট বোনটিকে নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বেরিয়ে যায়! পেছনে অরক্ষিত অবস্থায় থাকে তাদের মা! ওদিকে তাদের বাবা জাপান নৌবাহিনীতে যুদ্ধরত অবস্থায় আছে! একসময় মিত্র বাহিনীর বোমা বর্ষণ শেষ হয়!চারিদিকে শুধু ধ্বংসযজ্ঞ! সেইতা তার আদরের বোনকে নিয়ে ফিরে আসে তাদের বাড়িতে! কিন্তু তাদের চিরচেনা পরিবেশ জুড়ে তখন বিরাজ করছিল অচেনা ধ্বংসলীলা!! সেইতা তার মাকে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন খুঁজে পায় এক শরণার্থী হাসপাতালে! তার মা একসময় মৃত্যুর কোলে নিজেকে সঁপে দেয়! কিন্তু সেইতা এই দুঃসংবাদ তার আদরের ছোট্ট বোনটিকে কিভাবে জানাবে... যে সারাক্ষণ মায়ের কাছে যাবার জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকে! সেইতা পারেনা ছোট্ট হৃদয়টিকে এতবড় আঘাত দিতে! বুকের মাঝে গভীর কষ্ট চাপা দিয়ে সে তার বোন সেতসুকোকে মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে যায় বার বার! সবহারিয়ে দুই ভাইবোন আশ্রয় নেয় তাদের এক আত্মীয়ের কাছে!!কিন্তু ভাগ্যদেবী তাদের প্রতি এতটাই সুপ্রসন্ন এখানেও তাদের চরম নিষ্ঠুরতার মুখোমুখী হতে হয়! এতসব কষ্টের মাঝেও চলতে থাকে দুই ভাইবোনের নির্মল ভালবাসার খেলা! একসাথে সমুদ্রে খেলা করা,রাতে জোনাকী পোকার অরণ্যে নিজেদের আত্নহারা আনন্দে বিলীন করা! কিন্তু একসময় তাদের সেই আত্মীয়ের কাছে অবাঞ্ছিত হয়ে তাদের শেষ আশ্রয়টুকুকেও বিদায় জানাতে হয়! তখন তারা আশ্রয় নেয় এক ডোবার পাশের পরিত্যক্ত কারখানায়। সেখানেই দুই ভাইবোন দেখতে থাকে সুদিনের স্বপ্ন! রাতের অন্ধকার দূর করার আলোটুকুও নেই তাই তারা তাদের ঘর আলোকিত করে হাজারো জোনাকি দিয়ে! সেই জোনাকিগুলো সমস্তরাত তাদের আলোকিত করে সকালে নিজেদের জীবনের আলো নিভিয়ে ঝরে যায়! সকালে ছোট্ট সেতসুকো যখন মৃত জোনাকিগুলোকে কবর দিচ্ছিল তখন তার ভাই সেইতা তাকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তার নিষ্পাপ উত্তর, “মৃতদের তো কবর দিতে হয়... যেমনটি তাদের মাকেও দেওয়া হয়েছে!” তার কিশোর ভাই তার কাছে যা লুকানোর প্রাণপণ চেষ্টা করেছে... তাদের সেই আশ্রয়দাত্রী তার কাছে সেই নিষ্ঠুর খবর অবলীলায় বলে গেছে! যুদ্ধের ভয়াবহতা এখানেই শেষ নয়! একসময় তাদের খাবার ফুরিয়ে যায়! তাদের সমস্ত সঞ্চয় শেষ হয়ে যায়! কিশোর সেইতা তার ছোট বোনটির মুখে খাবার তুলে দেবার জন্য চারিদিকে হন্যে হয়ে ঘুরে! কিন্তু যুদ্ধের এ ভয়াবহ সময় কেইবা কাকে সাহায্য দেয়! ছোট্ট সেতসুকো খাবারের অভাবে নিদারুণ পুষ্টিহীনতায় ভুগতে থাকে! খাবার আর ওষুধের অভাবে মেয়েটি আরও অসুস্থ হয়ে পরে! একসময় প্রায় পাগল হয়ে ছেলেটি চুরি করা শুরু করে!যখন বিমাণ হামলার সাইরেন বাজে... তখন ছেলেটি খুশি হয়ে ওঠে কারণ তখন খুব সহজেই চুরি করা যায়......খাবার জোগাড় করা যায়! চুরি করতে গিয়ে ধরা পরে তাকে সহ্য করতে হয় অসহনীয় নির্যাতন! সেইতা তার অসুস্থ বোনের জন্য একটি তরমুজ নিয়ে আসে! সে এসে দেখে তার বোন ঘুমিয়ে আছে! ঘুমন্ত বোনের মুখে সে তুলে দেয় এক টুকরো ফল! কিন্তু তার ছোট্ট আদরের বোনের সেই ঘুম আর কখনো ভাঙে না! সমস্ত রাত তার সকল কষ্টের সঙ্গী এই ছোট বোনের সেই নিথর দেহটিকে সে বুকে জড়িয়ে রাখে পরম আদরে! সূর্যোদয়ের পর সেইতা তার আদরের ছোট্ট বোন.....যে কিনা জোনাকীর মত তার জীবনকে সবসময় আলোকিত করে রেখেছিল ......তাকে পরম মমতায় কবরে শায়িত করে! এই হল Grave of the Fireflies! আমার নিজস্ব অনুভুতিঃ মুভিটা দেখার পর দশমিনিট অন্যরকম এক ঘোরের মাঝে ছিলাম! নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল!বারবার ছোট্ট সেইতার কথা মনে পড়ছিল! কি নিষ্পাপ এক মুখ! না, আমার কাছে কখনো এটাকে এনিমেশন একটি চরিত্র মনে হয়ে হয়নি! মনে হল এ যে বাস্তবের এক ছোট্ট পরী। মুভিটা দেখার সময় বেশ কয়েকবার আমার মনে হয়েছিল,ইশ...আমার যদি এমন একটা ছোট বোন থাকত!আমার মত যাদের কোন বোন নেই... তাদের মাঝে অবধারিত ভাবে এই আফসোসটুকু তৈরী হবেই! বারাবার শুধু মনে হচ্ছিল... এই যুদ্ধ... এইরকম আরও অনেক যুদ্ধের নারকীয়তার মাঝে চাপা পরে আছে নাম না জানা অসংখ্য সেইতার গল্প... যা হয়তো আমাদের জানা হবেনা কোনদিনও! যুদ্ধ সব যুগের জন্য...সব সমাজের জন্য...সকল মানুষের জন্যই অভিশাপ! জাপানীদের এই অসাধারণ সৃষ্টির জন্য তাদের মনের গভীর থেকে স্যালুট!! মুভিপ্রেমীরা যারা এখনো এই মুভিটি দেখেননি... তাদের জন্য মুভিটি দেখার কড়াকড়ি সুপারিশ রইলো!! তথ্য সংক্ষেপঃ মুভির নামঃ Grave of the Fireflies! দেশঃ জাপান ভাষাঃ জাপানীজ রিলিজিং ইয়ারঃ ১৯৮৮ ডিরেক্টরঃ Isao Takahata. আই এম ডি বি রেটিং: ৮.৪ রোটেন টমেটোস রেটিং: ৯৬% ডাউনলোড লিংকঃ টরেন্ট ডাউনলোড লিংক(৭০৫ মেগা বাইট) স্টেজভু ডাউনলোড লিংক(৪৭৮ মেগা বাইট)  

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.