আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটি এরেঞ্জড ম্যারেজ এবং দুষ্ট রাজকন্যা

আই লাভ দ্যা স্মোক, আই লাভ দ্যা স্মোকি লাইফ। সব ধোয়াটে থাকবে। ইচ এন্ড এভরিথিং। যা ভেবে এসেছিলাম ঠিক তার উল্টাটা হলো। আসার সময় রাজকন্যার গালভরা হাসি কল্পনা করতে করতে রিকশায় বসে ছিলাম।

হাসলে অদ্রির দু গালে দুটো টোল পড়ে। দেখতে এত ভালো লাগে বলার মত না। ও কখনোই হাসি চেপে রাখতে পারেনা। নিতান্তই যদি চাপার দরকার হয় তখন মুখ টিপে মুচকি মুচকি হাসে। দুচোখে একটা দ্যুতি খেলা করে।

আমি ধরেই রেখেছিলাম আজও তেমন কিছুই একটা হবে। কিন্তু রেস্টুরেন্টে ঢুকে দেখি মুখে হাসির লেশমাত্র নেই। চিন্তিত, বিষন্ন মুখে বসে আছে আমার স্বপ্নকন্যা। এমন চেহারা সচরাচর দেখা যায়না। তাই আমিও খানিকটা চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “কি হয়েছে।

” - একটা ঝামেলা। - এখন আবার কিসের ঝামেলা? সবই তো ঠিকঠাক। - তুমি রাগ করবা না তো? - রাগারাগি কি এখন মানায় সোনা? রাগারাগি, ঝগড়াঝাটির জন্য তো বিয়ের পর সারা জীবনটাই আছে। তবুও তুমি চাইলে কি আর রাগ না করে পারি? - যাও, বলবো না। তুমি সব সময় ফাইজলামী করো।

- আচ্ছা আচ্ছা আর করবো না। কানে ধরলাম। খুশী? এতক্ষণে ডান গালে একটু ভাজ পড়ল। আবার পলকেই মিলিয়ে গেল। বুঝলাম ঘটনা সিরিয়াস।

- শোনোনা, আমি যে তোমাকে বলেছিলাম না আমার সারাজীবনের স্বপ্ন ছিল যে আমি পালিয়ে বিয়ে করবো। - হুমম। বলেছিলে তো একদিন। তো এখন তো আর দরকার নেই। বিয়ে তো ঠিকঠাকই।

- না, তবুও। মানুষ তো জীবনে একবারই বিয়ে করে। তাই বলছিলাম, চলো পালিয়ে যাই। আমি স্তম্ভিত হয়ে গেলাম ওর কথা শুনে। মাথা কি অতি খুশীতে নষ্ট হয়ে গেল নাকি? পাঁচ বছরের প্রেমকে বিয়েতে রূপ দেয়ার জন্য আমার জান পানি হয়ে গেছে।

আর ও বলে কিনা পালিয়ে যাবে। বাঙালী ফ্যামিলি কালচারের একটা গুরুতর সমস্যা আছে। ছেলে মেয়ে বিয়ে দেবার সময় পাত্র-পাত্রী সম্পর্কে কিছু না জেনে বিয়ে দিতে কোন আপত্তি নেই। কিন্তু যখনি শুনবে যে ছেলে একজনকে পছন্দ করে এবং তাকেই বিয়ে করতে চায়, তখন কিছু জানতেও চাইবেনা। সোজা বলে দেবে, “কোন ভাওতাবাজী চলবেনা।

আমাদের পছন্দের মেয়েকেই তুমি বিয়ে করবে। ” আমিও যথাসময়ে এই ধ্রুববাক্য শুনলাম এবং বিদ্রোহ ঘোষনা করলাম। আমি চাচ্ছিলাম না পালিয়ে বিয়ে করে ফ্যামিলিতে অশান্তি সৃষ্টি করতে। তাই বোঝানো শুরু করলাম। কিন্তু কোন লাভ হলোনা।

হাকিম নড়ে তো হুকুম নড়েনা। অদ্রিকে ফোন দিলাম। ওতো শুনেই খুশী। বললো, “তোমাকে আগেই বলেছিলাম কোন লাভ হবেনা। চলো পালিয়ে যাই।

শুনো, পরশু সকলে বের হই চলো। ” আমি হতাশ হয়ে ফোন রেখে দিলাম। এই মেয়েটা এমন কেনো? বিকালে মামাতো ভাইয়ের সাথে শলাপরামর্শে বসলাম কি করা যায়। অনেকক্ষণ পর মামাতো ভাইয়ের মাথা থেকে একটা ফাস্টক্লাশ বুদ্ধি এল। আমাদের ফ্যামিলীর সব বিয়ের ঘটকালি করে বড়মামা।

মামাকে কোনভাবে যদি সিস্টেম দেয়া যায় তাহলেই মিশন সাকসেসফুল। মামা আবার আমাকে অনেক আদর করেন। তিনি অনেক আগেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন আমার জন্য দরকার হলে আমেরিকা থেকে মেম এনে বিয়ে দেবেন। অতএব মামাকে যদি কোনভাবে গোপনে রাজী করানো যায় তাহলেই কেল্লা ফতে। দুরুদুরু বুকে সন্ধ্যায় চলে গেলাম বড়মামার বাসায়।

মামা সাথে কথার এক ফাকে আস্তে করে বিয়ের কথা তুললাম। মামা বললেন, “তোর জন্য রাজকন্যা খুজছি, বুঝলি? দুনিয়ার সবচেয়ে সুন্দর মেয়েটার সাথে তোকে বিয়ে দেবো। পছন্দ না হলে মঙ্গল গ্রহ থেকে একটা নিয়ে আসবো। ” সুযোগ বুঝে বললাম, “মামা, দেশেই আশেপাশের কোন রাজকন্যা হলে চলবেনা? শুধুশুধু এত কষ্ট করবে তুমি। ” মামা একটু ভুরু কুচকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিলেন।

তারপর ওনাকে আর কিছু বলা লাগেনি। নিজেই অদ্রির ঠিকানা, বাসার নাম্বার নিয়ে আমাকে নিশ্চিন্তে থাকতে বললেন। এতক্ষণ পযর্যন্ত নিশ্চিন্তেই ছিলাম। কারণ, মামা আমাদের বিয়ে ঠিক করে ফেলেছেন। আমাদের কারো বাসায়ই জানেনা আমাদের প্রেমের খবর।

দু বাসায়ই মনে করছে সাকসেসফুল্লি তারা একটা এরেন্জড ম্যারেজ ঠিক করে ফেলেছে। আসল খবর তো জানি আমার কজন। ঠিক করে রেখেছি বিয়ের ঠিক ২ সপ্তাহ পর বাসায় বোমাটা ফাটাবো। কিন্তু অদ্রির কথাটা শুনে আবার দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলাম। কি বলে এই মেয়ে? আমার একটা বড় সমস্যা হলো আমি অদ্রির সাথে না বলতে পারিনা, এর সাথে রাগ করতে পারিনা, ধমকও দিতে পারিনা।

একমুঠো তপ্ত ভালোবাসা ছাড়া ওকে আমার কিছুই দেয়ার নেই। তাই মাথায় আবার নতুন টেনশান প্যাকেট করতে করতে বললাম, “আচ্ছা ঠিক আছে। আমরা পালিয়েই বিয়ে করবো। প্ল্যান করো। ” ও খুশীতে চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে গালে এটা চুমো দিয়ে দিলো।

ভালবাসার এই কোমল স্পর্শেই সব টেনশান মাথা থেকে উধাও হয়ে গেলো। কিছুটা অপ্রস্তুত অবস্থায়ও পড়ে গেলাম। কারণ পাশের টেবিলের লোকজন হা করে তাকিয়ে আছে। এদের সমস্যাটা যে কি? ১৯ তারিখ সন্ধ্যায় আমাদের বিয়ে। ১৭ তারিখ বাসায় বললাম চট্টগ্রামে একটু কাজ আছে।

পরদিন চলে আসব। সকালে বের হয়ে গেলাম। প্ল্যানমাফিক বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখি অদ্রি লাগেজ নিয়ে ওয়েটিং রুমে বসে আছে। আমাকে দেখেই ধমক দিলো, “তুমি কি আজকেও একটু টাইমলি আসতে পারলানা? কতক্ষণ ধরে বসে আছি। লোকজন হা করে তাকিয়ে আছে।

” এমন সময় বাসা থেকে ফোন পেলাম মার। মা উত্তেজিত গলায় জানালো যে পাত্রী আজ সকালে একটা চিঠি রেখে তার নাগরের সাথে পালিয়ে গেছে। আমি গলায় যথাসম্ভব দু:খ দু:খ ভাব এনে বললাম, “ঠিক আছে, আমি তাহলে আরো কদিন পর আসি। “ অদ্রির দিকে তাকালাম। শয়তান মেয়েটা আবার দাত কেলিয়ে হাসছে।

চারদিকে তাকিয়ে দেখলাম কেউ দেখছে নাকি। যখন দেখলাম কেউ আমাদের লক্ষ করছেনা, তখনই দ্রুতবেগে অদ্রির ঠোটজোড়া বন্ধ করে দিলাম আমার ঠোট দিয়ে। লজ্জায় লাল হয়ে গেল অদ্রি। কাপা কাপা গলায় বলল, “তুমি অনেক দুষ্টু। ” আমি হেসে বললাম, “তুমি কি কম? চলো বাসে উঠি” ১৯ তারিখ বিকালে একটু নাটকের প্ল্যান করলাম।

প্রথমে গেলাম অদ্রির বাসায়। অদ্রিকে বাইরে রেখে আমি ঢুকলাম। অদ্রির মা আমাকে দেখেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন। অদ্রির বাবা আমাকে বসিয়ে দু:খ প্রকাশ করতে লাগলেন। দেখে অনেক খারাপ লাগলো।

এখন আমি বললাম,”আন্টি, আমিও আসলে একজনকে পছন্দ করতাম। কিন্তু বাসার চাপে রাজী হয়েছি বিয়েতে। ঘটনা শোনার পর আমিও বিয়ে করে ফেলেছি। আমার বউ বাইরে আছে। আসতে বলি?” দুজোড়া অবিশ্বাসের চোখ আমার উপর পড়ল।

তার কিছুক্ষণ পর চোখজোড়া ঘুরে গেল দরজায় আভির্ভুত অদ্রির দিকে। আন্টি প্রথমে দৌড়ে গিয়ে অদ্রির গালে একটা চড় মারলেন তারপর জড়িয়ে ধরে কেদে উঠলেন। আমি ঘটনার আকস্মিকতায় স্তব্ধ হয়ে গেলাম। কত বড় সাহস,! আমার বউকে মারে? যাই হোক কিছু বললাম না। আমাকে ড্রয়িং রুমে একা বসিয়ে রেখে পুরা ফ্যামিলী ভেতরে চলে গেল।

অদ্রির বড়বোনের ক্লাশ ওয়ান পড়ুয়া ছেলে এসে আমাকে ঘুরে ফিরে দেখতে লাগলো। তারপর বলল,”এই, তোমার তোমার চোখে চশমা কেন? চোখে দেখোনা? বেশী করে ভিটামান এ খাবা। বুচ্ছ?” আমি মাথা নেড়ে সায় দিয়ে যখনি ওকে ধরতে গেলাম পিচ্চি আমার গায়ে ঠাস করে একটা থাপ্পড় মেরে দৌড় দিল আর এমন সময়ই মোবাইলে অদ্রির একটা মেসেজ এলো, “সবাই খুব কান্নাকাটি করছে। আমি ও কি কান্না করব? বুঝতে পারছিনা। তাড়াতাড়ি রিপ্লাই দাও।

” আমি রিপ্লাই দিলাম, “তোমাদের ফ্যামিলী এমন কেন? নতুন জামাইকে একা ফেলে চলে গেলা সবাই? আমার খিদা লাগসে। তাড়াতাড়ি আসো। ” আমার বাসায় তেমন কোন ঝামেলাই হয়নি। সবাই খুব অবাক হয়েছিল। তারপর পুরো বাসায় হৈ-হুল্লোড়।

শুধুমাত্র বাবা মুখ গোমড়া করে বসে আছেন। মেয়ে যেই হোক না কেন, ছেলে পালিয়ে বিয়ে করে ফেলেছ এটা মনে হয় তিনি এখনো মানতে পারছেননা। ভোরবেলায় সাগরের কোণ দিয়ে সূর্য উঠা দেখতে খুব সুন্দর লাগে। এই অসীম সৌন্দর্যটা নির্জন হলে ভাল হত। কিন্তু সাগরের গর্জনের ও একটা আবেদন আছে।

আমি আর অদ্রি হাত সাগরের পার ধরে হাটছি। বিয়ের ছয় দিন হল আজ। জীবনের অনেক সুন্দর ছয়টা দিন। অদ্রির দিকে তাকালাম। ভোরের সোনালী আভায় ওর মুখটা ছেয়ে গেছে।

পৃথিবীতে কি এত সুন্দর এত পবিত্র মুখ থাকা সম্ভব। এ কি মানবী নাকি পরী। ইচ্ছে করছে অদ্রিকে আবার বিয়ে করতে। হঠাৎ অদ্রির হাতটা ছেড়ে দিয়ে দাড়িয়ে গেলাম। অদ্রিও দাড়িয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “কি হলো?” ভেজা বালিতে হাটু গেড়ে বসে গেলাম।

অদ্রির হাতটা আবার ধরে ওর মুখের দিকে তাকালাম। এখন সে মুখে অবাক বিস্ময়। কাপা গলায় বললাম, “আই লাভ ইউ অদ্রি। উইল ইউ ম্যারি মি এগেইন?” অদ্রি মনে হয় একটু অবাক হলো। তারপর মুখে দুষ্টুমীর হাসি দিয়ে বলল, “নাহ।

পালাতে চাইলে রাজী আছি। বিয়ে করতে পারবোনা। ” ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.