হিংসা-বিদ্বেষ বিহীন, ভালবাসায় পরিপূর্ণ পৃথিবী চাই মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় পদ্মা নদীর চরজানাজাতে নির্মাণ করা হবে নতুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ সেলের প্রস্তাবিত চারটি স্থানের মধ্যে এই স্থানটিকে বেছে নিয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি এক পর্যালোচনা সভায় সম্ভাব্য চারটি স্থান সম্পর্কিত তথ্য-উপাত্ত পাওয়ার পয়েন্টে উপস্থাপন করা হয়। সার্বিক পর্যালোচনা শেষে চরজানাজাতকে নতুন বিমানবন্দরের জন্য বেছে নেওয়া হয়
নতুন বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য যমুনা বহুমুখী সেতু কর্তৃপক্ষের আদলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও সিটি ডেভেলপমেন্ট কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে। এ কর্তৃপক্ষ শুধু নতুন বিমানবন্দরই নির্মাণ করবে না; ব্যবসাকেন্দ্র, পর্যটন স্পট, আধুনিক সুপরিকল্পিত শহর, এলিভেটেড এঙ্প্রেসওয়ে প্রভৃতিও নির্মাণ করবে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী জি এম কাদের বলেন, 'চরটিতে বসতি কম। তা ছাড়া এয়ারক্রাফটের জ্বালানি পরিবহনের জন্য এয়ারপোর্টের পাশে নৌপথ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাজধানীর সঙ্গে দূরত্বও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। সব কিছু মিলিয়েই নতুন এয়ারপোর্টের প্রাথমিক স্থান নির্বাচন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পাওয়া গেলে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু হবে।
'
দায়িত্ব নেওয়ার পরই মহাজোট সরকার শাহজালাল বিমানবন্দরের মতো আরো একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। নবাবগঞ্জ ও দোহারের আড়িয়াল বিলে স্থান নির্বাচনের পর সাধারণ মানুষ এর প্রতিবাদ করে। তাদের প্রতিরোধের মুখে পিছু হটে সরকার। এর আগে একইভাবে ময়মনসিংহের ত্রিশাল থেকেও সরে আসতে হয়। বিমানবন্দরের জন্য এসব স্থান নির্বাচনের আগে সাধারণ মানুষের মতামত বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।
বিশেষ করে ত্রিশাল ছিল খুবই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। সেখানে বিমানবন্দর নির্মাণ করলে বিপুলসংখ্যক মানুষকে বসতি থেকে উচ্ছেদ করতে হতো। ত্রিশালের পর বেছে নেওয়া হয় আড়িয়াল বিলকে। সেখানে কিছু খাস জমি রয়েছে, সাধারণ মানুষের জমিও রয়েছে। এ কারণেই আড়িয়াল বিল এলাকার মানুষ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখায়।
আড়িয়াল বিলে বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য কোনো সমীক্ষা চালানো হয়নি। সমীক্ষা ছাড়াই এত বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিবসহ আরো কয়েকজন কর্মকর্তার অতি উৎসাহকে দায়ী করা হয়। এসব আমলার অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্তের জন্য সরকারকে অপ্রস্তুত হতে হয়েছে। সাধারণ মানুষের হাতে প্রাণ দিতে হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক সদস্যকে। প্রতিরোধের মুখে আড়িয়াল বিলে বিমানবন্দর নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরকার সরে এলেও পরিকল্পনা বাদ দেয়নি।
সেই সময় সংবাদমাধ্যমের সম্পাদকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, জনগণ না চাইলে আড়িয়াল বিলে বিমানবন্দর নির্মাণ করা হবে না। প্রয়োজনে পদ্মার ওপারে বিমানবন্দর নির্মাণ করা হবে।
প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের পর সরকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণসংক্রান্ত সেলকে আরো শক্তিশালী করে। সম্প্রতি সেল চারটি জায়গা সরেজমিনে দেখে বিমানবন্দর নির্মাণের প্রস্তাব তৈরি করে। চরজানাজাত ছাড়াও বাঘিয়ার বিল, ভাঙ্গা ও শরীয়তপুরে বিমানবন্দর নির্মাণের উপযোগিতা তুলে ধরা হয় প্রস্তাবে।
বাঘিয়ার বিল গোপালগঞ্জ জেলার কোটালিপাড়ায় অবস্থিত; এর একটি অংশ মাদারীপুরের রাজৈরের অন্তর্গত। ভাঙ্গা ফরিদপুর জেলায়। এই দুটি স্থান ঘনবসতিপূর্ণ। শরীয়তপুরের যে কয়টি এলাকা দেখা হয়েছে সেগুলোও ঘনবসতিপূর্ণ। চরজানাজাত এখনো ঘনবসতিপূর্ণ হয়ে ওঠেনি।
চরটি ছয়টি ইউনিয়নজুড়ে বিস্তৃত। এই ইউনিয়নগুলোর দুটি ফরিদপুর জেলায় এবং চারটি মাদারীপুর জেলায়।
সম্প্রতি মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিমানবন্দর নির্মাণের বিষয়টি আলোচিত হয়। জি এম কাদের নতুন বিমানবন্দর নির্মাণের প্রস্তাব শিগগিরই প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপনের কথা জানান। এ পরিপ্রেক্ষিতে গত ৮ সেপ্টেম্বর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত পর্যালোচনা সভায় সংশ্লিষ্টদের সামনে সম্ভাব্য চারটি স্থান পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়।
সেখানে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী জি এম কাদেরও ছিলেন। চরজানাজাতে নতুন বিমানবন্দর নির্মাণ করা যায়_এ অভিমত জানিয়ে এ স্থান সম্পর্কে আরো তথ্য সংগ্রহের নির্দেশ দেন মন্ত্রী।
একটি তথ্যবহুল পূর্ণাঙ্গ পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনার জন্য স্থানটির এরিয়াল ভিউ দরকার। সংশ্লিষ্টদের মতামতের ভিত্তিতে পরে এরিয়াল ভিউ গ্রহণের জন্য সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। বিমানবন্দর নির্মাণ সেলের প্রধান (যুগ্ম সচিব) জয়নাল আবেদীন তালুকদারকে দলনেতা করে গঠিত কমিটিতে বিমানবাহিনীর প্রতিনিধি, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রতিনিধি রাখা হয়েছে।
এরিয়াল ভিউ গ্রহণের জন্য হেলিকপ্টার বরাদ্দের প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু করা হয়েছে বলে সেল সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে, অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য একটি প্রতিনিধিদল চলতি সপ্তাহেই থাইল্যান্ডের সুবর্ণভূমি (ব্যাংকক) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পরিদর্শনে যাচ্ছে। ব্যাংকক সফর ও এরিয়াল ভিউ গ্রহণের পর বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর সামনে উপস্থাপন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিলে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিমানবন্দর নির্মাণের কাজ শুরু হবে।
নতুন বিমানবন্দর নির্মাণের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় সরকার তার ব্যাখ্যায় বলেছে, বিদেশে যাতায়াতকারী মোট যাত্রীর ৮০ শতাংশ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করে। বিমানবন্দরটির বাৎসরিক যাত্রী পরিচালনার ক্ষমতা প্রায় ৮০ লাখ। বর্তমানে এ বিমানবন্দর ব্যবহার করে প্রায় ৫০ লাখ যাত্রী। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সমীক্ষা অনুযায়ী ২০২০ সালে যাত্রীর সংখ্যা দ্বিগুণ হবে। একই সঙ্গে পণ্য পরিবহনও দ্বিগুণ হবে।
বর্ধিত যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের ক্ষমতা শাহজালাল বিমানবন্দরের নেই। জায়গার স্বল্পতার কারণে আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল সংস্থার (আইকাও) বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী শাহজালাল বিমানবন্দরে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে না। চারদিকে আবাসিক এলাকা, সেনানিবাস থাকায় ভবিষ্যতে এর সম্প্রসারণের সুযোগও কম। এসব বিবেচনায় নিয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারণের বদলে ঢাকার অদূরে একটি অত্যাধুনিক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মাদারীপুরের চরজানাজাতে বিমানবন্দর নির্মাণ করা হলে পদ্মা সেতুর মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে এর সংযোগ স্থাপন করা হবে।
পদ্মা সেতু নির্মাণের বিষয়টি দরপত্র আহ্বানের পর্যায়ে রয়েছে।
তথ্যসূত্র ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।