বৃহস্পতিবার যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে রায়ের আগে হাজতখানায় একই অভিযোগের আসামি দলীয় নেতা মীর কাসেম আলীর সঙ্গেও কোলাকুলি করেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় কামারুজ্জামানকে ট্রাইব্যুনালের হাজতে আনা হয়। যুদ্ধাপরাধের অন্য একটি মামলার আসামি মীর কাসেমও তখন ছিলেন সেখানে।
ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি মীর কাসেম ও সাধারণ সম্পাদক কামারুজ্জামান হাজতখানা কথা বলার সুযোগ পান।
ট্রাইব্যুনালে বিচারকরা এজলাসে আসার আগ মুহূর্তে মীর কাসেমের সঙ্গে কোলাকুলি করে বিদায় নেন কামারুজ্জামান।
এ সময় তাদের পাশে খালি চায়ের কাপ দেখা গেছে।
বেলা ১১টা ৫ মিনিটে কামারুজ্জামানকে কাঠগড়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। নিচের দিকে তাকিয়ে কাঠগড়ার চেয়ারে বসেন তিনি, হাত হাতে তখন ছিলো একটি কোরআন শরিফ, যা পড়তে দেখা গেছে তাকে।
মাঝে ১১টা ১০ মিনিটে বিচারকরা এজলাসে বসলে কয়েক সেকেন্ডের জন্য সবার সঙ্গে তিনিও দাঁড়ান।
১১টা ২১ মিনিটে রায় পড়া শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পর চেয়ারের বাম পাশের হাতলে কনুই রেখে গালে হাত দিয়ে বসেন তিনি।
চারদিকে একবার তাকিয়ে এজলাসের দিকে দৃষ্টি দেন।
দ্বিতীয় বিচারপতি রায় পড়া শুরুর পর সামনে ঝুঁকে পড়েন কামারুজ্জামান। বিভিন্ন অপরাধে তার সংশ্লিষ্টতা ঘোষণা আসতে শুরুর পর তার চেহারায় ধীরে ধীরে চিন্তার রেখা ফুটে উঠে।
এর মধ্যে কয়েকবার ডান হাতল বা বাম হাতলে ভর দিয়ে পেছনে এপাশ-ওপাশে হেলান দেন তিনি। সামনের কম্পিউটার টেবিলে রেখে দেন হাতের কোরআন শরিফ, রায়ের শেষ পর্যন্ত তা সেখানেই ছিলো।
দুপুরের আজানের সময় চোখের চশমা খুলে এদিক ওদিক তাকান তিনি। এ সময় চোখাচোখি হয় সামনে বসে থাকা বড় ছেলের সঙ্গে। তবে এ সময় তাদের কোনো কথা হয়নি।
তৃতীয় বিচারপতি রায় পড়া শুরু করেন সোয়া ১টার দিকে। এ সময় রায়ে একাত্তরে জামায়াত ইসলামীর ভূমিকা বলা হচ্ছিল।
এতে অস্থিরতা বাড়তে থাকে কামারুজ্জামানের, এপাশ ওপাশ নড়াচাড়াও বাড়ে।
রায়ের শেষে দিকে কামারুজ্জামানকে ‘অভিযুক্ত’ ঘোষণার পর চশমা খুলে চোখে হাত দেন তিনি। চার-পাঁচ সেকেন্ড এভাবে থাকার পর হাত নামিয়ে আবার চশমা পরেন তিনি, মনোযোগ দেন এজলাসের দিকে।
ট্রাইব্যুনালের প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান জনাকীর্ণ আদালতে রায় ঘোষণার পরপরই কামারুজ্জামান উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, “রং জাজমেন্ট, রং জাজমেন্ট। সবাইকে ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করবে না। ”
সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট পরা কামারুজ্জামানকে এ সময় কিছুটা বিমর্ষ দেখাচ্ছিলো। বড় সন্তান হাসান ইকবালের সঙ্গেও কথা বলেন তিনি।
এরপর কাঠগড়া থেকে হাজতে নেয়া হয় কামারুজ্জামানকে, পেছনে পেছনে যান ইকবালও।
হাজত থেকে ছেলে ও অন্য স্বজনদের উদ্দেশে হাত নাড়েন কামারুজ্জামান।
সেখানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে খাওয়া-দাওয়া করেন জামায়াতের এই নেতা।
স্বজনদের একজন জানান, কামারুজ্জামানের জন্য বাড়ি থেকে ভাতের সঙ্গে ছোট মাছ, মুরগি ও ডাল নেয়া হয়েছিলো, হাজতখানায় তাই খেয়েছেন তিনি।
ছেলে হাসান ইকবাল সাংবাদিকদের বলেন, “তিনি আমাদেরকে কোনো চিন্তা না করতে বলেছেন। বলেছেন, গড ক্যান গিভ বেটার জাজমেন্ট, তাই তার ওপর আস্থা রাখতে। ”
দিগন্ত টিভির গবেষণা নির্বাহী হাসান বলেন, এই ট্রাইব্যুনাল থেকে ‘ন্যায়বিচার’ পাওয়ার প্রত্যাশা তাদের ছিলো না।
যে দুটি অভিযোগে কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ডের রায় রয়েছে, তার একটি হচ্ছে সোহাগপুর গ্রামের ১২৩ জনকে হত্যা।
ময়মনসিংহ অঞ্চলের আল বদরের এই কমান্ডারের বিরুদ্ধে হত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগও প্রমাণিত হয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।